কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৪৫১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5153243.html#pid5153243

🕰️ Posted on March 2, 2023 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 531 words / 2 min read

Parent
২  রাত বারোটর সময় দরজায় টোকা শুনে বিছানা থেকে উঠে আসি। দরজা খুলে দেখি বাবা দাড়িয়ে আছেন দরজার সামনে। এতো রাতে বাবার রসগোল্লা খেতে ইচ্ছে হল। আমি বললাম,    --  'বাবা তোমার সুগার লেবেল অনেক বেশী মনে আছে? ডাক্তর...'   --  'তুই কি আমাকে রসগোল্লা খাওয়াবি না? হ্যা কিংবা না বল।' বাবা একটু রেগে গেলেন মনে হচ্ছে।    আমি ফ্রিজ থোকে মিষ্টি বের করে খেতে দিলাম। বাবা খাবে না। দোকানে গিয়ে বসে খাবেন। আমি বললাম,   --  'এতো রাতে কোন মিষ্টির দোকান খোলা নেই বাবা।' এবার আরেকটু বেশী রেগে বাবা বললেন,   --  'দোকান কোথায় খোলা আছে জানি না। আমি দোকানে বসে, রসে ডুবানো রসগোল্লা খাবো।'    বাবার সাথে আমার এই কথা গুলো আমাদের শোবার ঘর থেকে শুনছে মলি। আমি প্যান্ট পড়ে গাড়ির চাবি নিয়ে তৈরী হলাম। মলি বিরক্ত হয় নি বোঝা গেল, যখন সে আমাকে বললো,   --  'স্টেশন রোডে একটা দোকান খোলা পেতে পারো।'   বাবা লুঙ্গী পড়েই গাড়িতে উঠলেন। স্টেশন রোডের সেই দোকানে বসে বাবার মিষ্টি খাওয়া দেখে চোখে জল এসে গেল আমার। কি শিশু সুলভ আচরণ!    মনে পড়ে শৈশবে বাবা রাতে বাড়ী ফিরে মাঝ রাতে আমাকে আর বুবুকে ঘুম থেকে তুলে মিষ্টি খাইয়ে দিতেন। মুখে অর্ধেকটা মিষ্টি নিয়ে চোখ ঘুমে ঢলে পড়তাম আমরা দুই ভাই বোন। বাবা আলতো করে দুই গালে হাতের স্পর্শ দিতেন।    পুরোটা খাওয়া শেষ করে জল খাইয়ে মুখ মুছে দিত গামছা দিয়ে। তখন বাবার চোখে কি আনন্দ! আমারো তেমনই আনন্দ লাগছিলো বাবার রসগোল্লা খাওয়া দেখে।    আমার বৃদ্ধ বাবাকে দেখে বুঝতে পারলাম মানুষ কিভাবে শিশু থেকে বড় হয়ে আবার শিশু হয়ে যায়। আটাত্তুর চলছে বাবার। বছর খানেক হল এমন পাগলামি বেড়েছে। মা মারা যাওয়ার পর থেকে।    মা মারা যাওয়ার পর একা গ্রামে রাখা সম্ভব ছিল না বাবাকে। বাবা গ্রাম ছেড়ে আসতেও রাজী হচ্ছিলেন না। রান্না বান্না কে করবে? দেখা শোনা কে করবে? এইসব বুঝিয়ে শুনিয়ে বাবাকে আমার কাছে  নিয়ে এলাম। প্রথম কয়েকদিন খুব সমস্যা হয়।    সকালে ঘুম থেকে উঠে পাগলের মত হয়ে যেত হাটার জন্য। সকালে তিন চার কিলো মিটার না হাটলে তার ভালো লাগে না। সেক্টরের পার্কে হাঁটতে নিয়ে যাই। তাতে বাবার মন ভরে না। সকালে উঠে প্রায় প্রতিদিন শুনতে হত,   --  'আমাকে এভাবে কতোদিন খাঁচায় বিন্দি করে রাখবি? বনের পাখি বনে ছেড়ে দে বাবা।'   রাতে বাবা ঘুমায় না। সারারাত জেগে থাকে। শোবার ঘর থেকে রান্নাঘর হাঁটাহাটি করে। রাতের বেলা বসে বসে সিগারেট খায়। দিনের বেলা দারোয়ানকে দিয়ে সিগারেট আনিয়ে বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখেন।    মলি প্রতিদিন রান্নার আগে বাবার কাছে জানতে চায়,    --  'বাবা আজ আপনার কি খেতে ইচ্ছা হচ্ছে?'    বাবা হয়তো বলবে পাবদা মাছ অথবা মৌরলা  মাছ। বাবার পছন্দের খাবার গুলো ঘরে মজুদ রাখে মলি। মলির বাচ্চা হবে মাস চারেক পর। এই শরীর নিয়ে নিজ হাতে বাবার পছন্দের খাবার রান্না করে।    কথায় কিংবা কাজে বাবা মনে কষ্ট পাক আমি মনে প্রাণে চাই না। বাবার প্রতি বিরক্ত হতে আমি কখনোই চাই না। কিন্তু আমি অনুভব করলাম ক্রমে ক্রমে আমার মনের মধ্যে বাবার প্রতি বিরক্তির জন্ম নিচ্ছে। এমন গোপন বিরক্তি যা মানুষ কথায় কিংবা কাজে প্রকাশ করে না।    পৃথিবীর সব ভালো মানুষের মনেও হয়তো এমন গোপন বিরক্তি ঘাপটি মেরে থাকে। আমি কতোটা ভালো মানুষ তা আমি জানি না, কিন্তু আমি একজন ভালো সন্তান। তারপরেও আমাকে কেন গোপন বিরক্তি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বুঝতে পারছি না।    আমি হয়তো আর ভালো সন্তান নেই। আমিও মন্দ সন্তান হয়ে গেছি। পৃথিবীর সব ভালো মানুষ গুলোই কি আমার মতো এমন মন্দের সাথে লড়তে লড়তে হেরে যায়? আমি কি হেরে গেছি? 
Parent