কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৪৬৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5169415.html#pid5169415

🕰️ Posted on March 14, 2023 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 807 words / 4 min read

Parent
টেবিলে বসে বসে একটি অংক মিলাচ্ছিলাম, হঠাৎ বাচ্চাদের চিৎকারে ফিরে তাকালাম। আমাদের বাড়ির সামনে একটি সাদা রঙের "Rolls-Royce" গাড়ি এসে থামলো। ড্রাইভার দরজা খুলতেই চোখে সানগ্লাস পরা একজন ভদ্রমহিলা নামলেন। মনে হলো রানী এলিজাবেথ এর কোন আত্মীয় হবেন। আমি অংকের মাঝে আবার ডুবে গেলাম। কেমন আছো, চোখ তুলতেই দেখি, আমার পাশে সেই ভদ্রমহিলা। আমাকে চিনতে পারোনি ! আমি বকুল ; আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি, কি বলবো বুঝতে পারছিনা। আমাকে বসতে দেবে  না; ও হ্যা বসো, তাড়াতাড়ি একটি কাপড় দিয়ে চেয়ারটি মুছে দিলাম। না, ওটা অনেক সম্মানের চেয়ার ওটাতে বসতে পারবো না। ঠিক আছে আমি এই টেবিলেই বসছি। আবারও প্রশ্ন কেমন আছো? বললে না তো; ভালো আছি এদের নিয়ে,  এখন কি করছো ? আমাদের হাই কলেজের অংকের শিক্ষকতা করি আর এই বাচ্চাদের বিকালে অংকের সাধারণ জ্ঞান দিয়ে‌ই চলছে, আমার জীবন। কাকিমা কেমন আছে! চলো বাড়ির ভিতরে যাই, এই তোমাদের আজ ছুটি। কাল ঠিক সময়ে চলে এসো। বাচ্চাদের চিৎকারে মুখরিত পুরো ঘর খানা। একি রে বাবা পুরো যে ভূতুড়ে বাড়ি;  হ্যা, তোমরা যাবার দুই মাস পরে মা মারা যান, আমি বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে যখন চাকরি হলো না, তখন থেকে বাবাও একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিলেন, কয়েক বছর ঐ রুমটাই ছিল বাবার পুরো জগৎটা। তারপর বাবাও আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলেন দূর নীহারিকার বাসিন্দা হয়ে।   যাক ছাড়ো আমার কথা,  চা খাবে তুমি; কাউকেই তো দেখছি না, কে বানাবে চা; কেন আমি; দেবতার জন্য যুগে যুগে বহু দেবদাসীর আবির্ভাব হয়েছে, কিন্তু দেবদাসীর জন্য কোন দেবতার আবির্ভাব হয়নি।  কি বলছো কিছু বুঝতে পারলাম না; কখনো কি আমার কথা বুঝতে চেষ্টা করেছ, করোনি। তুমি বসো, আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি।   এই সেই বকুল, আমাদের পাশেই ছিল ওদের বাড়ি, বকুল দিনের বেশি ভাগ পড়ে  থাকতো আমাদের বাড়িতে। ওর বড়বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, ওরা শহরে থাকে, শুনেছি ওর জামাই বাবুর অনেক অনেক টাকা। আমার মা এরও অনেক পছন্দের মেয়ে ছিল বকুল, প্রায়‌ই বলতো দাঁড়া তোকে আমার অজয়ের জন্য আনবো। যাকে জয় করা যায় না, সেই অজয়,  তুই অনেক লক্ষ্মী মেয়ে, তুই পারবি আমার অজয় কে জয় করতে। আমার বাবার ও সেবা শুশ্রূষা করতো বকুল। আমাকে নিয়ে আমার বাবার অনেক গর্ব ছিল, আমি অনেক ভালো ছাত্র ছিলাম অত্র এলাকায়, তাই তিনি ভাবতেন আমি অনেক উচ্চশিক্ষিত হয়ে অনেক উঁচু পদে অধিষ্ঠিত হবো। তাই বাবা বকুল কে পছন্দ করতেন না। একদিন পুরো বাজার ভরা লোকদের মাঝে বকুলের বাবাকে যা ইচ্ছে তাই বলে দিয়েছেন। তারপরের দিন পুরো বাড়ি বিক্রি করে, নিরুদ্দেশ হয়েছিল বকুলদের পরিবার, পরে অবশ্য বাবা তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। এবং জেঠু কে মানে বকুলদের অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি, শুনেছি মায়ের কথা রাখতে বাবা আশেপাশে অনেক গ্রামে খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন।   আজ বাবা নেই হয়তো থাকলে বকুল কে দেখে খুশি হতেন।  এই নাও চা; আচ্ছা তুমি বিয়ে করোনি; যোগ্যতাহীন ছেলের কাছে কোন বাবা তার মেয়েকে সঁপে দেবেন বলো। তাছাড়া মা চলে যাবার পর বাবাকে দেখতে দেখতে কখন যে সময় গড়িয়ে গেলো বুঝতে পারিনি। বাবার অনুরোধেই আমার হাই কলেজের চাকরিটা হয়েছে। তারপর কলেজ আর ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আমার সংসার।  একটি অনুরোধ করি রাখবে; কি; এই নাও এখানে একটি ঘড়ি আছে, তোমার জন্য এনেছি। বাঃ বেশ সুন্দর প্যাকেট, নিশ্চয়ই অনেক দামি ঘড়ি; হ্যা, এর দাম এখানে এক লক্ষ টাকার উপরে পড়েছে। আমি আমার বড় ছেলেকে দিয়ে ফ্রান্স থেকে এনেছি, তোমার জন্য। আমার চোখে এখনো ভাসে তোমার সেই আকুতি, তুমি  SSc  পরীক্ষার সময় কাকিমা কে কতো অনুনয় বিনয় করে একটি ঘড়ি চেয়েছিলে, কিন্তু কাকু সেটা কিনে দিতে পারেনি। তুমি কি অনেক বড়লোকের বৌ বকুল; হ্যা, আমি মুঘল সম্রাটের সম্রাজ্ঞী চেয়েও অনেক ঐশ্বর্যবান। আমার ঘরে তোমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় বড় চার ছেলে মেয়ে আছে। তোমাদের এখান থেকে যাবার পর বাবা অনেক ভেঙ্গে পড়েছিলেন, দিদি এসে সব শুনে, আমাকে এক বয়স্ক বিপত্নীক লোকের সাথে বিয়ে দেন এক সপ্তাহের মধ্যে। আমিও বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আর আপত্তি করিনি।    বকুল, এক সময় আমার সময় ছিল সীমাবদ্ধ, এখন আমার সময় অফুরন্ত, শুধু সময় আর সময় পড়ে থাকে। তাই এখন আর ঘড়ির প্রয়োজন টা হারিয়ে গেছে। এখন আমার আর কোন কিছুর প্রয়োজন পরে না, শুধু তিন বেলা খাবার ছাড়া। আমি বড় আশা করে এসেছিলাম, তোমার জন্য; থাক না, যার জীবন কাটা বন্ধ হতে চলছে, তার আর ঘড়ির কাঁটার কি দরকার। চলো আমাদের বাড়িতে যাব; সেখানে এখন আর বাড়ি নেই, ওটা অত্র গ্রামের হাট বাজার এ পরিনত হয়েছে। তারপর ও চলো একবার বসত ভিটের মাটি কপালে লাগাতে বড় সাধ হয়েছে গো। আমার এখানে আশার দুটি ইচ্ছে ; এক তোমার সুখ দেখা, আর দুই বসত ভিটা দেখার।  বকুল সেই রকম ছেলেমানুষী রয়ে গেলো, গ্রামের ধূলোমাখা পথে নূপুর পায়ে ছন্দে ছন্দে চলছে। ওর বাড়ির স্থানে এসে হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। ভিটেমাটিতে ওর কপালটি ছুঁয়ে দুফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে মাটিতে পরল। আসি অজয়, যদি কখনো মনে পড়ে, আমি তোমার কেউ ছিলাম, তবে এসো আমার কাছে। জানি, অজয় কে জয় করা যায় না। কিন্তু সেবা তো করতে পারবো। গাড়িতে উঠতেই গাড়ি আস্তে আস্তে চলতে শুরু করলো। পাশের চা এর দোকানে গানের রেকর্ড বাজছে ~   অলির কথা শুনে বকুল হাসে কই তাহার মত তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো।। ধরার ধুলিতে যে ফাগুন আসে কই তাহার মত তুমি আমার কাছে কভু আসো না তো   ...................
Parent