কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৪০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-2725590.html#pid2725590

🕰️ Posted on December 12, 2020 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 544 words / 2 min read

Parent
তাড়াহুড়ো করে পার্কিং সেরে গাড়ি থেকে নামল শ্রেয়ান। কিভাবে যে প্রায় ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করে এসেছে শুধু ও ই জানে আজ! তানিয়াদের ফ্ল্যাটে কলিং বেল বাজাবার পর খুলতে যেটুকু সময় লাগে...তাতেই তর আর সইছিল না ওর। মনে হচ্ছিল অনন্তকালের অপেক্ষা যেন! থমথমে মুখে দরজা খুলে দাঁড়ালেন প্রীতি আন্টি। তানিয়ার মা। চোখ ফুলে আছে ওঁর। ড্রয়িংরুমের সোফায় তানিয়ার বাবা বসে আছেন...কেমন হাল ছেড়ে দেওয়া, উদভ্রান্ত মুখ ওঁর। ডাইনিং টেবিলের ওপর ডাঁই করে রাখা কয়েকটা চকচকে ট্রে... ওদের বিয়ের তত্ত্বের ট্রে। যে বিয়েটা...হবে কিনা আদৌ, সন্দেহ। তানিয়া অদ্ভুত একটা কথা বলে বিয়েটা ক্যানসেল করে দিতে চাইছে। মাত্র সতেরো দিন আগে! "আন্টি, তানিয়া কোথায়?" ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় জিজ্ঞেস করে শ্রেয়ান। কাল সারা রাত ঘুম হয় নি ওর। তানিয়ার মেসেজ পেয়েই চলে আসত...নেহাত মা বেরোতে দেন নি, তাই! "আর কোথায়, নিজের ঘরে.." বলেন আন্টি। গলার আওয়াজ বসে গেছে। খুব কান্নাকাটি করলে যেমন হয়। "আমি একটু দেখা করতে যাচ্ছি " বলে শ্রেয়ান। "যাও...দেখো, দরজা খোলে কিনা! সকাল থেকে বাইরেও আসে নি!" "আন্টি, কি হলো বলুন তো, হঠাৎ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কাল একটা অদ্ভুত মেসেজ পেলাম..." গলা ভেঙে আসে ওর। "কী যে বলি বাবা...আমাদের ও মাথা কাজ করছে না!" আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে যায় শ্রেয়ান। "তানি, প্লিজ দরজা খোলো। উই নিড টু টক!" নক করতে করতে বলে ও। খুট করে একটা আওয়াজ। দরজা খোলে তানিয়া। গোলাপী বার্বি আঁকা নাইট স্যুট পরা, পনিটেল বাঁধা তানিয়া যেন নিজেই একটা বার্বি ডল! কিন্তু, ওর ও চোখ ফোলা। দেখেই মনে হচ্ছে 'কাল রাত্তিরে ঝড় বয়ে গেছে রজনীগন্ধার বনে"। তানিয়ার হুইমসের প্রতি সারা রাত ধরে যে রাগ হচ্ছিল, এক মুহূর্তেই কেটে যাচ্ছিল শ্রেয়ানের। বড্ড কেঁদেছে মেয়েটা! "কী হয়েছে বাবু? কাল এমনি একটা মেসেজ করলে? তারপর থেকে ফোন অফ..." কোনোদিন ন্যাকা ন্যাকা "বাবু", "সোনা" না করা শ্রেয়ান জিজ্ঞেস করল। উত্তরে শুধু একটু ম্লান হাসল তানিয়া। তারপরে বলে "আমি তো ভুল কিছু লিখি নি...যা সত্যি, তাই লিখেছি!" "কি সত্যি? দ্যাট ইউ হ্যাভ সামওয়ান ইন ইয়োর লাইফ? আ সো কলড ফিঁয়ান্সে?" রাগ হচ্ছে শ্রেয়ানের এবার। তানিয়া কি বুঝতে পারছে না ওর কষ্ট? মজা করছে এখনও? "শ্রেয়ান, আমি ঠিক ই বলেছিলাম। আই হ্যাভ আ ফিঁয়ান্সে...হঠাৎ করেই যে আমার জীবনে এসেছে..." "হোয়াট দ্যা ফা...তানি? শাট আপ! জাস্ট শাট আপ..." নিজের কোঁকড়া চুলে হাত বুলোতে বুলোতে বলল শ্রেয়ান। "আমি কেন চুপ করব? ইন ফ্যাক্ট, সে আমার ঘরেই আছে এখন..." চমকে তাকালো শ্রেয়ান। ঘর তো ফাঁকা...লাগোয়া ব্যালকনিতে চোখ গেল ওর। ওখানে আছে নাকি সে? দ্যাট বাস... "এসো.." বলে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যায় তানিয়া। যা ভেবেছে তাই!? রাগত চোখে ওদিকে যায় শ্রেয়ান। তানিয়া দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। "এই দেখো..." তাকায় শ্রেয়ান। ব্যালকনির দরজার উপরে একটা ছবি। দেবাদিদেব মহাদেব। অবাক হয়ে তাকাল শ্রেয়ান। তানিয়ার কি মাথাটা গেল? "আমি নাকি মাঙ্গলিক... পরশু আন্টি, তোমার মা ফোন করেছিলেন...বললেন আমাকে বিয়ে করলে তোমার জীবনের ভয় আছে...আর তাই আমাকে ওঁকে বিয়ে করতে হবে...ফিঁয়ান্সে ই তো হলেন, তাই না? সারা রাত, সারা দিন অনেক ভাবলাম... মাঙ্গলিক আমি...কিন্তু...এভাবে...হয় নাকি?" তানিয়া হাঁপাচ্ছে এবার। চুপ করে থাকে শ্রেয়ান। মাথা নীচু। মা কিসব বলছিলেন ক'দিন ধরেই...হ্যাঁ হু করে উড়িয়ে দিয়েছিল... বোঝে নি, যে মেয়েটা এতটা ভালবাসে ওকে... তার কাছে আঘাত লাগতে পারে কিনা... চোখ তুলে তাকায় শ্রেয়ান। তানিয়া তাকিয়ে আছে ওর দিকে। চোখে জল...ঠোঁট টা কাঁপছে অল্প অল্প... মন্ত্রমুগ্ধের মতো এগিয়ে যায় ও তানিয়ার দিকে। মৃত্যু অমোঘ...কিন্তু তারচেয়েও অমোঘ বেঁচে থাকা...প্রতিমুহূর্ত জুড়ে... আর তানিয়াই ওর প্রতিদিনের অক্সিজেন... হাঁটু গেড়ে বসে শ্রেয়ান, তানিয়ার পায়ের কাছে। ক্ষমা চাইতে হবে ওকে। এক্ষুণি। ভালোবাসার মানুষ কষ্ট পেলে প্রতি মুহূর্ত যে মৃত্যুর ই সমান হয়...।।
Parent