কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১১৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3618879.html#pid3618879

🕰️ Posted on August 20, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 594 words / 3 min read

Parent
#অণুগল্প সারাদিনের কাজ সেরে একটু ফেসবুকটা খোলে এইসময় রনিতা। নইলে সারাদিন আর সময় কই! ঊনকোটি, চোষট্টি কাজ সেরে এই রাত্তিরেই তো একটু নিজের জন্য সময় পায় ও। তা, আজও অভ্যেস মতো খুলল ফেসবুক। আর খুলেই দেখে অনেক বন্ধুরা তাদের তোলা সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়েছে ফেসবুকে । কেউ প্রকৃতির, কেউ ঈশ্বরের, তো কেউ মানুষের। সবাই এতরকমের ছবি দিয়েছে কেন? দেখে, আজ ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি ডে! তাই সবাই এত সুন্দর ছবি দিয়েছে! আচ্ছা! একটু পরে রুটি বানাতে হবে, ওবেলায় কিমার তরকারি বানানো আছে। হাতে একটু বেশিই সময় আছে ওর। সবার ছবি দেখে ওর ও ইচ্ছে করছে কোনো একটা ছবি পোস্ট করতে। কোনটা দেওয়া যায়? ইস, বিকেল বিকেল যদি ফেসবুকটা খুলত, অস্তগামী সূর্য, পাখি, গাছ... কিছু না কিছু তো তুলতে পারত ও! এখন এই অন্ধকারে আর কি ছবি উঠবে! ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ল, তাই তো! বাড়িতে জাবদা অ্যালবাম গুলো আছে তো! সেখান থেকেই একটা ছবি বেছে, তার ছবি তুলে পোস্ট করলে কেমন হয়? যেই না ভাবা, তাড়াতাড়ি একটা অ্যালবাম বের করল শোকেস থেকে। আর তারপরেই, চোখ আটকে গেল! মায়ের ছবি। ওর আইবুড়ো ভাতের দিন তোলা। বিভিন্নরকম ব্যঞ্জন সাজানো বাটিতে বাটিতে, মাঝে কাঁসার থালায় ভাত, ও একটা আসনের ওপর বসে আছে। সামনে মা... ধান দূর্বা দিচ্ছেন মাথায়। ছবিটা দেখতে দেখতে সেইদিনটাতে পিছিয়ে যাচ্ছিল রনিতা। ও একটা হলুদ শাড়ি পরে... মা একটা ঘিয়ে রং এর শাড়ি পরে আছেন। মায়ের খুব প্রিয় শাড়ি ছিল ওটা। ও টিউশানির টাকায় কিনে দিয়েছিল। মা আজ কোথায়! মায়ের কিছু শাড়ি এনে রেখেছে ও আলমারিতে সযত্নে। এটাও আছে।পরে ও মাঝে মাঝে... মায়ের গন্ধ আর স্পর্শ পায় যেন । এতগুলো বছর হয়ে গেল, তবু, মায়ের কথা মনে পড়লেই জল আসে চোখে... মা... মা... মা... "কি গো খেতে দেবে না?" সঞ্জয়ের গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠল রনিতা। ওই! কর্তব্য! এখন রুটি বানাতে যেতে হবে! এর নাম সংসার! "কি হলো? কাঁদছ কেন?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল সঞ্জয়। "না... কিছু না। যাচ্ছি। রুটি করতে হবে।" "ও। আচ্ছা তাহলে একটু পরে দিও। আমার একটা কল আছে, সেরে নিই।" বলে ঘরে চলে গেল সঞ্জয়। এই রাত নটায় কল! বাড়ি থেকে কাজ বলে সময়ের কোনো মাপকাঠি থাকবে না? আর, কতক্ষণ চলবে কে জানে? গরম গরম রুটি না হলে ভাল লাগে নাকি? মনটাও খারাপ। একটু কথা বললে ভাল লাগত। "নাঃ, যাই রান্নাঘরে" ভাবতে ভাবতে উঠতে যাবে, হঠাৎ দরজা খুলে বেরিয়ে এলো সঞ্জয়। যাক বাবা! ফোন তাড়াতাড়িই শেষ হয়েছে! "ট্যান ট্যানান! রনি! দেখো!" মজারু গলার আওয়াজ শুনে অবাক হয়ে তাকাল রনিতা। আর, চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল! মায়ের সেই ঘিয়ে শাড়ি! সঞ্জয় পরেছে! "এই পিউ! দেখ আমাকে কেমন লাগছে!" মায়ের দেওয়া ডাকনাম, 'পিউ' বলে ডাকে সঞ্জয়, গলাটা সরু করে, মেয়েলি ঢং এ! "এটা আবার কি হয়েছে? তুমি শাড়ি পরেছ কেন?" "সিম্পল! তোমাকে হাসাতে! এসে দেখলাম চোখ জল, হাতে অ্যালবাম... মায়ের ছবি খোলা। তাই বুঝে গেলাম... আর আলমারি খুলে এই শাড়িটা পেয়েও গেলাম। বারমুডার ওপরেই গিঁট দিয়ে পরেছি। আর এই দেখো, আমার স্টাইলিশ স্লিভলেস ব্লাউজ! " সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি পরা লোমশ হাত বার করে দেখায় সঞ্জয়। দেখেই, প্রচন্ড হাসি পেয়ে যায় রনিতার। পাগল ওর বরটা একদম! "যাক বাবা, শান্তি! মেঘের কোলে রোদ হেসেছে! আচ্ছা শোনো, এটা কবেকার ফটো? এত খাবার? আমি নেই কেন?" হিংসুটে গলায় জিজ্ঞেস করে সঞ্জয়। "কিভাবে থাকবে? এটা আমার আইবুড়ো ভাত। তোমার জীবন আলো করতে আসিনি তখনও আমি!" বলে রনিতা। একটু আগের কান্না বদলে গেছে হাসিতে "ঘাড়ে চাপতে বলো! হা হা! আচ্ছা, এত জম্পেশ খাবারের ছবি যখন, আজ আর রুটি করো না, আমি কিছু অর্ডার করে দিচ্ছি। যে তরকারিটা আছে, ওটা কাল আমাকে টিফিনে দিয়ে দিও" বলে সঞ্জয়। "আচ্ছা" বলে ফিক করে হাসে রনিতা। সঞ্জয়ের একটা ছবি তুলে নিয়েছে ও। ওটা দেখিয়ে, "ফেসবুকে পোস্ট করে দেব" বলে ভালোই ব্ল্যাকমেল করতে পারবে! একটু আগের মনখারাপ তখন ছুমন্তর! ছবি - যেমন ফেলে আসা দিনের কথা ভেবে মাঝেমাঝে দুঃখ দেয়... তেমনি স্মৃতিতে রাখা ছবি আনন্দ দেয় বড্ড...
Parent