কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৩৯৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5062631.html#pid5062631

🕰️ Posted on December 15, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 541 words / 2 min read

Parent
অসাধারণ একজন বাবার অসাধারণ চিন্তা ধারার গল্প! """"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""''"""""""" এক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার সঙ্গে আজ আলাপ হলো। ভদ্রলোক অটোচালক। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে পাস করেছিলেন। কিন্তু সংসারের চাপে আর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। ভদ্রলোকের গায়ের রং বেশ কালো। লম্বা চেহারা, মাথায় সাদার থেকে কালো চুলের আধিক্য বেশি। সস্তার জামা-প্যান্ট পরেছিলেন, কিন্তু বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।  গল্প করতে করতেই জানতে পারলাম, ভদ্রলোকের এক মেয়ে। মেয়ে বি এড কমপ্লিট করে চাকরির পরীক্ষায় বসছে।  ভদ্রলোক হেসে বললেন, আমার মা যখন আমার বিয়ে দিয়েছিলেন তখন ফর্সা বউ এনেছিলেন। তার কারণ নাতি-নাতনি যাই হোক সে যেন ফর্সা হয়। কিন্তু আমার মায়ের সে ইচ্ছেতে জল ঢেলে দিয়ে আমার কন্যা আমার গায়ের রং পেলো। আমিও আদর করে তার নাম দিলাম কৃষ্ণকলি।  মেয়ে আমার সব কাজে পারদর্শী। লেখাপড়াতেও খুব ভালো।  ভদ্রলোক বললেন, মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছি। গায়ের রং কালো বলে তেমন মনের মত পাত্র পাচ্ছিও না।  আমার মনে হলো, এই হোলো আমাদের সমস্যা। চামড়ার মেলানিনের পরিমাণের হেরফেরে সমস্ত গুন চাপা পড়ে গিয়ে সে হয়ে যাবে কম দামি। সহানুভূতির গলায় বললাম, চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়ের এত গুন, ওর খুব ভালো বিয়ে হবে। দুমিনিট কথা বলার পরে অবশ্য বুঝলাম, উনি কারোর সহানুভূতি চান না।  ভদ্রলোক একটু হেসে বললেন, আসলে ওর একটা খুব ভালো সম্বন্ধ এসেছিল। বিয়ে ফাইনাল হয়ে গিয়েছিল। পাত্র সরকারি চাকরি করে। দেখতে শুনতে ভালো, ভালো ফ্যামিলি ওদের।  কিন্তু আমিই ভেঙে দিলাম বিয়েটা।  আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, মানে কেন ভেঙে দিলেন? অনেক পণ চেয়েছিল নাকি? ভদ্রলোক ঘাড় নেড়ে বললেন, না। এক পয়সাও নিতো না।  আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, তাহলে? ভদ্রলোক আমাকে চূড়ান্ত চমকে দিয়ে বললেন, আমার মেয়ে প্রতি মুহূর্তে অপমানিত হচ্ছিলো তাই। আমি কিছুই না বুঝে বললাম, বুঝতে পারছি না দাদা।  ভদ্রলোক আক্ষেপের গলায় বললেন, আত্মীয়- স্বজন দিনরাত আমার কলিকে বলছিলো, তুই খুব ভাগ্যবতী, তুই খুব লাকি যে তোর অমন ফর্সা, সুদর্শন ছেলের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে।  ছেলের বাড়ির দিকের আত্মীয়রাও নাকি বলেছে, তুমি খুব লাকি কৃষ্ণকলি , নাহলে তোমার এমন গায়ের রঙে অমন ছেলে পাওয়া দুষ্কর।  মেয়ে সেদিন প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে আমার কাছে এসে বললো, বাবা আমি এতটা ভাগ্যবতী হতে চাইনি। ছেলেও নাকি মেয়েকে ফোন করে বলেছে, কেমন লাগছে তোমার আমার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে? নিজেকে নিশ্চয়ই খুব লাকি মনে হচ্ছে! এসব কথা শুনেই আমি ভেবে দেখলাম, আমার মেয়ে তার কপালের ভার নিজেই বইতে পারবে। এতটা ভাগ্যবতী হতে হবে না তাকে লোকের দয়ায়।  তাই বাড়ির সকলের অমতে গিয়েই আমি বিয়েটা ভেঙে দিলাম। যাদের মনে হবে, বিয়ে করে আমার মেয়েকে ভাগ্য ফিরিয়ে দিচ্ছে না, তাদের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেব। ভাগ্যবতী শব্দের ভার বহন করার দরকার নেই কলির।  যদি চাকরি পায় ভালো, নাহলে আরেকটা অটো কিনে দেব, ও চালাবে। নিজের ভাগ্য নিজে তৈরি করবে। কারোর দয়া লাগবে না ওর।  আমি অভিভূত হয়ে দেখছিলাম ভদ্রলোককে। বললাম, তো বিয়েটা ভেঙে দেবার পরে আপনার মেয়ের কি বক্তব্য? ভদ্রলোক বললেন, মেয়ে আমার কানে কানে বলেছে, আমার বাবা বেস্ট। ভদ্রলোক বললেন, আরে ওর গায়ের রং আমার মতন, ভাবনাও আমার মতনই হবে না! লোকে আমাকে বলছে.. কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার নাকি এত তেজ ভালো নয়! আমি বলেছি, কন্যা আমার কাছে দায় নয়, আমার অহংকার। অকারণে লোকের করুণার পাত্রী হতে যাবে কেন? কি নেই ওর? সব আছে ওর। আমি ওকে সবটুকু দিয়ে মানুষ করেছি। কোনো অবহেলা পায়নি ও কোনোদিন।  আমি বললাম, বিশেষ করে ওর এমন বাবা আছে।  সত্যি বলতে কি ওই অদেখা কৃষ্ণকলির আদরে ভাগ বসাতে খুব ইচ্ছে করছিল।  কৃষ্ণকলিরা এভাবেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। কারোর দয়ায় সৌভাগ্যবতী না হয়ে, নিজের চেষ্টায় নিজের পরিচয় গড়ে নিক।    কলমে - বিপুল দত্ত
Parent