কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১৬৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3803450.html#pid3803450

🕰️ Posted on October 9, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 606 words / 3 min read

Parent
তর্পণ   ক'দিন ধরেই মায়ের সঙ্গে সরাসরি একবার কথা বলবে ভাবছিল তিন্নি। সত্যি বলতে কি, "বলব বলব" করেও বলা হয়ে ওঠে নি ওর। যতবার ভেবেছে, ততবার ই দোনামোনা করে পিছিয়ে এসেছে। ভেবেছে "আমিই হয়ত ভুল ভাবছি!" আর, যেমন তেমন মা না। ওর দুর্গাঠাকুরের মতো মা কে! যে মাকে ওর জ্ঞান হওয়া ইস্তক লড়াই করতে দেখে আসছে। দেড়বছর আগের তিন্নি হলেও হয়ত ভাবতেই পারত না। সত্যি বলতে কি, করোনা অতিমারি আসার আগে তিন্নি আর পাঁচটা টিনএজারের মতোই নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ওর এমনিতেই খুন ইচ্ছে, এডভোকেট হবে! নামী ওয়েব সিরিজের উকিলদের মতো ক্ষুরধার সওয়াল -জবাবে সত্যি খুঁজে আনবে। আসল অপরাধীকে শাস্তি দেবে। আর অনেক, অনেক টাকা হবে ওর। ওর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবার জন্য সেলিব্রিটিরাও অপেক্ষা করে থাকবেন। আর ও মা কে নিয়ে দেশে-বিদেশে ছুটি কাটাতে যাবে! তবে, কেরিয়ারের পাশাপাশি অর্ক -ঈশানদের চোরা চাউনিও যে ভাল লাগত না, তা কিন্তু নয়! কিন্তু, ওই অব্দিই। কিন্তু এই বাড়িতে থাকতে থাকতে বুঝেছে মা কত একা! তাই মা রাগটাগ করলেও মেজাজ হারায় না ও। ভাবতে ভাবতেই চাবি খোকার আওয়াজ কানে এলো তিন্নির। মা এসেছেন! আজ মহালয়া হলেও মায়ের অফিস ছুটি ছিল না। এমনিতেই এইবছর লকডাউনের জন্য অনেকদিন অফিস বন্ধ ছিল, তাই ছুটির সংখ্যা কমে গেছে। ছোট্ট একটি বেসরকারী অফিসে মায়ের কাজ, তাই আজ ইচ্ছে না থাকলেও মা কে অফিসে যেতেই হয়েছে। সকালে উঠে রেডিওতে 'মহিষাসুর মর্দিনী' শুনেছিল ওরা মা -মেয়ে। তারপর চোখ লেগে গেছিল দুজনের ই। যথারীতি মায়ের দেরি হয়ে গেছিল ঘুম থেকে উঠতে উঠতে। সেজন্য তো এক্কেবারে উসেইন বোল্টের মতো করে কাজ সারতে হয়েছিল মা কে! আর এইসবের ফাঁকে ফোনটা একদম টেবিলের ওপর রেখে চলে গেছিলেন মা। আর তিন্নির ও এমন ঘুম চোখ তখন, সামনে থাকা সত্ত্বেও নজরে পড়েনি! কী যে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল তখন! তারপর বুদ্ধি খাটিয়ে ভাবল ওদের এই বেলেঘাটার বাড়ি থেকে এলগিন রোডে, মায়ের অফিসে যেতে মোটামুটি এক ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগে। তাই মা বাড়ি থেকে বেরোবার ঘন্টা দেড়েক পরে মায়ের অফিসে ফোন করে মা ঠিকমতো পৌঁছেছেন কিনা খোঁজ নেবে ভেবেছিল ও। আর ভাগ্যিস ভেবেছিল! ঘরে ঢোকার পরে একঝলক মাকে দেখেই ক্লান্তিটা বুঝতে পারল তিন্নি। ঘামছেন মা খুব, চোখেমুখ কেমন কালো হয়ে আছে। "মা, বসো তুমি, তোমাকে একটু নুন-চিনির জল করে দিই..." বলে ওঠে ও। "নাহ্, এখন আর সরবত খাব না। চা খাব। মাথাটা খুব ধরেছে" বলে উঠলেন মা। "এ বাবা! তুমি হাত পা ধোও, আমি চা বসাচ্ছি" বলে চলে গেল ও। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও চা করা, দু এক পদ রান্না করা শিখেছে ও। মন্দিরা, মানে ওর মা বরাবর বলে এসেছেন যে নিজের কাজ নিজে করে নিতে পারাই স্বাধীনতা। স্নান করে এসে মন্দিরা দেখেন চা আর পাঁপড়ভাজা রেখেছে মেয়ে। নিজে কুড়মুড় করে পাঁপড় চিবোচ্ছে একটা। "আবার পাঁপড় কেন ভাজতে গেলি?" চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলেন উনি। "তেল বেশি পোড়াইনি মা, একটু বেশি হয়েছে, সেটা একটা পরিষ্কার বাটিতে রেখে দিয়েছি!" "পোড়া তেল খাওয়া কি ঠিক?" বলেন মা। "তা জানি না... তেল ফেলে দেব? তুমিই না বলো, জিনিসপত্রের এত্ত এত্ত দাম এখন?" "উফ! তিন্নি! তোর সাথে কথায় কে পারবে!" বলতে বলতে হেসে ওঠেন মন্দিরা। আজ বেশ একটু সময় আছে হাতে। সকালে একেবারে দুইবেলার মতো খিচুড়ি করে রেখেছেন। নইলে এই সময় ফিরে, একটু ফ্রেশ হয়েই রান্নাঘরে ঢুকে পড়তে হয়। তিন্নি নিজের মতো পড়াশোনা করে। সাড়ে দশটার মধ্যে ডিনার। তারপর শুয়ে শুয়ে একটু ফেসবুক ঘাঁটা - আবার সকাল থেকে শুরু দৌড়! ব্যস, এইই তো জীবন। খুব, খুব, খুউউউব ক্লান্ত লাগে মাঝে মাঝে! মনে হয়, এত লোক থাকতে আমিই কেন! আমার মতো অসুখী আর কে আছে! বিরক্ত লাগে! ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যান অল্পেতেই। তখন মেজাজ ও খারাপ হয়ে যায়। পান থেকে চুন খসলেই ঝাড় দেন চারপাশের লোকেদের। যে সামনে থাকে সেই বকা খায় তখন। অফিসে ব্যবহার ভাল রাখতেই হয়, তাই কলিগেরা বেঁচে যান। তবে তিন্নি মাঝেমাঝেই... আর আর... আরেকজনের ওপরেও। রাগ হয়। ঘৃণা হয়। আবার ইচ্ছেও হয়... "মা, ও মা... একটা কথা বলব তোমাকে? রাগ করবে না তো?" আদুরে গলায় বলে ওঠে মেয়ে।
Parent