কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ২১৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3998504.html#pid3998504

🕰️ Posted on November 22, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 469 words / 2 min read

Parent
বইমেলা থেকে ফিরে ঝুমুর মাকে জড়িয়ে ধরল। ভ্রমর বেশ অবাকই হলেন, “কী ব্যাপার ঝুমুর, এত খুশি কেন?” বইমেলায় গেলে ঝুমুর মায়ের লিস্টের সঙ্গে নিজের পছন্দেরও প্রচুর বই কিনে বাড়ি ফেরে। ভ্রমর নিজেও বইয়ের পোকা। মেয়ের মধ্যেও বই পড়ার নেশা ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। ঝুমুর এখন বি এ ফার্স্ট ইয়ার। ক্লাস ফাইভে সে বাবাকে হারিয়েছে। তার পর উইডো পেনশনটুকু সম্বল করে অনেক কষ্টে ঝুমুরকে বড় করেছেন ভ্রমর। তবু তার মধ্যেও বইয়ের নেশাকে কখনও জীবন থেকে দূরে সরে যেতে দেননি। মেয়েও মায়ের মতোই হয়েছে। উচ্ছ্বসিত ঝুমুর দেখায়, “দেখো মা, তোমার ফেভারিট রাইটারের নতুন তিনটে বই। এই বইটার ভেতর উনি নিজে তোমার নাম লিখে সই করে দিয়েছেন। এই বই আর সইয়ের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার পায়ের বারোটা বেজে গেছে!” মায়ের মুখে হাজার ওয়াটের আলো। বইয়ের ভেতর পাতায় মুক্তোর মতো হাতের লেখায় লেখা— ‘ভ্রমর চট্টোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা, আন্তরিক বসু।’ মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন ভ্রমর। আন্তরিক বসু যে মায়ের সবচেয়ে প্রিয় লেখক, এটা মেয়ে ছোট থেকেই জানে। ওঁর সব বই-ই ভ্রমরের পড়া, নতুন বই বেরোলে ঝুমুরকে দিয়ে কিনিয়ে আনেন। “জানো মা, এই প্রথম ওঁকে সামনে থেকে দেখলাম। তোমাদেরই বয়সি, কি একটু বড় হবেন হয়তো। কী সুন্দর দেখতে! ডেনিম জিনসের ওপর একটা দুধসাদা হাফশার্ট পরেছেন, গা থেকে সুন্দর একটা পারফিউমের গন্ধ আসছিল। বাঁ হাতে দারুণ একটা ঘড়ি। পরিপাটি একজন মানুষ।” মেয়ের উচ্ছ্বাস দেখে হেসে ফেললেন মা। বইয়ের পিছনে দেওয়া লেখকের সংক্ষিপ্ত বায়োডেটা থেকে ঝুমুর জানে, এই লেখক আর মায়ের জন্মস্থান একই জায়গায়। তাই অন্যদের চেয়ে মা যেন এই লেখকের ব্যাপারে একটু বেশি দুর্বল। হৃদয়পুর নামের একটা ছোট্ট শহরের কেউ আজ বাংলা সাহিত্যের স্টার, সেটা নিয়ে মায়ের গর্বের শেষ নেই। ভদ্রলোক ভালবাসার গল্পই বেশি লেখেন। তাঁর বিপুল ভক্তসংখ্যা। অল্প সময়ে সাহিত্যের বহু পুরস্কারই তাঁর ঝুলিতে। এমন এক জন সুদর্শন ব্যাচেলর সফল লেখককে নিয়ে মিডিয়া বা অনুরাগিণীদের আগ্রহ যে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, সেটা যেন ভ্রমরের সহ্য হয় না। টিভি চ্যানেলে নববর্ষের আড্ডায় এক উঠতি কমবয়সি নায়িকা যখন আন্তরিকের সামনেই বলে বসল যে, আন্তরিক রাজি থাকলে তা হলে এই স্টুডিয়ো থেকে বেরিয়েই সে তাকে বিয়ে করতে রাজি, তখন ঝুমুর শুনেছে, মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলেছিল— আদিখ্যেতার শেষ নেই! ঝুমুর বলেছিল, “মা, কেমন যেন একটা পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।” “না, না, এই মেয়েরা যদি ওঁকে সব সময় জ্বালায়, তা হলে উনি লিখবেন কখন?” “তা বললে হয়! এঁরাও তো তোমার মতো ওঁর ডাইহার্ড ফ্যান!” রেডিয়োয় ‘তুই ফেলে এসেছিস কারে মন, মন রে আমার’ রবীন্দ্রসঙ্গীতটা বাজছিল। এ গান শুনলেই চোখ জলে ভরে যায় ভ্রমরের। চুপি চুপি পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে ঝুমুর, “আমার সুন্দরী মা, কেন মন খারাপ? আচ্ছা মা, আমার সেই সিম্পল কোশ্চেনের আনসারটা তুমি এত বছরেও কেন দিলে না। এটাতেই আমি অবাক হয়ে যাই!” “তুই দিন দিন বড্ড ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস ঝুমুর!” “না মা, তোমার মতো সুন্দরী গুণবতী এক জনের কোনও দেবদাস থাকবে না, তা কি হয়?” “না রে ঝুমুর, তুই যা ভাবছিস সে রকম কিছু ছিল না আমার। আমাদের সময়টা অন্য রকম ছিল। এতটা ফাস্ট ছিল না। তবে...” “তবে, তবে কী?” “ঠিক আছে, আজ দুপুরে শুয়ে শুয়ে বলব।”
Parent