কাজলদীঘি শশ্মান ও পীরসাহেবের থান - অধ্যায় ১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-35234-post-3029266.html#pid3029266

🕰️ Posted on March 7, 2021 by ✍️ Troya A1 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2611 words / 12 min read

Parent
প্রথম কিস্তি সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরি হলো। অফিসে জরুরি কাজ আছে। অমিতাভদা বলেছিলেন একটু তাড়াতাড়ি অফিসে আসিস, তোকে একটা জায়গায় পাঠাব। দূর—চেষ্টা করেও উঠতে পারলাম না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আমার মুখ শুকিয়ে গেল। এগারোটা! আজ নির্ঘাত আমার কপালে ঝাড় লেখা আছে। মোবাইলটা বালিশের তলা থেকে বার করে বড়োমাকে ফোন করলাম। বেশ কিছুক্ষণ রিং বাজার পর বড়োমা ধরলো। হ্যালো। বড়োমা। কিরে! কি হয়েছে? কিছু না, তুমি কি করছো। কেনো, বল। একটু দাদাকে….। তুই অফিসে যাসনি? রাতে শুতে দেরি হয়ে গেল। হায় হায়। কেন গো! তোর দাদা সেই সাত সকালে দুটো কচুরি আর চা খেয়ে চলে গেছে। খেয়েছে। কপালে আজ দুঃখ আছে বুঝলে। তোর নাকি কোথায় যাওয়ার কথা? হ্যাঁ। তোকে ফোন করেনি? করেছিল হয়তো। আমি তো ফোন বন্ধ করে রাখি। ভালো করেছিস। বড়োমার গলায় স্নেহের সুর। তাড়াহুড়ো করিস না, ধীরে সুস্থে যা, আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি। সত্যি! সব সময় হুকুম করলেই যেতে হবে নাকি। এই জন্যই তোমাকে ফোন করলাম। সে-কি আমি বুঝিনা। যা তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে চান করে নে, খালি পেটে যাবি না, কিছু খেয়ে নিস। আমি দুপুরের খাবার পাঠিয়ে দেবো। ঠিক আছে। ফোনটা রেখেই বাথরুমে দৌড় দিলাম। পরি-কি-মরি করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রেডি হয়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম, ১১ টা বেজে গেছে। সাড়ে-নটার মধ্যে অফিসে পৌঁছনোর কথা। কি আর করা যাবে। আজ আর বাস নয়, গড়িয়াহাটের মুখ থেকে একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা অফিস। অফিসে ঢুকতেই রিসেপসনিস্ট ভদ্রমহিলা আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে একবার মুচকি হাসলেন, আমিও হাসলাম। ভদ্রমহিলা বেশ খলবলি। আমার মতো ফচকে সাংবাদিকরা কম-বেশি সকলেই দিনান্তে একবার ভদ্রমহিলার টাইট শরীরটার দিকে একবার নয় একবার লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাবেই। বিবাহিত, তবু শুনেছি এ্যাড-ডিপার্টমেন্টের কার সঙ্গে যেন একটু ইন্টুমিন্টু আছে। মরগে যাক…। লিফটের সামনে এসে দাঁড়াতেই আমাদের হাউসের সিনিয়ার ফটোগ্রাফার অশোকদা বললেন, এই অনি তোকে অমিতাভদা খুঁজছিলেন। আমি হুঁ বলে লিফটের মধ্যে সেঁদিয়ে গেলাম। হু হু করে লিফট ওপরে উঠে এলো। লিফট থেকে নেমেই একবার দু-পাশটা ভালো করে দেখে নিলাম। না ফ্লোরে কাউকে দেখলাম না। শুনশান। একবার দাদার ঘরের দিকে উঁকি মারলাম। হরিদা চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছে। নিউজরুমে ঢুকতেই মল্লিকদা চেঁচিয়ে উঠলো, কি হে বৎস আজ মনে হয় একটু বেশি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। যান আপনার জন্য সমন অপেক্ষা করে আছে। আগে গিয়ে একটু মুখটা দেখিয়ে আসুন। তারপর না হয় মুখে চোখে জল দেবেন। মল্লিকদা, প্লিজ, আজকের দিনটা একটু বাঁচিয়ে দাও, আর কোনওদিন…। হ তা ঠিক। ফানদে পরলে মল্লিকদা। আর কচিগুলানরে নিয়ে যখন ঘোরাঘুরি করো। তখন মল্লিকদার কথা মনে পড়ে না। আচ্ছা আচ্ছা এরপর তোমায় ভাগ দেব। তবে শর্ত একটা ছোটোমার পার্মিশন নিয়ে। এই তো আবার ঘুটি বসালি। ঠিক আছে, ছোটোমাকে বলবোনা, দাদাকে একটা ফোন করে দাও। আমি এসে গেছি। মল্লিকদা আমার কথা রাখলো। মল্লিকদা টেবিলের ওপর রাখা ফোনটা তুলে ডায়াল করলো। কি কথা হলো বুঝতে পারলাম না। খালি হুঁ-হাঁ করে ছেড়ে দিল। ফোন রেখে মুখ তুলে বললো, যে কাজে তোমার যাওয়ার কথা ছিল তা হয়ে গেছে। আর একটি গুরু দায়িত্ব তোমার প্রতি অর্পন করা হবে। তুমি এখন এডিটর রুমে যেতে পার। আবার কি গো! গেলেই জানতে পারবে। ঠিক আছে। একটু জল খেয়ে নিই। অমিতাভদা থাকে ট্রাঙ্গুলার পার্কে আর আমি থাকি গড়িয়া হাটের কাছে অফিসের ফল্যাটে। যতদূর জানি, মল্লিকদা থাকে যাদবপুরে। তবে বেশির ভাগ সময়েই দু-জনে বড়োমার কাছে এসেই থাকে। মল্লিকদা, অমিতাভদা হরিহর আত্মা। বড়োমা, ছোটোমা একে অপরের পরিপূরক। এই রসায়ণটা আমি এখনও ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারিনি। আমার প্রত্যেকদিনের ডিউটি, অফিস থেকে ফেরার পথে কিংবা আসার আগে একবার বড়োমার সঙ্গে দেখা করে আসতে হবে। কলকাতার বাইরে না গেলে শনি, রবি দু-রাত আমাকে ওখানে সবার সঙ্গে কাটাতে হবে। এটা একটা অলিখিত অনুশাসন। নাহলে আমার বিপদ আছে। আমি বিগত ছ-বছর ধরে এই অভ্যাস পালন করে আসছি। অমিতাভদার স্ত্রী যেমন আমার বড়োমা, তেমনি মল্লিকদার স্ত্রী আমার ছোটোমা। ইউনিভার্সিটিতে জার্নালিজম নিয়ে পড়া চলাকালীন, এই অফিসের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার কলেজের স্যার শুভঙ্করবাবু এই সুযোগটা করে দিয়েছিলেন। তারপর একদিন অমিতাভদার আনুকূল্যে এই অফিসে চাকরি জোটে, বাড়িতে স্থান পাই। কিন্তু সেই সুখ আমার কপালে বেশিদিন টেকেনি। আবার আমি একা। তবে বড়োমার কড়া হুকুম। যেখানেই থাকো দিনান্তে একবার মুখ দেখাতে হবে। নাহলে লঙ্কাকান্ড। এই মুহূর্ত পর্যন্ত সেই অলিখিত নিয়ম মনে চলি। হরিদা অমিতভদার খাস বেয়ারা। প্রায় অমিতাভদারই বয়সী। গেটের সামনে বসে তখনও মাথা নিচু করে ঝিমচ্ছিল, কাছে গিয়ে আমি একটা ঠেলা মারতেই চোখ খুলে বললো, কি হলো আবার? সাহেব ভেতরে? হ্যাঁ। তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষন? হরিদার গলায় ধমকের সুর। কেন! তোমার আজ হিসেব হবে। সে আর কি করবো, কপালে থাকলে হবে। হরিদা আমার দিকে কটকট করে তাকিয়ে। এই হাউসে আমার নামের পাশে একটা উপাধি আছে। একনম্বরের বখাটে সাংবাদিক। কেউ কেউ আবার টিজ করে বলে, এডিটরের কোলের ছেলে। আমার থেকেও অনেক সিনিয়ার সাংবাদিক থাকা সত্ত্বেও অমিতাভদা আমাকে একটু বেশি ট্রাস্ট করে। প্রশ্রয়ও দেয়। ফলে যা হয় আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক খুব একটা মধু মধু নয়। আমার খুঁটির জোর এই হাউসে একটু বেশি, তাই পেছনে সবাই কপচালেও সামনে কেউ টেঁ-ফুঁ করে না। দেঁতো হাসি হেসে সু-সম্পর্কের ভান করে। পেছনে ছুড়ি চালায়। তবে হ্যাঁ, আমি আমার দায়িত্ব সম্বন্ধে ভীষণ ভাবে সচেতন। সেখানে কেউ দাঁত ফোটাতে পারে না। আমার কাছে অফিস মানে, আমার দ্বিতীয় ঘর। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। তোর খুব মজা, তাই না? হরিদা খেঁকিয়ে উঠলো। হাসলাম। যা ভেতরে যা। দরজা খুলে ভেতরে এলাম। একরাস ঠাণ্ডা বাতাস আমার সারাটা শরীর মনকে গ্রাস করলো। দেখলাম একটা চেয়ার দখল করে বসে আছেন আমাদের এ্যাড-ডিপার্টমেন্টের চিফ চম্পকদা। আর একটিতে চিফ রিপোর্টার সুনিতদা। আমাকে ভেতরে আসতে দেখেই চম্পকদা বলে উঠলেন, এই তো ছোটোসাহেব চলে এসেছেন। কি বাবা ঘুমিয়ে পরেছিলে? এমন ভাবে কথা বললেন, আমার মাথা নত হয়ে গেল। চম্পকদার প্রতিটা কথার মধ্যে শ্লেষ ঝড়ে পরছে। কানে বেশ খটকা লাগলো কথাটা। আমার জন্য অমিতাভদাকে এরা এই ভাবে প্রায়ই টিজ করে কথা বলে। তবে দাদা কোনওদিন গায়ে মাখে না। এই হাউসের সবচেয়ে সিনিয়ার মানুষ। সেই কারণে সকলে সম্মান, সমীহ দুই-ই করে। যার যা সমস্যা দাদ ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে দেয়। সুনিতদা আবার একটু বেশি ফরফর করে। অল্পবিদ্যে ভয়ঙ্করী। শোনা কথা, উনি নাকি খাস ম্যানেজমেন্টের আত্মীয়। সেই জন্য একটু হামবড়াক্কি ভাব সব সময়। এক কথায় সবজান্তা বাঙালি। পলিটিকস এই হাউসে আছে। সেটা চূড়ান্ত। তবে ওপর থেকে কেউ বুঝতে পারে না। এক এক মালিকের এক একটা লবি। আমি সব জানি, কিন্তু বোবার শত্রু নেই। মনে মনে জানি, আমার ভগবান দাদা। দাদার চাকরি নট, আমারও নট। তবে এ টুকু নিজের ওপর বিশ্বাস আছে, কলমের জোরে কলকাতা শহরের যে কোনও কাগজে একটা চাকরি জোগাড় করে নিতে পারবো। আমি ধীর পায়ে টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেলাম। অমিতাভদা, এবার ওর একটা বিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুণ। অনেক নামডাক হয়েছে। হাউস থেকে টাকা পয়সাও খুব একটা কম পায় না। দেখবেন বিয়ের পিঁড়িতে বসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। অমিতাভদা মুচকি হসে বললো। ওর বড়োমাকে কয়েকদিন আগে বলছিলাম। তা বাবু বলে এসেছেন, বিয়ের নাম ধরলেই ওই বাড়িতে আর পদার্পন করবেন না। উনি সন্ন্যাস নেবেন। সকলে হেসে উঠল। আয় বোস। আমি একটা চেয়ারে জড়ো-সড়ো হয়ে বসলাম। তোর বড়োমা ফোন করেছিল, ঘুম থেকে উঠেই চলে এসেছিস। বোবার শত্রু নেই। আমি মুখে কুলুপ এটেছি। খাওয়া দাওয়া করেছিস? মাথা দোলালাম। না। সঙ্গে সঙ্গে বেলের দিকে হাত চলে গেলো। এখন একটু চা-টোস্ট খেয়ে নে। তারপর কয়েকটা কপি লিখে দিয়ে বাড়ি চলে যা।  তোর বড়োমাকে বলা আছে। আজ তোকে ভাইজ্যাক যেতে হবে, ইলেকসন কভারেজ। দিন পনেরো থাকতে হবে। সেইরকম ভাবে গোছগাছ করে নিস। ওখানে তোর সমস্ত ব্যবস্থা করা থাকবে। সাড়ে সাতটায় ট্রেন। দাদা রাজধানী এক্সপ্রেসেরে মতো কথা বলে গেলো। মাথায় রাখিস, ঘুমিয়ে পরিস না। চম্পকদা বললো। আমি মুখ নিচু করে আছি। অমিতাভদা আমার পিতৃতুল্য, মুখের ওপর কোনওদিন কথা বলিনি। ঘুমটা একটু কমা। অতো রাত জেগে পড়াশুনা করতে তোকে কে বলে। দাদ একটু থামলেন। টেবিলের ওপর রাখা জলের গ্লাস থেকে এক চুমুক জল খেয়ে, গ্লাসটা টেবিলে রেখে, আস্তে করে বললেন। যতদিন আমার বাড়িতে ছিলি, ঠিক ছিলি। যে দিন থেকে ওই ফল্যাটে গেছিস, বাউন্ডুলে জীবন-যাপন শুরু করে দিয়েছিস। আমার কাছে সব খবর আসে। কোনও প্রকারে চা টোস্ট খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। খেলাম না, যেন গিললাম। বেরবার আগে দাদার ঘড়ের দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বারটা বেজে গেছে। ঘরের বাইরে আসতেই হরিদা কট কট করে উঠলো। পিঠে কিছু পরলো। না। মোবাইলটা বেজে উঠল। হাতে নিয়ে দেখলাম, তনুর ফোন। কানে ধরতেই খিল খিল করে গা জালানো হাসি। কি সাহেব, টিকিট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। কিসের টিকিট? ভাইজ্যাকের। না। ধরাবে। তুমি কি এখন অফিসে, না বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছ? এই মাত্র অমিতাভদার ঘর থেকে বেরোলাম। এখনও নিউজরুমে যাইনি। দাদার ঘরের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। আমি কালীঘাটে। ফল্যাটে গিয়ে একটা মিস কল মেরো, তুমি তো আর ফোন করবে না। আমার যাবার ব্যাপার তুমি জানলে কি করে? আরে বাবা, তুমি হচ্ছ সুপার বসের পোষ্য পুত্র বলে কথা। তোমার প্রতি কতজনের বাঁকা নজর আছে তা জান? হাঁদারাম। ফোনটা কেটে দিলাম। তনু আমার জীবনের একটা মাইলস্টোন। এই অফিসে আমার প্রথম ঘনিষ্ঠ মেয়ে বন্ধু। আমার জানার বাইরেও অফিশিয়াল এটিকেট ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আর একজন সন্দীপ। এছাড়া, অফিসে কারুর সঙ্গে আমার সেরকম কোনও একটা সম্পর্ক নেই। আমার তরফ থেকেও রাখার কোনও উৎসাহ অনুভব করিনি। যে দু-চারজনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, তার মধ্যে তনু একজন। আর একজন সন্দীপ। বড়োমাকে ফোন করলাম। হ্যোলো বলার আগেই বড়োমা তরবর করে উঠলো। হ্যাঁ বল। সব শুনেছি। তোকে একেবারে গরুর মতো খাটিয়ে মারলে। দাঁড়া আজ আসুক। দেখাচ্ছি মজা। তোদের অফিসে তুই ছাড়া কি আর কাজের লোক কেউ নেই। তুমি বলো। তুই কখন আসছিস? পাঁচটার সময় যাবো। কেন? অফিসে কয়েকটা কাজ আছে। একবার ফল্যাটে যাব, তারপর তোমার কাছে। কি খাবি? তোমার কাছে গিয়ে ভাত খাব। ছোটোমাকে একবার আসতে বলবে। ঠিক আছে। নিউজরুমে আসতেই মল্লিকদা বললো, পেরাইভেট টক হলো? মল্লিকদার দিকে কটকট করে তাকালাম। মুখটা ওরকম বাংলার পাঁচ কেন বাবা। ভালো লাগে বলো। এই দু-দিন আগে ফিরলাম। আজই বলে, তোকে যেতে হবে। হক কথার এক কথা। আমি একটা কথা বলি। আমি মল্লিকদার মুখের দিকে তাকালাম। নিশ্চই কোনও বদ বুদ্ধি আছে। দুই-একটা আর্টিকেল খারাপ কইরা লেইখা দে। ব্যাশ কেল্লা ফতে। তোমার সব তোলা থাকছে, ঠিক জায়গায় নালিশ হবে মনে রেখো। এই দেখো গরম খাইলি। কি আছে দাও, তাড়াতাড়ি লিখে দিয়ে কেটে পরি। ওই মায়াটার লগে….। মল্লিকদার দিকে কটকট করে তাকালাম। ঠিক আছে। ঠিক আছে। তুমি এখন আইতে পার। আমিতাভদা বললো কি কাজ আছে। ছিল ডিস্ট্রিবিউট হয়ে গেছে। চলে যাব? হ্যাঁ। কবে আসা হচ্ছে? দিন পনেরোর জন্য যেতে হবে। ও। আসি। যাও, বিকেলে দেখা হবে। নিউজরুম থেকে বেরোতেই হরিদার সঙ্গে ধাক্কা লাগলো। কোথায় যাওয়া হচ্ছে? কেন! বাবু একবার ডাকছেন। আবার কি হলো? আমি কেমন করে জানবো। হরিদাকে পাশ কাটিয়ে এডিটর রুমে ঢুকতেই দেখলাম, অমিতাভদা একা একা বসে আমাদের হাউসের আজকের কাগজটা পড়ছে। আমাকে দেখেই মুখটা তুললো। একটু আগে যারা ছিল তারা সবাই বেরিয়ে গেছে। আমাকে বললো তুই বোস, তোর সঙ্গে একটু দরকার আছে। একটু অবাক হলাম। আমার সঙ্গে আবার কিসের গোপন বৈঠক! সরাসরি মুখের দিকে তাকালাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো একটু চা খাবি? মুডটা খুব একটা ভালো বুঝলাম না। দাদাকে এরকম দেখলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে মনে হয় ক্ষমতা যদি কোনওদিন পাই, যাদের জন্য দাদার আজ এই চাপ, তাদের একবার বুঝিয়ে দেব। তারপর ভাবলাম আমার ধারনা হয়তো ভুলও হতে পারে। মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলাম। দাদা বেল বাজিয়ে হরিদাকে চা আনতে বললো। আমি চুপচাপ বসে। দাদা কাগজে চোখ বোলাচ্ছে। হরিদা দু-কাপ চা দিয়ে গেল। চায়ে চুমুক দিয়ে দাদা বললো। তোর কোনও তাড়াহুরো নেই তো? দাদার চোখে চোখ রেখে মুখটা পড়ার চেষ্টা করলাম। তার মানে দাদা অনেকক্ষণ ধরে কথা বলতে চায়! তাহলে কি তনুর ব্যাপার নিয়ে? মনে মনে ভাবলাম সত্যি সত্যি আজ কপালে আমার দুঃখ আছে। দাদা নিশ্চই তনুর ব্যাপারটা নিয়ে ভুল ভেবেছে, অথবা দাদাকে কেউ রং ইনফর্মেশন দিয়েছে। কে জানাল ব্যাপারটা? তনু নিশ্চই নয়। তাহলে! আবার ভাবলাম, গতকাল যে লেখাটা জমা দিলাম, সেই লেখার ব্যাপারে কিছু? চায়ের কাপে দীর্ঘ চুমুক দিয়ে আমাকে বললো, তুই সংঘমিত্রা ব্যানার্জ্জীকে চিনিস? দাদার মুখে নামটা শুনে চমকে উঠলাম। কেউ যেন আমার গালে সজোরে একটা থাপ্পর কষালো। এই নামটা দাদা জানল কি করে! মিত্রার কথা ছোটোমা ছাড়া কারুর জানার কথা নয়। এইসব ব্যাপারে ছোটোমা আমার বন্ধু। দাদা, বড়োমা, মল্লিকদার সাথে কোনওদিন এই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়নি। ছোটোমা, বড়োমাকে বলে থাকলে আলাদা কথা। ছোটোমা কি তাহলে দাদার কানে কথাটা তুলেছে? আমি অমিতাভদার চোখে চোখ রেখে কিছু বোঝার চেষ্টা করলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললাম, চিনি। কেনো? সেদিন ফোন করে তোর কথা জিজ্ঞাসা করছিল। তুই শিলিগুড়িতে ছিলি। আমাকে তোর ফোন নম্বর জিজ্ঞাসা করলো। আমি বলতে পারলাম না। সত্যি তোর ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। তোর বড়োমা কিংবা ছোটোমার কাছ থেকে নিয়ে দিতে পারতাম। দিইনি। আর কি বললো? না, সেরকম কিছু নয়। অমিতাভদা কথাটা বলে আমার চোখে চোখ রেখে থেমে গেল। তোর বড়োমা জানে? বলতে পারবো না। ওর সঙ্গে যে তোর পরিচয় আছে, আগে কখনও আমাকে বলিসনি? ও কে, যে ওর কথা তোমাদের বলতে হবে? নিজের কানে নিজের গলাটা কর্কশ শোনাল। আরি বাবা! বলিস কি, ওর জন্যই তো আমরা দু-টো খেয়ে-পরে বেঁচে আছি। তার মানে! আরে পাগল ও আমাদের এই কাগজ কোম্পানীর অনেকটা শেয়ার হোল্ড করে আছে। আমার মালিক। তোরও মালিক। মাথাটা বারুদের মতো গরম হয়ে গেল। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। আমি সরাসরি অমিতাভদার চোখে চোখ রাখলাম। আর কি বলেছে? না, আর কিছু নয়। বললো তুই এখানে কার সোর্সে এসেছিস। তোকে কে রিক্রুট করেছে। কতদিন আছিস। এই সব। তুমি কি বললে? আমি বললাম তুই শুভঙ্করের থ্রু দিয়ে এসেছিস। শুভঙ্কর আমার বন্ধু। তা দেখলাম ও শুভঙ্করকেও চেনে। আর কি বললো? বাবাঃ, তুই আমাকে এ ভাবে জেরা করছিস কেন? আমি তোকে জিজ্ঞাসা করলাম….। ব্যাপারটা যখন আমাকে নিয়ে তখন আমাকে ভালো করে জানতে হবে। অমিতাভদা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। জানে, আমি ভীষণ হুইমজিক্যাল। আমাকে এই মুহূর্তগুলোয় একমাত্র কন্ট্রোল করতে পারে বড়োমা। বড়োমা ছাড়া আমি কাউকে এই পৃথিবীতে পাত্তা দিই না। এরকম একবার হয়েছিল। একটা লেখা নিয়ে আমার সঙ্গে অমিতাভদার মনোমালিন্য হয়েছিল। আমি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলাম। এমনকি রিজাইন দেবারও মনস্থির করেছিলাম। সে যাত্রায় বড়োমা শিখন্ডী হয়ে সব সামাল দিয়েছিল। অমিতাভদা ঐ ব্যাপারটা ভালো করে জানে। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। সংঘমিত্রা আমার ক্লাশমেট। একই ডিপার্টমেন্ট। কলেজের বন্ধু। আমরা একসঙ্গে পড়াশুনা করেছি। শুভঙ্করবাবুর কাছেও একসঙ্গে পড়েছি। এর বেশি কিছু জানতে চাইবে না। ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। পেছন ফিরে তাকাইনি। সোজা লিফটের কাছে চলে এলাম। দেখলাম লিফট এখন গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নীচে নেমে এলাম। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে। মিত্রা শেষ পর্যন্ত এখানে ফোন করল কেন? ও এই হাউসের মালিক, এইটা বোঝাতেই কি অমিতাভদাকে ফোন করে আমার কথা জিজ্ঞাসা করলো। না অন্য কোনও অনুসন্ধিৎসা। পায়ে পায়ে বাসস্ট্যান্ডে এলাম। নানা কথা মাথার ভেতর কিলবিল করছে। কেমন যেন একটা লাগছে। ভীষণ খিদে লেগেছে। পেটে ছুঁচো ডন-বৈটকি মারছে। ফ্যাটমামির চাউমিন কারখানাতে ঢুকলাম। অফিসের পাশে বলে প্রায়ই এখানে আসা হয়। আমাদের অফিসের কেউ এখানে আসে না। এখানে বসে খেলে অফিসের এটিকেট বজায় রাখা যায় না। ওরা আনন্দ রেস্টুরেন্টে যায়। এয়ারকন্ডিশন রুমের হাওয়া খেয়ে খাবর খায়। আমরা কলেজ লাইফে বন্ধুরা দঙ্গল বেঁধে এখানে আসতাম। যদিও আমার স্পনসরার ছিল। ফ্যাটমামি চাউমিনটা দারুন বানায়। ঘন ঘন আসা হয় বলে সবাই চেনে জানে। ঘড়ির দিকে তাকালাম। ১টা বাজে। তনু বলেছিল একবার ফোন করতে। বাচ্চাটা কাছে এসে দাঁড়াল। বললাম একপ্লেট চাউমিন আনতে। ফোনটা বেজে উঠল। পকেট থেকে বার করে দেখলাম বড়োমার নম্বর। তারমানে আমার বেগতিক অবস্থার খবর এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে। একবার ভাবলাম ধরবো না। তারপর ভাবলাম না থাক। বলো কি হয়েছে। তোমায় তো বললাম পাঁচটার সময় যাব। তুই এখন কোথায়? চাউমিন খাচ্ছি। ঠিক আছে। পারলে একটু তাড়াতাড়ি আসিস, কথা আছে। কি কথা? কেন তুই জানিস না। আচ্ছা। চাউমিন খেয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা ফল্যাটে চলে এলাম। আমার ঘর-দোর আমার মতোই উশৃঙ্খল। কতদিন বিছানা ভাঁজ করিনি মনে নেই। জামাকাপড় খুললাম। পাখাটা হাল্কা করে খুলে নেংটো হয়ে পাখার তলায় দাঁড়ালাম। আঃ কি আরাম। মনটা খারাপ লাগছে। শেষ মুহূর্তে অমিতাভদার সঙ্গে ওইরকম ব্যবহার করা উচিত হয়নি। যত রাগ গিয়ে পরছে মিত্রার ওপর। আগে ঘুরে আসি, তারপর ওর সঙ্গে যদি মুখো মুখি হই….। কেউ আমার দুর্বল জায়গায় আঘাত করলে আমি স্থির থাকতে পারি না। ভীষণভাবে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠি। প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত নিজের অশান্ত মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারি না। কি আর করা যাবে। মিত্রার সঙ্গে দেখা হলে ওকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, কেন ও অমিতাভদাকে এই ভাবে ক্রস করেছে? ও যে এই হাউসের মালকিন সেটা কি অমিতাভদার মাধ্যমে আমাকে বোঝাতে চেয়েছে? যদি তাই হয় তাহলে আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বললো না কেন? কলকাতায় এখনও সেইভাবে শীত নেই। রাতের দিকে মাঝে মাঝে একটু ঠাণ্ডা লাগে। বেশিক্ষণ পাখার হাওয়া ভালো লাগে না। কেমন যেন শীত শীত করে। বেলটা বেজে উঠল। ঝটপট বিছানা থেকে টাওয়েলটা টেনে নিয়ে কোনওপ্রকারে কোমড়ে জড়িয়ে নিলাম। ভেতরের ঘর থেকে বাইরের ঘরে এলাম। দরজা খুলতেই একটা মিষ্টি গন্ধ আমার ঘ্রাণ শক্তিকে অবশ করলো। তনু সামনে দাঁড়িয়ে। আজকে ও খুব একটা বেশি সাজেনি। হাল্কা মেকআপ করেছে। কপালে ছোট্ট একটা বিন্দির টিপ। চোখের কোলে হাল্কা কাজলের রেখা। শ্বেত করবীর ওপর যেন কালো বোলতা বসে আছে। আমি একদৃষ্টে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। ও মিটি মিটি হাসছে। কি হলো, ভেতরে যেতে বলবে না, এখানে দাঁড়িয়ে ….। সরি।
Parent