কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১৩৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3715412.html#pid3715412

🕰️ Posted on September 18, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 452 words / 2 min read

Parent
#অন্য_রূপকথা   কালকের বৃষ্টিতে অফিস যেতে গিয়ে খুব ভিজে গেছিলাম আমি। আজ সকাল থেকেই জ্বর জ্বর ভাব, আর সেই সঙ্গে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা! তাই বাধ্য হয়েই বাড়ি থেকে কাজ করছিলাম। বিকেল থেকে শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছিল। বৃষ্টিও আর পড়ছিল না। তাই কাজ থেকে একটু ব্রেক নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম পাড়ার মধ্যেই। কিছুদূর যাবার পরেই, নাকে এলো বেশ ঝাঁঝালো একটা গন্ধ। এক লহমাতেই আমার বাঙালি নাক বুঝে নিল "এটা তেলেভাজার গন্ধ, আর আমাকে খেতেই হবে!" তাই আমিও প্রতিবছরের মতো "পুজোর আগে রোগা হতেই হবে" স্কিমকে "নিকুচি করেছে" বলে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। গিয়ে দেখি, সবে ভাজাভুজি শুরু হয়েছে। একজন বয়স্ক মানুষ পাম্প স্টোভটির সামনে বসে আছেন, আরেকজন, কিশোরী প্রায়, ভাজার আগে আলুর চপের যে চ্যাপ্টা একটা আকার থাকে না? সেটা তৈরি করছে। সামনে একটা ডেকচিতে বেসন গোলা। আরেকটি থালায় পাতলা করে কাটা বেগুনের টুকরো রাখা। আছে। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম "কত দেরি হবে? দুটো আলুর চপ আর দুটো বেগুনি।" "এই এক্ষুণি হয়ে যাবে।" বলে আমার ফরমায়েশ মতো জিনিস গুলো গরম তেলে দিলেন ওই ভদ্রলোক। হঠাৎ, আমার পিছনে একজন এসে, বেশ একটু কেমন করে বলে উঠলেন "এই যে! চপ কত করে?" "পাঁচ টাকা" উত্তর দিল মেয়েটি। "উঃ, এইটুকু টুকু চপ, পাঁচ টাকা! দুদিন আগে তো চারটাকা ছিল।" আবার ও কানে লাগল কথা গুলো। আসলে বলার ভঙ্গিতে একটা অভব্যতা ছিল। "না বাবু, আমাদের তো পাঁচটাকা করেই চপ।" শান্তভাবে উত্তর দিলেন বয়স্ক মানুষটি। ক্রেতাটি কিছু বলার আগেই হাতের কাজ থামিয়ে সোজাসুজি তাকাল মেয়েটি। তারপর বলল "আপনার মাস্ক কই?" আমিও ঘুরে তাকালাম। বারমুডা আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরা, মুশকো গোঁফওলা লোক, মুখে মাস্ক নেই। "ধুর বাঁ! এখন করোনা মরোনা কিছু নেই, তাই মাস্ক পরিনা।" জবাব এলো। হাতের কাজ থামিয়েই রেখেছিল মেয়েটি। খুব ঠান্ডা গলায় বলে উঠল "আপনাকে বেচব না।" "কেনোওও?" "একে তো আপনি মাস্ক পরে আসেন নি, তারপর আমাকে বিনা কারণে গালি দিলেন। আপনাকে চপ দেব না।" "দিবি না? বউনির সময় নখরা? কে বে তুই?" বোমা ফাটার মতো আওয়াজে শুনলাম। আমিও প্রতিবাদ করব বলে ঘুরে দাঁড়াতে গেছি, হঠাৎ শুনি মেয়েটি বলে উঠল "আমার মা মে মাসে করোনায় মারা গেছেন। আমাকে একবার দেখতেও দেয় নি। যা খারাপ হবার হয়ে গেছে। বউনি টউনি বুঝি না, আপনাকে চপ দেওয়া যাবে না। এখানে হুজ্জুতি করবেন না।" ঠান্ডা গলায় বলা ক'টি শব্দ। লোকটি একটা অক্ষমের "হুঁহ্" বলে চলে গেলেন। আমি চুপ করে রইলাম। মনে মনে নতজানু হয়ে। এই যে মেরুদন্ডের জোর, প্রতিবাদের ক্ষমতা, কালোকে কালো বলার স্পর্ধা আর সিদ্ধান্তে অবিচল থাকা - বড্ড ভাল লাগল। তাও জিজ্ঞেস করলাম "এভাবে না করে দিলে? তোমার সাহস আছে! " আমার কথা শুনে মেয়েটি একটু হাসল বোধহয়। মানে, গলাটা ওমনি লাগল। তারপর বলে উঠল, "মা চলে যাবার পরে সাহস করে দোকান খুলেছি দিদি। কিছুই পারতাম না প্রথম প্রথম। সাহস ছিল বলেই তো!" চোখ ভরে জল এলো। সাহসী এবং আত্মপ্রত্যয়ী। এই মেয়ে আগুনের মতো। এই মেয়ে পারবে। আরও অনেক কিছু করতে পারবে। বড্ড মন ভরে গেল আজ। এই সাহসিনী বিজয়িনী হবে। হবেই।
Parent