কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৯৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4495467.html#pid4495467

🕰️ Posted on December 26, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 955 words / 4 min read

Parent
আমার গল্প করার বিষয় কাগজ কাগজের লেখা, জীবনের কিছু কিছু অভিজ্ঞতা ওদের সঙ্গে শেয়ার করে নিলাম, ওরা আমার গল্প যত শোনে তত অবাক হয়ে যায়, আমাকে বললো, তুমি কিছু সাবজেক্ট দাও না অনিদা লিখি, আমি ইনস্ট্যান্ট কয়েকটা সাবজেক্ট ওদের দিলাম, কিভাবে লিখতে হবে, কোন এ্যাঙ্গেলে লেখাটাকে টুইস্ট করে দাঁড় করাতে হবে, তা বললাম, ওদের চোখমুখে বিস্ময়, দেখে বুঝলাম আমাদের অফিসের সিনিয়ররা ওদের সঙ্গে এইভাবে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না। একটি ছেলে বলে উঠলো -অনিদা আমরা লিখলে তুমি কারেকশন করে দেবে। -কেনো দেবনা, তোরা লিখিস আমি সময়মতো কারেকশন করে দেবো। -কালকে থেকেই শুরু করছি, বিশ্বাস করো প্রত্যেকদিন এই নিউজ লিখতে লিখতে একেবারে হেজে গেছি। হাসলাম। -নিউজটাকে নিরস সাবজেক্ট ভাবছিস কেনো, নিউজ তথ্য, তথ্য কেউ পড়ে, তোকে নিউজটাকেই একটা ফিচারের আকারে প্রেজেন্ট করতে হবে, দেখবি, নিউজটা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। -তোমাকে মাঝে মাঝে বিরক্ত করবো। -দূর অনিদাকে পেলে তো বিরক্ত করবি, আমিই তো অনিদাকে ছয় মাস আগে দেখেছিলাম। তারপর আবার অনিদার ঘাড়ে আরো দায়িত্ব পরলো। আর একজন বললো। আমি হেসে বললাম, নারে এবার থেকে অফিসে সময় দেবো। দ্বীপায়ন এলো ছবিগুলো নিয়ে। আমার হাতে পৌঁছবার আগেই ওরা কাড়াকাড়ি করে দেখে নিলো। আমি দ্বীপায়নকে বললাম, ছবিগুলো ঠিক ঠাক দাঁড়িয়েছে তো। -কি বলছো অনিদা এর থেকে ভালো ছবি হয় না। আমি বললাম গ্যাস খাওয়াচ্ছ। -তোমায়? একটি ছেলে আমার হাতে ছবিগুলো দিল, দেখলাম, আমি যা তুলেছিলাম, তার থেকেও অনেক বেশি পরিষ্কার এবং সুন্দর দেখাচ্ছে। -কিরে ওই লেখার সঙ্গে এই ছবিগুলো যাবে। -যাবে মানে, দৌড়বে। হাসলাম। একটা খাম নিয়ে আয়। ওরা দৌড়ে গিয়ে মল্লিকদার টেবিল থেকে একটা খাম নিয়ে এলো। আমি খামের মধ্যে ছবি এবং লেখাটা ঢুকিয়ে খামটা স্ট্যাপল করলাম, ওপরে লিখে দিলাম, টু দ্য এডিটর ইন চিফ। -খামটা অমিতাভদার টেবিলে রেখে আসবি। -দাদার ঘর বন্ধ। -তুমি আমায় দাও, সকালে যারা আসবে তাদের বলে দেবো। দাদার টেবিলে রেখে দেবে। আর একজন বললো। -রাখ তাহলে খামটা। -লেখাটা কবে বেরোবে। -সে তো এডিটর মহাশয় জানবে। ওরা সবাই হো হো করে হেসে ফেললো। -তোমার লেখা…… -ভুল কথা, এখানে আমি সাংবাদিক, উনি সম্পাদক, উনি যদি মনে করেন কাগজের স্বার্থে এটা যাওয়া উচিত তাহলে যাবে, না হলে যাবে না। -তুমি এই ভাবে ভাবো। -না ভাবলে এগোনো যাবে না। ওরা চুপ চাপ। সার্কুলেশন থেকে নিউজ রুমে কাগজ এলো, হুরো হুরি পড়ে গেলো, নিজেদের লেখাটা বেরিয়েছে কিনা দেখার জন্য, প্রথম প্রথম আমারও এরকম হতো। আমাকে ওরা একটা কাগজ এনে দিলো, ভালো করে উলটে পাল্টে দেখলাম, কাগজটা আবার স্বমহিমায় ফিরে আসছে। কাগজটাকে আরো ভালো করা যায়, একটু গেটআপ আর আধুনিকিকরণ। মনে মনে হাসলাম, মিত্রার ঘাড়ে যা লোনের বোঝা এখন বছর খানেক এইসব চিন্তা ভাবনা করা যাবে না। তারপর ঋণ শোধ হলে ভেবে দেখা যাবে। -কটা বাজে রে। -পৌনে পাঁচটা। -না এবার যেতে হবে। আমি উঠে দাঁড়ালাম, চলি রে। -আবার কবে দেখা হবে। -পাগলা আমি তো রেগুলার আসি, তোর ইচ্ছে থাকলেই দেখা হয়ে যাবে। নিউজরুম থেকে বেরিয়ে এলাম। সেই ছেলেটি নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই স্যালুট করলো। হেসে ফেললাম। -স্যার, ভুল হয়ে গেছে। -কেনো? -আপনাকে তখন... -তুমি তো ঠিক কাজ করেছো, আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে, তুমি কি করতে? ছেলেটি মাথা নীচু করে আছে। -তোমার ডিউটি তুমি করেছো। আমার ডিউটি আমি করেছি। এই ভাবে কাজ করবে। ছেলেটি মাথা নীচু করে ঘাড় দোলালো। তারপর মাথা তুলে বললো, স্যার আপনার গাড়ি রেডি আছে। -আমার! কেনো? -সার্কুলেসন বাবু বলে গেছেন। -না না আমি চলে যেতে পারবো, তোমরা গাড়িকে অন্য কাজে লাগাও। বেরিয়ে এলাম। একটা ট্যাক্সি ধরলাম। পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরালাম। মোবাইলটা বার করে, দেবাশিষদের গ্রুপটাকে একটা ম্যাসেজ করলাম, “সুপ্রভাত তোমাদের দিনটা ভাল কাটুক”। কলকাতার সকাল আস্তে আস্তে জেগে উঠছে, চায়ের দোকানগুলোয় ভিড়, সকালের মর্নিং ওয়াকারদের সৌজন্যে। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা, মোড়ে মোড়ে কাগজের হকারদের ভিড়। কাড়াকাড়ি মারামারি। আবার মিত্রা, মিঃ ব্যানার্জীর কথা মনে পরে গেলো বুড়ীমাসি, রবিনের কথা মনে পরে গেলো, কিছুতেই আমি মেলাতে পারছি না। মেমসাহেব বউ, তার ছেলে, মিত্রাকে বিয়ে করার প্রস্তাব, সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। কেনই বা মিত্রা কাল গেলো মিঃ ব্যানার্জীর কাছে, কেনই বা মিত্রা মিঃ ব্যানার্জীকে আড়াল করতে চাইছে, সব কেমন যেন ঘন কুয়াশার মতো লাগছে আমার কাছে। এবার মনে হচ্ছে এই জটটা খুলতে হবে আমাকে, আরো অনেক কিছু আমার জানার বাকি, বুড়ীমাসি কিছু জানে। ওই সব বলতে পারবে। অমিতাভদার বাড়ির গেটে যখন পৌঁছলাম, পৌনে-ছটা বাজে। ট্যাক্সি থেকে নামতেই, গেট খুলে অমিতাভদা বেরিয়ে এলেন। দাদা নিয়ম করে বাড়ির বাগানে এই সময়টা হাঁটেন, কেউ ওঠে না। বাগানে হাঁটার ফাঁকেই যতটা সম্ভব পরিষ্কার করেন। আমাকে দেখেই বললেন কিরে কোথা থেকে। এত সকালে। -গেছিলাম একটু। -সে তো দেখতেই পাচ্ছি। তুই কোথাও গেছিলি। -উঃ তুমি হাঁটো, হাঁটার সময় কথা বলতে নেই। সবাই উঠেছে। -না। -ঠিক আছে। আমি গট গট করে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলাম। আমার ঘর খুলে প্রথমে জামা প্যান্ট খুলে বিছানার ওপরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে গামছা নিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকলাম। দাঁত মেজে ভালো করে স্নান করে ফ্রেস হলাম। শরীরটা অনেক হাল্কা লাগছে। বাথরুম থেকে বেড়োতেই দেখলাম, বড়মা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন। -মর্নিং ম্যাডাম। কথা রেখেছি। -সে তো দেখতে পাচ্ছি। -তাহলে, অনি যা বলে তা করে। আলনা থেকে পাজামা পাঞ্জাবীটা টেনে বার করলাম। -সারারাত কোথায় থাকা হয়েছিল শুনি। -বাবা, এতো মাস্টারনীর মতো কথা। -হ্যাঁ, তোর কোনো মাস্টারও নেই মাস্টারনীও নেই। আজ থেকে আমিই মাস্টারনী হবো। -তা ভালো, তা ভালো। চুপচাপ। আমি পাজামা পাঞ্জাবী গলালাম। -তা বড়সাহেব বুঝি ঠেলে তুলে দিলেন, যাও তোমার ছেলে পৌঁছে গেছে। বড়মা উঠে এলেন, আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন -আমার মাথা খা, বল তুই কোথায় ছিলি সারারাত। -এই তো, এই সব দিব্যি টিব্বি দিলে অনি ফুরুত হয়ে যাবে। -ঠিক আছে দিব্যি দেবো না। বল তুই কোথায় ছিলি। -আরে বাবা অনির কিছু কাজ আছে সেগুলো করছিলো। -সে তো বুঝলাম, আবার কিছু গন্ডগোল। -একেবারে না। ছোটমা চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। -আসুন আসুন….. -খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে। -স্বাভাবিক। ছোটমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, কাল রাতে শুয়ে শুয়ে সমস্ত নিউজ পরে ফেলেছো। -তোর নিউজ। বয়েই গেছে। -তাহলে। -ধর, আমার এখন অনেক কাজ। তোর সঙ্গে গল্প করার সময় নেই। ছোটমার চোখে চোখ রাখলাম, শেয়ানে শেয়ানা চেনে, ছোটমা আমার চোখে চোখ রাখতে পারল না। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। বড়মা বড় সাধা সিধে, কিছু বোঝালে বোঝে, ছোটমা বুদ্ধি রেখে কাজ করে। -যাই, তুই যখন বলবি না, ছোটকে জিজ্ঞাসা করি। -যাও।
Parent