কাজলদীঘি শ্মশান/পীরবাবার থান--মামনজাফরান (জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়) - অধ্যায় ৯৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-42380-post-4498187.html#pid4498187

🕰️ Posted on December 30, 2021 by ✍️ MNHabib (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1157 words / 5 min read

Parent
নিচে এলাম, বড়মার মুখটা গম্ভীর, বুঝলাম ভীষণ অভিমান বুকে পোষণ করে রেখেছে। মনে মনে চিন্তা করলাম, আজ আমাকে নিজেকে কনফেস করতে হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি বড়মার পাশে বসলাম, ছোটমার পাশে মিত্রা। খাওয়া শুরু করলাম, খেতে খেতেই বললাম সেদিন তুমি পীর সাহেবের গল্পটা শুনতে চেয়েছিলে না। বড়মা আমার দিকে তাকালেন, হ্যাঁ। তোর মনে আছে এখনো। -নিশ্চই। -মিত্রা সেদিন বলতে পারলো না। আমি বলতে শুরু করলাম, সবার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো, হাত গুটিয়ে বসে থাকলো, শেষে বললাম, এর এক বছরের মাথায় আমার জন্ম, বার্থ ডেটটা বললাম। -মানে সেই ফিস্টের দিন তোর জন্মদিন ছিলো। তার মানে তুই আমার থেকে ছ’মাসের বড়। মিত্রা বললো। -আজ থেকে দাদা বলে ডাকবি। নাম ধরে ডাকবি না। -হুঁ বয়েই গেছে। ছোটমা মুচকি হাসলো। -না না থাক ওর মুখে তোর নামটা শুনতে ভালো লাগে। বড়মা বললেন। -কি এবার বল। আমি চুপচাপ। -তার ঠিক চার বছরের মাথায় মা-বাবা দুজনেই কলেরায় মারা যায়, দুজনকে গ্রামের লোকেরা পাশাপাশি চিতায় পুড়িয়েছিল। তারপর থেক মনা কাকার আশ্রয়ে। টিল টু ডে। বড়মা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। -তাকিয়ে আছো কেনো। -তুই এই সময় বললি। -কেনো। -একটু প্রণাম করতাম। -কোথায়। -বাগানে গিয়ে ওই অশ্বথগাছটাকে মনে করে। -ঠিক আছে তোমায় নিয়ে যাব। অশ্বত্থগাছটা এখনো আছে। -আমরা যাব না! -আমাদের দুজনের সঙ্গে কথা হচ্ছে, তোমরা ইন্টারফেয়ার করবে না। -হুঁ। -গত সাত দিনের ঘটনা তুমি জানতে চেয়েছিলে। -সে বললি কোথায়। বড়মা অভিমান ভরা সুরে আমায় বললেন। -খাওয়া শুরু করো। থামলে চলেবে না। আমায় একটু ভাত দাও। গত সাতদিনে ভাত জোটে নি। -ও ছোটো দে দে। দেখ ছেলের কান্ড। আমায় ফোন করে বললে কিনা এই বিরিয়ানি খেয়েছি, এই পোলাও খেয়েছি। -তোমায় তো তবু বলেছে। আমার সাথে কথা বলেছে কিনা জিজ্ঞাসা করতো। আমায় মানুষ বলেই মনে করে না। মিত্রা বললো। -একবারে চুপ থাকবি। -সে কি রে। তোর মালকিন বলে কথা। ছোটোমা বললেন। -থামো তুমি। ছোটমা আমার পাতে ভাত দিলো। তোর মল্লিকদা পাবদা মাছ এনেছে খাবি। -দাও। একটা নয় দুটো। -বাবাঃ সাতদিনের খাওয়া তুই একবারে খাবি নাকি। -গ্রামের ছেলে, আমাদের পাতে বিড়াল ডিঙোতে পারে না। মিত্রা মুচকি হাসলো, বড়মা বলে উঠলো থাম। আমি খেতে খেতে আবার শুরু করলাম। সমস্ত ঘটনা একে একে খুলে বললাম, এমনকি কাল রাতে কোথায় ছিলাম কি করেছি সব, কোনো কথা গোপন করলাম না। বড়মা, ছোটমা, মিত্রার চোখ কপালে উঠে গেছে। ওদের চোখে যেন হাজার পাওয়ারের সব বাল্ব জ্বলছে। বড়মা আমার মাথায় হাত রাখলেন। এঁটো হাতে আমায় জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। অনি আমি বলছি তোকে কেউ কোনো দিন হারাতে পারবে না। মিত্রার মুখ থালার সঙ্গে মিশে গেছে। ছোটমা মুখ নীচু করে আছে। -বাকিটা মিত্রার কাছ থেকে তোমরা জানো, আমার আর কিছু বলার নেই। এরপর তোমরা যদি বলো আমি অন্যায় করেছি, তাহলে আমাকে শাস্তি দাও, আমি মাথা পেতে নেবো। মিত্রার ফোনটা বেজে উঠলো। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, দাদার ফোন। -ধর। মিত্রা ফোনটা ধরলো। বুঝলাম দাদা ওর শরীরের খোঁজ খবর নিলো। ও হাঁ হুঁ করে ফোনটা বড়মার দিকে এগিয়ে দিলো। বড়মা ফোন ধরেই বললো, -এই সময় ফোন না করলে হোতো না। -কেনো। -আমরা এখন অনির গল্প শুনছি। -ও কি করে গেছে জানো। -কেনো তোমায় বাঁশ দিয়েছে। -না। কাল আর্টিকেলটা বেরোলে, সরকারে একটা হৈ হৈ পরে যাবে। -জানি। -তুমি জানো। -ও আমার ছেলে আমাকে সব বলেছে, কোনো কথা গোপন করে নি। বুঝলাম অমিতাভদা হতাশ হলেন। -নে ধর। মরণ, ফোনের আর সময় পেল না। আমার দিকে ঘুরে বললো, হ্যাঁরে ওই তিনটেকে শাস্তি দিবি না। -না। অমিতাভদা, মিত্রা, মল্লিকদার কথায় ওদের রেখেছি। পরে দেখা যাবে। তোমাদের সেদিন বলেছিলাম, পাওয়ার গেম খেলবো, খেলেছি। -ওগুলোকে তাড়া। -ওটা মিত্রার ডিসিশন। -ও কি বলবে। মেয়ে মানুষ। তোর মতো কি ও চালাতে পারবে। -চালাতে হবে। মালিক হবে, লোকের ওপর বিশ্বাস করলে, কোটি কোটি টাকার লোন হবে। যা হয়ে আছে। মিত্রা আমার দিকে ফ্যাকাশে দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। -তোর ইসলাম ভাইকে একটু দেখাবি। -ওরা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে। সামনে আসে না। -তাহলে তোর সঙ্গে ওর দেখা হয় কি করে। -ফোন আছে ফোন করি, সময় এবং জায়গা বলে দেয় চলে যাই। তাছাড়া ওর সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়, এখন আমি জানি, ও কখন কোথায় থাকে। ওর সার্কিটের অনেকেই আমাকে নামে চেনে। -তুই এ সব করছিস তোর যদি কোনো বিপদ হয়। -হলে হবে, তার মোকাবেলা করতে হবে। তবে কি জানো এদের সঙ্গ ছাড়া জগত সংসার চলবে না। -যাঃ যতসব মনগড়া কথা। -তুমি যতোসব মন্ত্রী আমলা দেখছো, ম্যায় পুলিস পযর্ন্ত এদের তেল দেয়। ইসলাম ভাই আমাকে সত্যিকারের ভালবাসে। কিছুক্ষণ চুপচাপ। চারিদিক নিস্তব্ধ। যে যার মতো খেয়ে চলেছে। -মিত্রা। -উঁ। -তুই তোর জায়গাটা কাকে রেজিস্ট্রি করেছিলি জানিস। -না। -তোর জমি কাকে দিচ্ছিস তা জানবি না। -ও তো বললো সই করে দাও, তাহলে শেয়ারটা অনির নামে ট্রান্সফার হয়ে যাবে, সই করে দিলাম। -বেশ গদ গদ হয়ে সই করে দিলি। -থাম তুই, বক বক করিস না, মেয়ারা একা চলতে পারে কখনো। বড়মা বলে উঠলেন। -তোমাকে বোঝা মুস্কিল তুমি একবার এদিকে ঝোল টানছো, আর একবার ওদিকে ঝোল টানছো। -দেবো কান মুলে, আবার কথা। বড়মা বাঁহাত তুললো। মিত্রা মুচকি হেসে কিল তুলে বলছে দাও না দাও, মুখে বোলো না। -ছোট তুমি কি বলো। -সত্যি তো তুই এই কদিন হলো ওর কাছে এসেছিস, ওর বুদ্ধিতে যতটুকু কুলিয়েছে, ততটুকু করেছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ। -ওর কোনো দোষ নেই। মিত্রার ওই দোষটা দোষ না, তোর মতো ওরও কোনো আশ্রয় নেই। আমরা সবাই এই পৃথিবীতে আশ্রয় খুঁজি জানিস, কেউ পাই কেউ পাই না। তখনই হতাশা আমাদের গ্রাস করে, আমরা দিশেহারা হয়ে দৃষ্টি কটু কাজ করি। আমি উঠে দাঁড়ালাম, ছোটর কাছে গিয়ে নীচু হয়ে একটা পেন্নাম ঠুকলাম। -এটা কি করলি। -তোমার কাছ থেকে একটা নতুন জিনিস শিখলাম। তাই। -পাগল। আজকের খাওয়াটা ম্যারাথন দৌড়ের মতো, ঘড়ির দিকে তাকালাম, দেখছো, চা খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। -সত্যি তো, ও ছোটো দেখেছিস, কথা বলতে বলতে কত বেলা হয়ে গেলো বলতো। -শান্তি। -কথা বলিস না আর, সাতদিনেরটা এক দিনে হজম করা যায়। এবার থেকে প্রত্যেক দিন বলবি। বড়মা বললেন। -আচ্ছা। উঠে পরে বেসিনের কাছে চলে গেলাম, ছোটমা টেবিল পরিষ্কার করছে, আমি মুখ ধুলাম, মিত্রা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ও আমার দিকে কেমন ভাবে যেন তাকিয়ে আছে। আমি ছোটমার আঁচলে মুখটা মুছে, ওপরের দিকে হাঁটা লাগালাম, ছোটমা রে রে করে উঠলো। রান্না ঘর থেকে বড়মা চেঁচিয়ে উঠলো, কি হলো রে ছোটো। -দেখনা অনি আমার কাপড়ে মুখ মুছে চলে গেলো। -মুখপোড়া। যেতে যেতে দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম, মিত্রা মুখ ধুতে ধুতে মুচকি মুচকি হাসছে। নিজের ঘরে গেলাম, সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না। বড়মাকে সব কথা বমি করার পর বেশ হাল্কা হাল্কা বোধ হচ্ছে। মিত্রা ঘরে এলো -একটা কাজ করবি। -বল। -বড়মার কাছ থেকে গোটা পাঁচেক লবঙ্গ নিয়ে আয় না। -সিগারেট খা। -ভালো লাগছে না। -দাঁড়া। মিত্রা বেরিয়ে গেলো। আমি জানলাটার সামনে এসে দাঁড়ালাম, পশ্চিম আকাশ গাড় কমলা রংয়ের, ভদ্রলোককে আর দেখা যাচ্ছে না। -এই নে। মিত্রা কাছে এগিয়ে এলো। আমি ওর হাত থেকে একটা লবঙ্গ তুলে নিয়ে মুখে দিলাম। ওর মুখেও একটা গুঁজে দিলাম। ও আমার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। -কি দেখছিস। মিত্রা আমার গালে হাত দিলো। হেসে ফেললাম।আমাকে জাপ্টে ধরে আমার বুকে মুখ গুঁজলো। -আবার কি হলো। -তুই আমাকে মার। -পাগলামো করিস না। তোকে নিয়ে আমার বড় জ্বালা। -কি করবো বল, তোর কাছে যখন আশ্রয় চাই তুই দিচ্ছিস না কেনো। -আমি তো ভগবান নই যে চাইলেই পাবি। -আমি তোকে আমার ভগবান বলে মানি। -ঠিক আছে চল একটু বাগানে ঘুরে আসি। বাড়িতে একটা ফোন করে বলে দে তুই যাবি না। না হলে ওরা আবার চিন্তা করবে। -বুড়ীমাসির সঙ্গে কালকে ঝগড়া করেছি। -তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে। -কালকে হয়েছিলো। -ঠিক আছে চ নিচে যাই।
Parent