কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১২২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3638183.html#pid3638183

🕰️ Posted on August 27, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 462 words / 2 min read

Parent
#অন্য_রূপকথা অনেকদিন পরে আজ আমার এক পরমাত্মীয়ের বাড়ি গেছিলাম। বাগবাজারে। অনেক, অনেক দিন... তা প্রায় বছর কুড়ি আগে থেকেই জানি আমার আরেকজন 'মা' আছেন। যিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্ধকার সময়েও বলতে পারতেন "আমি সতের ও মা, অসতের ও মা"। যিনি বলতেন "আমি তো আছি তোমাদের জন্য!" আজ, সেই মা, শ্রী শ্রী সারদা মায়ের বাড়ি গেছিলাম। সপ্তাহ দুয়েক হল, মনটা ভাল নেই একদম। এমনি মজা করছি, সাজুগুজু করে সেল্ফি তুলছি, অফিসের কাজ করছি... কিন্তু সব ই কেমন ওপর ওপর। তা, মায়ের কাছে তো কিছুই গোপন থাকে না, তায়, তাঁর বাড়িতে গেছি, তাই হয়ত মা ই আমার মন ভাল করে দিলেন আজ। শুধু ভাল না... অপার্থিব আনন্দে টইটুম্বুর মন। হয়েছে কি, মা কে দর্শন করে এসে ভাবলাম একটু হাঁটা যাক। তাই, বাগবাজার ব্রিজের দিকটায় এগোচ্ছিলাম। তখন ক'টা বাজে... এই সোওয়া পাঁচটা বা সাড়ে পাঁচটা। সূয্যিমামা তখনও অস্ত যান নি। বাগবাজার স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে গিরিশ এভিনিউ দিয়ে হাঁটছিলাম। পথে একটি বস্তির মতো জনপদ পড়ে। তা, সেখানেই, দেখা পেলাম আমার সব মন খারাপকে ছুমন্তর করে দেবার কারিগরকে। আদুল গা, টিংটিং করছে রোগা, লাল হাফ পেন্টুলুন পরা এক শিশু ভোলানাথ। ওই জায়গাটি বেশ অপরিসর। তাই তাকে "একটু সাইড দাও" বলায় দেখি একটা হাত খানিকটা ওপরে তুলে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মাস্ক নেই, তাই স্বভাবমতো বললাম "এই ছেলেটা, তুই মাস্ক পরিসনি কেন? জানিস না, ওই দুষ্টু করোনা দৈত্যটা এখনও আছে?" তা, সে সামনের ফোকলা দাঁতগুলো বের করে হেসে বলল "আমি তো বাড়িতেই ছিলাম, ফটো তোলার জন্য এলাম!" হাতে মোবাইল টোবাইল কিচ্ছু নেই, এদিকে উনি ফটো তুলছেন! তাই বললাম "হয়েছে? ফটো তোলা? যা, এবার বাড়ি যা।" "এই তো তুলছি" বলে, আরেকবার হেসে আকাশের দিকে তাকাল ফোকলারামটা! অবাক হয়ে দেখলাম, চোখটা বড় বড় করে, ডান হাতটা উঁচু করে সূর্য্যের দিকে তাকিয়ে আছে সে। কমলা রং এর অস্তগামী সূর্য্য। "হয়ে গেছে ফটো তোলা, এবার যাই!" "হয়ে গেল? কি তুললি দেখা?" আমি তো বাচ্চাদের সাথে খেলতে, বন্ধুত্ব করতে খুব ই পটু, তাই স্বভাবমতোই জিজ্ঞেস করলাম। "ওমা, এইই তো সামনে কী সুন্দর সুজ্জ (একটু উচ্চারণের দোষ ছিল ওর, তাই এই বানান লিখলাম)... তুমিও আমার মতো মাথায় ছবি তুলে নাও, আর ভুলবে না!" "মাথায় ছবি তুলে নেব?" "হ্যাঁ, তাহলে সবসময় মনে থাকবে! আর মনে পড়লেই ভাল লাগবে! " ব্যাগেই মোবাইল ছিল। কত মেগা পিক্সল ক্যামেরা ভুলে গেছি, কিন্তু বেশ ভাল ছবি আসে। কিন্তু, সেই মোবাইল হাতে নিতে ইচ্ছেই করল না। এই বাচ্চাটার সাবলীলতার পাশে মোবাইলের কৃত্রিমতা একদম মানানসই না। আর...মাথায় ছবি তোলা... যাতে মনে থেকে যায়! কে পারে এমন ভাবে বলতে! মুহূর্তকে উদযাপন করার সাধ্যি কজনের থাকে? সময়কে হৃদয়ে বন্দী করার সদিচ্ছাই বা কজন রাখতে পারে? "আমি আসছি" বলে একছুট্টে চলে গেল সে। আমার সামনে রক্তাভ, জবাকুসুমসঙ্কাশ সূর্য। তেজোময়। দৃপ্ত। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। দূর হয়ে যাচ্ছে অতিমান-অভিমান-অতিক্রোধ। অদ্ভুত একটা প্রশান্তি মনের মাঝে। সব ওই পুঁচকেটার জন্য। আমার শিশু ভোলানাথটার জন্য। একটু আগে শোনা একটা কথার পুনরাবৃত্তি করলাম মনে মনে.. "আমি আসছি!" জীবনের কাছে। শিকড়ের কাছে। নিজের কাছে । আমি খুব, খুব, খুউউউউউব ভালো আছি আজ...।।
Parent