কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১২৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3672631.html#pid3672631

🕰️ Posted on September 6, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 780 words / 4 min read

Parent
ভাবতে ভাবতেই ব্যাকপ্যাক টা খুলে ওষুধের স্ট্রিপ টা বের করল ও। আটটা স্ট্রিপ, দশটা করে আছে...। আশিটা ওষুধ...। তারপর ই অপার শান্তি। ওষুধ গুলো বের করে ঘরে রাখা প্লাস্টিকের টেবিল টায় রাখল নিলয়। আর তখন ই সামনের ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটায় চোখ গেল ওর। বাবা মায়ের বিয়ের ড্রেসিং টেবিল! মা চলে যাবার পর বাবা ছোট ঘর টায় শিফট করেছেন, আর ও বাবা মায়ের ঘরে। তাই মায়ের ড্রেসিং টেবিল, কাঠের আলমারি...সব ই রয়ে গেছে এই ঘরেই। আলমারির কথা মনে পড়তেই আরো একবার নিজের প্রতিবিম্ব টা দেখে নিলয়। আর দেখেই কেমন একটা ঝটকা লাগল ওর। ইস! কি বিচ্ছিরি লাগছে ওকে! দাড়ি বেড়ে বেড়ে জঙ্গল হয়ে গেছে। চোখের কোলে গাঢ় কালি। কোঁকড়ানো চুল ঘাড় ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রায়! আর জামা টা! একটা হাত কাটা স্যান্ডো গেঞ্জি তাতে আবার বুকের কাছে দুটো ফুটো আর চেক চেক বারমুডা। ইস! কাল যখন ওর মরে যাবার খবর পেয়ে বাড়িতে লোকজন দেখতে আসবে, ওকে দেখেই তো ঘেন্না পাবে। না না, জীবনের শেষ কটা মুহুর্ত এভাবে কাটানো যাবে না। আলমারি থেকে একটা লাল টি শার্ট আর একটা নীল রঙের ট্র‍্যাক প্যান্ট বের করে পরল ও। তারপর কি মনে হতে ট্রিমার টা বের করে দাড়ি টা কেটে ফেলল। হ্যাঁ এবার একটু ভদ্র ভদ্র লাগছে! তারপর, আবার, কি মনে হতে কোনে রাখা ক্রিমের কৌটো থেকে একটু ক্রিম নিয়ে লাগালো মুখে। যদি বাই চান্স মিডিয়া আসে, 'মানসিক অবসাদে ভোগা যুবকের মৃত্যু' লেখা নিউজের সাথে ওর ছবি ও বের হয়, নিছক খারাপ লাগবে না ওকে। আর এই কথাটা ভাবতেই একটু হাসি পেল ওর। ধুর! ওর মতো কীটপতঙ্গ তো রোজ কতই মরছে! তার আবার মিডিয়া! পেপারে ছবি! সখ কম না! পায়ে পায়ে সেই প্লাস্টিকের টেবিলের সামনে এলো ও। ওষুধের স্ট্রিপ ক'টা...এবার ডাকছে ওকে। একটা স্ট্রিপ হাতে তুলে নিল। আহ্! আর মাত্র কিছুক্ষণ! তারপর ই মুক্তি! আর এটা ভাবতেই দেখে জল আনা হয়নি। জল রয়ে গেছে ফ্রিজে। আর জল...অনেক অনেক জল লাগবে আজ। এতগুলো ওষুধ...চাট্টিখানি কথা তো নয়! দরজা খুলে ড্রায়িং রুমে রাখা ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেল ও। ওদের পুরোনো আমলের ফ্ল্যাট বাড়ি। দুটো ঘর, মাঝে এক চিলতে জায়গা, যার বাহারের নাম 'ড্রয়িং রুম'! আসলে একটা সোফা আর দুটো প্লাস্টিকের চেয়ারেই ভর্তি। আর এক কোনে এক ফালি রান্নাঘর আর এক কোনে বাথরুম। কোনো বারান্দা নেই। এই ঘরেই তো কেটে গেল আশৈশব! কত ইচ্ছে ছিল বড় বাড়ি হবে...থ্রি বি এইচ কে! বাবা মা, ও, শর্মিলা...সবাই মিলে...ধুর! সব শেষ হয়ে গেল! এইভাবে! আজ ই! ফ্রিজ থেকে জলের দুটো বোতল বের করে একবার চোখ বুলিয়ে নিল পুরো ঘরে। মায়ের স্মৃতি মাখা ঘর...ঠাম্মাকেও আবছা মনে আছে...। ওর যখন বছর দশেক তখন ঠাম্মা মারা গেছিলেন...। কত ভালবাসতেন ওকে। 'দাদুভাই দাদুভাই' বলে অস্থির হতেন! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে ফিরে এলো ও। দরজা আটকাতে যাবে, শোনে বাবার কাশির আওয়াজ। একটানা খকখক করে কেশেই চলেছেন। ঠান্ডা লাগান বড্ড! এই ওয়েদার চেঞ্জের সময়েও মর্নিং ওয়াক ছাড়েন নি। এখন ভোগো! জলের বোতল দুটো টেবিলে রাখে নিলয়। দেখে, টেবিলের এক কোনে একটা কাশির সিরাপ। ডাক্তারকাকু ওকে দিয়েছিলেন। কি মনে হতে সিরাপ টা নিয়ে বাবার ঘরে যায় ও। বাবাকে একটু খাইয়ে দেওয়া দরকার। 'বাবা, বাবা' বলে ডেকে ওঠে ও। বাবা সাড়া দেন না। গভীর ঘুম বাবার চোখে। হাল্কা নীল লাইট জ্বলা ঘরে নিলয় দেখে বাবা ঘড়ঘড় করর শ্বাস নিচ্ছেন। আর কন্ঠার হাড়গুলো দেখা যাচ্ছে একেবারে। নিঃশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে বলেই হয়ত, একটু হাঁ করে আছেন বাবা। কি অদ্ভুত অসহায় লাগছে বাবাকে! কেন জানি চোখে জল এলো ওর। বাবা! বাবা! বাবা! কি অসহায় একজন মানুষ! মা নেই, আর ও ও পালিয়ে যাচ্ছে। এই মানুষ টাও কি আর বাঁঁচবেন তাহলে! সেতো একদিন যেতে ই হবে সব্বাইকে...। তা বলে...সন্তান হারানোর কষ্ট নিয়ে? আর...ও ঘুমিয়ে আছে ভেবে বিরক্ত না করা বাবা...যখন... হয়ত ওর সাড়া না পেয়ে, পাশাপাশির বাড়ির লোকেদের ডেকে দরজা খুলবেন...দেখবেন ও আর নেই... আর ভাবতে পারল না নিলয়! প্রায় ছুটে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। বসার ঘরের চেয়ারে বসে রইল খানিকক্ষণ। নাহ্! এটা ঠিক না! আবার বাবার কাশির দমক উঠল একবার। গা ঝাড়া দিয়ে উঠল নিলয়। স্যুইচ টিপে আলো জ্বালিয়ে দিল। দেখে, কাশির চোটে উঠে বসেছেন বাবা...। 'বাবা? এই যে একটু জল খাও। তারপর এই ওষুধ টা খাও।' বাবার হাতে একটা বোতল ধরিয়ে পিঠ টা ধরে ওর। হাড় গুলো উঁচু হয়ে আছে একেবারে! আহা রে! বাবার জল খাওয়া শেষ হলে ওষুধ মেপে দেয় ও। বাবা শোবার আগে বলেন 'তুই তো রাতে না খেয়ে ঘুমোতে পারিস না...ভাত তো খেলি না...এক কাজ কর না...কটা জয়নগরের মোয়া এনেছিলাম...পাড়ার মোড়ে দোকান দিয়েছে...তুই ভালবাসিস...দুটো খেয়ে জল খেয়ে তারপর শো...' বাবার এই কথায় একটু জল আসে ওর চোখে। এই মানুষ টাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিল ও? 'হ্যাঁ বাবা, খেয়ে নিচ্ছি। তুমি একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো। কাল ডাক্তারকাকুর কাছে নিয়ে যাব। "না" বললে শুনব না..' বলে আবার ফ্রিজের কাছে এসে, ফ্রিজটা খোলে ও। খুব, খুব ক্ষিধে পেয়েছে! শুধু জয়নগরের মোয়ার ক্ষিধে না! ভাল থাকার ক্ষিধে! বেঁচে থাকার ক্ষিধে! ভাল ভাবে বেঁচে থাকার ক্ষিধে! শর্মিলা, ওর ম্যানেজার- চুলোয় যাক! দরকার পড়লে এই বিচ্ছিরি চাকরি ছেড়ে দেবে ও। আরেকটু ছোট ব্র‍্যান্ড, হয়ত একটু কম মাইনে পাবে। কিন্তু এবার, আরো একবার ভাল থাকবে। থাকবেই।।
Parent