কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৫

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-2545078.html#pid2545078

🕰️ Posted on October 21, 2020 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 425 words / 2 min read

Parent
ভালো -বাসা আজ চতুর্থী। সক্কাল থেকে শরতের সোনা রোদ্দুর আকাশ ছুঁয়ে ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে, আদুরে বিড়ালের মতো। আর, সেই মেঝেতে বসে একমনে মোচা কাটছিলেন সুলেখা। এবারের সব যেন কেমনতর। দিব্যি একটা ভালো বছর শুরু হলো। তারপর ই সব শেষ! পুজোটাও ঘরে বসেই কাটাতে হবে। একটাও নতুন জামা-কাপড় কেনেন নি ওঁরা কেউ। ইচ্ছে করেই...মেয়ের জন্য অনলাইনে ফ্রক আর গাউন আনিয়েছেন, ওঁরা কর্তা -গিন্নি কিচ্ছু কেনেন নি...বলা নেই কওয়া নেই কর্তার অফিস মাইনে কমিয়ে দিয়েছে অনেকটা। সবমিলিয়ে চাপ যাচ্ছে বড্ড। তাও, মা আসছেন...মন খারাপ করে থাকলে কী হয়! আসল আনন্দ তো মনে! তাই আজ চা খেতে খেতে বিকাশ বাবুকে সুলেখা বলেছিলেন "শোনো, পারলে বাবুর জন্য একটা ক্যাপ বন্দুক এনো তো! এবার তো বেরোনো নেই, তাও বারান্দা থেকেই না হয় ফাটাবে বন্দুক!" শুনে বিকাশ বাবু ভুরু কুঁচকে একটা "হুম" বলে চলে গেলেন। একবার ও বললেন না "সুলেখা, তোমার জন্য কিছু আনব? তুমিও তো নতুন কিচ্ছু কেনো নি এবার!" উনি তো "না" ই বলতেন...তবু...শুনতে তো ভালো লাগত! ভাবতে ভাবতেই, সেই পুরোনো দিন গুলোতে ফিরে যাচ্ছিলেন সুলেখা। বিকাশের সাথে প্রথমবার দেখা পাড়ার পুজো প্যান্ডেলে। বিকাশ ভলিন্টিয়ার ছিলেন... আর তখন খুব ই বিরক্তিকর লেগেছিল ওঁর হাবভাব! বাজখাঁই গলায় "লাইনে দাঁড়ান" বলে চিৎকার। তবে, অষ্টমীর অঞ্জলিতে অত ভিড়েও ওনার হাতেই সব্বার আগে ফুল-বেলপাতা দিচ্ছিলেন বিকাশ। নবমীতে পাড়ার খাওয়া দাওয়াতেও দুটো বেগুনি পড়েছিল পাতে! সেই থেকেই শুরু হয়েছিল নতুন শাড়ি আর পাঞ্জাবির সোহাগের! তা, নতুন শাড়ি এখন পুরোনো হয়ে গেছে!বারো বছর কেটে গেছে বিয়ের। সেদিনের ষোড়শী চল্লিশ পেরিয়েছেন জুলাইতে। তাই হয়ত থোড় - বড়ি -খাড়ার জীবনে আজ মোচা কাটতে হচ্ছে। জীবনের ধর্মই পরিবর্তন, তাও কেন কে জানে চোখে জল আসছিল সুলেখার। পুরোনো দিন গুলো কেন যে পুরোনো হয়ে যায় এভাবে! মানুষ যে কেন পুরোনো হয়ে যায়! কাটাকুটি শেষ, এবার রান্না বসানোর পালা। সব ই একা হাতে করতে হয়। ছেলের অনলাইন ক্লাস চলছে, আজ ই শেষ ক্লাস পুজোর আগে। আর বিকাশ এখন ভলিন্টিয়ার থেকে ক্লাবের পান্ডা। আজ ওঁর ওয়ার্ক ফ্রম হোমে দিন ছিল, কিন্তু "ও আজ মোবাইল থেকে ম্যানেজ করে দেব" বলে বেরিয়ে গেছেন উনিও। উনি না থাকলে তো পুজোই হবে না! কত্ত ব্যবস্থাপনা বাকি! গ্যাস জ্বালিয়ে কড়া বসিয়েছেন সুলেখা...হঠাৎ শুনলেন পাড়ার ক্লাবে বেজে উঠল "আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো...আমায় পড়বে মনে কাছে দূরে যেখানেই থাকোওওও..." আরে এ তো সেই গানটা! যে গান বাজিয়ে ওঁকে প্রপোজ করেছিলেন বিকাশ! চোখে চোখে কথা হলেও 'হ্যাঁ' বলতে সময় নিচ্ছিলেন উনি...। আর তখনই...। এরপরেই বিকাশ চালিয়েছিলেন "আর কত রাত একা থাকব...!" ভাবতে ভাবতেই মুখটা লাল হয়ে গেল সুলেখার। কতবছর আগের কথা...সেই ১৯৯৭/৯৮... আর এখনও সেই এক শিহরন...সেই এক আনন্দ... বিকাশের ক্লাবে আশা ভোঁসলে তখন গাইছেন "এমন লগ্ন পেয়ে কি করে বলো নিজেকে সরিয়ে আমি রাখবো আর কত রাত একা থাকবো আর কত রাত একা থাকবো"
Parent