কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩৫৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4843820.html#pid4843820

🕰️ Posted on June 17, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 406 words / 2 min read

Parent
# অণুগল্প   রোজকার মতোই বাগবাজারের মায়ের ঘাটের কাছে বসেছিল বিজলী। ওর মাঈ এর পাশটিতে, এক্কেবারে ঘেঁষে। ও এখানে বসে ভিক্ষা করে। কখনও জলে পয়সা পড়ে গেলে কুড়িয়ে আনে, ওর বয়সী আরও কয়েকজনের সাথে দাপাদাপি করে। আবার, ঘাটে ঘুরতে আসা কারো গঙ্গাজল লাগলে তুলে এনে দেয়। তাঁরা দু'চার টাকা দেন। এভাবেই, বিজলী আর ওর মাঈ এর চলে। রবিবার আজ, তাই লোকজনের ভিড় হয় এখানে। বাবুরা, দিদিমণিরা হাওয়া খেতে আসে বিকেলের দিকে। কিন্তু আজ এত্ত গরম, তাই কেউ আসবে কিনা সন্দ! আগুনের মতো তাপ যেন রোদ্দুরে। মাঈ বিজলীর মাথার ওপর নিজের ছেঁড়াখোঁড়া শাড়িটা ঢাকা দিয়ে দিল,যাতে তাপ কম লাগে! গঙ্গার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে একটু ঝিমুনি আসছিল বিজলীর। হঠাৎ কানে একটু শোরগোল এলো। তাকিয়ে দেখে, একজন বাবু আর একজন দিদিমণি, একটা বড় বস্তায় করে কিছু বিলি করছেন। দিদিমণিটা আবার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন "সবাই পাবেন। একটু ধৈর্য্য ধরুন। আমরা যাব সবার কাছে। আপনারা বসে থাকুন।" দু' চারজনের পরে ওঁরা এলেন বিজলী আর মাঈ এর কাছে। কিছু চাল-ডাল আর একটা পঞ্চাশ টাকার 'লোট' দিলেন বিজলীর মাকে। তারপর বললেন "আমাদের মা মারা গেছেন গতমাসে। আজ মায়েদের দিন। তাই আমরা দুই ভাই-বোন ওঁর জন্য তোমাদের সবাইকে এই সামান্য জিনিস গুলো দিচ্ছি। আমাদের মা ভালবাসতেন..."। বলে দিদিমণিটা চলে যাবার আগে বিজলীর দিকে একটু তাকালেন। আহা, কেমন মা দুগ্গার মতো মুখ দিদিটার! "অ্যাই, চকোলেট খাবি?" বলে টুক করে একটা ছোট্ট চকোলেট বিজলীর ফ্রকের ওপর দিয়ে চলে গেলেন। খপ করে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলল চকোলেট টা বিজলী। তাড়াতাড়ি তাকিয়ে দেখে, দিদিটা ওকেই দিয়েছে শুধু, আর ক্কাউকে দেয় নি। মাঈর পাশ থেকে উঠে আসে ও। সবার সামনে খাওয়া যাবে না! এই প্রথম এই রংচঙে চকোলেট খাবে ও! কী মজা! রেললাইনের ধারে চলে এলো ও। এখানে তিন ভাইবোন মাটির মূর্তি হয়ে পাশাপাশি বসে থাকেন। বেশি কেউ আসে না এইদিকে। ঠাকুরমশাই পুজো করেন দুবেলা। বাকিসময় খালিই থাকে। মন্দিরের লাল মেঝেতে বসে চকোলেট টা খুলে কামড় বসাতে যাবে, হঠাৎ চোখ পড়ল ঠাকুরের দিকে। আর, তক্ষুণি মনে পড়ল ওরা চাল-ডাল পেয়েছে। ইঁটের আগুনে মাঈ রান্না করবে। ওরা ভাত খাবে আজ! যারা এইসব দিল... তারাও তো ভাইবোন। আহা, এই ঠাকুরেরাও তো তাই! আর আজ নাকি মায়েদের দিন। তবে ও একা কেন এটা খাবে? "এই যে ঠাকুর মাঈ... আজ তো তোমার দিন, তাই তোমাকে এটা দিলাম। তোমার ভাইদের দিয়ে খেও।" বলে, মূর্তির কাছে ওটা রেখে দিয়ে লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে এলো বিজলী। সবসময় হাত পেতে সবকিছু নেয়... আজ প্রথম ও কিছু দিতে পেরেছে... কী আনন্দ! বিজলীটা বড্ড ছোট... মাটি মাটি চুলের মাটি মাখা মেয়ে... নইলে বুঝতে পারত আজ সেই ভাইবোনেরাও বড্ড খুশি। ঈশ্বর থেকে 'মা' হতে পেরেছেন যে! ঈশ্বর থেকে 'মানুষ' হতে পেরেছেন যে!  
Parent