কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-2569665.html#pid2569665

🕰️ Posted on October 29, 2020 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 513 words / 2 min read

Parent
মাতৃরূপেন গত কয়েকদিন ধরে আকাশের মুখ ভার থাকার পর আজ বেশ সোনা রোদ্দুর উঠেছে। কিন্তু, আজ ও যে ঝিমলির মন খুব খারাপ! একবছর আগেও আজকের দিনটা ছিল অন্যরকম। শত ব্যস্ততার মধ্যেও এই দিনটাতে চেম্বার বন্ধ রাখত ঝিমলি...তন্ময় ও চেষ্টা করতেন সন্ধ্যে সন্ধ্যে ফেরার। বা, রাত হলে খাবার প্যাক করিয়ে নিয়ে আসার। উনি না আসা পর্যন্ত বরণের পরের সিঁদুর মাখা গাল -মুখ নিয়ে বসে থাকত ঝিমলি...একটু আবেশ ভরা চোখের অপেক্ষায়...। ওইটুকুই তো পাওনা ছিল প্রতিবছর। বিয়ের আগে থেকেই জানতেন, একজন ডাক্তার, একজন পুলিশ - পুজোপার্বনের দিনে সেভাবে একসাথে ছুটি পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাতে বিয়ে, ভালোবাসা কোনোটাই আটকায় নি। যে যে বছর তন্ময়ের ডিউটি থাকত, সেই বছর গুলোতে ঝিমলি অনেকগুলো সেলফি তুলে পাঠাত ওঁকে। এইভাবেই ছ' ছটা বছর কেটেও গেছিল। ভালোবাসায়...আগলে রাখায়...। কিন্তু সব হিসেব পালটে গেল এইবছর। মার্চ-এপ্রিল-মে ঠিকভাবে কাটার পরে জুন মাসে ভাইরাস ধরাশায়ী করে ফেলল তন্ময়কে। ঝিমলিকেও। তবে...তন্ময় আর ফিরলেন না। ঝিমলিকে এক অন্তহীন অপেক্ষার মধ্যে ফেলে পাড়ি দিলেন এক আজানা দেশে.... মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না। তাই হাতের কাজ গুলো সারছিল ঝিমলি। এবছর পাড়ার পুজোও নমো নমো করেই হয়েছে। মাইকে মন্ত্র শুনে অঞ্জলি দিয়েছেন সবাই। আজও পুজোকমিটির পক্ষ থেকে নাকি মাত্র একজন বরণ করবেন, সিঁদূর খেলা, ভাসানের শোভাযাত্রা বন্ধ। সকাল থেকে এই ঘোষনা শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে ওর! আজকাল আর কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। আজ রান্নার দিদিও আসবেন না। তাই একার জন্য সিদ্ধভাত বসিয়ে ঘরে এসেছে ঝিমলি, হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ। "এইসময় আবার কে এলো!" ভাবতে ভাবতে দরজা খুলল ও, আর খুলেই অবাক। সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তারাপদ কাকু, এই পাড়ার প্রবীন মানুষ এবং পুজোর মূল উদ্যোক্তা। পিছনে আরও দুজন। পুজোর চাঁদা দেওয়া হয় নি এবছর! মাথাতেই ছিল না...তাই হয়ত এসেছেন ওঁরা...ভাবতেই ভীষণ লজ্জা লাগছিল ঝিমলির। "মা, তুমি কি আজ চেম্বারে যাবে?" জিজ্ঞেস করলেন তারাপদ কাকু। অবাক হলো ঝিমলি। বলল "না কাকু, আমি আজ বাড়িতেই থাকব।" তারপর যোগ করল, "কিছু সমস্যা হয়েছে, কাকু?" "না মা, সমস্যা কিছু না...আসলে আমরা ভাবছিলাম...আজ তো মা চলে যাবেন...তা তুমি যদি মা কে বরণ করতে আমাদের সবার পক্ষ থেকে.." বরণ! ও! অবিশ্বাস্য লাগছিল ওর। কাকু এটা কি বলছেন! একজন প্রবীন মানুষ হয়ে মজা করছেন ওর সাথে! ওর জলভরা চোখের দিকে তাকিয়ে একটু চুপ করে রইলেন উনি। তারপর বলে উঠলেন "এই ক'টা দিনের জন্য মা আসেন আমাদের কাছে...মেয়ে হয়ে। বরণের পরে তো তিনি শ্বশুরঘরে যান...তা মেয়ের কাছে মায়ের ভালোবাসা আর স্নেহটুকুই যে সব গো মা...তাই বিধবা মা আর সধবা মা...দুজনেই যে তাঁর কাছে সমান... তন্ময় আর তুমি যেভাবে মানুষের সেবা করেছ, ভালোবেসেছ...কর্তব্যে অবহেলা করোনি দুজনের কেউ...এমনকি ডিউটির জন্যই তন্ময়ও....তুমি খুব ভালো মা...মা দুর্গার মতোই মহিয়সী আর শক্তিশালী...তাই মেয়েকে বিদায় দেবার অধিকার তো তোমার ও আছে...।" স্তব্ধ হয়ে শুনছিল ঝিমলি। মা! বায়োলজিক্যাল মাদার তো হওয়া হলো না...কিন্তু স্বয়ং মা কে আদর করে, মিষ্টিমুখ করিয়ে..."আবার আসিস মা" বলতে পারবে ও? আর কন্যারূপী জগজ্জননী তাতে খুশি হবেন? চোখ ফেটে জল আসছিল ঝিমলির। সত্যি তো...ওর ও তো বাবা নেই, কিন্তু তা বলে কি মা ওর 'মা' নন? প্রতিবার ওই বাড়ি থেকে আসার সময় "সাবধানে থাকবি, খাবি ঠিকমতো... কী চেহারা হয়েছে...এই নে একটু লাউচিংড়ি.." বলে টিফিনবাক্স হাতে ধরিয়ে দেন না? তেমনি ও ও তো...পারবে ও? "কাকু একটু দাঁড়ান, আমি এক্ষুণি আসছি, মাস্ক টা নিয়ে" হেসে বলে ঘরে চলে এলো ঝিমলি। বাইরে তখন ঝকঝকে রোদ্দুর - ঠিক ওর হাসিটার মতোই...।।
Parent