কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩২৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4745733.html#pid4745733

🕰️ Posted on March 31, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 508 words / 2 min read

Parent
বাসন্তীকা সাত সকালে খবরের কাগজটা দেখেই চমকে উঠেছিলেন আরতি। নন্দনে ফিল্ম ফেস্টিভাল চলছে, আর সেখানে কিনা ওনার আর বিমলবাবুর প্রিয় সিনেমাটি 'রেট্রো' বিভাগে দেখানো হচ্ছে! আজকাল তো আর এসব ছবি দেখাই হয় না! সারা জীবন থোড়-বড়ি-খাড়া করেই কেটে গেল, এখনও তাই হচ্ছে। যতদিন 'উনি' ছিলেন, কলেজ সামলে, সংসার সামলে, ছেলে সামলে নিজের জন্য সময় হতো না। আর এখন তো নাতিবাবুকে সামলানোর বাড়তি দায়িত্ব। তবে, এই দুদিন বাড়িতে কেউ নেই। পাপুন বৌমা আর ছেলেকে নিয়ে দোলের ছুটির তিনদিনের উইকেন্ড কাটাতে গেছে শান্তিনিকেতন। আর তাই, বাড়িটা বড্ড ফাঁকা লাগছে। অন্যদিন ছোট্ট রিয়ান ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। সত্যি বলতে কি, মাঝেমাঝে বিরক্তও লাগে... তাও বড় প্রিয় নাতিবাবু ওঁর। আর এই দুটো দিন এই দুই কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটবাড়িটাও বড্ড বেশি বড় লাগছে। বড্ড বেশি গোছানো লাগছে। ভাবতে ভাবতেই নিউজপেপারটা খুলে বসলেন আরতি। আজ কাগজ আসেনি, তাই গতকালের বিশেষ ক্রোড়পত্রটাই পড়বেন আবার। আর সেখানেই একটা সুন্দর ছবি চোখে পড়ল। সবুজ ময়দানের পটভূমিকায় লাল পলাশ! ক্যাপশানে লেখা, 'বাসন্তীকা'। একটু আনমনা হলেন আরতি। ওঁকে ওঁর বাবা 'বাসন্তী' বলেই ডাকতেন। বসন্তকালে জন্মদিন বলে। তবে, সে আর কে মনে রেখেছে! এখন বেশ সুন্দর জন্মদিন পালন হয়, ওঁদের সময় এসব 'আদিখ্যেতা' বলা হতো! তাই সেভাবে স্পেশাল কিছু হয়নি কখনও। এখন বর নেই। ছেলে হয়ত জানেও না মায়ের জন্মদিন কবে! নাহলে হয়ত এবার শান্তিনিকেতন নিয়েই যেত... ভাবতে ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল ওঁর। ওঁদের বাড়িতে মেয়েদের জন্মদিন পালন করা হতো না কোনো এক অজ্ঞাত কারণে। তবে মা পাঁচরকম ভাজা, পায়েস বানাতেন। একুশে বিয়ে হল। কখনও লজ্জায় বলতেই পারলেন না কবে জন্মদিন। আর কেউ জিজ্ঞেস ও করেনি কখনও। যেন ওঁর জন্মই হয়নি! কলেজে টিচার্স ডে পালন হয়েছে, ফাংশান হয়েছে, কিন্তু জন্মদিন নয়। তাই সবমিলিয়ে আধার কার্ড আর ভোটার কার্ডের রেকর্ডের বাইরে 'কুড়ি মার্চ ' কিছুই নয়! আরতি বসাক, 'হেমকান্ত স্মৃতি বিদ্যালয়ের' ইতিহাস শিক্ষিকা - একটা গোটা জন্ম জন্মদিন ছাড়াই কাটিয়ে দিলেন! কিন্তু কেন! সব দায়িত্ব তো পালন করেছেন ঠিকমতো। কোনো কার্পণ্য করেননি তাতে! শুধু নিজের প্রতি ছাড়া! ভাবনার মধ্যেই কলিংবেল বাজল। সবিতা রান্না করতে এসেছে। এই বাড়ি ছাড়াও আরও দুটো বাড়িতে রান্নার কাজ করে ও। তাই বেজায় ব্যস্ত থাকে। তারমধ্যেই মুখ চলতে থাকে সমানে। এটা-সেটা গল্প করে। "মাসিমা, আর তো কেউ নেই, আজ কি রান্না করব? হাল্কা-ফুল্কা কিছু করি?" যথারীতি তাড়া লাগিয়ে বলল সবিতা। একটু থমকালেন আরতি। তারপর বললেন "সবিতা, আমাকে পাঁচরকমের ভাজা আর একটু ডাল বানিয়ে দেবে? আর খুব অসুবিধা না হলে একটু পায়েস? খুব ইচ্ছে করছে আজ..." বলেই লজ্জা লাগছে বড্ড। কিছু যদি মনে করে মেয়েটা! "মাসিমা... আজ আপনার... জন্মদিন?" "ওই আর কি! তবে তোমার অসুবিধা হলে..." "মাসিমা, আপনি স্নান করে একটা নতুন শাড়ি পরুন দেখি। আর আমাকে কিছু টাকা দিন। এই ফ্ল্যাটের নিচেই তো একটা কেকের দোকান, একটা কেক নিয়ে আসি। আজ আমরাই পাট্টি করব।" "ধ্যাত, পাগল মেয়ে!" "হ্যাঁ, পাগলই তো! দেখুন না, কেমন পাগলামি করি আমি! আপনার জন্মদিন বলে কথা!" কলকল করছিল সবিতা। ভরে যাচ্ছিলেন আরতি। এই যে ভালবাসা, এটাই তো প্রাপ্তি... আজীবনের সম্পদ! সামনে দাঁড়ানো লাল শাড়ির সবিতা যেন তখন আস্ত পলাশ গাছ! তাহলে তো আজ সেই ছবিটাও দেখা যায়... আর যদি রাত্রে বাইরে খেয়ে ফেরা যায়... 'কিন্তু কিন্তু' করে সবিতাকে বলতেই ও একপায়ে রাজি... একটু পরে রিক্সায় উঠছিলেন সাদা শাড়ি আর লাল শাড়ি পরা দুজন অসমবয়সী মানুষ...আর দেখে মনে হচ্ছিল শহরে সত্যিই 'বসন্ত এসে গেছে!'
Parent