কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৪৭৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5188992.html#pid5188992

🕰️ Posted on March 31, 2023 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 562 words / 3 min read

Parent
অন্য রূপকথা   ভিজে ভিজে একটা সকাল আজ! আর, ভিজে চোখ আর ভিজে মন নিয়েই সকালের শুরুটা হয়েছিল। হয়, হয়, এমনি হয় এক একদিন! আজ সকাল থেকেই একটা "কিচ্ছু ভাল্লাগছে না" ব্যাপার ছিল। নির্ধারিত সময়েই ঘুম থেকে উঠে পড়েছি, তবু জিমে যাইনি আজ। বরং, একটু হাঁটতে গেছিলাম। তা, ফেরার সময় আমার বাড়ির কাছেই রাস্তার ওপরে যে একচিলতে বাজার বসে, সেখানে একজন বয়স্ক দোকানির কাছে গেছিলাম, কিছু জিনিস কেনার ছিল… এখন পাতিলেবুর কী দাম! তারসঙ্গে বাকি কিছু তরি-তরকারি ও নেবার ছিল, সবমিলিয়ে মাসের শেষদিনেই 'ত্রাহি মাম' অবস্থা! তা, তার মধ্যেই একটি অত্যন্ত… অপরিশীলিত শব্দচয়নে ঠিক আমার পাশে দাঁড়িয়েই নারীকন্ঠে কেউ বলে উঠলেন "বুড়ো হয়ে মরতে বসেছ, এখনও লোক ঠকানোর ইচ্ছে, তাই না? মরেও শান্তি পাবে না!" শুধুমাত্র শব্দচয়নেই না, কথা বলার ভঙ্গিটিও… অত্যন্ত পীড়াদায়ক। আমার জন্যেই পীড়াদায়ক, তাহলে যাকে বলছেন, সেই বয়স্ক মানুষটির কিরকম লাগছিল… অবাক হয়ে দেখলাম, উনি একবার তাকালেন সেই ভদ্রমহিলার দিকে। তারপর শান্ত গলায় বললেন "কি হয়েছে, মা?" "এক্ষুণি বাজার নিয়ে গেলাম না? দশ টাকার নোটটায় ছেঁড়া ছিল।" "দেখতে পাইনি গো মা! দাও, পালটে দিচ্ছি।" কিন্তু কিন্তু করে বললেন দোকানী দাদু। "দেখতে পাও নি? না ইচ্ছে করে ঠকালে? ধরা পড়ে গিয়ে এখন অজুহাত। দাও, দাও, পালটে দাও!" টাকা পালটে নিয়ে ভদ্রমহিলা চলে যাবার পরে ওই দাদু আমার ফিরতি টাকাটা দিচ্ছিলেন। দেখলাম, দেবার আগে ভাল করে একবার টাকা গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছেন। তারপর, সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে দিলেন। তখন চোখাচোখি হল। একটু যেন জল লেগে আছে চোখে! স্বাভাবিক! দিনের এক্কেবারে শুরুতেই, সকাল সাতটায় কারই বা অপমান গায়ে মাখতে ইচ্ছে করে? "এই যে মা! দেখে দিয়েছি তোমার টাকা!" বলে উঠলেন উনি। "থ্যাংকইউ! আচ্ছা দাদু, তোমাকে উনি এভাবে বললেন, তুমি কিছুই বললে না কেন?" অনেকক্ষণ ধরে চেপে রাখা প্রশ্নটা করে ফেললাম। "থাক…" "উফ, সকাল সকাল যে কেন মানুষ এভাবে কথা বলে! একই কথা তো একটু ভাল ভাবেও বলা যেত?" খুব বিরক্ত হয়েই বলছিলাম আমি। "রাগ করো না মা! আমি ইচ্ছে করেই ওনাকে কিছু বললাম না।" শান্তগলায় বললেন দাদু! "বলা উচিৎ ছিল, দাদু। প্রতিবাদ না করলে…" আমি আরও কিছু অগ্নিবর্ষী কথা বলতে যাচ্ছিলাম, দাদুটি আমাকে সেইরকম শান্তগলাতে বললেন "উনি মা হতে চলেছেন গো মা! তারমাঝেই এই সকালে বাজারে এসেছে, হয়ত মাথা গরম ছিল… তারপরে আমি যদি দুটো কথা শোনাতাম, ওনার ভেতর যে আছে, সে সবটা শুনতে পেত না? কী ভাবত সে, এই পিথিবী সম্পক্কে? ওরা তো সব শুনতে পায় গো মা! ওদের মাঝে তো ভগবান আছেন, উনিও সব শুনতে পেতেন তো!" স্তব্ধ হয়ে গেলাম! এ যেন সেই "তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন" র বাস্তব চিত্র! অন্য একজন খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে আমাকেও করতে হবে? তাহলে তো সত্যিই পৃথিবী অসহনীয় হয়ে উঠবে! আমার মায়ের অন্যতম একটি প্রিয় কবিতা ছিল 'ছাড়পত্র।' মাঝে মাঝেই বিড়বিড় করে বলতেন "চলে যাব, তবু আজ যতক্ষণ এ দেহে আছে প্রাণ / প্রাণপণে এ বিশ্বের সরাব জঞ্জাল / এ বিশ্বকে এ শিশুর বা সযোগ্য করে যাব আমি / নবজাতকের কাছে এই আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।" পরিবেশ, পরিস্থিতির কত্ত ফারাক! তিথি অনুযায়ী আজকের দিনেই সাত বছর আগে আমার মা আকাশের তারা হয়ে গেছিলেন। মা কে ছাড়া সাত - সাতটা বছর কাটিয়ে দিলাম! কেমন ঊষর লাগে! নিঃস্ব লাগে নিজেকে! মনে হয়, আমি খর রোদে দাঁড়িয়ে আছি, একা আমি! আর এমনি একটা দুটো মানুষের সঙ্গে আমার হঠাৎ করে দেখা হয়, আর মনে হয় মরুভূমির মতো আমার জীবনটাতে মরুদ্যানের ছায়া আছে! বুকভরা মায়া আছে! ভিজে চোখ আর মন থেকে তখন ভিজে ভাব সরে যাচ্ছিল! ব্লটিং পেপার দিয়ে দুঃখ শুষে নিচ্ছিল যেন কেউ! ওই রোগাসোগা, সবজি বিক্রেতা, বয়স্ক মানুষটি! ভগবান নন, মানুষ! বড্ড ভাল একজন মানুষ! ফেরার সময় গুনগুন করে গান গাইছিলাম "মেঘের কোলে রোদ হেসেছে…"
Parent