কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩৪৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4768838.html#pid4768838

🕰️ Posted on April 18, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 658 words / 3 min read

Parent
# অণুগল্প উফ, আজ যেন বাকি দিনগুলোর থেকেও বেশি গরম! গলাটা এক্কেবারে শুকিয়ে গেছে অসীম বাবুর। অবিশ্যি শুধু বাইরের গরম তো না, পকেটও গরম আছে যে! মানে, ছিল! গেল হপ্তায় তিনদিন 'নবীন সংঘ' ক্লাবের অন্নপূর্ণা মায়ের পুজোয় ঢাক বাজিয়েছেন উনি। সেই করোনা আসার পর থেকে এই প্রথম এইভাবে ঢাক বাজানোর বরাত পাওয়া গেছিল। ওর সঙ্গে ছোটুয়াও গেছিল, কাঁসর বাজাতে। তা, বেশ ভালোই টাকা দিয়েছে কেলাবের বাবুরা তারপরেও, পাড়ার মা জননীরা কিছু বখশিস দিয়েছেন। পুজো শেষ হয়ে যাবার পরে বাপ-ব্যাটা মিলে তাই আজ একটা বাজার থেকে কিছু কেনাকাটা করেছে। বেশি কিছু না, ছেলের একটা গেঞ্জি, দুটো প্যান্ট, যেটা কেনার সময় ছোটুয়া বলেছিল "বাবা, খালি গায়েও তো থাকা যায়, কিন্তু প্যান্ট না পরলে..."। এছাড়া ওনার জন্য একটা লুঙ্গি। ছেলের মায়ের জন্য একজোড়া সূতি শাড়ি। একটা নতুন বিছানার চাদর। তাতেই কত টাকা শেষ হয়ে গেল! তাও, বেশ খুশি খুশি মন আছে আজ দুজনেরই। ছোটুয়া খুব খুশি, সোমবার থেকে ইকলেজে যাবে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। অসীমও খুশি... ছেলের মা খুশি হবে ভেবে - একসাথে দু' দু'খান শাড়ি - কতদিন পরে যে পাবে! ভাবতে ভাবতেই হাতে টান লাগে অসীমের। তাকিয়ে দেখেন ছোটুয়া দাঁড়িয়ে গেছে। চোখে জল আসব আসব করছে। "একি বাপ, দাঁড়্যে পল্লে কেন?" বলেই নজর পড়ল নীচের দিকে। পায়ের চটিটা বুড়ো আঙুলের পাশ দিয়ে ছিঁড়ে গেছে! "যাহ! এবার মুচি খুঁজতে হবে..." বলতে বলতে এদিক ওদিক তাকান উনি। ইস! এই অচেনা জায়গায় কোথায় মুচি বসেন কে জানে! "দাদা, এখেনে জুতো সেলাই কোতায় হয় বলতি পারেন?" জিজ্ঞেস করে একজন পথচারীকে। "উইদিকে দেখেন" বলে এগিয়ে যান তিনি। আর কী করা! খোঁড়াতে থাকা ছেলেকে নিয়ে সেইদিকে যান। বেশ খানিকটা যাবার পরে জুতো সেলাইয়ের দোকান পাওয়া যায়। 'দোকান' বলতে রাস্তার মধ্যেই জুতো সেলাইয়ের সরঞ্জাম রাখা। তবে সামনে রাখা পিঁড়িতে কেউ নেই! "কোতায় গ্যালো রে বাবা.." নিজের মনেই বিড়বড় করে বলেন অসীম। ট্রেন টা না চলে যায়! তাহলে হাসনাবাদ যাবার গাড়ি আরও একঘন্টা পরে... "একটু দাঁড়াতে হবে বাবু..." শুনে চমকে তাকান উনি। মলিন পোষাক আর ফেজ টুপি পরা একজন মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে। হাত পায়ে জল লাগা। ওহ, এখন তো রোজা চলছে... হয়ত এখন ওঁর রোজা ভাঙার সময়। কিন্তু দাঁড়াতে গেলে তো... সেকথা বলার আগেই ছোটুয়া বলে ওঠে "বাবা, গলা শুক্যে গেচে - জল খাব।" আর, সামনের মানুষটি বলে ওঠেন "এই তো বাবা, জল। এই নাও।" আর একটা বোতল বাড়িয়ে দেন ছেলেটির দিকে। তারপর কি মনে হওয়াতে অসীমকে বলে ওঠেন "আমি ইফতারি করতে যাচ্ছিলাম, তা দ্যান, সারিয়েই দিই জুতোটা... এই যে বাবা পা টা এই জুতোটার ওপর রাখো..." আর তারপর জুতোটার অবস্থা দেখে বলে ওঠেন "হায় আল্লা! জুতোর তো কিছুই নেই দেখছি। আঠা লাগিয়ে সেলাই দিতে হবে।" "দেরি হবে?" আকুল হয়ে জিজ্ঞেস করে ছোটুয়া। আহা রে, খিদে পেয়েছে বেচারার। সেই কোন সকালেই খাওয়া সেরে কেনাকাটি করতে শুরু করেছিল। তাতেই এত দেরি হয়ে গেল... এত খরচ হয়ে গেল... "ক্ষুধা পেয়েছে, বাবা? এই যে, এই পেয়ারাখান খাও ততখন... এখুনি হয়ে যাবে..." পলকে মুচিভাই পেয়ারা বের করে দেন কোঁচর থেকে। "তা দাদার বাড়ি কই?" "হাসনানাদ লাইনে। আপনি এখেনেই থাকেন?" "হ্যাঁ... ক'মাস পর পর বাড়ি যাই... মেদনিপুরের দিকে বাড়ি..." "কে কে আছে বাড়িতে? " "আম্মু, আছে, পোলাপান আছে, আপনার ভাবী আছে..." "মন টানে না?" আহা, এই কদিনেই বাড়ি ছেড়ে থাকতে মনখারাপ হয়েছে ওঁর... আর এই মানুষটি... "টানে তো... কী আর করা!" আঠা শুকিয়ে গেছে, বড় একটা সূচে সুতো পরিয়ে সেলাই করতে করতে বলেন উনি। তারপর বলে ওঠেন "ওই পাটিটাও দাও বাপজান... ইয়ে, বাবা... ওটাও সেলাই মেরে দিই।" "পেয়ারাখান খুব ভাল" বলে ওঠা ছোটুয়া। "খাও বাবা, খাও। তোমার ভাল লাগলেই ভাল!" কী যে হল অসীমের... চোখটা ঝাপসা ঝাপসা লাগছে যেন। কার খাবার, কার ভোগে লাগে! রোজার পরে ইফতারির জন্য রাখা খাবার খাচ্ছে এক বালক, যার কাঁধের ব্যাগে তখন পুজোয় বাজানো কাঁসর - ঘন্টা! হঠাৎ কী যে হয়ে গেল অসীমের! তাড়াতাড়ি ফতুয়ার বুকের ভেতরের পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বার করে দিলেন নাম না জানা এই মুচিভাইকে। আর বলে উঠলেন "ভাই, খেয়ে নিন কিছু... আমরা চলি? আবার দেখা হবে..." "আরে এত টাকা না..." প্রতিবাদ করেন মুচিভাই। "ও কিছু না... একটু জল-মিষ্টি খাবেন। সুস্থ থাকবেন ভাই... টেরেন চলে যাবে... আসি..." বলে ছোটুয়ার হাত ধরে হাঁটতে থাকেন অসীম। এই তো, এই 'দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে...' এর মাঝেই তো আছে একটা আস্ত তীর্থক্ষেত্র, যার নাম 'ভারততীর্থ!'
Parent