কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১১২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3592166.html#pid3592166

🕰️ Posted on August 13, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 599 words / 3 min read

Parent
এটি একটি গল্প, কোনো সত্যি কাহিনী নয়   সমুদ্র শ্রুতির খুব ভালো লাগে। সেই ছোটবেলায় একবার কলেজ থেকে সমুদ্রে অবগাহন করতে কক্সবাজার গিয়েছিলো।সমুদ্রের বিশালতায় ওকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল কিন্তু অবগাহনে মনটা কি এক অনাবিল আনন্দে ভরে উঠেছিল, তা এত বছর পর এখনো মনে করতে পারছে।এখনো কান পাতলে সে সমুদ্রের গর্জন শুনতে পায়, ভাবে আবার কবে যাবে। কি মজাটাই না করেছিলো সেবার।চিন্তা করতে করতে শ্রুতির বুক থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠল শ্রুতি।দ্রুত মুক্তা আপার বাসায় যেতে হবে, আজকে রাতে নাকি একটা ভালো পার্টি আসবে। সকালে মুক্তা ফোন দিয়ে বলেছিলো রাতে কোনো কাজ না রাখতে, ছেলেটাকে খুশি করতে পারলে ভালো টাকা পাবে। বড় লোকের ছেলে, মাঝে মাঝে খেয়াল হলে আসে এবং আসলে তাকে সবচেয়ে ভালোটাই দিতে হবে, সে জন্য মুক্তা শ্রুতিকে ফোন করেছিলো। মুক্তার প্রতি শ্রুতি খুব কৃ্তজ্ঞ।ওদের বিপদে একমাত্র মুক্তাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।শ্রুতি অবশ্য এই লাইনে আসতে চায়নি। কিন্তু হঠাৎ করে ওর বাবা মারা যাওয়াতে ওরা বাস্তবিক অর্থেই বিপদে পড়ে গিয়েছিলো।তিন ভাই বোনের মধ্যে ওই সবচেয়ে বড়, ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে, ছোট দুই ভাই এখনো কলেজের গন্ডি পেরোয় নি। বাবা একটি কলেজে করণিক পদে কাজ করতো, খুব বেশী সৎ ছিলো মনে হয়, মৃত্যুর পর তার কোনো ব্যাংক একাউন্টের খোঁজ পাওয়া যায়নি, সঞ্চয়-ও খুব একটা করতে পারেনি।শ্রুতির মা তার কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে আর ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ের খরচ চালাতে গিয়ে চোখে অন্ধকারই দেখছিল, তার উপর আবার সাথে আছে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত শ্রুতির দাদী। শ্রুতি পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য একটা পার্টটাইম চাকরি পাবার অনেক চেষ্টা করেছিলো। অভিজ্ঞতার অভাব ছিল, তাই চাকরিও মিললো না।যেখানে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই, সেখানে নর মানুষের লোভী চোখের অভাব নেই, কিন্তু বেতন কম। ঠিক এই সময়েই মুক্তা এগিয়ে আসে।একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মুক্তার সাথে পরিচয়, সেখানকার রিসেপশনিষ্ট।ইন্টারভিউ রুম থেকে যখন বিষন্ন নয়নে বের হয়ে আসলো তখন মুক্তা শ্রুতির হাতে ফোন নম্বরটি দিয়ে বলেছিলো ফোন করতে। এখন সে প্রায়ই মুক্তার ফোনের অপেক্ষায় থাকে। মাসে মাত্র কয়েক টা রাত থাকা লাগে, কিন্তু পকেট ভারী হয়। বাকী সময়টাতে সে পড়াশোনা করতে পারে। মুক্তার সাথে কথা বলার পর প্রথমে সে রাজীই হয়নি, পরে প্রয়োজনের তাগিদে রাজী হয়। প্রথম প্রথম খুব অস্বস্তি লাগতো, নিজেকে অশুচি অশুচি লাগতো, এখন আর লাগে না।মাঝে মাঝে সমুদ্র-অবগাহনের কথা মনে পড়ে যায়, ভাবে কোনো একদিন সমুদ্র সঙ্গমে শুদ্ধ হয়ে আসবে। বাসা থেকে বের হবার সময় মা-কে বললো আজ রাতে সে বান্ধবীর বাসায় থাকবে, ক’দিন পর পরীক্ষা, একসাথে পড়বে। মা কিছু বলেনি, কখনো বলেনা, মা জানে শ্রুতি যেদিন রাতে বান্ধবীর বাসায় থাকে, তার পরের কয়েকটা দিন ভালো খাওয়া-দাওয়া হয়, সংসার খরচে বাড়তি কিছু টাকা আসে। সে কখনো শ্রুতিকে জিজ্ঞেস করেনি, কিভাবে টাকা আসে, কখনো জিজ্ঞেস করতেও চায়না, পাছে অপ্রিয় কথা শুনতে হয়। মুক্তার বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুবে গেলো। শ্রুতি সবসময় আগে আগে আসে, এসে বিশ্রাম নেয়, একটু মেকাপ লাগায়, নিজেকে মোহনীয় করে তোলার যাবতীয় চেষ্টা চলে। মুক্তা বলছে আজকের ছেলেটা বিশাল বড় লোকের ছেলে, মাঝে মাঝে আসে, ভালো লাগলে প্রচুর টাকা দেয়।ব্যবহার ভালো, দেখতেও রাজপুত্রের মতো।মুক্তার কথায় শ্রুতি হেসে ফেলে। রাজপুত্র শুনে ওর সমুদ্রের কথা মনে পড়ে যায়। এই সমুদ্র, সেই সমুদ্র নয়। ওদের ভার্সিটিতে পড়ে, দুই ব্যাচ সিনিয়র, সবার মাঝে খুব জনপ্রিয়। চেহারা রাজপুত্রের মতোই, বাবার মনে হয় কয়েকটা ইন্ডাস্ট্রি আছে। শ্রুতির হৃদয়েও এই সমুদ্র দোলা লাগায়, মনে মনে খুব করে চায় এই সমুদ্রেও অবগাহন করতে।কিন্তু কখনো কথা বলারও সুযোগ হয়নি, সমুদ্র-সঙ্গম তো দূরের কথা, সমুদ্র বোধহয় ওকে চিনেই না। ওর বুক থেকে আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। শ্রুতি রুমে একা বসে আছে। রাজপুত্রের মতো দেখতে ছেলেটা মাত্র এসেছে, মুক্তার সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষন পরই এই রুমে ঢুকবে।শ্রুতি দরজার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে……..। এ যে সমুদ্র! শ্রুতি পাথরের মতো ঠায় বসে আছে।চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামছে, আনন্দে না কষ্টে বুঝতে পারছে না, শুধু বুঝতে পারছে সে আবার সমুদ্রে অবগাহনে যাচ্ছে, সমুদ্র-সঙ্গমে সে শুদ্ধ হয়ে উঠবে, নীল-আকাশের মতো শুদ্ধ। (গল্পটি সংগৃহীত)
Parent