কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১৭৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3850352.html#pid3850352

🕰️ Posted on October 19, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 754 words / 3 min read

Parent
শিক্ষক   - কানের নীচে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দেবো , শুয়ার .... কতবার বলেছি ? সমূল চক্রবৃদ্ধি আর চক্রবৃদ্ধি সুদের সূত্রের মধ্যে শুধু আসলটা বিয়োগের অন্তর , গুলিয়ে যেন না যায় ... কিরে বলিনি ? - হ্যাঁ স্যার বলেছিলেন , কিন্তু .. - কিন্তু , আবার কিসের কিন্তু ?  - স্যার ওই বিকাশটা পিছন থেকে খোঁচা দিচ্ছিলো পিঠে , উপপাদ্যটা দেখানোর জন্য , তাই আসলটা বিয়োগ দিতে ভুলে গিয়েছি , আর হবে না স্যার ... - তুই ওই কর , বেয়াদপ ছেলে , কান ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়া গিয়ে , ... এই বিকাশ , শুয়ার , এদিকে শোন , শোন তারা তারি ...আজ তোর একদিন কি আমার একদিন ... বৈকুণ্ঠপুর কলেজের কর্ণ স্যারের অঙ্কের ক্লাসের এ এক রোজকার চিত্র । যে ছাত্রটি সদ্য সদ্য শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে , বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে নিজের আসন অলংকৃত করবে , তার নাম পার্থ । এই কলেজের দশম শ্রেণীতে তারই ক্রমিক নং এক । শুধু এই বছর নয় , পঞ্চম শ্রেণী থেকে এই আসনটিতে আর কারো বসার সৌভাগ্য হয়নি । সারা কলেজ পার্থর প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ । শুধু অঙ্কের শিক্ষক কর্ণ চক্রবর্তী বাদে বাকি সকল শিক্ষকদের এক্কেবারে চোখের মণি এই পার্থ । এবার মাধ্যমিকে সারা রাজ্যের মধ্যে তার একটা স্থান আসবে বলে ,সকলে তাকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছে ।  কিন্তু কর্ণ স্যারের ওই এক কথা ... - বুঝলি পার্থ , তুই অঙ্কে ভালো কিন্তু অর্জুনের মতো না ... ওর একটা আলাদা ব্যাপার ছিলো । তুইতো কিছু অঙ্ক , যেগুলো বুঝিস টুজিস না , ওগুলো মুখস্থ করিস ... - স্যার আপনি এটা বলতে পারলেন ?আমি কোনোদিন অঙ্ক মুখস্থ করি না  , আপনি যত অঙ্ক বলেন আমি সব করে এনে দি , এত প্র্যাকটিস করি , তবু আপনি বলেন আমি অর্জুন দার মতো না ... আমিতো অর্জুন দা কে চিনিও না ...  - সে তোর চিনে কাজ নেই ... আরো প্র্যাকটিস করতে হবে , বুঝলি ? একটা অঙ্ক তিনটে চারটে নিয়মে যদি না করতে পারলি তবে , কিসের অঙ্কে ভালো ? একটা নিয়মেতো সবাই পারে ... - স্যার আপনি দেখবেন , আমি মাধ্যমিকে অঙ্কে একশোতে একশো পাবো । - হ্যাঁ , এই হলো আসল কথা , যদি পাস , তবে বুঝবো তুই অঙ্ক পারিস । সারাদিন পার্থ ভাবে , কিভাবে ? কোন নিয়মে ? অঙ্ক করলে কর্ণ স্যারকে খুশি করা যায় । বহু অঙ্ক বহু নিয়মে করে নিয়ে গিয়ে স্যারকে দেখায় পার্থ , কিন্তু প্রত্যেক বারই মুখ হাঁড়ি করে ব্যর্থ সৈনিকের মতো তাকে ফিরে আসতে হয় । একটি একটি করে দিন এগোলো , মাধ্যমিক সুষ্ট ভাবে সম্পন্ন হলো । মাঝে তিন মাসের লম্বা ছুটি কাটিয়ে , ঘনিয়ে এলো সেই ভয়ঙ্কর দিন , ফল বেরোলো সকাল এগারোটায় ।  সারা কলেজে হৈ চৈ পরে গিয়েছে , পার্থ সারা রাজ্যে নবম স্থান অধিকার করেছে । খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়ে , মাথায় বরফ ব্যাগ চাপিয়ে বসে আছেন  , কলেজের প্রধান শিক্ষক । সবাই পিঠ চাপড়িয়ে , প্রশংসা করছে , পার্থর । কিন্তু এতো ভালো ফল করেও মুখে হাসি নেই পার্থর , সাথে হাসি নেই আরেকজনের মুখেও , সে হলো কর্ণ চক্রবর্তী । দুজনের অখুশি হবার কারণ যদিও ভিন্ন । কর্ণ স্যার অখুশি কারণ , পার্থ দুই নম্বরের জন্য অঙ্কে একশো পায়নি । আর পার্থ অখুশি কারণ , সে কর্ণ স্যারকে খুশি করতে পারেনি । পার্থর বাবা , সুভাষ বাবুর চাকরি কলকাতায় , প্রতি সপ্তাহে শনিবার তিনি বাড়ি আসতেন আবার সোমবার ভোর ভোর কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হতেন  । মাধ্যমিকে ছেলের এতো ভালো রেজাল্টের পর , আর এই গ্রামে পরে থাকতে চাইলেন না , ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতায় চলে গেলেন , বরাবরের মতো  । ওখানে পার্থ ভর্তি হলো , এক মস্ত বড়ো কলেজে , অনেক বড়ো বড়ো শিক্ষককে কাছ থেকে দেখার সুযোগ  পেলো , পার্থ । কিন্তু সেই কর্ণ চক্রবর্তীকে খুঁজে পায়নি সে কারোর মধ্যেই । কেউ কান মূলে দিয়ে বলেনি ... - শুয়ার , এই সোজা অঙ্কটা তুই ভুল করলি ? যা চল্লিশ বার কান ধরে উঠবস কর , এক্ষুনি ...  তারপর আবার নিজেই টিফিন টাইমে অফিস ঘরে ডেকে , নতুন নতুন অঙ্কের পদ্ধতি দেখাতেন , কর্ণ স্যার । পরবর্তীতে পার্থ দেখতো , এই শহরের স্যারেরা কেমন যেন , ঘড়ির কাটা মেনে অঙ্ক করায় , একটা অঙ্ক মাঝপথেই ছেড়ে দিয়ে বলে ... - আজকে সময় হয়ে গেছে , বাকিটা পরের দিন হবে ।  কিছুই ভালোলাগে না পার্থর এই কলকাতায় । সবাই এখানে ভীষণ ব্যস্ত , কারোর দু দন্ড সময় নেই , নতুন কিছু শেখার ...  তারপর প্রায় ত্রিশ বত্রিশ বছর কেটে গেলো । সেই দিনের সেই পার্থ আজ মস্ত বড়ো বিজ্ঞানী হয়েছে । স্বাভাবিক ভাবেই বয়সের সাথে সাথে কর্ণ স্যার , গ্রামের কলেজ প্রায় সবকিছুই ভুলে গিয়েছে সে । স্ত্রী বৈশাখী , ছেলে তাতান , বৃদ্ধ বাবা , মা ,বন্ধু বান্ধব , গবেষনা এসব নিয়ে বেশ কাটছিলো তার দিন গুলো । একেবারে যেন ছকে বাঁধা সবটা ।
Parent