কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৫০১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5639649.html#pid5639649

🕰️ Posted on June 20, 2024 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 784 words / 4 min read

Parent
ঢুকতে গিয়ে দেখে গেটে তালা লাগানো। সারি সারি লেটার বাক্স আছে, আরেকপাশে ফ্ল্যাটের নাম্বার লেখা কলিংবেল। এবার তো বেল বাজাতেই হবে। একটু ভয়ে ভয়েই বেল বাজায় বাবলু। আবার না ঝাড় খেতে হয় ওকে, এর জন্যেও। বৃষ্টিটা জোরে নামল আরও। শেড ও নেই একটা, যার নিচে দাঁড়ানো যায়! “কোন ফ্ল্যাটের অর্ডার?” একতলার বারান্দা থেকে জিজ্ঞেস করেন একজন বয়স্ক মানুষ। “ফ্ল্যাট নাম্বার ছয়। অভিষেক দত্ত।” “ও! ওদের সাথে আমাদের কথা নেই, নইলে তোমাকে চাবি দিতাম” বলে ওঠেন উনি। আবার বেল বাজায় বাবলু। না, কোনো উত্তর নেই। “বাবা, দিয়ে দাও না চাবিটা, ছেলেটা ভিজে গেছে একদম, এমনিতেই ওদের বাড়িতে সকাল থেকে ঝগড়া শুরু হয়েছে” কেউ একটা বলে উঠলেন ভিতর থেকে। “হুম! এই একটা ফ্যামিলি পুরো ফ্ল্যাটের কালচার নষ্ট করে দিল।” “রোজকার ঝগড়া, গালাগালি, মারামারি। উফ পারা যায় না! এই নাও চাবিটা খোলো, আমি গেটে দাঁড়াচ্ছি, ঢুকে দিয়ে দিও” বলেন বৃ্দ্ধ । মাথা নেড়ে ঢোকে বাবলু। ওনার হাতে চাবিটা দিয়ে বলে “থ্যাংক ইউ কাকু” তারপর ওপরে ওঠে। বাবা, কোনোক্রমে এই অর্ডার টা দিলে শান্তি। বেশ সাজানো গোছানো ফ্ল্যাটের দরজা। কোলাপসিবল গেট আটকানো, দু পাশে দুটো গাছ। কাঠের দরজায় চকচকে, পিতলের মতো অক্ষরে দেখা ‘অভিষেক দত্ত। শর্মিলা দত্ত।” ঘর থেকে ভেসে আসছে তারস্বরে টিভির আওয়াজ। এতটাই জোরে যে বাইরে থেকেও শোনা যাচ্ছে সেই আওয়াজ। আবার তো কলিং বেলা বাজাতেই হবে। ভয়ে ভয়ে বেল টেপে ও। তবে এবার, ওকে অবাক করে দিয়েই বেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই দরজাটা খুলে গেল। আর দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই নাকে এসে লাগে ধূপের গন্ধ। বছর পঁয়তাল্লিশের একজন সামনে। ট্র্যাক প্যান্ট পরা, খালি গা। বুকে ভর্তি লোম। দেখেই মনে হয় খুব রাগী! “স্যার, অর্ডার টা।” “হ্যাঁ ভাই, দিন।” একগাল হেসে বলে লোকটা। অবাক হয়ে যায় বাবলু । “শা লা’ থেকে ‘ভাই’! “থ্যাংক ইউ স্যার।” শেখানো বুলি আউড়ে বলে ও। “ওকে, ওয়েলকাম” বলেই তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে দেয় উনি। একেবারে বাবলুর মুখের ওপর। “শা লা, তুই শা লা! ছোটলোক একটা! অভদ্র! বাঁদর!” নিজের মনে লোকটাকে গালি দিতে দিতে দু ধাপ সিঁড়ি দিয়ে নামে বাবলু। তারপরেই দাঁড়িয়ে যায়! কিছু একটা - কিছু একটা ভুল হচ্ছে ওর। কিছু একটা নজর এড়িয়ে গেছে ওর। কি হতে পারে? লোকটার পালটে যাওয়া ব্যবহার, এক মুহূর্তের জন্যে হলেও? নাহ! অন্য কিছু… ট্র্যাক প্যান্ট… ট্র্যাক প্যান্ট টা ভিজে ছিল না? আর গায়ে জামা ছিল না … গরমে অনেকে গায়ে জামা না পরেও থাকেন বাড়িতে, কিন্তু কলিং বেল বেজেছে মানে বাইরের কেউ এসেছে, কেউ এভাবে দরজা খোলে নাকি? অবশ্য - লোকটার যা ব্যবহার, ওকে তো মানুষই ভাবে নি! নিচে নেমে আসে বাবলু। তারপর ওই বয়স্ক মানুষের ফ্ল্যাটে বেল বাজায়। কিছু একটা - কিছু একটা ভুল হচ্ছে… একটা খটকা… “কাকু, আবার চাবিটা দেবেন? আমি তাহলে বারান্দায় দিয়ে দিতাম আপনাকে” নিচের ফ্ল্যাটে বেল বাজিয়ে বলে বাবলু । “হুম” বলে ঘুরে দাঁড়ান উনি। তারপর বলে ওঠেন “ওই অসভ্য ছেলেটাকে বলোনি তো আমি চাবি দিয়েছিলাম?” “না না” “যা অসভ্য ছেলে, হয়ত এই নিয়ে আমাদের সাথে ঝামেলা লাগিয়ে দিল!” “উনি খুব রাগী, তাই না? আমাকেও ফোনে গালাগাল দিয়েছিলেন, আমি ঠিকানা জিজ্ঞেস করেছিলাম বলে।” “একদম বাজে ছেলে! বাড়িতে যতক্ষণ থাকে ঝামেলা, অশান্তি। দু’মাস হল ফ্ল্যাটটা কিনেছে, মাথাখারাপ করে দিচ্ছে আমাদের” গজগজ করতে করতে চাবি এনে দিলেন ওকে উনি। তালাটা খুলতে খুলতে কিছু একটা মনে হল বাবলুর। বারান্দায় ওই ভদ্রলোক আছেন, চাবিটা নেবার জন্য। “কাকু, কিছু মনে করবেন না, উনি কি ওনার স্ত্রীকে মারধর করেন?” “মনে তো হয়। প্রায়ই কান্নাকাটি শুনতে পাই।” “আপনারা কিছু বলেন নি?” “এখানে আসার হপ্তা ঘুরতে না ঘুরতেই শুরু হয়েছে! আমি বলতে গেছিলাম, অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে।” “ওনার বাড়িতে শুধু ওনার ওয়াইফ ই থাকেন? আর কেউ থাকেন না?” “না - আর তো কাউকে দেখিনি কখনও।” “আচ্ছা, কাকু, চাবিটা।” সাইকেলে উঠে গলিটা পেরিয়ে এলো বাবলু। আচ্ছা, এত জোরে টিভি মানুষ শোনে? কান খারাপ হয়ে যায় না? নাকি এত ঝগড়া হচ্ছিল, সেই আওয়াজ ঢাকার জন্যেই টিভি এত জোরে চালানো। আর সেই ফোনে কান্নাকাটি? জোরে একটা আওয়াজ? মনটায় খুব ‘কুডাক’ দিচ্ছে বাবলুর। কিন্তু ও কী ই বা করতে পারে? বড় জোর ওদের অফিসে অভিযোগ জানাতে পারে কাস্টমার গালি দিয়েছেন বলে। ফোন তো সব রেকর্ড হয়। যদিও আগে কখনও এসব করেনি ও, তাই জানে না আদৌ কাজ হবে কিনা এতে! ফোনের কথা ভাবতেই আরেকটা কথা মাথায় এলো। ওর বাবা ই না বলেন “অন্যায় যে করে আর, অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে”! তাই ফোনটা আরেকবার পকেট থেকে বের করে বাবলু। পুলিশের নাম্বার ১০০ ডায়াল করে বলে ওঠে “স্যার, আমি বাবলু, একটা অ্যাপ থেকে খাবার ডেলিভারি দিতে গিয়ে একজন কাস্টমারকে ফোন করি… স্যার ফোনে খুব চিৎকার শুনি, মার ধরের আওয়াজ শুনি। ওই ফ্ল্যটের নিচে একজন কাকু বলেছেন উনি নাকি রোজ ওনার ওয়াইফকে মার ধর করেন। আমি জানি না কী হয়েছে, কিন্তু আমার খুব ভয় লাগছে স্যার। মনে হচ্ছে - কিছু একটা ভুল হয়েছে… হ্যালো, হ্যালো… স্যার?” পরেরদিন কলকাতার প্রায় সব সংবাদপত্রের হেডলাইন - “ডেলিভারি বয়ের বুদ্ধিমত্তায় সঙ্কটজনক অবস্থায় গার্হস্থ্য হিংসার শিকার গৃহবধূ উদ্ধার। অভিযুক্ত ধৃত।" “তোর এত বুদ্ধি? এত বোঝদার তুই?” সকাল থেকে কতবার যে বলেছেন বাবা… জল ছলছলে চোখে… টইটুম্বুর হয়ে যাচ্ছে বাবলু… কত্তদিন পরে আজ বাবা এত খুশি…
Parent