কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ২৩৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4035654.html#pid4035654

🕰️ Posted on November 29, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 418 words / 2 min read

Parent
অশ্লীলতার ভূত নানা ভাবে তাড়া করেছে তাঁকে। একদিন খোশমেজাজে প্রেস থেকে ‘কবিতা’ পত্রিকার নতুন সংখ্যা আনতে গেছেন। কিন্তু দেখলেন সবাই কেমন চুপচাপ, কোনও কথার স্পষ্ট উত্তর দিচ্ছেন না কেউ। শেষমেষ এক জন জানালেন যে পত্রিকা তৈরি আছে, কিন্তু চালান দেওয়া মুশকিল। কেন? পত্রিকার বিশেষ একটি পৃষ্ঠা দেখিয়ে তিনি বললেন, আগে খেয়াল করলে এইসব অশ্লীলতা তাঁরা ছাপতেন না। অবাক বুদ্ধদেব বুঝতেই পারলেন না কিরণশঙ্কর সেনগুপ্তর সেই কবিতায় সমস্যাটা কোথায়! তবে কি নারীর শরীরের কয়েকটি অংশের নামেতেই আপত্তি তাঁদের? বুদ্ধদেব অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিছুতেই তাঁদের টলাতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত নামী লেখক ও আইনজীবী অতুলচন্দ্র গুপ্তর কাছ থেকে লিখিত অভয়বাণী নিয়ে এসে পত্রিকা ছাড়াতে হয়েছিল বুদ্ধদেব বসুকে। শুধু নিজের জন্য নয়, বুদ্ধদেব লড়াই করেছিলেন অন্য লেখকদের জন্যও। সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’ উপন্যাসের বিরুদ্ধে অশ্লীলতার জন্য মামলা হয়েছিল। বুদ্ধদেব বসু নিজে সেই মামলায় সমরেশ বসুর পক্ষে সাক্ষী দিয়েছিলেন। আনন্দবাজার পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল সেই মামলার বর্ণনা— ‘দরজার পাশে দাঁড়িয়ে হাবড়ে চুমু খাচ্ছিল—’ এই লাইনটি বলে বুদ্ধদেবকে কৌঁসুলির প্রশ্ন ছিল, ‘এই বাক্যগুলি কি অশ্লীল বলে মনে করেন?’ বুদ্ধদেব উত্তর দিয়েছিলেন : ‘না। আমার বক্তব্য এই বইয়ের নায়ক বা অনায়ক সমসাময়িক পশ্চিমবঙ্গের রকবাজ ছেলেদের টাইপ।... এই যুবকেরা সাধারণত যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষাতেই এই উপন্যাস লেখা।’ মনে পড়বে, সমরেশ বসু লিখেছিলেন, ‘জীবনে যদি অন্ধকার থাকে, তাকে অন্ধকারেই রাখতে হবে কেন। আলোয় আনতে গেলে পেঁচক শৃগাল চিৎকার করবে। করুক না। তবুও অন্ধকারে যেন না থাকতে হয়।’ অশ্লীলতা প্রসঙ্গে আইন-আদালতের ঝামেলা শেষজীবন পর্যন্ত সামলাতে হয়েছে বুদ্ধদেব বসুকে। ১৯৬৯ সালে ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’ উপন্যাস লেখার জন্য মামলা হল তাঁর বিরুদ্ধে। মামলা করেছিলেন নীলাদ্রি গুহ। বুদ্ধদেব বসুর পক্ষে সাক্ষী দিয়েছিলেন মানসী দাশগুপ্ত, শিশির চট্টোপাধ্যায় ও অরূপরতন বসু। প্রাথমিক ভাবে দোষী সাব্যস্ত হলেও পরে হাইকোর্টের রায়ে অশ্লীলতার দায় থেকে মুক্তি পান বুদ্ধদেব। এই মামলা প্রসঙ্গে জ্যোতির্ময় দত্ত লিখেছিলেন, মনস্তত্ত্ববিদ মানসী দাশগুপ্তকে সওয়াল করার সময় ‘কৌঁসুলি কেবল সাক্ষীর শরীরে হাত দিতে বাকি রাখেন’। প্রবাসী মেয়েকে লেখা চিঠিতে বুদ্ধদেবের সেই সময়ের মানসিক উদ্বেগ ধরা পড়েছে। ‘বাংলাদেশ পাগল হয়ে যাচ্ছে’— লিখেছিলেন তিনি। এই লেখার কয়েক বছর পরে ‘চরম চিকিৎসা’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন বুদ্ধদেব, যেখানে একটি ‘অশ্লীলতা-নিবারণী সংঘ’-এর উদ্বোধন করেছিলেন ‘ড. মদনভস্ম ভট্টাচার্য, গোবর্ধন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক’। অশ্লীলতা-বিরোধী দলের একটি ইশতেহারে এমন এক জগতের কথা আছে, যেখানে ‘মানুষ নেই। শুধু আছে লক্ষ-লক্ষ রোবট, লোহা, তামা আর প্ল্যাটিনামে তৈরি।’ বুদ্ধদেব ছাড়াও আরও অনেক বাংলা ভাষার লেখককে নীতিপুলিশের গঞ্জনা শুনতে হয়েছে। অশ্লীল কবিতা লেখার জন্য একাধিক লেখকের চাকরি পর্যন্ত চলে গেছে এমন গল্পও আমরা শুনেছি। পঞ্চাশের দশকের কয়েক জন লেখকের নাম এই প্রসঙ্গে মনে আসতেই পারে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো সরাসরি লিখেছিলেন, ‘খিস্তির ভাষাই সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি পবিত্র। তার কারণ, সাহিত্যে যেসব শব্দ আগে ব্যবহৃত হয়নি বা খুব কম ব্যবহৃত হয়েছে — সেইগুলোই পবিত্র।’
Parent