কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩১৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4731692.html#pid4731692

🕰️ Posted on March 20, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 610 words / 3 min read

Parent
লেখক- অলোক রায়।   কাঠকুড়ুনি*        পোস্তর বড়া খেয়ে সেদিন একবার করে আঙুল চাটে রমেন আর একবার করে বলে, 'ওয়ান্ডারফুল !'      'সে কি ? এর আগে পোস্তর বড়া খাও নি তুমি ?' আশালতা অত‍্যন্ত অবাক ।      'আমি হবার সময় মা মারা গেল । দুধে দাঁত পড়ার আগে সৎমা হোস্টেলে পাঠিয়ে দিলো । সেখান থেকে চালান করে দিলো বিদেশে । ধন‍্য ধন‍্য পড়ে গেল সৎমার । সতীনের ছেলের জন্যে এতো খরচ করে কেউ ? বিদেশে বসেই ভালো চাকরি পেয়ে সোজা আপনাদের শহরে । সঙ্গী রত্নেশ্বর । রত্ন বিশেষ । হালুয়াতে জলের মাপটা পর্যন্ত ঠিক পরিমাপে দিতে শিখলো না, সে রাঁধবে পোস্তর বড়া ?'      'আহা রে ! এই তো খাবার বয়েস বাবা । কিসের যে তোমার লুকোচুরি বুঝি না বাপু । এক অফিসে কাজ করো । ভালোও বাসো বলছো দুজন দুজনকে । তবে রুবুকে বিয়ে করে উঠে এসো না এই বাড়িতে ! মেয়েটা তো আমার খাবারের ভালো মন্দ বোঝে না । জামাইকে দশ পদ রেঁধে খাইয়ে একটু রাঁধাবাড়ার সুখ করে নেই ।'      'মা যদি তাড়াহুড়ো করেন আর রুবী যদি জানতে পারে রোজ টিফিনে আমি লুকিয়ে এসে এখানে ভরপেট খেয়ে যাই । তাহলে বিয়ে তো দূরের কথা হ‍্যাংলা বলে ঘেন্নায় আমার মুখের দিকেই আর তাকাবে না সে। এখনো ওর দিক থেকে প্রেমটা পাকা হয়নি তো ! প্লিজ এখনই বলবেন না ওকে !'        'আচ্ছা মা, সব বাড়িতে ছুটির দিনে ভালো ভালো রান্না হয় । আমাদের বাড়িতে উল্টো কেন ? শনি রোববারে যেমন তেমন । সোম থেকে শুক্কুর চার পাঁচ পদ ?'      'সপ্তাহে দুটো দিন একটু আরাম করি তাও তোর চোখ টাটায় ? তবু যদি একটা কিছু খেয়ে বলতিস ভালো হয়েছে ! হ‍্যাঁরে রুবু অফিসে তোর এতো ছেলে কাজ করে, কাউকে পছন্দ হয়না তোর ?'      'হয় মা । এক রাজপুত্তুর আছে । আমাদের ম‍্যানেজিং ডিরেক্টর । কিন্তু কোনদিন এই কাঠকুড়ুনির দিকে কি তার চোখ পড়বে ? বাদ দাও ওসব কথা । বিলেত ফেরত । দেখতে হিরো । ওর কপালে মেম নাচছে ।'      আশালতা গজগজ করেন, 'বিলেত ফেরত তো আরও কতই আছে । দেখতেও তারা কিছু উনিশ নয় !'        'বাবা আজ তাড়াহুড়োয় রুবু টিফিন নিয়ে যেতে ভুলে গেছে । তুমি খেয়েদেয়ে যাবার পথে ওটা নিয়ে যাবে ?'      'তাহলে যে ধরা পড়ে যাবো মা ! তাহলে আজই আমার এখানে আসার শেষ দিন ।'      'থাক বাবা । নিয়ে যেতে হবে না । তুমি হাতটা ধুয়ে এসো । আমি ভাত বেড়ে আনি ।'      'এটা কি মাছ মা ?'      'কৈ মাছ । কাঁটাগুলো সাবধানে বেছে খেও বাবা !'      ব‍্যস্তহাতে কেউ বেল বাজাচ্ছে । একবার দুবার তিনবার । চিৎকার ভেসে এল, 'দরজা খোল মা । টিফিন কৌটো নিয়ে দৌড়ে ফিরে যেতে হবে । এম.ডি. টিফিন সেরে ফিরে আসার আগে অফিসে পৌঁছে যেতে হবে আমাকে ।'      আশালতাকে ঠেলে সরিয়ে দ্রুতপায়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো রুবী । 'স‍্যার আপনি ?'      গালভরা ভাত নিয়ে হাসার চেষ্টা করলো রমেন । পায়েস চুরি করা ডায়াবেটিক বাড়ির লোকের মতো । 'বসুন । টিফিন কৌটো নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করতে হবে না আপনাকে । এখানে বসেই শান্তিতে খেয়ে নিন ।'      আশালতা বললেন, 'সে কি বাবা ? তুমি যে বললে তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো । তবে আপনি আজ্ঞে করছো কেন ?'      রমেন বললো, 'ঐটুকু মিথ‍্যে না বললে কি আপনি জামাই আদরে রোজ রোজ খাওয়াতেন আমাকে ? আর বললাম যে ওর তরফে প্রেমটা এখনো পাকা হয়নি !'      রুবীর জড়তা কাটতে চায় না সহজে । 'আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না স‍্যার । আপনি আমার বাড়ি চিনলেন কি করে ? আর মার সঙ্গে পরিচয় হ'ল কি করে ?'      রমেন দু'দাঁতের ফাঁক থেকে কৈয়ের কাঁটা বাছতে বাছতে বললো,  'আপনার জন্মদিনে একঝুড়ি কুচো চিংড়ির বড়া নিয়ে গিয়ে বিলি করলেন সবাইকে কিন্তু আমাকে তো দিলেন না । তবু ঘুরেফিরে কার হাত থেকে যেন আমার ঘরেও গোটা তিনেক পৌঁছেছিলো । খেয়েই আপনার পার্সোনাল ফাইল চেয়ে পাঠালাম । ঠিকানা নোট করে নিলাম । তারপর থেকে আপনার অন্নে প্রতিপালিত হচ্ছি । রাগ করলেন ?'      'কাঠকুড়ুনি বর্তে গেল স‍্যার !'
Parent