কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ২৮০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4572782.html#pid4572782

🕰️ Posted on January 5, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 542 words / 2 min read

Parent
মিঠেকড়া   অঘ্রানের শেষ বিয়ের তারিখ ছিল যে দিনটায়, সেইদিন ই, গোধূলি লগ্নে 'শাণ্ডিল্য' থেকে 'কাশ্যপ' গোত্রের হয়ে গেল দীপশিখা। আর তারপর, বাড়ির সবাইকে ভাল করে চিনে ওঠার আগেই অষ্টমঙ্গলায় 'ওই বাড়ি' চলে যাওয়া, আড়াইদিন কাটানো, আর তারপরেই চব্বিশে ডিসেম্বর শৌণকের সঙ্গে ঘুরতে চলে গেছিল কাশ্মীর। তা, ডিসেম্বর মাসে কাশ্মীর ইন্সটাগ্রামের রিল ভিডিওর জন্য খুব ভাল হলেও, ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়েই লেগে গেছিল দীপশিখার। আর, বোধহয় পানীয় জলের সমস্যা থেকেই, পেটখারাপ ও। সবমিলিয়ে পুরোনো বছরের শেষটা একদম ভাল কাটেনি ওর। শৌণক না হয় মোটের ওপর চেনা, বছর দেড়েক আগে ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট থেকে আলাপ, কথাবার্তা, তারপর দু'দুবার বিয়ের ডেট ফিক্স হবার পরেও পিছিয়ে গেছিল অতিমারির জন্য। আসলে ওদের বাড়িতে দুর্গাপুরের পিসিমণি ছাড়া মেয়েলি কাজ করার কেউ নেই। মা চলে যাবার পর থেকে বাবা রান্নাবান্না মোটামুটি শিখে নিলেও বিয়ের আচার -আচরণ তো পারেন না! তাই, শেষমেষ আগে ঠিক হয়ে যাওয়া জুন মাসের বদলে অঘ্রানেই বিয়েটা হল ওদের। কিন্তু ওই যে... নতুন পরিবারের সঙ্গে আলাপ পরিচয়টাই হয়নি এখনও ভাল ভাবে। ভাবতে ভাবতেই উঠে বসে দীপশিখা। নতুন একটা বছর এসে গেল। আজ বছরের প্রথম রবিবার। তাও কেমন একটা ধোঁয়াটে ভাব চারিদিকে! সোশ্যাল মিডিয়াতে স্ক্রল করলেই দেখা যাচ্ছে অতিমারি আবার ফিরে আসছে! পায়ে পায়ে ঘরের বাইরে এলো ও। বাইরে মিঠে রোদ্দুর। আজ যেন শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। আর খুব খিদেও পেয়েছে। এতদিন তো নইলে খেতেই ইচ্ছে করছিল না ওর। দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে শ্বশুরমশাই খবরের কাগজ পড়ছেন। সবিতা মাসি ঢাউস ফ্রিজটার সামনে বসে ঘষে ঘষে ফ্রিজ পরিষ্কার করছেন। শাশুড়ি মা... নিশ্চয়ই রান্নাঘরে। একটু কুণ্ঠাবোধ হচ্ছিল ওর। নতুন বৌ, এত দেরি করে উঠল... কেউ যদি কিছু মনে করেন! ইস, বড্ড লজ্জা লাগছে ওর। পিসিমণি বারবার করে বলে দিয়েছিলেন নিয়ম মেনে চলতে, যাতে বাবা মায়ের নামে কেউ কিছু বলতে না পারেন, কিন্তু, তা আর হল না বোধহয়। যতই শরীর খারাপ থাক... সবাই বলে "শ্বশুরবাড়ি কখনও নিজের বাড়ি হয় না!" রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াচ্ছিল দীপশিখা, হঠাৎ সবিতামাসি বলে উঠলেন "ও নতুন বৌমণি, তোমাকে রান্নাঘরে যেতে মানা করেচে তোমার শাউড়ী।" শুনে একটু দমে গেল ও। শাশুড়ি মা চান না ও রান্নাঘরে যান? কিন্তু কেন? উনি কি খুব রাগ করেছেন ওর ওপর? তাহলে কি... খুব বকা দেবেন ওকে? না কথাই বলবেন না? খুব অসহায় লাগছে ওর। হাত পা যেন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। "এই সবিতা, তোমাকে বলেছিলাম না বৌমা উঠলে আমাকে জানাবে?" পিছন থেকে বলে ওঠেন শাশুড়ি মা। তারপর ই যোগ করেন "মুখ ধুয়েছ তুমি?" "হ্যাঁ" বলে ঘাড় নাড়ে দীপশিখা। "টেবিলে বসো তাহলে।" বলে চলে যান উনি আবার। কয়েক সেকেন্ড পরে ফিরে আসেন, একটা কাপ নিয়ে। "খুব তো ঠান্ডা লেগেছে, এটা এক ঢোঁকে খেয়ে ফেলো তো!" "এটা কি?" জিজ্ঞেস করবে ভেবেও করতে পারেনা ও। বরং গিলে ফেলে। উফ! কিরকম একটা ঝাঁঝালো আর তিতকুটে! "কি হলো, মুখটা অমন ব্যাজার হয়ে গেল কেন? কত উপকারী জানো? এইজন্যই সবিতাকে বলেছিলাম তোমাকে রান্নাঘরে না যেতে দিতে। ওই বাসক পাতা টাতা দেখলে তো খেতেই না! চিনি না আমি তোমাদের! আমার ছেলেটাও তো এরকম! যাই হোক, দু তিনদিন খাও, সেরে যাবে। আর পেট কেমন আছে তোমার? লুচি খাবে?" নরম গলায় জিজ্ঞেস করেন উনি। মিষ্টি হাসে দীপশিখা। অবিকল মায়ের মতো শাসন। এমনকি ওই বাসক পাতা-মিছরি টিছরি দিয়ে বানানো ক্কাথটার স্বাদ ও এক। আর লুচি! একমুখ হেসে টুক করে মাথা নেড়ে দেয় ও। "লুচির জন্য পেট ঠিক হয়ে গেল? না সত্যি সত্যি পেট ঠিক আছে?" হেসে জিজ্ঞেস করেন শ্বশুরমশাই। প্রশ্রয় মেশানো সেই স্বরে। ঠিক বাবার মতো! হঠাৎ করেই সবকিছু খুব, খুব, খুউউউউব ভাল লাগছে দীপশিখার। মিঠে রোদ্দুরের মতোই জীবনটাও বড্ড মিষ্টি, এখন...
Parent