কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ২৮৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4578431.html#pid4578431

🕰️ Posted on January 6, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 852 words / 4 min read

Parent
না বলা কথা   মালিকা ঘোষাল ব্যানার্জী বাবাকে আজকাল রাত্রির অসহ্য লাগে। তবে সে কোনোদিনই সেভাবে বাবা-ঘেঁষা নয়।  মাঝেমধ্যে ভাবে তৃষার বাবার মতো তার বাবারও দূরে কোথাও চাকরির পোস্টিং হলে খুব ভালো হতো। ন'মাসে ছ'মাসে একবার বাড়ি আসতো, কোনো ঝামেলাই থাকতো না। বাড়িতে যতক্ষণ বাবা থাকে কেমন একটা গুমোট ভাব থাকে যেন। অথচ তার বন্ধুদের বাবারা এমন নয়। সৌপ্তিকা সেদিন বলছিল, "জানিস, কাল আমার বার্থ ডে ছিল বলে বাপি দ্য ক্যালকাটা ক্লাবে আমাদের ডিনারের জন্য নিয়ে গিয়েছিল। আমি তো ভাবতেই পারিনি যে এতো বড়ো সারপ্রাইজ দেবে। উফ্, কী যে খুশি হয়েছি কী বলবো।" সুপ্রীতি হাসতে হাসতে বলে, "আর আমার বাবা তো ঘুরতে নিয়ে যাওয়ায় এক্সপার্ট। ছুটি পেলেই জিজ্ঞাসা করবে কোথায় বেড়াতে যেতে চাই, ঠিক নিয়ে যাবে। মা তো বলে বাবা নাকি আমাকে তোল্লাই দিচ্ছে।" হাসি হাসি মুখ করে শুনে গেলেও মনের ভেতরে কেমন একটা কষ্ট হচ্ছিল রাত্রির। টাকাপয়সার অভাব নেই তাদের। কিন্তু তাও তার বাবা কোনোদিন কোনো বড়ো জায়গায় তাকে খাওয়াতে নিয়ে যায়নি, বেড়াতেও নিয়ে যায় খুব কম। আর সবসময় এমন গম্ভীর হয়ে ঘুরে বেড়ায় যে ভালো করে এনজয় করা হয় না। আবার রাত্রির যদি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ফিরতে রাত হয় সেই নিয়ে রাগারাগি করে। তার সাথে দু'দণ্ড বসে হাসি ঠাট্টা গল্প করা তো বহুদূরের ব্যাপার। ................................................................................... ক'দিন পরেই রাত্রির বিয়ে, তার পছন্দের মানুষ শুভায়ুর সঙ্গে। শ্বশুরবাড়ি নিয়ে খুবই খুশি, আশাবাদী ও উত্তেজিত রাত্রি। তার হবু শ্বাশুড়ি মা যেমন ভালো, হবু শ্বশুরমশাইও তেমন হাসিখুশি মানুষ। সর্বক্ষণ হইহই করছেন। রাত্রি ভাবে, বিয়েটা হলে বাঁচবে সে। মায়ের জন্য মনকেমন করবে ঠিকই, কিন্তু এই গুমোট পরিবেশ থেকে সে বেরোতে পারবে। বিয়ের দিন সন্ধ্যেবেলায় সেজেগুজে রাত্রি তৈরি। ক্যামেরাম্যান হাজির, বান্ধবীদের সঙ্গে ফটোশ্যুট চলছে। বিয়ের লগ্ন দেরিতে, বরযাত্রী এসে পৌঁছায়নি এখনও। চিকেন পকোড়া আর কফি পরিবেশন করা হলে রাত্রির বান্ধবীরা সেসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুভায়ুকে মেসেজ পাঠায় রাত্রি, রওনা হয়েছে কিনা জানতে চায়। হঠাৎ কী মনে হতে সামনে তাকিয়ে দেখে তার বাবা নিজের পুরোনো হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটা তার দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে আছেন। মনোযোগ সহকারে ফটো তুলছেন তার। এমন দৃশ্য দেখে রাত্রি এতটাই অবাক হয়ে যায় যে হাঁ করে চেয়ে থাকে। একজন অতিথি এসে তাঁকে ডাকতে তিনি চলে যান। রাত্রি মনে মনে ভাবে, এভাবে তার ফটো তোলার এতো ঘটা কেন কেজানে! ক্যামেরাম্যান তো রয়েইছে। সেইতো ঝাপসা ফটো তুলবে, আর ওই ফোনের ক্যামেরা কোয়ালিটিও ভালো নয়। কিছুক্ষণ পর বর আর বরযাত্রী এসে পড়ে, রাত্রিও ব্যস্ত হয়ে যায়। পরেরদিন সকালে বিদায়ের পর সারাটা রাস্তা মায়ের কথা ভেবে চোখ ছলছল করতে থাকে রাত্রির। তবে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে সকলের স্নেহ ভালোবাসা আর বিয়ের আচার অনুষ্ঠান পালনের ব্যস্ততায় কিছুটা কষ্ট সে কাটিয়ে ওঠে। শ্বশুরবাড়ির মানুষগুলোকে ভালো লাগতে শুরু করে। কতো প্রাণখোলা সবাই। দেখতে দেখতে অষ্টমঙ্গলা এসে যায়। শুভায়ুর সঙ্গে রাত্রি বাড়ি যাচ্ছে। গাড়ি করে যেতে যেতে জিজ্ঞাসা করে, "কী কী মিষ্টি কিনলে?" শুভায়ু হেসে বলে, "গিয়ে দেখতে পাবে।" "এতো রহস্য করার কী আছে! নেহাত আমার রেডি হতে একটু দেরি হলো বলে আগে গিয়ে মিষ্টিটা কিনে আনলে.." "একটু দেরি?" শুভায়ু হাসতে থাকে, "সেই কখন থেকে তৈরি হয়ে বসে আছি, তোমার আর হয় না। অগত্যা মিষ্টিগুলো কিনে আনলাম।" বাড়ি পৌঁছে রাত্রি তার মায়ের সঙ্গে হইহই করে গল্প শুরু করে দেয়। শুভায়ু জিজ্ঞাসা করে, "বাবা কোথায়?" রাত্রির মা বলেন, "কেজানে কোথায় বেরোলো! দই আর মিষ্টিটা রেখে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। রান্নায় ব্যস্ত ছিলাম বলে আর জিজ্ঞাসা করে উঠতে পারিনি।" শুভায়ুর আনা মিষ্টির ব্যাগটা বার করে একটু অবাক হয় রাত্রি। "তোমাকে তো বলেছিলাম রাজভোগ আর মিহিদানা নিতে। এই বাক্সটা কীসের? সন্দেশ আছে? কিন্তু সন্দেশ তো এবাড়ির কেউ খায় না!" শুভায়ু বলে, "আছেন আছেন, তোমাদের বাড়িতে সন্দেশপ্রেমী মানুষ আছেন।" "কে?" "তোমার বাবা।" রাত্রি আশ্চর্য হয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করে, "বাবা সন্দেশ খেতে ভালোবাসে?" রাত্রির মা বলেন, "হ্যাঁ।" "কই কখনও তো আনেনি?" "আমি আর তুই তো সন্দেশ তেমন খেতাম না, তাই নিজের জন্য আর আলাদা করে কোনোদিন আনেনি।" কথাটা অদ্ভুত লাগে রাত্রির। নিজের পছন্দটা পছন্দ নয়! শুভায়ুকে বলে, "তুমি কীকরে জানলে?" শুভায়ু হেসে বলে, "একবার কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলেন।" কিছুক্ষণ পর হন্তদন্ত হয়ে রাত্রির বাবা বাড়ি ফেরেন। শুভায়ুকে "কী, ভালো আছো তো?" বলে রান্নাঘরে চলে যান। রাত্রি কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়, ঘরে এসে একটু কথা বলতে পারলো না! মায়ের হাতে হাতে সাহায্য করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রান্নাঘরে যেতে গিয়ে রাত্রি শুনতে পায় তার মাকে তার বাবা বলছেন, "চট করে দু'খানা ভেটকি মাছ একটু রেঁধে দিতে পারবে?" রাত্রির মা অবাক হয়ে বলেন, "এতক্ষণ তাহলে খুঁজে খুঁজে ভেটকি মাছ আনতে গিয়েছিল? কী দরকার ছিল! ইলিশ তো রাঁধলাম। চিংড়ি আছে, মাটন আছে।" বিস্মিত রাত্রি শোনে তার চিরগম্ভীর বাবা ইতস্তত করে বলছেন, "না, মেয়েটা তো ভেটকি মাছ খেতে ভালোবাসে। ইলিশের কাঁটা বেছে তেমন খেতে পারে না।" রান্নাঘরের পাশ থেকে সরে আসে রাত্রি। হঠাৎই মনের মধ্যে কেমন ঝুপ করে একটা মনখারাপ নেমে আসে। বাড়িতে দু'দিন কাটিয়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাবে রাত্রিরা, জামাকাপড় পরে তৈরি। গাড়ি এসে গেছে। মায়ের কাছে বিদায় নিয়ে বাবার ঘরে যেতে যায়, দেখে মোবাইল ফোনে বাবার দৃষ্টি নিবদ্ধ। পাড়ার একজন লোক এসে হাঁক দিতে ফোনটা বিছানায় রেখে দিয়ে উনি কথা বলতে চলে যান। রাত্রি কৌতূহলী হয়ে দেখতে আসে ফোনটা। অবাক হয়ে দেখে বাবার পুরোনো হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনে সাদামাটা ভাবে তোলা তার বিয়ের দিনের সেই ফটোটা। তেমন ঝকঝকে আসেনি। ফোনটা চুপচাপ বিছানায় রেখে দিয়ে চলে আসে রাত্রি। বাইরে গিয়ে গাড়িতে ওঠার আগে পেছন ফিরে তাকায় সে। মায়ের সঙ্গে শুভায়ু কীসব বকবক করছে। ধীরপায়ে বাবার কাছে গিয়ে এই প্রথম বাবাকে জড়িয়ে ধরে তাঁর বুকে রাত্রি মাথা রাখে। বাবা পরম স্নেহে মেয়ের মাথায় হাত রাখেন। মেয়ের প্রতি বাবার না বলা কথাগুলো বুঝে নিতে আর ভুল হয় না রাত্রির।
Parent