কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৪২৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5108519.html#pid5108519

🕰️ Posted on January 22, 2023 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 695 words / 3 min read

Parent
অণুগল্প   সপ্তাহ কয়েক ধরেই চোখে একটা সমস্যা হয়েছে বিজন বাবুর। চোখ থেকে জল পড়ছে… লেখা পড়তেও একটু কষ্ট হচ্ছে। আবার মনে হয় পাওয়ার বাড়ল। মাসের শেষ… আবার খরচের ধাক্কা! আর কি… যেমন কপাল! বেজার মুখে চশমাটা খুলে একটু চোখ বুজলেন বিজন বাবু। নাহ্, একবার বাড়ির কাছের চশমার দোকানটায় যেতেই হবে। চোখ বলে কথা… অবহেলা করা উচিৎ হবে না। কি থেকে কী হয়ে যায়! এখনও অনেক দায়িত্ব পূরণ বাকি… রুমাল দিয়ে চোখটা মুছে নিয়ে আবার কম্পিউটারের দিকে তাকালেন উনি। এক্সেল শীটে অনেক রকম হিসেব। প্রতিটাই ক্যালকুলেটারে একবার করে মিলিয়ে দেখে নেন উনি। এত লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকার ব্যাপার… যদি একটুও ভুল হয়ে যায়, কোম্পানির ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই, সময় লাগে লাগুক, কিন্তু বারবার মিলিয়ে দেখেন হিসেব বিজন বাবুর। সত্যি বলতে কি, এই অতি খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্য কেউ সেভাবে ওঁকে পছন্দ করেন না,বোঝেন বিজন বাবু। ওঁর কাজে বেশি সময় লাগে, পেটি ক্যাশ থেকে পাঁচ টাকা দিতে হলেও দুটো কাগজে সই করান - নিপুন ভাবে ফাইলিং করেন… বিল পেমেন্টের সময় তো এতবার চেক করেন যেন কেউ ওঁকে না বলে কিডনিটাই কেটে নেবে… শুনেছেন এসব অভিযোগ বিজন বাবু। কিন্তু তাতে কিছু মনে করেননি উনি। উলটে মজা পেয়েছেন কিডনির কথা শুনে।।কিডনি দেওয়া যদি অতই সোজা হতো… মিনুকে দিয়ে দিতেন না উনি? এভাবে অকালে চলে যেতে দিতেন? এত লোক ব্যঙ্গ করে, তবু নিজের স্বভাব পাল্টাতে পারেন না বিজনবাবু। নিজে যেমন খুঁটিনাটির দিকে নজর দিয়ে কাজ করতে ভালবাসেন, তেমনি আশেপাশের কেউ ফাঁকি দিলেও খুব রেগে যান উনি। মাঝেমাঝেই মালিকদের চেনা লোকজন কাজ শিখতে, যার পোষাকী নাম 'ইন্টার্নশিপ', সেটা করতে অফিসে আসে - তিন মাস বা ছ'মাসের জন্য। তাদেরকেও বকে দেন উনি। এজন্য আবার অনেকে 'খ্যাঁকানি বুড়ো' বলে ডাকে। তা ডাকুক গে… মাথাটার যন্ত্রণা করছে এবার। আবার চোখে জল আসছে। এই হতভাগা চোখের জন্য কি কাজটা আজ শেষ হবে না নাকি? যেদিনের কাজ সেদিন শেষ না হলে ভাল লাগে না একদম… চশমাটা খুলে টেবিলের ওপর রেখে চোখটা বন্ধ করলেন বিজনবাবু। মাথার যন্ত্রণাটা বাড়ছে… "স্যার! আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?" একটা গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলেন বিজনবাবু। "অ্যাঁ?" তারপর চশমাটা পরে বুঝলেন বছর দুয়েক আগে তিনমাসের জন্য ইন্টার্নশিপ করেছিল এই ছেলেটি। কোম্পানির মালিকের বন্ধুর ছেলে। লন্ডন না আমেরিকা কোথা থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়ে হাতেকলমে কাজ শিখতে এসেছিল এই অফিসে। বড্ড অমনযোগী ছিল। একদিন সামান্য একটা পারচেজের বিলে মেটিরিয়ালের নামেই বানান ভুল দেখে খুব রেগে গেছিলেন বিজনবাবু। বকেও দিয়েছিলেন ছেলেটিকে। সেলসের অখিলেশ বলেছিল "দাদা, মালিকের খুব ক্লোজ ফ্রেন্ডের ছেলে… এভাবে ঝাড় দিলে? কিছু যদি বলে তোমাকে?" "যদির কথা নদীতে! বললেই হলো? আরে, ছোটখাটো ব্যাপারে নজর দেবে না? এখানে তো শিখতেই এসেছে…" বলেছিলেন বিজন বাবু। না, ওঁকে কেউ কিছু বলেনি। তবে ছেলেটি তার দিন সাতেক পর থেকেই আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু, সে এখন, এইখানে? "আকাশ? ভাল তো? " জিজ্ঞেস করেন বিজনবাবু। "হ্যাঁ স্যার ভাল আছি। আপনি ঠিক আছেন তো?" "হ্যাঁ হ্যাঁ, আমিও ভাল।" "কিজন্য এসেছেন শুনি?" এভাবে তো বলা যায় না, তাই জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেন বিজনবাবু। "স্যার, কাল 'বাংলার সময়' পত্রিকা থেকে একটা অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে আমাকে। 'রাইজিং ইয়ং অন্ত্রপ্রেনারের'। তাই সামান্য মিষ্টি নিয়ে এসেছি। " মোলায়েম গলায় বলল ছেলেটি। "বাহ! তুমি ব্যবসা করছ? খুব খুশি হলাম।" অকৃত্রিম হাসেন বিজন বাবু। "হ্যাঁ, স্যার। করছি ছোটখাটো একটা।… মনে আছে স্যার, একবার আপনি আমাকে কত বকা দিয়েছিলেন? একটা ছোট ভুলের জন্য? সেদিন আমি প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলাম…" বলে ওঠে ছেলেটি। ম্লান হাসেন বিজন বাবু। হ্যাঁ, বকেছিলেন তো! ছেলেটি এখনও সেটা মনে রেখে দিয়েছে! "কাল অনুষ্ঠানের পর থেকেই খুব আপনার কথা মনে পড়ছে স্যার।" "আমার কথা?" ছেলেটির মনে বোধহয় খুব আঘাত লেগেছিল… তাই কথা শোনাতে এসেছে… "হ্যাঁ স্যার, আপনার কথা। আপনি না থাকলে… আজকের এই জায়গায়… আসতে পারতাম না স্যার…। সেদিন আপনার কথা শুনে কষ্ট পেয়েছিলাম। আপনি বারবার বলছিলেন কাজ করতে গেলে ডিটেইলিং এ ও নজর দিতে হবে বাকি সবকিছুর মতো। খুব রেগেও গেছিলাম। ভেবেছিলাম, আমার বাবার অত বড় ব্যবসা, আপনার মতো দশজন আমার জন্যে কাজ করতে পারে।" দীর্ঘশ্বাস ফেলেন বিজনবাবু। ছোকরা বুঝল না… "কিন্তু স্যার, নিজের ব্যবসা শুরু করে বুঝলাম আপনি কত ঠিক ছিলেন। ছোট্ট ছোট্ট জিনিস ঠিকভাবে দেখলে তবেই বড় কিছু হতে পারে। যেমন বিন্দু বিন্দু মিলে সাগর তৈরি হয়? তাই আজ আপনাকে 'থ্যাংকইউ' বলতে এসেছি স্যার…। আজ বিদেশে সবাই সবাইকে ধন্যবাদ জানায়। আজ 'থ্যাংকস গিভিং ডে।' কিন্তু আমার কাছে প্রতিদিনই আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর দিন…" একটা বড় মিষ্টির প্যাকেট আর একটা চকোলেটের বাক্স ওঁর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল ছেলেটি। চোখ বুজে ফেললেন বিজনবাবু! নাহ্, চোখটা দেখাতেই হবে। এভাবে গাল বেয়ে হড়পা বাণ নামলে হয় যখন তখন? ধ্যাত!
Parent