কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩৮৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5042770.html#pid5042770

🕰️ Posted on November 29, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 598 words / 3 min read

Parent
অলকার দুঃখ অলকার মেয়ে বকাইও বোঝে না। মেয়ের কাছে বৌমার নিন্দেমন্দ করে মন হালকা কোন শাশুড়ি না করে? অলকার সে পথও বন্ধ। মৃগাঙ্ক তবু মিষ্টভাষী, বকাই একেবারে কড়া দিদিমণি। সে নিজে কোনও নিন্দে শুনবে না, অলকাকেও করতে দেবে না। তার টেলিফোনিক চোখরাঙানিতে অলকা তটস্থ, “কিচ্ছুটি বলবে না তুমি রানিকে। বেশি দিন থাকবে না ও তোমার কাছে। পুকাই ট্রান্সফার হয়ে গেলে রানিও চলে যাবে। সেই ক’টা দিন রানির সব ছেলেমানুষি তুমি চোখ-কান বুজে ইগনোর করবে। জেনে রাখ, এইটাই সম্পর্ক ভাল রাখার একমাত্র উপায়...” এই হল তার মাকে জ্ঞানদান। তবে অলকার মনটা আজ বড়ই চিড়বিড় করছে। সেলাই নিয়ে বসে পড়লেন তাই। ওই একটি কাজে ডুবে গেলে মাথাটা ঠান্ডা হয় তাঁর। স্ত্রীর মেজাজ বিগড়ে আছে বুঝে মৃগাঙ্ক খেতে পর্যন্ত চাইতে পারছেন না, শুধুই ঘুরঘুর করছেন। কিছু ক্ষণ পরে এসে জুটল পুকাই, বলল, “বুঝলে বাবা, আমাদের বাড়িটা শিল্পনিকেতন হয়ে উঠল। এক জন এ ঘরে সেলাইয়ে মেতেছেন, আর এক জন ও ঘরে বসেছেন আঁকতে।” শুনে অলকার পড়ে আসা রাগ আবার টঙে চড়ল। রানিসাহেবা আঁকায় বসেছেন, তার মানে তাকে ডেকে ডেকে এনে খাওয়ানোর দায়িত্ব এ বার অলকার। আঁকাআঁকির প্রতি দুর্বলতা ছিল বলে ছেলেমেয়েদের ছবি আঁকা শেখাবার পেছনে এক কালে অনেক খেটেছিলেন অলকা। তারা কেউ শিখল না, অথচ আজ পরের বাড়ির একটা মেয়ে এসে ছবি এঁকে এঁকে বাড়ি ভরাচ্ছে। তাও সে সব ছবি যদি দৃষ্টিনন্দন হত! রানির আঁকা ছবি মানেই হয় ট্যারাব্যাঁকা মানুষ, নয় ক্যানভাস জুড়ে উদ্দাম রঙের স্রোত। ওগুলো নাকি ছবি! চোখের কষ্ট আর রঙের পিছনে পয়সা নষ্ট। মৃগাঙ্ক তাঁকে বোঝান, “এ সব হল মডার্ন আর্ট, বুঝতে একটু ট্রেনিং লাগে।” সে কথা শুনে আরও রাগ হয় অলকার। অখাদ্য সব ছবিকে নাকি ট্রেনিং নিয়ে বাহবা দিতে হবে! নাহ, মনের জ্বলুনি কমাতে না পারলে আখেরে নিজেরই কষ্ট। অলকা এ বার তাই শাসন করেন মনকে, ‘যে যা করে করুক, তোমার অত দেখার দরকার নেই। তুমি নিজেকে নিয়ে থাকো।’ কিন্তু নিজেকে নিয়ে থাকার জো অলকার থাকলে তো! টপনটে তুলি গুঁজে ছুটে এল রানি। অলকা আর মৃগাঙ্ককে দু’হাতে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে খাড়া করে দিল তার ইজেলের সামনে, তার পর শুধোল, “বলো, কেমন হয়েছে!” পানিফলে অনুপ্রাণিত রানি এত ক্ষণ ধরে বাইসনের মাথা এঁকেছে। ছবি দেখে পেটটা হাসিতে গুড়গুড় করে উঠল অলকার— এই ছবি আঁকলেন এত ক্ষণ ধরে মহারানি! পুকাই এর চেয়ে অনেক ভাল ছাগল আঁকত ক্লাস থ্রিতে। মৃগাঙ্ক কিন্তু উদ্ভাসিত মুখে এ দিক ও দিক ঘাড় কাত করে দেখেই চললেন। বকাইয়ের কড়া নির্দেশ মেনে হাসি চেপে দুটো প্রশংসাবাক্য উগরে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে অলকা শুনতে পেলেন মৃগাঙ্ক বলছেন, “বাইসনের যে ন্যাচারাল দুর্ধর্ষতা আর তেজ, সেটা কিন্তু ভারী সুন্দর ফুটিয়েছিস চোখদুটোয়। এক্সেলেন্ট!” ছেলের বৌকে আদর দিয়ে বাঁদর করার ব্রত নিয়েছেন মৃগাঙ্ক; অলকা কী করবেন? লোকে নাতিনাতনির সঙ্গে যে ঢঙে কথা বলে মৃগাঙ্ক তেমন করে কথা বলেন রানির সঙ্গে। সকালে তিনি পানিফলের ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ইত্যাদি বোঝাচ্ছিলেন রানিকে। তিন হাজার বছর আগে থেকে নাকি লোকে পানিফল খায়; এমনকি, অতীতে কোনও কোনও জায়গার লোকজন গমের বদলে পানিফলের আটাকেই নাকি প্রধান খাদ্য হিসেবে খেত, তাও বলেছেন। পানিফলের আটা শুনে হাঁ হয়েছে রানি। অলকা তখনই বুঝেছিলেন বাড়িতে এ বার ‘পাঁইফল’-এর গুঁড়ো আসছে। হাড়ে হাড়ে চেনেন তিনি স্বামীকে। বিকেলে দেখা গেল মৃগাঙ্ক ঠিক খুঁজেটুঁজে ‘জলশিঙাড়া কা আটা’র প্যাকেট হাজির করেছেন। অলকার সহ্যের বাঁধ সত্যিই এ বার ভাঙব-ভাঙব। তিনি জানেন, ও জিনিস রান্নার কী ভয়ানক হ্যাপা। খুন্তি নাড়তে নাড়তে হাত ব্যথা হয়ে যায়। এই বৌয়ের জন্য আর কত ঝকমারি পোহাবেন তিনি! সন্ধেবেলা অলকা পুজোয় বসেছেন, সেই অবসরে শ্বশুর আর বৌ চুপিসাড়ে গেল জলশিঙাড়ার হালুয়া রাঁধতে। কিন্তু রন্ধনকর্মটি যদি এতই সহজ হত! দেখতে দেখতে পোড়া গন্ধে মাতোয়ারা হল বাড়ি। পুজো মাথায় উঠল অলকার। আসন ছেড়ে উঠে এসে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখেন, খুন্তি হাতে কড়াইয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন মৃগাঙ্ক আর মোবাইল ফোন দেখে দেখে নির্দেশ দিচ্ছে রানি। আজকের মতো রাগের কোটা বোধহয় শেষ হয়ে গিয়েছিল অলকার, এ দৃশ্য দেখে এ বার তাই হাসি পেল তাঁর।
Parent