কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩৬৬

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-4862513.html#pid4862513

🕰️ Posted on July 4, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 556 words / 3 min read

Parent
# অণুগল্প   হ্যাঁ, লাজবন্তী জানে ও খিটখিটে। কারণে অকারণে ওর মেজাজ গরম হয়ে যায়। অফিসে অনেকে ওকে 'মর্জিনা' বলে ডাকে ও জানে। সবসময় মর্জি মতো কিছু না হলেই রাগ হয় বলেই এই নাম! নামটার মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি আছে বলে একটু হাসি পেয়েছিল ওর। কিন্তু তারপরেই মনে হয়েছে "শয়তান এক একটা! সিনিয়রদের সঙ্গে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় জানে না!" আর, সবসময় মাথাগরম থাকবে না ই বা কেন? যার কেউ নেই, তার তো কাউকে তুষ্ট করে চলারও দায় নেই! পনেরো সালে বাবা আর আঠেরোয় মা চলে গেছেন। দাদা ভিন রাজ্যে থাকে। একটা বয়ফ্রেন্ড ছিল, প্রেমের বেলায় ছিল, বিয়ের কথা ওঠার পরেই সুড়সুড় করে বাবা-মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করে নিল! ওর এখন কেউ নেই জাস্ট! শুধু নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে, ভাল চাকরি করে, কাউকে পাত্তা দেয় না ও। হুঁহ! আর কাকেই বা দেবে? দাদা মাঝেমাঝে ফোন করে, ওইটুকুই। কখনও বলে নি "আমার কাছে চলে আয়। এখানে চাকরি পেয়ে যাবি। তোর যোগ্যতা আছে, ভাবনা কি..."। এই বাইরে প্রচন্ড গরম আর অফিসে, বাড়িতে এসির ঠান্ডা - দুয়ে মিলে জ্বর এসে গেছে লাজবন্তীর। তাই অফিসে যেতে পারেনি বুধবার থেকে। ফেব্রুয়ারি মাসে ওদের 'ওয়ার্ক ফ্রম অফিস' চালু হবার পরে এই প্রথম ছুটি নিল ও। দুদিন মাথা তুলতে পারছিল না ও। আজ একটু সুস্থ লাগছে। এই দুদিন বাড়ির যে কাজ করে, সেই শাবানাকে আসতে বারণ করেছিল ও। আবার কোভিড বাড়ছে - বলা তো যায় না! ওর তো একটা দায়িত্ব আছে! শাবানা শুনে "দিদি, আমি না গেলে তুমি কি খাবে? ও কিছু হবে না, আমি চলে যাব!" বলেছিল। কিন্তু ও রাজি হয়নি। নিজেই ভাতেভাত করে খেয়ে নিয়েছে। আর বাইরে থেকে খাবার অর্ডারও করেছে। কিন্তু আজ শরীর বেশ ভাল। ডাক্তারবাবুও বললেন কোভিড না, এমনিই গরম-ঠান্ডা থেকে জ্বর হয়েছে। তাই শাবানাকে ফোন করে বলে দিল "তুমি চাইলে আসতে পারো।" শাবানা একটু চুপ করে ছিল। তারপর বলল "আচ্ছা দিদি, আমি বাড়ির কাছেই আছি, আসছি।" তা, মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই চলে এসেছিল শাবানা। সঙ্গে ওর ছেলে। বছর পাঁচেক বয়স, রোগা টিংটিঙে চেহারা। তবে আজ বেশ বাহারের কুর্তা - প্যান্ট পরা। এর আগে যতবার এসেছে আদুল গায়ে এসেছে! আজ শাবানাও একটা ঝলমলে চুড়িদার পরে আছে। "এত সেজেগুজে?" জিজ্ঞেস করল লাজবন্তী। "ওই যে, ওকে নিয়ে একটু ডানলপের রথের মেলায় যাব দিদি। এদিক পানেই আসছিলাম, তাই তো তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারলাম গো" বকবক করে বলে ওঠে শাবানা। রথের মেলায় শাবানা! এই ভিড়ে! খুব অবাক লাগে ওর। তারপর জিজ্ঞেস করেই ফেলে "রথের মেলা তো থাকবে কয়েকদিন। পরে যেতে পারতে!" "কি বলব দিদি, ছেলে শুনবেই না। ওর জগন্নাথ ঠাকুরকে খুব পছন্দ। আমাদের পাশের ঘরের ওরা তো উড়িয়া! ওরা পুরী গেছল, প্রসাদ দিয়েছে। ব্যস, ছেলে তারপর থেকে ঠাকুরের নামে পাগল!" "তোমার জগন্নাথ ঠাকুরকে ভাল লাগে?" জিজ্ঞেস করল লাজবন্তী বাচ্চাটিকে। "হ্যাঁ, উনি কেমন হাত বাড়িয়ে রাখেন জড়িয়ে ধরবেন বলে। আব্বাও বাড়ি এলে ওমনি করে হাত ছড়ায়ে রাখে, আমি গিয়ে জড়িয়ে ধরি!" শুনতে শুনতে চোখে জল আসছিল লাজবন্তীর। "হাত কাটা জগন্নাথ", 'ঠুঁটো জগন্নাথ' বলে অনেকে। একটা খারাপ ইঙ্গিত দিয়েও কথা বলে অনেকে। কিন্তু... কখনও তো মনে হয়নি, আসলে ওটা কাটা হাত না, মেলে থাকা হাত! বুকে নেবার অপেক্ষায়! কথাটা ভেবেও যে কী শান্তি! আহ্! আচ্ছা, ও যে ভাবে, ওর কেউ নেই - নেই কি আসলে? উনিই তো আছেন! আলিঙ্গনের অপেক্ষায়... আর ও কিনা... অভিমান, অতিমান থেকে মেজাজ গরম করে রাখে সবসময়! ধ্যাত! সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাদেকের চুলটা একটু ঘেঁটে দেয় লাজবন্তী। এখন শরীরটা বেশ ভাল লাগছে। অনেকবছর যায় নি, আজ একটু মেলায় গেলে কেমন হয়? একটু পাঁপরভাজা - জিলিপি কিনলে কেমন হয়? ভাবতেই ভাল লাগছিল লাজবন্তীর। না, না - লাজুর! জগন্নাথদেবের লাজু! একজন তো আছেনই, ওকে 'লাজু' ভাবার!  
Parent