কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩১৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4712285.html#pid4712285

🕰️ Posted on March 6, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 618 words / 3 min read

Parent
অপার আজ সকাল থেকেই চোখ জুড়ে জল আসছে ধীমানের। কাল রাত থেকেই বারবার মনে হচ্ছে হয়ত সত্যিইই ঈশ্বর আছেন। তাই তো, এই ভাবে তিনি দয়া করলেন ওকে। না না, শুধু ওকে না, ওদের দুজনকে। না না, শুধু দুজনকেই না, দুটো পরিবারকেও। কম ঝক্কি গেল? বিয়ের আটবছর পরেও যখন কেউ এলো না ওর আর সীমার মাঝে, এদিকে সব মেডিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট ঠিক... আস্তে আস্তে দিনগুলো আর রাতগুলো কেমন যেন এক হয়ে যাচ্ছিল। ও আরও বেশি করে কাজের মধ্যে ডুবে যাচ্ছিল, আর সীমা আরও বেশি করে একা হয়ে যাচ্ছিল। মাঝে তো মনে হচ্ছিল, বোধহয় সম্পর্কটা টিকলই না আর। কিন্তু তারপরেই মোড় ঘুরল একটু একটু করে। আই ভি এফ করার পর সীমা কনসিভ করল। তারপরের মাসগুলোও খুব কঠিন গেছে। প্রখ্যাত চিকিৎসকের অধীনে, তাঁর পরামর্শ মতো সীমা প্রায় বেডরেস্টেই ছিল প্রথম তিনমাস। তারপর একটু একটু করে ছন্দে ফিরলেও মোটের ওপর একটু টালমাটালই গেছে দিনগুলো। মাঝেমাঝেই পা ফুলে যাওয়া, অম্বল হওয়া, তারপর হঠাৎ করে সুগার ধরা পড়া, হাই প্রেশার হয়ে যাওয়া... লড়াই ছিল অনেকটাই। টেনশান ছিল। আর ছিল অপেক্ষা। এমনকি শনিবার যখন সীমাকে ভর্তি করা হল অপারেশন করা হবে বলে... ধীমানের মনে হচ্ছিল ওর বুকের লাবডুব বোধহয় সারা হাসপাতালের লোক শুনতে পাচ্ছে! ওর মামাতো দাদা, বুকাইদা, লিপিদি, কতকিছু বলছিল... সব ঠিক আছে, কিচ্ছু হবে না... তাও ভয়... বড্ড ভয় করছিল ওর। বারবার মনে হচ্ছিল... সীমা ঠিক থাকবে তো? এত কষ্টের, এত অপেক্ষার পর যে আসছে, সে ঠিকভাবে আসবে তো? আর তারপরের মুহূর্ত গুলো যেন স্বপ্নের মতো! প্রায় চব্বিশ ঘন্টা কেটে গেলেও এখনও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না ওর! ওর বাড়ি লেকটাউন থেকে এই উল্টোডাঙার নার্সিংহোম পর্যন্ত যতগুলো মন্দির পড়েছে, সবগুলোতে প্রণাম করেছে ও। বারবার বলেছে "থ্যাংকইউ ঠাকুর, থ্যাংকইউ!" "আপনি ভিজিটার তো? যান, দেখে আসুন।" সিস্টার-দিদির কথা শুনে পায়ে পায়ে সীমার কেবিনটার দিকে এগিয়ে যায় ধীমান। কাল সীমা ঘোরের মধ্যে ছিল... এখন জেগে আছে। হাল্কা গোলাপী রঙের হাসপাতালের গাউন পরা, দুদিকে বিনুনি বাঁধা সীমাকে ছোট্ট মেয়ে লাগছে যেন! প্রসাধনহীন, তবু কী যে সুন্দর! পলক পড়ছিল না ধীমানের। কে বলবে, প্রায় দশবছরের পুরোনো বৌ! "কি গো, কি দেখছ?" লাজুক গলায় প্রশ্ন শুনে তাকাল ধীমান। সম্বিত ফিরে পেয়ে বলল "কেমন আছো?" "আছি!" বলে হাসল সীমা। এক্কেবারে মালিন্যহীন সেই হাসি। "ও নার্সারিতে আছে। একটু আগেই নিয়ে গেল।" "হ্যাঁ, সিস্টার -দিদি বললেন।" ধীমান যেন কথা খুঁজে পাচ্ছে না। নতুন বর নাকি ও! ভাবনাটা আসতেই, নিজের মনে একটু হেসে নিয়ে বলল "এতদিন তো ছেলে না মেয়ে হবে ভেবে নাম ঠিক করতে দাও নি... এবার তো একটা নাম দিতেই হবে, তাই না?" "আমি নাম ঠিক করে ফেলেছি।" "ওমা, সেকি! কি নাম শুনি?" একটু ক্ষুন্ন, আর অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল ধীমান। "আনিস!" লাজুক মুখে বলল সীমা। "আনিস!" শুনে অবাক হয়ে যায় ধীমান। তারপর বলে "যে ছেলেটা মারা গেল... ইয়ে... মানে খুন... যাই হোক, তার নামে নাম দেবে? কোনো বাঙালী নাম পেলে না? . নাম রাখবে?" অজান্তেই যেন গলার আওয়াজ বেড়ে গেল ওর। "হ্যাঁ। ওই নামটাই পেলাম।" "অন্তত একটা বাঙালী নাম..." ধীমানের কথা শেষ হবার আগেই সীমা বলে ওঠে "কেন, '.েরা বাঙালী নন বুঝি? এই... আজ একুশে ফেব্রুয়ারি না? ভাষাদিবস? আজকের দিনে এটা বললে?" "শোনো, বাংলার দিদিমণি, এসব কথা পরে হবে, কেমন?" হাসপাতালে কি ঝগড়া করা যায়, সদ্যমায়ের সাথে? "ধীমান, বাংলার দিদিমণির কাছে শুনে নাও। আনিস মানে সহৃদয় বা বন্ধু। এর কাছাকাছি একটা নাম আছে। শুধু উচ্চারণের সামান্য পার্থক্য - 'অনীশ', যা শ্রীকৃষ্ণের আরেক নাম। ইংরাজি বানান দুটোরই এক। এবার বলো, কি বলবে?" কি বলবে ধীমান? এত যে গর্ব করে বলে "দরকার ছাড়া আমি ইংলিশ বলিনা! রেস্তোরাঁয় গিয়েও শুধুই বাংলা বলি" - সে ও ভুলে গেছিল, বাংলার জন্য লড়াই আসলে বাঙালীর লড়াই। তারই ফল মাতৃভাষা দিবস। গর্বের একুশে। অমর একুশে। আর ও কিনা... বোকার মতো... "আমি স্যরি, সীমা। তুমি আর পুচু বাড়ি এসো আগে... আনিস হোক বা অনীশ... মেরুদণ্ডটা যেন সোজা থাকে...এটাই তো চাই, তাই না?" শুনে, সীমার ক্লান্ত মুখে হাসি ফুটে উঠল। সেদিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল ধীমান। আহা, মায়ের মুখ, মায়ের হাসি আর মায়ের ভাষা - সবেতেই যে অপার ভালবাসা...
Parent