কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৮২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4081530.html#pid4081530

🕰️ Posted on December 11, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1040 words / 5 min read

Parent
বড়মা একটা চিংড়িমাছ নিজের পাত থেকে আমার পাতে তুলে দিলেন। আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম। -তোকেও দিচ্ছি দাঁড়া। -দিও না পেট খারাপ করবে। অভ্যেস নেই। -বলেছে, তোর যেন কতো অভ্যেস আছে, খাস তো ওই চুনো মাছের টক আর পান্তা। -ওই খেয়ে কি বলেছিলি বলবো সবার সামনে। মিত্রা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। -বোস বোস আমি তোর মতো অকৃতজ্ঞ নই। ছোটমা মিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে কি বোললো মিত্রাও ফিস ফিস কের বললো, তারপর ছোটোমার ফুলে ফুলে সে কি হাসি। কেউ ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না, আমি বুঝেছি। -তুই কি বলবি বলেছিলি। মিত্রার দিকে তাকালাম -অফিস সম্বন্ধে তুই কতটুকু জানিস। -এতদিন আমি দেখি নি, বকলমে সুনীতদা দেখতো। যেহেতু ও সম্পর্কে ওর ভাগ্নে হয়। -এখন যদি কাগজের স্বার্থে ওই লোকটাকে তাড়াই তোর কোনো আপত্তি আছে। -কেনো তাড়াবি! সুনীত কাজ জানে। অমিতাভদা বললেন। -তোমার কাছে পরে আসছি, তবে এই উত্তরটা তোমায় দিচ্ছি। -বল -তোমার পেটে যদি ৫০০ গ্রাম সাইজের একটা টিউমার হয়, তুমি হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট করবে না, অপারেশন করে কেটে বাদ দেবে। -অপারেশন করবো। -আমিও তাই চাইছি। সবাই চুপ। মল্লিকদার হাত থেমে গেছে। -তুই কি করে বুঝলি। -আমি যদি প্রমাণ করে দিই।  -আর চম্পকবাবু। তুইতো ওদের একমাস সময় দিয়েছিস। -না জেনে অনেক বেশি সময় দিয়ে দিয়েছি। -তুই সনাতন বাবুকে ফোন করেছিলি। মিত্রা বোললো। -হ্যাঁ। -ওই ডকুমেন্টসগুলো কালকের মধ্যে দিতে পারবে না। -তোকে ফোন করেছে কেনো। আমাকে বলতে পারতো। -তোকে বলতে পারছে না। -কেনো। আমি বাঘ না ভাল্লুক। -তা জানি না। -জানবি না মানে তুই মালিক। তোর জানা উচিত। তুইতো এর জন্য পয়সা দিচ্ছিস মাসে মাসে। -এ ভাবে ভাবি নি। -তুই কি বলেছিস। -বলেছি ঠিক আছে আমি বলে দেবো। -বেশ সাতখুন মাপ। -ওকে কাল সকালে ফোন করে বলে দিবি, আমি যা চেয়েছি সেটা কালকেই ওকে দিতে হবে। সব ঘুঘুর বাসা। -ওঃ। তুই ওকে বলছিস কেনো তুই নিজে বলবি। অমিতাভদা বললেন। -ও নিজে দায়িত্ব নিয়েছে তাই ওকে বলতে বলছি। ঠিক আছে এরপর থেকে আমার কোন ব্যাপারে তুই ফোন রিসিভ করবি না। তুই হচ্ছিস ওদের শেল্টার। ওরা সব পেয়ে বসেছে। অমিতাভদার দিকে তাকিয়ে বললাম -তুমি তো মিত্রার বাবার আমল থেকে আছো। তুমি কতটুকু জানো হাউস সম্বন্ধে। -কিছু জানি না। -তার মানে। অফিসে গেছো, নিজের চেয়ারে বসেছো, কাজ করেছো, চলে এসেছো। -তা বলতে পারিস। -মরণ। বড়মা বললেন। আমাকে যে রাতে শুয়ে শুয়ে গল্প বলতে এটা করেছি সেটা করেছি। সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। -এখন ও যখন জিজ্ঞেস করছে বলতে পারছো না। ও নিশ্চই কোনো কিছু বুঝতে পেরেছে। -তুমি ঠিক বলেছো। এটাতো মাথায় আসে নি। -এ ঘটনাগুলো তোমার কাছ থেকে পরে নেবো। এখন বলো চম্পকবাবুর সম্বন্ধে কি ডিসিসন নিয়েছো। -আমরা চাইছি ওরা একটা মাস থাকুক। কি মা তুমি কি বলো। মিত্রা মাথা দোলালো। -মল্লিক তুই বল না। মল্লিকদা মাথাও দোলায় না মুখও তোলে না। চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। -একচুয়েলি তোমরা চাইছো ওদের রাখার জন্য, আর আমি দাবি করছি না রাখার জন্য। চাওয়া আর দাবি করার মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমার কথা বলার মধ্যে এমন কিছু ব্যাপার ছিলো, সবাই আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি আর বসলাম না। মুখ ধুয়ে ওপরে চলে এলাম। নিজের ঘরে ঢুকে আলোটা জ্বালতে ভালো লাগলো না। রাস্তার নিওন আলোর মিহি আলো বাগানের আম গাছটার ফাঁক দিয়ে আমার ঘরে এসে পড়েছে, সেই মিহি আলোয় ঘরের অনেকটা অংশ আলোকিত। জানলার সামনে দাঁড়ালাম, হাজারো চিন্তা মাথার মধ্যে কিল বিল করছে, বিশেষ করে চম্পক, সুনীত এই দুটোকে যে করেই হোক ছেঁটে ফেলতে হবে। চম্পক এতদূর এগিয়েছে সুনীতের সাহায্য ছাড়া নয়। এতদিন অনেক কিছু ভোগ দখল করেছে, কিছুতেই ও সহজে ছেড়ে দেবে না, বিষধর সাপকে একটা আঘাতেই আধমরা করে দিতে হবে, তারপর মেরে পুরিয়ে দিতে হবে। এই দুটোকে বেশিদিন রাখলে, আরো কয়েকটা জন্মে যেতে পারে আবার তাদের পেছনে সময় ব্যায় করতে হবে। না কোনো বাধা আমি মানবো না। আগামী শুক্রবার মিটিং কল করতে হবে, তার আগে ইসলাম ভাই-এর কাছ থেকে লাস্ট আপডেট নিতে হবে। ও বলেছে ও সব জানে। মিত্রার কি সুনীতের ওপর কোনো দুর্বলতা আছে, থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, যতই হোক ওর হাজবেন্ডের ভাগ্না বলে কথা।   পিঠে নরম হাতের স্পর্শে ফিরে তাকালাম, মিত্রা আমার পেছনে -তুই বৃথা রাগ করছিস আমার ওপর। আমি জানি তুই সারাদিন অনেক খবর জোগাড় করেছিস, তাই তুই এই কথা বলতে পারছিস। কিন্তু তোকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। তুই ভাবিস না আমরা তোর কাজে বাধা দিচ্ছি। -যা শুয়ে পর, আমাকে একটু একা থাকতে দে। -আমি এখানে থাকবো। বড়মা বলেছেন। -বড়মা বললেই সব হয় না, এটা আমার বাড়ি নয়। তাছাড়া অমিতাভদা, মল্লিকদা আছেন। -ওরা সবাই নিচে বসে আছেন। -কেনো। -তুইতো কথা শেষ করিস নি। -আজ আর কথা বলতে ভালো লাগছে না। যা বলার আগামী শুক্রবার বোলবো। -আজ কেনো নয়। -যা বলছি শুনে যা, শুক্রবার মিটিং কল করবি। জানাবি সোমবার। আমি তোকে কিছু হোম টাস্ক দেবো, ভালো করে কাজগুলো বোঝার চেষ্টা করবি। মাথায় রাখবি, তোর অফিস একটা ঘুঘুর বাসা। দাদা সহজ সরল, দাদার দ্বারা এ্যাডমিনিস্ট্রেসন চলবে না। তোকে তৈরি হতে হবে। যদি কাগজ বাঁচাতে চাস। মিত্রা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, এই অনির সঙ্গে ওর পরিচয় নেই। -ব্যাঙ্কের সিগনেচার অথরিটি কে। -আগে ও ছিলো মাস কয়েক আমাকে দিয়েছে। -তোর কিংশুক, অরিন্দম ভালো ছেলে বলে মনে হয়। -এটাও তো ওর রিক্রুটমেন্ট। -সবই ও ও ও, তুই কি শিখন্ডি। শেয়ারটা কার তোর না ওর। -তুই বৃথা রাগ করছিস। আমি কি করবো বল সব বুজে শুনে চুপ থাকতাম, তুই আসার পর একটু বল পেয়েছি। -আমাকে কেন জড়ালি এর মধ্যে মনে হয় তোর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ভেঙ্গে যাবে। -কি বলছিস বুবুন। -আমি ঠিক বলছি। কাল থেকে টের পাবি। -সব শেষ হয়ে যাক, তুই আমাকে ছারিস না। -আমার টাকাটা কে দিয়েছে। -আমার একটা প্রপার্টি ছিলো সেইটা ওদের দিয়ে দিয়েছি, তার বিনিময়ে ওরা ট্রান্সফার করেছে। -আমাকে জানিয়েছিলি। -সে সময় তুই দিস নি। -ঠিক আছে। ঘরের লাইটটা জলে উঠলো, পেছন ফিরে তাকালাম, সবাই ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, বুঝতে বাকি রইল না, ওরা সব শুনেছে। দাদা কাছে এগিয়ে এলেন। আমার কাঁধে হাত দিয়ে মুখটা তুলে বললেন -আমাকে বল আমি তোকে সাহায্য করতে পারি। -তুমি পারবে না। -আচ্ছা তুই বলেই দেখ না। -আগামী শুক্রবারের পর সব দেখতে পাবে নিজের চোখে। মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম- তোকে বলে রাখলাম আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো চেকে সই করবি না। -আচ্ছা। বড়মা বললেন -বলনা তুই । কিছু একটা হয়েছে, যা তুই জানিস এরা কেউ জানে না। -তুমি ঠিক ধরেছো। আমি এখন কিছু বলবো না, এরা মাইন্ড গেম খেলবে, আমি খেলবো পাওয়ার গেম। তোমরা যাও আমাকে একটু ভাবতে দাও। -তোমরা তিনজনেই এই কয়টা দিন দশটার মধ্যে অফিসে যেও, আর চোখ কান খাঁড়া রেখো। প্রয়োজনে আমি তোমাদের ফোন করবো। তোমরা কেউ ফোন করবে না। -আচ্ছা। কাল আমি খুব ভোর ভোর বেরিয়ে যাবো। -আমি উঠে পরবো বল তুই কখন যাবি। বড়মা বললেন। -আমার জন্য ব্যস্ত হবে না। বড়মার মুখটা শুকিয়ে গেলো। ওরা সবাই চলে গেলো।
Parent