কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৪০০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5064648.html#pid5064648

🕰️ Posted on December 17, 2022 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 732 words / 3 min read

Parent
গুরু গম্ভীর অথচ সম্ভ্রম জাগানো  গলায় বললেন - কুড আই  স্পিক টু  মিস্টার সপ্তর্ষি রয়।  আমি বললাম - ইযেস ,স্পিকিং ।  ------- আপনি  কে বলছেন ? ভরাট  গলায় খুব ধীরে ধীরে  নিজের পরিচয় দিলেন । তারপর বললেন - আমি তোমার মায়ের সম্মতি তে  ওনাকে বিয়ে করছি ।এই সিদ্বান্ত টা তোমাকে জানানো প্রয়োজন , তাই ফোন করেছি । আমি  হতভম্ভ  হযে চুপ করে ছিলাম । উনি  আরো বললেন -- যদি সম্ভব হয় তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলে নিও ।  ভালো থেকো, গুড নাইট  বলে ফোন টা  রেখে দিলেন । এক নাম না জানা  ঝড় অকল্পনীয় এক  বার্তা দিয়ে  কোনো  উত্তরের  অপেক্ষা না করে চট জলদি উবে গেল । বুকের ভেতর এক  পারমাণবিক ফিউশন  অনুভব করলাম । এই অচেনা স্বর  মায়ের সাথে  আমার স্থায়ী সম্পর্কের  অবস্থান কে এলোমেলো করে দিয়ে চলে গেল। ফোনের কথা গুলো তখনও উষ্ণ  ঝড়ো হাওয়ার  মত কানের  পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল ।  আমার মা তো আমারই । আমাকে বাদ দিয়ে মায়ের  কোনো আলাদা অস্তিত্ব থাকতে পারে ,এ তো স্বপ্নেও কোন দিন ভাবি নিই৷  আমি আর মা তো একটা  সরলরেখার দুটি প্রান্ত,সেই সরলরেখায় আর অন্য কোনো প্রান্ত তো হতে পারে না । তাহলে এই ভদ্রলোকের অবস্থান কোথায় হবে ।সম্পর্কের  সরল রেখা কী  ত্রিভুজের আকৃতি নেবে !!  আমার কী করা উচিৎ  ভাবতে গিয়ে  কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না  । মা কে ফোন করতে গিয়েও  ফোন করতে পারলাম না ।  আমার মায়ের বিয়ে ! ! এতো কল্পনাতীত । আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব  এদের কাছে কী জবাব হবে আমার ।  সেই রাতে  আমার স্ত্রী   রুপা কে কিছুই বলতে পারলাম  । ঘুম এলো না । অস্থির হয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত কেটে গেল । পরদিন সকালে  রুপা কে সব বললাম । রুপা যে সমস্ত ব্যাপারটা  এতটা  সহজ করে দেবে আমি ভাবতেই  পারি নি ।   রুপা বলল  -- আচ্ছা ,তুমি তোমার নিজের জীবন  , ক্যারিয়ার  ছাড়া  মায়ের জীবন ,শখ , ইচ্ছে একাকীত্ব নিয়ে কখনও কী কোন দিন  ভেবে দেখেছো ?  দিনের পর দিন ,বছরের  পর বছর কী ভাবে মা শুধু তোমার কথা ভেবেছে।  নিজের ভালো লাগার মত  কোনো কিছুই  জীবনে পান নিই৷ অল্প বয়সে প্রেম খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন । এখন যখন জীবনের নতুন অধ্যায়ে  প্রবেশ করতে চাইছে সেখানে তুমি বাধা হতে পারো না ।বাকি জীবনটা যদি মা  একজন সঙ্গী পায় তোমার  অসুবিধে কোথায়, সোসাইটির বা  কোথায় অসুবিধে।   তুমি বছরের কটা দিন মা কে সময় দাও ,কতক্ষণ কথা বলার সময়  পাও ।  তাঁর জীবনের প্রাইম টাইমে   তিনি শুধু তোমার জীবন , তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবেছেন। এখন তিনি যদি তার কথা বলার ,ভালোলাগার কোনো সঙ্গী পায়, আমাদের সম্পূর্ণ ভাবে তার পাশে দাঁড়ানো উচিৎ । মা বাঁচুক নিজের মত নতুন করে ।  রুপা এই কথা বলেই মা কে ফোন করে প্রথমই বললো - মা কনগ্রেচুলেশনন্স । মা আমি তোমার সাথে আছি । ডেট ঠিক করে জানাও আমরা সব্বাই বিয়ে তে থাকবো ।এত  কঠিন কথা এত সহজে  বলা যায় জানা ছিল না।  যথারীতি বিয়ের আগের দিন আমরা  বাড়ী এলাম । পরের দিন ম্যারেজ রেজিষ্টারের অফিসে সবাই হাজির হলাম ।  মায়ের বিয়ে হল ।আমি আর  রুপা উইটনেস  হলাম ।আমার মা তখন নব বধূ ।  সুন্দর  জড়ি বসানো নীল রংঙের বেনারসী শাড়ি ,মাথায় ছোট্ট ঘোমটা ।সিঁথিতে লাল টকটকে  সিঁদুর  । হাতে সোনার বালা । ৬৩ বছরের মা কে মনে হচ্ছিল একুশ  বছরের  নব বধু । মা আমার হাত টা  নিজের হাতে চেপে ধরে কেঁদে ফেলল । আমি মা কে জড়িয়ে ধরলাম ।  শুধু একবার বল  --- তুই রাগ করিস নি তো ? আমি বড্ড একা  ছিলাম রে । উনি আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছেন ।  মায়ের কথা গুলো  হিমপ্রবাহ  হয়ে আমার অনুভূতি কে হিমশীতল  করে দিচ্ছিল।  আমি বললাম - আমি ভীষণ খুশি মা । আমি তোমার একাকীত্ব বা  তোমার মনের কোনো খোঁজ রাখতে পারি নিই৷ আমাকে ক্ষমা করো । তুমি ভালো থাকবে  মা ।  মা ভালো আছে ।  বেশ  ভালো আছে । গত  দু বছরে অনেক  ঘুরে বেড়িয়েছে । সৌমেন বাবু বেড়াতে ভীষণ ভালোবাসেন । সামনে ইউরোপ ট্যুরে যাবেন । বলতে দ্বিধা নেই ,আমার মায়ের যে এমন একটা জীবন পাওয়া খুবই দরকার ছিল , সেটা রুপা না বোঝালে হযতো কোনো দিনই  বুঝতে পারতাম না । মা যে  একজন দুখী  মানুষ ,  সে কথা কখনো ভেবে দেখি নিই৷ মায়ের  মনের ক্ষত মা  নিজেই দূর করেছেন । আমি এখন খুশি ,ভীষণ খুশি । পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয় সেটা হলো জন্ম লগ্ন থেকেই আজ অবধি   'বাবা' শব্দটি আমার মুখের অনুচ্চারিত এক  শব্দ ।বাবা   ডাকে অভ্যস্থ  না থাকায় আমি ওনাকেও মানে সৌমেন বাবু কে 'বাবা'  ডাকতে পারি  নিই৷ যত দিন বেচে থাকবো  "মা " ডাক নিয়েই বেচে থাকবো ।আমার মা ভালো মা । সৌমেন বাবু এখন  আমার একজন ভালো বন্ধু ।   লেখক:- দিলীপ চৌধুরী
Parent