কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ২৩৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4041019.html#pid4041019

🕰️ Posted on November 30, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 457 words / 2 min read

Parent
*খাঁড়ামশাই*  *নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়*    ************ বংশীবদন খাঁড়ার ছেলে হংসবদন–যার ডাকনাম চিচিঙ্গে–সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এল। ঝোলাগুড়ের ব্যবসায়ী বংশীবদন তখন নাকের নীচে চশমা নামিয়ে দুশো বত্রিশ মন গুড়ের হিসেব করছিলেন। বিরক্ত হয়ে বললেন, ক্যা হয়েছে রে চিচিঙ্গে? অমন করে শেয়ালের বাচ্চার মতো কাঁদছিস কেন? শেয়ালের বাচ্চা নিশ্চয় ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদে না, কিন্তু বংশীবদন ওসব গ্রাহ্য করেন না। আর কী–কে–এগুলোকে তিনি ক্যা বলেন। চিচিঙ্গে বললে, হেডমাস্টার কেলাসে তুলে দেয়নি। -ক্যা বললি? –হেডমাস্টার আমাকে ঠাঁই করে বংশীবদন একটি চড় বসিয়ে দিলেন চিচিঙ্গের গালে। বললেন, পাঁঠার বাচ্চা কোথাকার! হেডমাস্টার! তোর গুরুজন না? বিদ্যের গুরু। বাপের চেয়েও বড়। কেন, মাস্টারমশাই–হেডস্যার এইসব বলতে পারিসনে? তুলে দেয়নি নয় তুলে দেননি। মনে থাকবে? চড় খেয়ে চিচিঙ্গের কান্না বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গোঁজ হয়ে, ঘাড় নেড়ে সে জানাল-মনে থাকবে বংশীবদন বললেন, কিন্তু ক্যা হয়েছে? কেন দেননি ওপর-কেলাসে তুলে? –আমি অঙ্ক আর ভূগোলে পাশ করতে পারিনি। সবাই বলছে, তুই পেসিডেনের ছেলে হয়ে বংশীবদন রেগে আগুন হয়ে গেলেন : আমার বাপের নামে ইকলেজ, আমি জমি দিইছি, বাড়ি করে দিইছি–আর আমার ছেলেকেই ফেল করানো? আচ্ছা, তুই ভেতরে যা–আমি দেখছি।  চিচিঙ্গে ভেতরে চলে গেলে বংশীবদন তক্ষুনি একটা চিঠি লিখলেন হেডমাস্টার শ্রীনাথ আচার্যিকে। লিখলেন, মহাশয়, অবিলম্বে আমার সঙ্গে দেখা করিবেন। আর চিচিঙ্গির কেলাসের একখানা ভূগোল আর একখানা অঙ্কের প্রশ্নপত্র সঙ্গে লইয়া আসিবেন। হেডমাস্টার আচার্যিমশাই তখন কেবল প্রমোশন দিয়ে, খুব ক্লান্ত হয়ে, নিজের ঘরে বসে হুঁকোয় টান দিয়েছেন। এমন সময় বংশীবদনের লোক ভূষণ মণ্ডল চিঠিটা এনে হাজির করল। বললে, বাবু আপনাকে এক্ষুনি যেতে বলেছেন। –যাচ্ছি–তটস্থ হয়ে হেডমাস্টার বললেন, তুমি এগোও, আমি আসছি।  ভূষণ চলে গেল। তামাক খাওয়া মাথায় রইল, হুঁকো নামিয়ে হেডমাস্টার ডাকলেন, ওহে বিমল! বিমলবাবু ইকলেজের জুনিয়ার টিচার। কিন্তু ছেলেমানুষ হলে কী হয়, যেমন বুদ্ধিমান, তেমনি চটপটে। খুব ভালো পড়ান। সব কাজেই হেডমাস্টার তাঁর পরামর্শ নেন। বিমলবাবু আসতেই হেডমাস্টার বললেন, দ্যাখো কাণ্ড। খাঁড়ামশাই ডেকে পাঠিয়েছেন। তখনই তোমায় বললুম, প্রেসিডেন্টের ছেলে দিয়ে দিই প্রমোশন কী হবে ঝামেলা করে। কিন্তু তোমার কথায় ওকে আটকে দিলুম, এখন বিমলবাবু বললেন, স্যার, কলেজের একটা নিয়ম তো আছে। প্রেসিডেন্টের ছেলে তো কী হয়েছে, ফেল করলেও প্রমোশন দিতে হবে? তাহলে গরিবের ছেলেরা আর কী দোষ করল–সব্বাইকে তো পাশ করিয়ে দেওয়া উচিত। –আরে, উচিত-অনুচিত আর মানছে কে। যার টাকা আছে ওসব তার বেলায় খাটে না। এখন খাঁড়ামশাই যদি খেপে যান, তাহলে আমাদের অবস্থাটা ভাবো। তাঁর টাকায় কলেজ, তিনি প্রেসিডেন্ট। এদিকে সায়েন্স ব্লকের জন্যে সামনের মাসে পনেরো হ্যাজার টাকা দেবেন কথা আছে। এখন যদি বিগড়ে যান, আমরা মারা পড়ে যাব। বিমলবাবু মাথা নেড়ে বললেন, আমার তা মনে হয় না স্যার। খাঁড়ামশাই অত অবিবেচক নন। টাকা অনেকেরই আছে, কিন্তু এরকম মহৎ মানুষ দুজন দেখা যায় না। কলেজ করেছেন, হেলথ সেন্টার খুলিয়েছেন, দুমাইল রাস্তা করেছেন। নিজেদের খরচে গ্রামের লোকের জন্যে তিনটে টিউবওয়েল করে দিয়েছেন। কত লোককে যে দুহাতে দান করেন তার হিসেব নেই। তিনি নিশ্চয় বুঝবেন। ব্যাজার মুখে হেডমাস্টারমশাই বললেন, কে জানে! সেকেলে লোক, মেজাজের থই পাওয়া শক্ত। যা হোক, তুমিও চলে। তুমি সঙ্গে থাকলে একটু ভরসা পাব। আচ্ছা, চলুন—
Parent