কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ১৯৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3931910.html#pid3931910

🕰️ Posted on November 8, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 740 words / 3 min read

Parent
আলোময়   রোজকার মতো সকাল সকাল উঠে বাবুনের জন্য রান্না বসাতে যাবেন শিবানী, চাল ধোয়া হয়ে গেছে, হঠাৎ করে ছেলে বলে উঠল "মা!" "কি রে বাবুন? এত সকাল সকাল উঠে পড়লি?" "হ্যাঁ, আজ আমার জন্য রান্না করো না। পরে বললে রান্না হয়ে যাবে, তখন তুমিই রাগ করে বলবে আগে থেকে কেন বলিনি।" "ওমা, সেকি, কেন? তুইই তো বলিস তোর যেখানে অফিস সেখানে কোনোকিছু পাওয়া যায় না। মোবাইল থেকে আনাতে গেলে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যায়।" "ওফ মা, প্লিজ। আজ না।" বলে আবার ঘরে চলে যায় বাবুন। আরেকটু ঘুমোবে বোধহয়! খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন শিবানী। কাল এই টিফিন নিয়েই বাবুনের সাথে একটু ঝামেলা হয়েছিল ওঁর। কি না, রোজ রোজ রুটি-তরকারি খেতে ভাল লাগে না ছেলের। কিন্তু আর কিই বা দেবেন! সকালে একটু ডাল ভাত খেয়ে যায়, তাই দুপুরে ভাত নিতে চায় না বাবুন। এদিকে শুধু ডাল - ভাত তো আর ছেলেকে দেওয়া যায় না... সারাদিনের জন্য বেরোয়... একটা তরকারি... মাছ থাকলে মাছের ঝোল বা নিদেনপক্ষে আলুভাজা তো করে দিতেই হয়। রান্না, কাটাকুটি... সব একার হাতে... এসব সামলে আর টিফিনে নিত্যনতুন কিছু করা যায় না। উনি জানেন ও না তেমন কিছু। সুজি দিয়ে মোহনভোগ বা চিঁড়ের পোলাও তো টিফিনে খাওয়া যায় না। পরোটা - লুচি কি ঠান্ডা হলে ভাল লাগবে? চামড়া হয়ে যাবে না? চাউমিন ও তো ঠান্ডা হয়ে গেলে ভাল লাগে না খেতে... তাহলে? ছেলে তো বলেই খালাস। মায়ের মন... ভাল লাগে? এদিকে "আমার জন্য রান্না করো না" তো বলে দিল... খেয়ে যাবে তো? নাকি খাবেও না? আর ভাল লাগে না! বিয়ের পর থেকে এই চলছে! প্রথমে ছেলের বাবা... তা তিনি তো আজ পাঁচবছর হলো ড্যাং ড্যাং করে চলে গেলেন... ছেলের তখন পড়াও শেষ হয়নি...মাথার ওপর ঋণের বোঝা... কিভাবে যে বেঁচে ছিলেন ওঁরা দুজন সেইসময়, সে উনিই জানেন...ভাগ্যিস মাথার ওপর ছাদটুকু ছিল, আগের মতো ভাড়াবাড়ি ছিল না। পেনশানের টাকা থেকে খাওয়া -পরা আবার লোনের টাকা দেওয়া... তারপর ছেলে চাকরিতে ঢোকায় এখন একটু সুরাহা হয়েছে। আর এখন ছেলে জ্বালাচ্ছে! সারাজীবন সংসারে দেবার এই প্রতিদান! ভাতটা প্রায় হয়ে এসেছে, এবার ডাল বসাবেন শিবানী। ভাতেই আলুসিদ্ধ দিয়ে দিয়েছিলেন, সেটা দিয়ে ভর্তা করে দেবেন। আজ আর কিছু ভাল লাগছে না। ছেলের রাগ থাকতে পারে, ওনার অভিমান থাকতে পারে না? দ্রুতহাতে কাজ সারছেন উনি, হঠাৎ কে যেন কলিংবেল বাজাল। এইসময় আবার কে? এমনিতেই সকালে কেউ এলে বড্ড বিরক্ত লাগে ওঁর... দেরি হয়ে যায় কাজে। "ম্যাডাম, 'ইট নাও' থেকে এসেছি, আপনাদের অর্ডার ছিল" হাসিমুখে বলে একটি সবুজ জামা পরা ছেলে। এই জামা চেনেন শিবানী। কালেভদ্রে খাবার অর্ডার করে বাবুন, মোবাইল থেকে। ওরাই দেয়। কিন্তু এখন তো কেউ খাবার অর্ডার করেনি... "হ্যাঁ হ্যাঁ দাদা, থ্যাংকইউ! " পিছন থেকে বলে ওঠে বাবুন। তারপর কাগজের প্যাকেটটা নিয়ে নেয়। বাবুন কি... খেয়েও যাবে না? দরজা বন্ধ করে রান্নাঘরে ঢুকে যান শিবানী। সামান্য কারণে ছেলের এত রাগ! "মা, দুটো থালা আর বাটি দাও তো। আর দুটো চামচ ও এনো।" চুপচাপ ছেলের বলা জিনিস গুলো নিয়ে বাইরে আসেন উনি। যা খুশি করুক ও। ওনাকে যা দিতে বলেছে, দিয়ে দেবেন। "মা এসো?" একচিলতে বসার ঘরেই ডাইনিং টেবিল। সেখানে গিয়ে দেখেন ওই কাগজের ঠোঙাটা খোলা, সেখান থেকে কচুরি জাতীয় কিছু দেখা যাচ্ছে। "মা, রোজ রোজ আমার রুটি খেতে বিরক্ত লাগে... আর তুমি তো রোজ বানাচ্ছ! তোমার ও তো একঘেয়ে লাগে। তারপর এত রান্না শেষ করা ন'টার মধ্যে... বাড়ির সবকাজ তুমি একা করো... তাই ভাবলাম আজকের দিনটা অন্তত তোমাকে একটু অন্যরকমের দিন গিফট করি। এজন্যই তো শ্যামবাজারের ওই বিখ্যাত দোকানটা থেকে কচুরি- আলুর দম আর জিলিপি আনালাম... তুমি আর বাবা আগে মাঝেমাঝে খেতে, বলেছিলে না? এসো আমরা খেয়ে নিই গরম গরম..." "তুই অফিস যাবি না?" জিজ্ঞেস করেন শিবানী। ভাললাগা বুকে নিয়ে। "ওফ মা, আজ তো কালীপুজো আর দীপাবলিও... তাই আজ অফিস ছুটি। চলো ব্রেকফাস্ট করে নাও, তারপর একটু বেরোব।" "ও, তোর আজ ছুটি? এই দ্যাখ, আমার মনেই ছিল না..." হাসতে হাসতে বলেন শিবানী। সকালের সব রাগ, অভিমান ছুমন্তর হয়ে গেছে যেন। "হ্যাঁ তো... শোনো না, এখন একটু গোরাবাজারের দিকে যাই চলো। এই এত সকালে ভিড় হবে না... আমাদের অফিস থেকে দিওয়ালি উপলক্ষ্যে কিছু টাকা দিয়েছে... তোমাকে একটা শাড়ি কিনে দেব আর একটা কড়া... ওই কালো কালো ননস্টিক কড়া...তোমার ইচ্ছে ছিল না অনেকদিনের?" "আবার শাড়ি কেন?" "কেন নয় মা? আমারও তো দিতে ইচ্ছে করে বলো? পয়সা হাতে থাকলেই খরচা হয়ে যায়। তখন মনে হয়, ইস কেন কিনলাম না। আর এই দুদিন আগে ধনতেরাস গেল... তখনও তো স্যালারি আর এই হঠাৎ পাওয়া বোনাস হয়নি, তাই কিছু কেনা হয়নি... সোনাটোনা পারব না আমরা... চলো ওই কড়া... বা অন্যকিছু, তোমার যেটা লাগবে, সেটা কিনি..." "তুই একটা আস্ত পাগল!" বলে মুখটা অন্যদিকে ঘোরান শিবানী। আনন্দের চোটে চোখে জল এসে গেছে... মুছতে হবে তো? আর যার ছেলে এত ভাল... এত 'মানুষ'... তার তো শুধু দীপাবলি কেন... সারাবছর ই আলোয় মোড়া, তাই না?  
Parent