কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩১৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4728056.html#pid4728056

🕰️ Posted on March 18, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1073 words / 5 min read

Parent
আজ প্রায় দশবছর, আমার ডির্ভোস হয়েছে,আমি বাবার বাড়িতেই থাকি, না বাবা নেই আমার, ভাই আর ভাইয়ের বৌয়ের সাথেই থাকতে হয় আমাকে, তারা আমায় আগে অবজ্ঞা করত, শোনাত কথা, কিন্তু আজকাল তারা বড্ড ভালোবাসে আমায়, আসলে আমি গত সাতবছর হল নিজের পায়ে দাড়িয়েছি, আমার ডির্ভোসের কারণটা বড্ড অদ্ভূত ছিল, আমার গায়ের রঙ নাকি ছিল আমার ডির্ভোসের কারণ, না না আমি কালো নই কিন্তু, আমার গায়ের রঙ দুধ সাদা, কি ভাবছেন? তাহলে কি মুখশ্রী ভালো না আমার?  ভুল ভাবছেন, সবাই বলে আমায় দূর্গা প্রতিমা, তাহলে ভাবছেন আমার চরিত্র ভালো না,  ধুর মশাই, ওটা আপনার ভুল ধারণা মাত্র,  তাহলে আসুন আজ শোনাই আমার জীবনের গল্প, আমার তখন বয়স মাত্র একুশ, সবে শেষ হয়েছে কলেজ, সুন্দরী ছিলাম তাই চারপাশ থেকে আসতে শুরু করল  একের পর এক ভালো ভালো সম্বন্ধ, আমার ইচ্ছে ছিল পড়ব আরো, কিন্তু আর পড়া হল না, বাবা বলেছিলেন অত পড়ে কি লাভ, সেই তো হাতপুড়িয়ে করতে হবে রান্না, এম সি তে ভর্তি না করে বসালেন তাই বিয়ের পিড়িতে, স্বামীটি আমার ইঞ্জিনিয়ার মোটা মাইনের চাকরী করে, বাবা বলেছিল মেয়েদের আসল কেরিয়ার নাকি বিয়ে, কি জানি কথাটা কখনো মানতে পারি নি মন থেকে, মা বলেছিল মেয়েদের উপার্জন নাকি স্বামীর ভালোবাসা, আচ্ছা শুধু স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্যেই কি হয়েছিলাম ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ইউনিভার্সিটিতে?  কি জানি আমার প্রশ্নের কেউ উত্তর দিল না,  বাবা বললেন মেয়েদের নাকি যুক্তিবাদী হওয়া ভালো না, তাই বিনা প্রশ্নে মাথা পেতে মেনে নিলাম সব কথা, মা বাবাকে কনকাঞ্জলি দিয়ে অচেনা লোকটির হাত ধরে গাড়িতে ওঠার সময় কয়েকটা প্রশ্ন আবার এল মনে?  মা বাবা সারাজীবন অচেনাদের সাথে কথা বলতে বারণ করে, অচেনা মানুষের থেকে কিছু খেতে না করে, আজ কেন অচেনা লোকের সাথে পাততে বলছে সংসার?  আজ কেন অচেনা লোকটি দায় নেবে আমার ভরপোষণের?  না তো আমি , না তো সে , আমায় ভালো করে চেনে,  এমন অচেনা বাড়ি কি করে আমার হবে?  সিঁথিতে পরানো এক চিলতে সিঁদুর কেন দূর করবে আমার মা বাবার থেকে?  ভাবলাম মাকে জিজ্ঞেস করি এসব কথা, কিন্তু পারলাম না, কারণ ছোট থেকে শুনে এসেছি বাপের বাড়ি আমার না, চললাম তাই অচেনা লোকটির সাথে,  বিদায় জানালাম ছোট বেলার সেই আস্তানাটিকে। চোখে আমার জল ভরা, আমার কষ্ট কে বা বোঝে?  তার বাড়িতে উঠলাম আমি, না যত্নের অভাব হয় নি, শাশুড়ি আমার ভীষণ ভালো সন্দেহ নেই তাতে, ভাবলাম সহজ হবে সবাইকে আপন করে নেওয়া, সত্যিই আমার পণ লাগে নি বিয়েতে,  শাশুড়ি মাকে বলছিলেন তার এক আত্মীয়া, "বৌমা তো ভীষণ সুন্দরী যেন অপ্সরা"  শাশুড়ি মা হেসে বলেছিলেন, "ঐ জন্যেই তো পণ নিই নি"  অবাক হলাম, তার মানে গায়ের রঙ টাই সব ছিল কি?  যাই হোক ফুলশয্যার রাত এল, নিজেকে উন্মুক্ত করলাম তার কাছে, নিয়ম রক্ষার্থে হল সবটাই, কারো মনেই তখন ভালোবাসা ছিল না একবিন্দু, ভেবেছিলাম হয়ত ভালোবাসার শুরু হবে ধীরে ধীরে, কিন্তু তা আর হয় নি, তার মনে আমার জন্যে আর স্থান হয় নি, একদিন আমি গর্ভবতী হলাম, হয়ত বা হতে বাধ্য হলাম, শাশুড়ি মায়ের যে নাতি নাতনির মুখ দেখার খুব শখ, সন্তান এল আমার পৃথিবীতে, ছেলে হয়েছিল আমার, সন্তান ধারণের কারণে আমার রূপ গেল অস্তাচলে, আমার গায়ের রঙেও পরল ভাটা, আমার শরীরও দুর্বল হল, আমার রূপের কারণে যে বিয়ে, সে সত্যি আজ পরিবর্তিত, আমার স্বামী মেতে উঠল এক শ্যামবর্ণা নারীর প্রেমে, খবরটি যখন কানে এল আমার ছেলের তখন তিনবছর, আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এ প্রতারণা? সে হেসে বলেছিল, মেয়েটি নাকি ভীষণ স্মার্ট,  আমি তার পায়ের নখের যোগ্য না,  সে নাকি বিয়ের আগেই ভালোবাসত মেয়েটিকে, শুধু তার মায়ের শ্যামলা পছন্দ নয় তাই বিয়ে করতে হয়েছিল্প আমাকে, তাই সে আমাকে নাকি কখনো ভালোবাসতেই পারে নি, তার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে নাকি রাগ মেটাতেই বিয়ে করেছিল আমাকে, কিন্তু তার শ্যামবর্ণা প্রেমিকার ডির্ভোস হয়ে গিয়েছে, সে তাই তার জীবনে ফিরে আসতে চাইছে, হ্যা সে তাকে বিয়ে করবে না,  কারন আমার শাশুড়ি কন্যাসম ভালোবাসে আমাকে, তাই আমি যেন আপোষ করে নি সবটা, তার সমস্ত কিছুতে অধিকার থাকবে আমার,  তার ঘর বাড়ি, তার উপার্জন সব কিছুতে,  কিন্তু শুধু অধিকার থাকবে না তার মনের ওপর,  অধিকার থাকবে না তার ওপর, অধিকার থাকবে না তার অনুভূতির ওপর সে হেসে বলেছিল সে নাকি আমায় কষ্টে রাখবে না, সে আমায় কিনে দেবে সব দামী দামী জিনিস,  সে করেছিলও তাই, প্রতিমাসে দামী গয়না দামী শড়িতে ভরিয়ে রাখত আমাকে, কথাটা শুনে অবাক হয়েছিলাম, জিজ্ঞেস করেছিলাম টাকাটাই কি সব?  সে বলেছিল স্ত্রী নাকি সন্তুষ্ট টাকাতে, স্ত্রীর আবার কি চাই? সে তো প্রেমিকা না, কোথাও যেন সেদিন আঘাত লেগেছিল আত্মসম্মানে, মানুষটা যে স্ত্রী আর পতিতার পার্থক্য বোঝে না, আমি যে তার টাকা না , তার ভালোবাসা চেয়েছিলাম একটু খানি, আমি তার বুকে মাথা রেখে ঘুমোতে চেয়েছিলাম,  আমার মন খারাপের দিনে তার হাত ধরতে চেয়েছিলাম শক্ত করে, আমার অপ্রাপ্তির জন্যে কাঁদতে চেয়েছিলাম তার কোলে মাথা রেখে, কিন্তু সে বোঝে নি সে সব, কারণ সে ভালোবাসে নি আমায়, আমি ফর্সা না কালো তাতে তার কি বা যায় আসে, সে প্রতিরাতে হয়ত আমায় শারীরিক সুখ দেয়, নিজেও উপভোগ করে, ভালোবাসার অভাব টাকা দিয়ে মেটানোর চেষ্টা করে,  তবে তাতে কি আমি সত্যিই ভালো আছি?  তাই সেদিন বেড়িয়ে এসেছিলাম বাড়ি থেকে এক কাপড়ে, মা বাবা গত হওয়ায় স্থান হল তাই দাদার সংসারে, ডির্ভোস কেস ফাইল করলাম আমি, কিন্তু ওরা শাস্তি স্বরূপ বাচ্চাটি কেড়ে নিল আমার,  আমিও আর বাচ্চাটি চাই নি আমার কাছে,  কি লাভ চেয়ে? আমার নিজেরই তো থাকার জায়গা নেই, তাই আর ভাবি নি সেদিন বাচ্চাটা কি ভাববে বড় হলে, অনেক কষ্টে ডির্ভোস পেলাম, খোরপোষ চাইতে বলেছিল উকিল, কিন্তু আমিই চাইলাম না, ওর টাকাতে ঘৃণা ধরে গিয়েছিল আমার,  তাই ওর টাকায় জীবন কাটানোর ইচ্ছেটাই মরে গিয়েছিল, উকিলকে হেসে বললাম, "ওর টাকায় বাঁচতে চাইলে কি আর ডির্ভোস নিতাম?"  উকিল হাসল আমার কথা শুনে,  অনেক কষ্টে অনেক সাধ্য সাধনা করে অনেক পরিশ্রমের পর একটা কলেজের চাকরী জোটালাম, অনেকেই বলে একটা সামান্য প্রাইমারি কলেজ টিচারই তো, কি এমন সম্মান তার?  তা অবশ্য বটে, কিন্তু অনেকটা যুদ্ধের পরে পেয়েছি তো তাই সে বড্ড দামী আমার কাছে, হোক না প্রাইমারি কলেজ, তাতে কি যায় আসে, আজকাল তো উপার্জন বেশ ভালোই করি, নিজে টাকা জমিয়েও ভাইকে সাহায্য করি,  আসলে আমি জানি টাকা না জমালে বুড়ো বয়সে ভাই দেখবে না আমায়, এই ভালোবাসা অর্থকেন্দ্রিক , তাই আর ঝুঁকি নিই নি কোনো মতে। তবে আমি ভালো আছি, হ্যা আমি ডির্ভোসী, অনেকের হাসির পাত্রী, অনেকে ব্যঙ্গ করে বলে কি লাভ হল এত রূপ দিয়ে , যখন সংসার ই টিকল না । কিন্তু আমার কি যায় আসে? যে সংসারের ভীত প্রতারণা দিয়ে তৈরী, সে সংসার যে আর করা যায় না, আত্মসম্মান ভূলুণ্ঠিত করে কি আদৌ ঘর বাধা যায়?  তার থেকে আমি ডির্ভোসীই ভালো, কে কি বলে তাতে কি বা আসে যায়?  মাঝে মাঝে ছেলের জন্যে কষ্ট হয়, ভাবি কি জানি কত বড় হল?  তারপর ভাবি থাক ও একা যেমন চলছে তেমনটাই চলুক ডির্ভোসী মায়ের কাছ থেকে যে ডির্ভোসী চরিত্রহীন বাবার কাছে থাকা ভালো,  প্রশ্নের মুখোমুখি কম হতে হবে ওকে, আসলে সমাজ পুরুষের নয় কেবল নারীদেরই দোষ খোঁজে একচোখে। লেখিকা:অনিতা সেন
Parent