কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১৪১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3732842.html#pid3732842

🕰️ Posted on September 23, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 780 words / 4 min read

Parent
এই বাড়ির  ঠিক  পেছনে এখন  বিদ্যাসাগর  স্ট্রিটে ছিল বিপ্লবী পুলিন দাসের  আখড়া। এখানে লাঠি খেলা শেখানো  হতো।  এই বাড়িতে বিপ্লবীদের  আনাগোনা  ছিল  তাই ছিল পুলিশের  নজর। ঢাকা তে অনুশীলন সমিতির দপ্তর সামলানোর পর পুলীন দাস শুধু লাঠি নয় ছোরা চালানোর শিক্ষা ও দিয়েছেন। এখন ওখানে পৌরসভার  কমিউনিটি  হল হয়েছে।  পার্শীবাগান থেকে মিনিট খানেক  হাঁটলে যাওয়া  যায়  বিদ্যাসাগরের  বাড়ি।  সে বাড়ি আজও  দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়।  এ বাড়ির  সামনে দিয়ে আমি বহুবার  যাতায়াত  করেছি  আর ভেতরেও  বহুবার  গিয়েছি।  আশি নব্বই এর দশকে এখানে গাড়ি মেরামত  করার  গ্যারাজ  ছিল,  সেই  সুবাদে আমি অনেক বার গিয়েছি।  এ বাড়ি তো তীর্থ ক্ষেত্র।   মানুষ  হয়তো বিশ্বাস  করবে না যে এই বাড়ির  সামনে দাঁড়ালে  অথবা ভেতরে গেলে আমার  একটা অদ্ভুত  অনুভূতি  হতো। আমার  মনে হতো যে যেখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠিক  সেইখান দিয়ে  বিদ্যাসাগর  মশাই  যাতায়াত  করতেন  আর এখনই  বেরোবেন।  ঐ ভদ্রলোক  কে নিয়ে চিরকাল  একটা ভয়  মিশ্রিত  শ্রদ্ধা  ছিল।  এইখানেই  ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ  ঘোড়ার গাড়ি  করে নেমে এসে বলেছিলেন,  সাগর  দেখতে এলাম। এইসব ভাবতে গিয়ে মন আমার  চলে যেত  কোন সুদূরে।  হঠাৎই  একদিন  নিমন্ত্রণ  পেলাম  বিয়ে উপলক্ষে  মেদিনীপুরের  বীর সিংহ  গ্রামে।  চলে গিয়েছিলাম  আর দেখে এসেছিলাম ঐ মহাপুরুষের  জন্মস্থান।  সময় টা 1999  আমি তখন  বাঁধা সরকারি উকিল  হাইকোর্টের।  বিভিন্ন  দপ্তরের  মামলা করতে হতো, জমি দপ্তরের  মামলার  অন্য  লোক ছিল।  হঠাৎই  টেবিলে  দেখলাম  বিদ্যাসাগরের  বাড়ির  অধিগ্রহণের  মামলা।  কয়েক ঘণ্টা  বাদেই  মামলা। ফাইল  আনিয়ে প্রস্তুত  হয়ে নিলাম।  জোর মামলা হলো। দু পক্ষের  কথা শুনে জজ সাহেব  ফাইল  চেয়ে বাড়ি  নিয়ে গেলেন।  পরের মামলার দিন উনি রায়  দিলেন যে অধিগ্রহণ  বৈধ।  আমি জিতে গেলাম।  এরপর  আপিল কোর্ট আর সুপ্রিম কোর্টে  গিয়ে  আবার  জিতেছিলাম।  এ মামলায়  আমার  ওপর  অসম্ভব  চাপ  ছিল।  সুপ্রিম কোর্টের মামলা  জিতে দিল্লি থেকে খুব  আনন্দ করে সেইদিন  বাড়ি ফিরলাম।  বিদ্যাসাগরের জন্য একটা ভাল কাজ করে সেদিন  নিজেকে  খুব  ধন্য  মনে করেছিলাম। জীবনে একটা ভাল কাজ তো করলাম।  ঐ বাড়ি এখন  বিদ্যাসাগর  মহিলা  কলেজের তত্ত্বাবধানে।    বিদ্যাসাগরের  বাড়ির  সামনেই  একসময়  ভাড়া থাকতেন  সঙ্গীত  পরিচালক  অনাদী  দস্তিদার।  তার জামাই  ছিল  বিশিষ্ট  সাংবাদিক  অমিতাভ  চৌধুরী।  দুজনকেই আমি দেখেছি।  বিদ্যাসাগরের  বাড়ির  ঠিক  পেছনে  ছিল  ভারতের  প্রাক্তন  অর্থ মন্ত্রী  সচিন  চৌধুরীর  বিশাল  বাড়ি।  সে বাড়ি এখন  নেই  তার জায়গাতেই  দুটো নতুন  বাড়ি  হয়েছে। পাশেই  ছিল একটা বিরাট  পুকুর,  লোকে বলত  চৌধুরী  পুকুর।  সে পুকুর  এখন  বিদ্যাসাগর  সন্তরণ ক্লাব।  বাদুড় বাগান  লেনে আছে বিদ্যাসাগর  পার্ক  তারই  সামনে একসময়  একটা পুরাতন  মেস  বাড়ি  ছিল।  সেই  মেস বাড়িতে  একসময়  থেকেছেন  কথা সাহিত্যিক  শরৎ  চন্দ্র  চট্টোপাধ্যায়। সে বাড়ির ঠিকানা ২৭ নং বাদুড় বাগান লেন। এখন সে বাড়ির জীর্ণ ভগ্ন দশা। খুব বেশি দিন হয়নি মেস উঠে গেছে আর বাড়ি হাত বদল হয়েছে। কালের নিয়মে এই বাড়ি ভেঙ্গে নতুন বাড়ি তৈরী হবে।    খোঁজ করলে এই অঞ্চলে  আরও  অনেক  বড় মানুষের  থাকার  হদিস  পাওয়া  যাবে।  বাদুড়  বাগানের  লাগোয়া  সুকিয়া  স্ট্রিট-গড়পাড় অঞ্চল।  এখানেও  অনেক  ইতিহাস।  উপেন্দ্র  কিশোর,  সুকুমার,  আরও পরে সত্যজিৎ।  এখানে থাকতেন  ভাষাবিদ  হরিনাথ দে, ব্যায়ামাচার্য  বিষ্টু  ঘোষ, তার দাদা সাধক  যোগানন্দ  গিরি  (  Autobiography  of An Indian  Yogi  র লেখক), আয়রণ  ম্যান  নীলমনি দাস। পাশেই  থাকতেন  সাধু নগেন্দ্র নাথ (যাঁর নামে নগেন্দ্র মঠ)। প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রমানন্দ চট্টোপাধ্যায় এই অঞ্চলেই থাকতেন।  সবাইকার  কথা বলতে গেলে আমার লেখা সীমানা  ছাড়িয়ে  যাবে।  তবে দুটো বিশেষ  বাড়ির কথা না বললেই নয়।  প্রথম  বাড়িটা  রমা প্রসাদ  রায়ের  যেটা লোকে জানে রামমোহনের  বাড়ি বলে।  এ বাড়ি  তৈরি করেছিলেন  রামমোহনের কনিষ্ঠ  পুত্র  রমা প্রসাদ।  তিনি আজীবন  এ বাড়িতে  থাকতেন।  রমা প্রসাদ  ছিলেন খুব  গুণী  মানুষ। সংস্কৃত  ও ফারসী  ভাষায়  তার ছিল  অগাধ পাণ্ডিত্য। তিনি ছিলেন  ডেপুটি  কালেক্টর  তারপর  চাকরি ছেড়ে আইন  ব্যবসায়  নামেন।  1862 সালে তিনি বাঙলার  লেজিসলেটিভ  কাউন্সিলের  সদস্য  নির্বাচিত  হন। ঐ বছরেই  তিনি কলকাতা  হাইকোর্টের  প্রথম  ভারতীয়  বিচারপতি  হিসেবে  নিযুক্ত  হয়েছিলেন। কিন্ত  কপালের  লিখন  বিলেত  থেকে warrant  এসে পৌঁছাবার  আগেই  তিনি দেহ  রাখলেন।  পরের  বছর  প্রথম  ভারতীয়  বিচারপতি  হবার  সম্মান  পেলেন  শম্ভু  নাথ  পণ্ডিত।  হাইকোর্টে  শম্ভু  বাবুর  বিশাল  ছবি টাঙানো  আছে কিন্তু  রমা প্রসাদ কে মানুষ  মনে রাখে নি। তিনি বিদ্যাসাগরের  সঙ্গে বিধবা  বিবাহ  আন্দোলন  ও আরো জনহিতকর  আন্দোলনে  যুক্ত  ছিলেন।  তার বাড়ির  উল্টো  দিকে একটা কানা গলি আছে ওনার  নামে।  এই বাড়ি  থেকে কৈলাস  বসু স্ট্রিট  দিয়ে একটু এগোলে পাবেন আজকের  48 নম্বর  বাড়ি।  এই বাড়িতে  বিদ্যাসাগরের  আন্তরিক  প্রচেষ্টায়  অনুষ্ঠিত  হয়েছিল  প্রথম  বিধবা বিবাহ।  এই বাড়ির  এক তলার  একটা ঘরে কিছুদিন  ছিলেন  অসুস্থ  মাইকেল মধুসূদন।  এ বাড়ির  বাম  দিকের  অংশ  পরে কিনে নেন  তখনকার  বিখ্যাত  ডাক্তার  শিবপদ  ভট্টাচার্য্য।  ডাক্তার বাবুর  নাতি ও নাতবৌ,  সৌমিত্র ও মৌ আমার  বাল্য বন্ধু।  তাই  এই ঐতিহাসিক  বাড়িতে আমার  অনেক বার  যাওয়ার  সৌভাগ্য  হয়েছিল।  এখন  আবার  হাতবদল  হয়েছে।    এই পুরো পার্শীবাগান,  বাদুড়  বাগান,  গড়পাড়,  সুকিয়া  স্ট্রিট  অঞ্চলে আরও  অনেক  বড় মানুষ  ছিলেন  আর এখানে  অনেক  ইতিহাস  আছে।  অনেক  গুণী  মানুষ  আছেন  তারা এ ব্যাপারে  আরো আলোকপাত  করতে পারবেন।  আজ যদি একটা টাইম মেশিন  পেতাম  তাহলে তাতে আরোহণ  করে চলে যেতাম  সেই  হারিয়ে  যাওয়া  সোনালি  দিনে  আর চোখ সার্থক করে দেখে আসতাম  সেইসব  মহাপুরুষ দের।  তা তো  আর সম্ভব নয়  তাই  দু কলম লিখে  সেইসব  হারিয়ে  যাওয়া  বরণীয়  স্মরণীয়  মানুষদের  স্মরণ  করছি।    সঞ্জীব মিশ্র  পার্শীবাগান  কলকাতা ২০/০৮/২০২১
Parent