কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-2674676.html#pid2674676

🕰️ Posted on November 27, 2020 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 750 words / 3 min read

Parent
গহীন এই দু' তিন দিন হলো, হঠাৎ করেই বেশ ঠান্ডা পড়ে গেছে। এমনিতেই ওদের বাড়ি শহরতলিতে হওয়ায় ঠান্ডা কলকাতার তুলনায় বেশি পড়ে। আর, বাড়িতে বেশ কিছু গাছপালা থাকায় হাওয়াও দেয় খুব! তবে, শীতের খারাপ দিক এগুলো হলে, ভালো দিক হলো ওদের বেশ বড় একটা উঠোন আছে... ছাদ আছে। শীতকালে লেপ কম্বল রোদে দেওয়া হয়। কী যে ভালো লাগে তারপর সেই লেপ কম্বল গায়ে দিতে! মনে মনে এই কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হাসছিল অতীশ। এই তো, আজকের টপিক পাওয়া গেছে। এইসব এতাল বেতাল কথা বলেই আলাপ জমাতে হবে মোহরের সাথে। নইলে তো ওদের দুজনের প্রেমটা একদম ই জমছে না। সারাদিন মেয়েটা হাসিখুশি থাকে, কিন্তু এই ঘরে এলেই চুপচাপ হয়ে যায়। লজ্জা পায় বোধহয়। ওদের সম্বন্ধ করে বিয়ে, ম্যাট্রিমনিয়াল অ্যাপ থেকে। বিয়ে ঠিক হয়েছিল এইবছরের জানুয়ারিতে। প্রথমে একটা কফি শপে দেখা করেছিল ওরা দুজন। অতীশের বেশ এমব্যারাসিং লেগেছিল! মাত্র ঘন্টাখানেকের মিটিং এ কি কাউকে জীবন সাথী করা যাবে কিনা ঠিক করা সম্ভব! কিন্তু মোহরকে দেখে সব ভুলে গেছিল ও। একটু শ্যামলা রং, দীঘল চোখ, গজদাঁত আর খুব মিষ্টি কন্ঠস্বর। একেবারে বোল্ড আউট হয়ে গেছিল অতীশ। আর, কি অবাক কান্ড! মোহর ও 'হ্যাঁ' বলে দিয়েছিল বিয়েতে! ওর মতো সাধারণ দেখতে একজনকে! দুই বাড়ির লোকেদের ও নিজেদের ভালো লেগেছিল। আমাদের দেশে তো এমনিতেই বিয়ে মানে দুই পরিবারের মধ্যে মিলন। অতীশের খুব ইচ্ছে ছিল চুটিয়ে প্রেম করার, কিন্তু লকডাউন হয়ে যাওয়াতে শুধুই ফোনে কথা হত। তারপর ঠিক হলো এই নভেম্বর মাসেই চার হাত এক হবে ওদের। বাবা মায়ের মুখে এই খবর শুনে খুব ভালো লেগেছিল অতীশের। যাক, এতদিনে তাহলে মোহর ওর হবে। ওই দীঘল চোখে চোখ রেখে গাইতে পারবে "সেই সুরে বাজায় বাঁশি...ভালোবাসি, ভালোবাসি!" এবছরের পরিস্থিতির জন্য বিয়েটা বেশ অনাড়ম্বর ভাবেই হয়েছে ওদের। তবে অতীশ ঠিক করেছে অ্যানিভার্সারিটা একদম জমিয়ে দেবে। ততদিনে নিশ্চয় পৃথিবী সুস্থ হয়ে যাবে! ভাবতে ভাবতেই ঘরে এলো মোহর। লাল পাড়ের হলুদ তাঁতের শাড়িতে ওর বৌ টাকে মোহময়ী লাগছে। এই মেয়েটার সাথে বিয়ের আগে ফোনে কতবার কথা হয়েছে, তবে সামনা সামনি যেন জড়তাটা কাটে নি এখনও। কেমন অপরিচিত লাগে যেন! অবশ্য দোষ ওর ও। পুরো লকডাউন চলাকালীন ভয়ে আর টেনশানে ছিল অতীশ, চাকরিটা যদি চলে যায়, সেই ভেবে! তাই সেভাবে ফ্রি হয়ে কথাও বলতে পারে নি। তবে, সব আক্ষেপ এবার পুষিয়ে নেবে ও। যারা বলে, বিয়ের পরে প্রেম হয় না, তাদের ভুল প্রমান করেই ছাড়বে! ওর বিনব্যাগ টা থেকে উঠে দাঁড়াল অতীশ। ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা বেঁটে টুলটায় বসে ক্রিম লাগাচ্ছে মোহর। আহা, তাতেও কী যে মিষ্টি লাগছে ওকে! হাতের শাঁখা -পলার রিনিঝিনি আওয়াজ, লাল সিঁদুরের টিপ...সিঁদুরের গুঁড়ো পড়ে লাল লাল নাক...আবিষ্ট করে তুলছিল অতীশকে। পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো অতীশ, আয়নার দিকে। মোহর এখন শাড়িটা পায়ের কাছে একটু তুলে ময়শ্চারাইজার লাগাচ্চে। পায়ে একটা নূপুর...। আবেশ আসছে আরও। একটু নীচু হয়ে বসে মোহরের কাঁধে মাথাটা রাখল অতীশ। আহ, কী সুন্দর একটা গন্ধ ভেসে আসছে ওর শরীর থেকে! একেই কি মৃগনাভি বলে? দীঘল চোখ মেলে তাকিয়েছে মোহর। চোখে কি আমন্ত্রন? নিমেষে ডুবে গেল অতীশ, মোহরের অধরে। নাকি, দুজনে, দুজনের মধ্যে! ঘোরের মধ্যে বিছানায় নিয়ে এলো অতীশ মোহরকে। আজ একাত্ম হবে ওরা... উদ্যত হতে যাচ্ছে, ঠিক সেইসময় একটু ফুঁপিয়ে মোহর বলে ওঠে..."আজ না, প্লিজ...আজ না...আজ ছেড়ে দাও!" থমকে গেল অতীশ। আজও! এই নিয়ে পরপর পাঁচদিন! সেই বৌভাতের দিন থেকেই। কিন্তু কেন? বিকারগ্রস্তের মতো মোহর তখনও বলে যাচ্ছে "ছেড়ে দাও...প্লিজ..." স্বভাব বিরুদ্ধ ভাবেই মাথা গরম হয়ে গেল অতীশের। এক ঝটকায় উঠে পড়ে বলে উঠল "প্লিজ, এরকমভাবে কেঁদো না। আমি রেপিস্ট না, মলেস্ট করতে চাই না তোমাকে। ভালোবাসি তোমাকে। তাই...স্যরি।" মাথা কাজ করছে না ওর। মোহর কেন নিজেকে মেলে ধরতে পারছে না? তবে কি ওর মন অন্য কোথাও বাঁধা আছে? তাই? তাহলে বিয়ের প্রহসন কেন করল? কেন? ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন গুলো করতে যাবে, রূঢ় ভাবে, হঠাৎ শোনে, অবিরাম ফোঁপানির মাঝে মোহর বলছে "আমি খুব খারাপ...তোমার জীবন নষ্ট করছি...বিশ্বাস করো, আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু...আমার খুব ভয় লাগে অতীশ... মনে হয়...খুব যন্ত্রনা করবে...তোমার ভালো লাগবে না আমাকে...তাই... হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় আমার..." "আগে বলোনি কেন আমাকে?" তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মোহরের দিকে তাকিয়ে বলে অতীশ। "ভেবেছিলাম..অষ্টমঙ্গলায় গিয়ে মা কে বলব...লজ্জা করবে খুব...কিন্তু বলব..." কান্নায় বুজে আসে মোহরের গলা। গলার কাছে কষ্ট দলা বাঁধছে অতীশের ও। 'জেনোফোবিয়া' বা 'এরোটোফোবিয়া' - যৌনমিলন সম্পর্কিত ভয় বা ফোবিয়া। কলেজে সায়কোলজি ছিল অতীশের সাবজেক্ট কম্বিনেশানে। তাই জানে, এই ফোবিয়ার বিস্তার কত গহীন। আর এই ক'দিন আগেই না ও অকম্পিত স্বরে বলেছে "যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব"...আর হৃদয় তো শুধু হৃদয়ের ভালো কিছু না...ফোবিয়া থাকলে সেটাও গ্রহন করতে হবে ওকে। নইলে আর কিসের পাশে থাকার অঙ্গীকার করা? পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো অতীশ মোহরের দিকে। অঝোরে কাঁদছে মেয়েটা এখনও। হাঁটু গেড়ে বসে অতীশ। মোহরের মাথায় হাত রাখে আলতো করে। কাউন্সেলিং করাতে হবে মেয়েটাকে। তবে তার আগে দরকার ভালোবাসার ভরসা যোগান দেওয়া। চোখের জলটা মুছে দিয়ে মোহরের কপালে ঠোঁট রাখে অতীশ। পৃথিবীর পবিত্রতম ভালোবাসার ঠিকানা সেই স্পর্শে....
Parent