কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩০৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4662808.html#pid4662808

🕰️ Posted on February 1, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 844 words / 4 min read

Parent
পরাক্রমী পাক্কা বাইশদিন পর আজ প্রথম বাইরে বেরোলেন শিউলি। না, অসুস্থ ছিলেন না, বা অতিমারির জন্য, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মানার জন্য বেরোননি এমনি না। লোকলজ্জার ভয়ে বেরোতে পারেননি এতগুলো দিন। এমনকি ছাদে বা বারান্দাতেও যেতে ইচ্ছে করত না প্রথম প্রথম। পরে অবশ্য খানিকটা বাধ্য হয়েই গেছেন, কাঁহাতক আর নিজের মুখ লুকিয়ে রাখা যায়! মিমি যা একটা কান্ড করল! আবার তারপরেও, এতটুকু লজ্জা নেই মেয়ের! কেমন নিজের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাচ্ছে দাচ্ছে, সপ্তাহে তিনদিন ওর অফিসে রোস্টার চলে, সেই তিনদিন অফিস যাচ্ছে, সবটুকু করছে। এদিকে মা যে কষ্ট পাচ্ছেন, সেদিকে খেয়াল নেই মেয়ের! এমন ব্যবহার করছে যেন মায়ের কষ্ট পাবার কোনো কারণই নেই! আজ ওর বাবা থাকলে... দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করেন শিউলি। আজ ওঁদের আবাসনের পার্কে প্রতিবছরের মতোই পতাকা উত্তোলন আর নেতাজীর ছবিতে মাল্যদান করা হবে আজ। প্রতিবছর উনি নিজেই এই উদ্যোগ নেন। এবার আসতেন না, কিন্তু রেবাদি, অসীমাদি দুজনেই কাল ফোন করেছিলেন, ওঁদের মতো সিনিয়র মানুষদের 'না' বলা যায়? তাই... পার্কে এসে দেখেন হাতে গোনা মাত্তর ক'টা চেয়ার রাখা হয়েছে। তখনও সবাই আসেননি। শীতের আমেজ মাখা দিন...। একটা চেয়ারে বসে পড়লেন শিউলি। আপাদমস্তক চাদরে মুড়ে বি ব্লকের সবিতা আর জিষ্ণু এলো। ওঁকে দেখে মাস্কের আড়াল থেকে হাসল সবিতা। উনিও হাসলেন। আগে বুঝতে পারতেন না কে হাসছে, কে মুখ গোমড়া করে রাখছে! কিন্তু আজকাল বেশ বুঝতে পারেন। মাস্ক নিয়েই তো কেটে গেল প্রায় দুবছর। সেই অভিজ্ঞতা, আরকি! "কি গো শিউলিদি, অনেকদিন পর দেখলাম তোমাকে?" এতালবেতাল ভাবনার মাঝে বলে উঠল সবিতা। "হ্যাঁ গো, ঠান্ডাটাও এমন পড়েছে..." "সে কি গো দিদি! তুমি তো ঠান্ডায় কাবু না! উলটে আমাদের বকতে, বলতে গায়ে সোয়েটার দিয়ে বেরোতে, সকালের পৃথিবীকে নাকি 'হাই' বলতে হয়.." "আরে, বুড়ো হচ্ছি না? এখন ঠান্ডা লাগে.." "শিউলিদি, আমরা সবাই জানি কেন বেরোচ্ছ না তুমি! মিমি যে আসলে এরকম, আমরা তো কেউ ভাবতেই পারিনি!" "তাই তো রেবাদিকে বললাম একবার ফোন করতে তোমাকে। মিমি যা করেছে, করেছে... আজকাল এসব নিয়ে কেউ আর ভাবে না! এসব তো হচ্ছেই..." এবার প্রতাপদার গলা। "আমিও তো অবাক হয়ে গেছিলাম মিমির কথা শুনে। আমার ছেলে আছে মিমির ফ্রেন্ডলিস্টে, ও ই দেখাল... সত্যি বাইরে থেকে দেখে কিন্তু কিচ্ছু বোঝার উপায়ই নেই, বলো?" এবার সুলেখার গলা। কথাগুলো মিষ্টি মাখা... তবু যেন বল্লমের মতো বুকে এসে বিঁধছিল শিউলির। মেয়েটা যে কি করল! একত্রিশে ডিসেম্বর শুক্রবার ছিল। বলল অফিসের পরে একটু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরেই ফিরে আসবে। তা, শিউলি যথেষ্ট কুল মম, তাই মেয়ে বড় হয়েছে, পার্টি টার্টি করবে, তাতে কোনো আপত্তি নেই। শুধু ঠিকভাবে থাকলেই হলো। মেয়েও সাড়ে দশটার মধ্যেই বাড়ি চলে এল... বাইরে থেকে খাবার অর্ডার দিল...। পরেরদিন সকালে মেয়েকে "হ্যাপি নিউ ইয়ার" বলে, চা টা নিয়ে বসে ফেসবুক খুলে দেখেন মেয়ে পাবলিক পোস্ট করে লিখেছে যে- "সামনের মাসে আঠাশে পড়ব আমি (ইয়েএএএ হ্যাপি বার্থডে টু মি, ইন অ্যাডভান্স)। নতুন বছর মানেই নতুন শুরু! আর আমিও আর পাঁচজনের মতো চাই আমার জীবনটাকে, বছরটাকে নতুনভাবে শুরু করি। সেজন্যই আগের সববছর গুলোর ভুলটা শুধরে নিতে চাই আগে। যবে থেকে নিজেকে চিনেছি, তবে থেকেই ভেবেছি বলব... বলা আর হয়নি! কিন্তু, এইবছরটা যে আলাদা হবে... আর তাই, নিজের সেক্সুয়ালিটি আর প্রেফারেন্স নিয়ে বলতে চাই। আমি লেসবিয়ান। ইয়েস, ইউ রেড দ্যাট রাইট! (হিয়ার, আই জাস্ট সেইড ইট! দ্যা ট্রুথ! অতটাও কঠিন নয়, সত্যিটা বলা, তাই না?) বছরের শুরুতে প্রমিস করছি, নিজেকে ভাল রাখব। নিজের সব খামতিটুকু নিয়ে। তোমরাও সবাই ভাল থেকো। হ্যাপিইই নিউ ইয়ার!" পোস্টটা পড়েই মাথা ঘুরে গেছিল শিউলির। হ্যাঁ, এল জি বি টি নিয়ে লেখা উনিও পড়েছেন... কিন্তু তা বলে মিমি? আর ওর মধ্যে তো 'ছেলে ছেলে ব্যাপার' নেই একদম? এক্কেবারে 'মেয়ে-মেয়ে'ই তো! তবে? নিশ্চয়ই মজা করেছে মেয়ে! কারো সঙ্গে বাজি ধরে। ওই মাঝে মাঝে কিসব চ্যালেঞ্জ আসে না, ফেসবুকে? তার জন্য হয়ত! কিন্তু,ভুলটা ভাঙল মিমি ঘুম থেকে ওঠার পরেই। তারপর তো অনেক মান-অভিমান! এখনও ঠিক বিশ্বাস হয় না। তাও, খানিকটা মেনেই নিয়েছেন। সন্তান ভাল থাকলেই তো মা-বাবার শান্তি! কিন্তু তাও, এরা এমনিভাবে কথা বলছে... যেন মিমি কতবড় অন্যায় করেছে! একটু চুপ করে থাকেন শিউলি। পতাকা উত্তোলনের সময় ঘনিয়ে আসছে। আবাসনের প্রবীন ডাক্তার সাজ্জাদ দাদা এগিয়ে যাচ্ছেন মঞ্চের দিকে। তাঁর হাতে মালা...বেদীতে মালা দিয়ে পতাকা উত্তোলন করা হবে... আর, সেই মানুষটির ছবি, যিনি বলেছিলেন স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিতে হয়। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। নিজে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। নিজের কথা এতটুকুও ভাবেননি। সমস্ত জাতি-বর্ণ-ধর্মের ঊর্ধ্বে 'মানুষ' পরিচয়টাই সবকিছু ছিল তাঁর কাছে। আজ উনি সশরীরে নেই। কিন্তু আছেন তো! সবার মনের মাঝে! আর উনি থাকলে কি কারো নিছক জৈবিক প্রেফারেন্সের জন্য একজন মানুষকে বিচার করতেন? নাকি, তার সততা, কর্মনিষ্ঠা বিচার করতেন? বুক ভরে শ্বাস নেন শিউলি। তারপর পাশে বসা সবিতা, সুলেখা, প্রতাপদাদের দিকে তাকিয়ে হাসেন। বলে ওঠেন "ও মা, মিমি তো কিছু অন্যায় করেনি! বরং নিজের পছন্দটুকু সবার সামনে বলার সাহস দেখিয়েছে। ও তো আমার গর্ব গো! কতমানুষ ঘুষখোর হয়, অসৎ হয়, নিষ্ঠুর হয়! এই তো, সেদিনই বারান্দা দিয়ে দেখলাম আমাদের এখানেরই একটি ছেলে, মিমিরই বয়সী, একটি নেড়ি কুকুরের গায়ে ঠান্ডা জল ঢেলে দিল এই শীতে! কী নিষ্ঠুর! আমার তো মনে হয় তার লজ্জা লাগা উচিৎ, মিমির না! নিজের ভাললাগাটা প্রকাশ্যে বলতে গেলে যে সাহস লাগে, সেটা ওর আছে। আর কি চাই?" ওঁর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন বাকি সবাই। মাথা নিচুও হয়ে গেল এক দুজনের... পতাকা উত্তোলন হল। ত্যাগ, পবিত্রতা, প্রগতি আর নির্ভীকতা - মিলে মিশে আছে... আর সেদিকে তাকিয়ে শিউলির মনে হচ্ছিল বাড়ি গিয়েই মিমিকে জড়িয়ে ধরবেন, আর বলবেন "এমনি সাহসী, এমনি নির্ভীক থাকিস মা! আজকের এই পবিত্র দিনে প্রমিস কর?" শুনে মেয়েটা আরও উজ্জ্বল হবে... জানেন উনি...
Parent