কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৪৩২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5118189.html#pid5118189

🕰️ Posted on January 31, 2023 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 564 words / 3 min read

Parent
#বার্তাকু_ভক্ষণ_বিল   তারাপদ রায়।   সপ্তাহ কয়েক আগে কাশী থেকে ফিরে এই বিষয়টি নিয়ে লিখেছিলাম। লাউ সদৃশ, অতিকায় এবং অতিবিখ্যাত রামনগরের বেগুন, যার কয়েকটি আমি কলকাতায় এনে ভাগাভাগি করে আত্মীয়-বান্ধবদের মধ্যে বিলি করেছিলাম।   এসব কথা লেখার কোনও মানে হয় না। ভুল করে লিখে ফেলেছিলাম।   লেখা বেরনোর পর থেকে যার সঙ্গে দেখা হয় সেই বলে, ‘অমন আশ্চর্য বেগুন, আমাদেরও একটু দিলে পারতেন।’ শুধু এই নয়, টেলিফোনে এবং চিঠিতেও অনুযোগ-অভিযোগ পেলাম।   কিন্তু সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছি যাদের বেগুনের ভাগ দিয়েছি তাদেরই একজনের কাছ থেকে।   বেগুন বণ্টনের দিন কয়েক পরে আমার প্রতিবেশিনীর কাছ থেকে একটা টেলিফোন পেলাম।   টেলিফোনটা খুবই রহস্যময়। কারণ যাঁর সঙ্গে দু’বেলা মুখোমুখি দেখা হচ্ছে তিনি হঠাৎ টেলিফোনে কথা বলছেন। আর যা বলছেন, সেটাও গোলমেলে, ‘দাদা, একটা বিল পাঠিয়ে দিলাম। টাকাটা একটু তাড়াতাড়ি মিটিয়ে দেবেন।’   কীসের বিল, কেন বিল কিছুই বুঝতে পারলাম না। একটু পরে ওঁদের কাজের মেয়ে এসে আমার হাতে একটা খাম দিয়ে গেল।   খাম খুলে দেখলাম, মুদি দোকানের ফর্দ যেমন হয়, তেমনই একটা লম্বা কাগজ। কাগজের মাথায় তারিখ দেওয়া, তার নীচে গোটা গোটা মেয়েলি হরফে লেখা,   বার্তাকু ভক্ষণ বিল   ছোট বয়সে ঠাকুমা, পিসিমার জন্যে পঞ্জিকা দেখা অভ্যেস হয়েছিল। সেখানে তিথি বিশেষে লেখা থাকত, ‘বার্তাকু ভক্ষণ নিষেধ।’ সেই তখন থেকেই জানি যে বার্তাকু মানে হল বেগুন। সুতরাং মুদিখানার ফর্দ সদৃশ লম্বা কাগজখানা যে বেগুন খাওয়ার বিল সেটা অনুমান করতে অসুবিধে হল না।   দেখলাম লম্বা বিল। দিন তারিখ দিয়ে চারদিনের বিল করা হয়েছে।   প্রথম দিনের বিল মোটামুটি বোধগম্য হল।   সোমবার ১৩ জানুয়ারি   সরষের তেল ৫০০ গ্রাম ২০ টাকা বেসন ২৫০ গ্রাম ১১ টাকা চালের গুঁড়ো ১০০ গ্রাম ১.৫০ টাকা নুন মশলা(আনুমানিক) ২.০০ টাকা জ্বালানি (আনুমানিক)   ৪.০০ টাকা                           মোট ৩৮.৫০ টাকা   প্রথম দিনের বিল দেখে যেটা বোঝা গেল তা হল যে-পরিমাণ বেগুন দিয়েছিলাম প্রতিবেশিনী সবটাই বেসন দিয়ে ভেজে খেয়েছেন। সংসারে তিনটি মাত্র প্রাণী, প্রতিবেশিনী এবং স্বামী ও পুত্র; তিনজনের পক্ষে এতখানি পরিমাণ বেসন-মণ্ডিত বেগুন ভাজা হজম করা কঠিন।   এবং সত্যিই তাই হয়েছে। পরের তিন দিনের বিলে তারই প্রতিফলন। প্রথম দিন রোগমুক্ত হওয়ার স্বচেষ্টা। সেদিনের হিসেবে রয়েছে এক বোতল জোয়ানের আরক। কুড়িটা অম্লবিনাশক ট্যাবলেটের দাম। মোট চুয়াল্লিশ টাকা।   কিন্তু এত সহজে অসুখ সারেনি। বোধহয় তিনজনই অসুখে পড়েছিল। পরের দিন ডাক্তারের ভিজিট বাবদ পঞ্চাশ টাকা লেখা আছে বিলে, সেই সঙ্গে নানারকম ওষুধ বাবদ পঁচাশি টাকা। বিলের শেষ দিনেও প্রায় অনুরূপ। ডাক্তারের ভিজিট লাগেনি, তবে ওষুধের দাম লেগেছে নব্বুই টাকা।   বার্তাকু ভক্ষণের বিলটি পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ বিবেচনা করে দেখলাম এবং সিদ্ধান্ত করলাম যে, বিলটি পাঠিয়ে প্রতিবেশিনী মোটেই দোষের কাজ করেননি, বিশেষ করে আমারই দেওয়া বেগুন খেয়ে যখন তাঁদের এই বিপত্তি।   প্রতিবেশিনীকে ফোন করে নিজের দায় স্বীকার করলাম। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এখন কেমন আছেন?’   প্রতিবেশিনী বললেন, ‘আজকে মোটামুটি ভাল। আজকে আমরা সবাই ভাত খেয়েছি। তিনদিন বাদে আজ প্রথম।’   আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এই তিনদিন তা হলে কী খেয়েছেন?’   প্রতিবেশিনী বললেন, ‘কী আর খাব? দুয়েকটা বিস্কুট, লেবুজল, টক দই, চিঁড়ের মণ্ড, মুড়ি ভেজানো, সাবু, বার্লি এই সব খেয়েছি।’   আমি শুনে বললাম, ‘আপনার বিল আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ প্রতিবেশিনী কী যেন বলতে যাচ্ছিলেন, তার আগেই ফোনটা নামিয়ে রেখে বিল নিয়ে বসলাম।   যোগ দিয়ে দেখলাম, প্রতিবেশিনীর বার্তাকু ভক্ষণ বিল সাকুল্যে আড়াইশো টাকার কিছু বেশি হয়েছে॥   বিলের নীচে বেশ কিছুটা সাদা কাগজ রয়েছে সেখানে চারদিনের যোগফল দুইশো সাতান্ন টাকা পঞ্চাশ পয়সা বসিয়ে তার নীচে পরিষ্কার করে লিখলাম, ‘তিনদিনের দুই বেলা করে তিনজনের মোট আঠারোটি মিল বাদ। প্রতিটি মিল বাবদ গড় ব্যায় পঁচিশ টাকা ধরলে মোট সাশ্রয় সাড়ে চারশো টাকা। এর থেকে তিনদিনের পথ্য বাবদ খুব বেশি হলে একশো টাকা এবং পূর্বোক্ত বিলের দুশো সাড়ে সাতান্ন টাকা বাদ দিলে এখন আপনার কাছে আমার প্রাপ্য সাড়ে বিরানব্বই টাকা। অনুগ্রহ করিয়া দ্রুত মিটাইয়া দিবেন। মনে রাখিবেন, ইহার মধ্যে বেগুনের দাম ধরি নাই।’
Parent