কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৫০৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-5736944.html#pid5736944

🕰️ Posted on September 16, 2024 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1834 words / 8 min read

Parent
মধুরেণ   আজকাল পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে ছবি দেবার চল হয়েছে। তেমনি একটা বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে গেল কাবেরীর। "৫'৫", ৩৫, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, শিক্ষিকা পাত্রীর জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত, শিক্ষিত, উদার মনের ও পরিবারের পাত্র চাই। মো- ৯৮৩১০০০০০০" আর পাঁচটা রবিবারের মতোই 'পাত্র-পাত্রী চাই' এর পাতাটা মন দিয়ে পড়ছিলেন কাবেরী। বাবুর জন্য যদি একটা মনের মতো পাত্রী পাওয়া যায়। যদি জীবনটা একটু নতুন করে শুরু করতে পারে! ছেলের মতিগতি নইলে ভাল নয় একদম। খালি অফিস আর বাড়ি করেই কাটায়। অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছেন, কাউকে ভাল লাগে কিনা - কিন্তু প্রত্যেকবারেই 'না' শুনতে হয়েছে। মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে কাবেরীর। কলেজ জীবনে বাবু একটি মেয়েকে পছন্দ করেছিল। মেয়েটি বয়সে খানিকটা বড় ছিল। কাবেরীর আপত্তি ছিল পুরোমাত্রায়। অশান্তি-ঝগড়াও করেছিলেন ছেলের সঙ্গে। আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন তখন। কিন্তু ছেলে শোনে নি। তবে, সম্পর্কটা টেকেও নি। বছর খানেকের মধ্যেই ব্রেক আপ হয়ে গেছিল। সেই থেকে বাবু আর কোনো সম্পর্কে যায় নি। আর তাই, বাধ্য হয়েই এখন নিজেই পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপন দেখেন উনি। বিয়ে থা হলো জীবনের ধর্ম, না করলে হয়? হ্যাঁ, ছেলে এখন তো বুঝছে না, পরে বুঝবে! একা একা থাকা যে কত কষ্টের, যন্ত্রণার, সেটা কাবেরী হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন, নিজের জীবন দিয়ে। তবে, মনের মতো পাত্রীও তো পেতে হবে। এখন, এই বয়সে এসে কাবেরী বুঝেছেন, আসল হলো আপব্রিঙ্গিং, অর্থাৎ মেয়েটির বেড়ে ওঠার শিক্ষা আর মূল্যবোধ। কারো মূল্যবোধ যদি ঠিক থাকে, তাহলেই সবকিছু ঠিক থাকবে। বয়স, শারীরিক গঠন, আরও বাকি যা কিছু - কিস্যু থাকে না শেষ পর্যন্ত। ভাবতে ভাবতেই বিজ্ঞাপন গুলো দেখছিলেন উনি। আর চোখে পড়ল এই বিজ্ঞাপনটি। বাবুর ১৯৮৫ তে জন্ম, মানে আটত্রিশ চলছে এখন। এই মেয়েটির ৩৫। যতই বয়স না মানুন, একটা 'মানানোর' ব্যাপার আছে না! আটত্রিশ বছরের বাবুর সঙ্গে কী তেইশের মেয়ে মানাবে! ভাবনাটা মনে আসতেই হেসে ওঠেন উনি। এই না ভাবতেন, আসল হলো মানুষের বেড়ে ওঠা আর মূল্যবোধ - এখন পাত্রীর বিজ্ঞাপন দেখতে গিয়েই সেই রক্ষণশীল হয়ে পড়ছিলেন উনি! সাধারণ একটি বিজ্ঞাপন, তবু 'উদার' শব্দটাতে চোখ আটকে গেল। তাই এই বিজ্ঞাপনটিতে 'টিক' চিহ্ন দিয়ে রাখলেন উনি। প্রতি সপ্তাহেই এরকম বেশ কয়েকটি মনের মতো বিজ্ঞাপন বেছে রাখেন আর ছেলের দেখা পেলেই বলতে থাকেন "আজ কিন্তু বেশ কয়েকটা মেয়ে পছন্দ করেছি। কাল ফোন করব" বলেন। ছেলের মনমেজাজ ভাল থাকলে সেটা নিয়েই একটু 'লেগপুল' করে মায়ের। আর নইলে বেশিরভাগ দিনেই "মা, আজ খুব টায়ার্ড, পরে কথা বলব এই নিয়ে, ওকে?" বলে চুপ করিয়ে দেয়। অবশ্য ছেলেকে আর হাতের কাছে পান কতক্ষণ! সে তো সারাক্ষণ চোর ডাকাতদের পিছনে দৌড়তেই ব্যস্ত! ছেলে যখন পুলিশে জয়েন করেছিল, তখন থেকে এই এত বছরে - মা ছেলের মনের কথা হওয়াও কমে গেছে একদম। অথচ আগে তো… তবে, আজ কাবেরীর কপাল ভাল। সাড়ে সাতটার মধ্যেই আজ ফিরে গেছে বাবু। তাই, ছেলের পছন্দ মতো একটু আদা চা নিয়ে কাবেরী বসলেন ছেলের কাছে। "বাবু?" "হ্যাঁ মা, বলো - কয়েকজনকে পছন্দ হয়েছে তোমার তাই তো?" "কি করে জানলি?" অবাক কাবেরী। "এটাই তো আমাদের রবিবারের রিচ্যুয়াল" হেসে বলে ছেলে। "দেখবি একটু? তোর মত পেলে ফোন করি?" "করবে খন! তাড়া কিসের?" "বাহ্, এখন সবে আটটা বাজে - আজ রবিবার, মেয়ের বাড়ির লোকজন হয়ত ফ্রি থাকবেন। আজই তো ভাল।" "আচ্ছা, বেশ, করো ফোন, আমি আর কী বলব!" "এই যে দ্যাখ, তিনজনকে আমার পছন্দ হয়েছে। একজন আবার পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি, বেশ লম্বা…" হাতের কাগজটা নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বলেন কাবেরী। এক ঝলক তাকায় বাবু। তারপর হাতে নেয় কাগজটা। ভাল করে দেখে। তারপর একটু হেসে বলে "এঁর সঙ্গেই কথা বলো মা। যদি উনি চান তাহলে একদিন গিয়ে কথা বলতে পারি।" হঠাৎ শুনে বিশ্বাস হয় না কাবেরীর। বাবু… যাবে বলছে, দেখা করতে! কিন্তু জিজ্ঞেস করার আগেই উঠে যায় ছেলে। বাথরুমে ঢুকে পড়ে। সারাদিনের ক্লান্তির পরে অনেকক্ষণ ধরে স্নান করে বাড়ি ফিরে। বরাবরের অভ্যাস। ছেলের মর্জি পাল্টাবার আগেই তড়িঘড়ি ফোন করেন কাবেরী। "হ্যালো?" ওদিক থেকে পরিশীলিত কন্ঠ ভেসে আসে। "হ্যালো… আজ পেপারে একটা বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করছি…" "হ্যাঁ, বলুন.." "আমার ছেলের ব্যাপারে কথা বলতে চাই।" "সে তো বুঝতেই পারছি কাকিমা। মেয়ের ব্যাপারে তো কথা বলবেন না।" একটু হাসতে হাসতেই বললেন অপর পক্ষ। হাসি পেল কাবেরীর ও। "আমি আসলে সেভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারছি না দিদি। আমার ছেলের জন্য বিজ্ঞাপন খুঁজছিলাম, আপনাদের বিজ্ঞাপনটা ভাল লাগল…" "এমা, কাকিমা! আমি তো 'কাকিমা' বললাম আপনাকে, আর আপনি আমাকে 'দিদি' বলছেন!" আবার হাসি, ওইদিক থেকে! এবার অপ্রতিভ হলেন কাবেরী। "তাই তো মা! ভুল হয়ে গেছে। তা, তুমি পাত্রীর কে,মা? বোন? না দিদি?" "না কাকিমা, আমিই… মানে… আমার জন্যই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল।" এবার ব্রীড়া! "ও আচ্ছা… বাহ্, ভালোই হলো, তোমার সঙ্গেই কথা হয়ে গেল। আমার ছেলে পুলিশে আছে, খুব ব্যস্ত থাকে। তাই আমিই ফোন করছি।" "পুলিশ!" এবার নীরবতা। তাড়াতাড়ি যোগ করেন কাবেরী "আসলে সব কথা তো ফোনে হয় না, তাই ভাবছিলাম একদিন সামনাসামনি বসলে ভাল হতো। যদি তোমার বাবা মায়ের আপত্তি না থাকে।" "কাকিমা, আপনি ঠিক বলেছেন। তবে, আমার বাবা নেই। মা আছেন, তবে মায়ের শরীরটাও ভাল নেই। আর আমি তো জানেনই কলেজে পড়াই। রবিবার ছাড়া ছুটিও নেই।" "আমাদের পরিবারও তাই। ছেলে আর আমি। ওর বাবা… অনেকবছর হলো…। তা, পরের রবিবার হবে?" "আমার হবে… কিন্তু আপনার ছেলে… তাঁর হবে কি? আসলে ওঁদের রুটিন কেমন তো জানি না।" "হ্যাঁ, সেটা একটা সমস্যা বটে! তবে আমি বলে দেখব।" "আচ্ছা কাকিমা, আমাকে এই নাম্বারে শুক্রবারের মধ্যে জানিয়ে দিলে ভাল হয়।" "আচ্ছা আচ্ছা… ভাল থেকো।" বলে ফোন রেখে দিয়েছিলেন কাবেরী। আজ সেই রবিবার। 'মেয়ে দেখার' কথা শুনে ভেবেছিলেন বাবু বেঁকে বসবে। কিন্তু একবার বলতেই রাজি হয়ে গেছিল। এমনকি, সেদিন দুপুরেই ফিরে এসেছিল বাড়িতে। "কি রে তুই, এই সময়ে?" "ওই… মধ্যমগ্রামে যাবার কথা বলেছিলে না?" একটু লজ্জা লজ্জা গলায় বলেছিল বাবু। "ও বাবা… সে তো সন্ধ্যেবেলা, লেকটাউন থেকে মধ্যমগ্রাম কতটুকুই বা… তাই তুই চলে এলি?" সুযোগ পেয়ে ছেলের লেগপুলিং করে নিলেন কাবেরী। তবে বেশি কিছু বললেন না। যদি যেতে না চায়! পাঁচটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছ'টার মধ্যেই পৌঁছে গেলেন কাবেরীরা। মেয়েটি ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছিল। অ্যাপ থেকে গাড়ি বুক করে খুব অল্প সময়ই লাগল - রাস্তা ফাঁকাই ছিল। ছোট্ট একতলা বাড়ি। কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে দিলেন একজন ভদ্রমহিলা। কাবেরীর বয়সীই হবেন। "আসুন আসুন দিদি।" বলে হাসলেন উনি। "ভাল আছেন তো?" জিজ্ঞেস করলেন কাবেরী। এইপ্রথম ছেলের জন্য পাত্রী দেখতে আসা… কী যে বলবেন, বুঝতে পারছিলেন না। একচিলতে ঘর। একটা দুজনের বসার মতো সোফা, আর একটা ছোট্ট ডাইনিং টেবিল। সোফার পিছনে বইয়ের আলমারী ভর্তি বই। বাবু ঘরে ঢুকেই বই দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেল। সোফায় বসলেন কাবেরী। "আপনারা চা খাবেন তো?" জিজ্ঞেস করলেন উনি। "হ্যাঁ, তবে শুধু চা ই কিন্তু। আর কিচ্ছু না।" হেসে বলেন কাবেরী। একসময় এই মেয়ের বাড়ি আসা মানেই ছিল আতঙ্ক! পাত্রীপক্ষদের অনেক খাবার আয়োজন করতে হতো, আর পাত্রপক্ষেরা পাহাড়প্রমান খাবার খেয়ে, প্রায় ধন্য করে দেবার ভঙ্গিতে বলতেন "আচ্ছা, পরে জানাব!" সবাই এমনি ছিলেন না অবশ্যই। তবে, কাবেরী নিজেই দেখেছিলেন এরকম। তাই ঠিক করেই রেখেছিলেন সুযোগ পেলে এই আচরণ করবেন না কোনোদিন। "আমিও চা খাব, তবে চিনি ছাড়া হলে ভাল হয়।" ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল বাবু। তারপর সোফায় এসে বসল। "আচ্ছা, আমি আনছি। তিন্নি… মানে ওকেও ডাকি" বলে চলে গেলেন উনি। মিনিট পাঁচেক পরেই চা এবং আরেকটি ট্রে তো পরিপাটি করে সাজানো বিস্কুট আর কুচো নিমকি নিয়ে এলেন দুজন। ডাইনিং টেবিলের সামনের একটি চেয়ার টেনে বসল মেয়েটি। একটা সাদা রঙের সালোয়ার - কামিজ পরা। শান্ত, প্রসাধনবর্জিত মুখ। টেনে বাঁধা চুল। "দু'বার কথা হলো, তোমার নামটাই জানা হয়নি…" কথা শুরু করার জন্যই বললেন কাবেরী। একনজরে দেখে নিয়েছেন, ছেলে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে। একটু মুগ্ধতাও কী লেগে আছে তাতে! "ওঁর নাম সংযুক্তা বসু, মা। আমি ঠিক বলছি তো?" একটু হেসে বলল বাবু। প্রত্যয়ী চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটিও। "হ্যাঁ স্যার। আপনার মনে আছে আমার নাম - দেখে ভাল লাগল।" "আমাকে স্যার বলার কোনো কারণ নেই।" "আগেও তো বলেছি।" ঠোঁট কামড়ে বলে সংযুক্তা। "তখন অফিসিয়াল পারপাস ছিল। এখন পারসোনাল পারপাস।" শান্তগলায় বলে বাবু। শাটল ককের মতো দু জোড়া মায়ের চার জোড়া চোখ ঘুরছিল দুজনের দিকে। একটু বিবর্ণ হয়ে গেছেন যেন মেয়ের মা। "কাকিমা, চা খাবেন না?" একটু হাসে এবার সংযুক্তা। "হ্যাঁ… খাব…" বাবু আর মেয়েটি দুজন দুজনকে চেনে… এই অভিঘাত থেকেই বেরোতে পারেন নি কাবেরী এখনও। "আপনারা তো সবই জানেন দিদি… তাও যে আপনারা এসেছেন…" এবার কথা শুরু করেন মিসেস বসু। "কি জানি… মানে কি জানার কথা বলছেন বুঝতে পারছি না…" সত্যিই বুঝতে পারছেন না কাবেরী। বাবু আর সংযুক্তা - দুজনেই দুজনকে চেনে! কোনো কাজের জন্যেই চেনে! তাই কী বাবু ছবি দেখেই ফোন করতে বলেছিল! আর যে ছেলের টিকিও দেখা যায় না, সে আজ এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ঢুকে গেছিল! তবে কী… বাবু… পছন্দ করে মেয়েটিকে! কিন্তু কি জানার কথা বলছিলেন ওর মা? "কাকিমা, স্যার… মানে মি. মিত্র জানেন সবটা। কিন্তু উনি হয়ত আপনাকে বলেননি কিছু, তাই আমিই বলছি। আমি… চার বছর আগে… রেপড হয়েছিলাম… আমার এক বন্ধুর বাড়িতে, ওর জন্মদিনে গিয়ে…আমাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো কোল্ডড্রিংক খাওয়ানো হয়েছিল।" থেমে থেমে বলে মেয়েটি। আর, পাথর হয়ে যান কাবেরী। "পরেরদিন আমি থানার কমপ্লেন করেছিলাম। উনিই কেসটা হ্যান্ডেল করেছিলেন। তাই, আমাকে ভালোই চেনেন উনি।" বাবুর মুখে মৃদু হাসি এখনও! "আমি কিন্তু আমার কাজটা করেছিলাম ম্যাডাম। আপনার সেই তিন 'বন্ধু'এখন জেলে।" "আপনাকে থ্যাংকইউ ও বলেছিলাম স্যার।" যাক বাবু কাজটা ঠিক ভাবে করেছিল! স্বস্তি পান কাবেরী। "কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল দিদি! আমার সুস্থ, হাসিখুশি মেয়ে…" কান্নায় বুজে এলো মায়ের কণ্ঠ! "মা… প্লিজ…" অসহায় গলায় বলে মেয়ে। "কাকিমা, একটা কথা বলব? সেইসময় ওঁর শরীর মনে আঘাত লেগেছিল খুবই, কিন্তু এখন তো উনি মনে হয় সুস্থই আছেন, তাই না?" বাবু বলে। "সুস্থ আছে, তবে মনের খবর কি জানি! এতবছর ধরে তো নিজেকে খাঁচায় বন্দী করে রেখেছিল। আমারও তো বলার কিছু ছিল না! যা হয়ে গেছে… কে আর বিয়ে করবে! তাই ভাবিও নি… তাও… মেয়ে নিজেই বলল, বিজ্ঞাপন দেবে…" "আসলে, আমার বরাবর খুব সংসার করার ইচ্ছে ছিল কাকিমা। যেমন আর পাঁচটা মেয়ের থাকে। কিন্তু…। গতবছর মায়ের কোভিড হয়েছিল… তখনই ভয় লাগার শুরু… কালের নিয়মেই তো মা চলে যাবেন একসময়, তখন… একা…" শান্তগলা মেয়ের, অথচ কিছুটা যেন অসহায়ও সে গলা। বাবু তাকাল মায়ের দিকে। চোখাচোখি হল দুজনের। আজ এই সন্ধ্যেবেলা দুটি প্রাপ্তি হলো। বাবু জেনে বুঝেই মেয়েটিকে দেখতে এসেছে। অর্থাৎ ছেলের মত আছে। একবার ছেলের পছন্দকে নিজের অপছন্দ করেছিলেন, ঠুনকো কারণে, আর এখনও একটা অন্য কারণ আছে যদিও… তাও… আর, ছেলে নিজের কাজটা করেছে! বন্ধুর ছদ্মবেশে মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েছে যে পাপীগুলো, সেগুলোর শাস্তি হয়েছে। "কাকিমা, আপনি চা টা ও খেলেন না। রেপ ভিক্টিমের বাড়ি বলেই কি?" একটু শ্লেষ নিয়েই বলল মেয়েটি। রেপ ভিক্টিম! কটমট করে মেয়েটির দিকে তাকালেন কাবেরী। কত মেয়েই যে ধর্ষিতা হয়, আর বুকে, মনের গভীরে সে ক্ষত নিয়ে চলেন, জীবন দিয়ে জানেন কাবেরী। "আহা রে মেয়ে, ধর্ষিতা হয়েছিলি তুই? তাও বন্ধুরা মিলে? যারা নাকি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হয়!" তবে, এই কথাটা… কানে লাগল! চ্যাটাং চ্যাটাং বুলি আছে তো মেয়ের! বাবুও ওঁর দিকে তাকিয়ে আছে। একটু কৌতুহল লেগে আছে যেন সে মুখে! "শোনো মেয়ে, চা টা খাচ্ছি না, তার কারণ তুমি আমার চায়েও চিনি দাও নি। ইন্সপেক্টর স্যার চিনি খান না, আমি বাপু চিনি ছাড়া চা খেতে পারি না।" "ও…স্যরি স্যরি কাকিমা… আসলে…" লজ্জায় লাল মুখে উঠে দাঁড়ায় মেয়েটি। "থাক, চিনি আনতে হবে না এখন। মিষ্টি মুখ এখন করতে চাই না আমি।" চমকে তাকায় মা - মেয়ে দুজন। "নিজেকে রেপ ভিক্টিম বলবে না আর, কেমন? তোমার মা কি নিজেকে কোভিড ভিক্টিম বলেন? রেপ সারভাইভার, বলতে পারো। জানি না এরকম কোনো ইংরিজি আছে কিনা, তবে তুমিই শুরু করতে পারো। রাজি থাকলে… চিনি দাও… আর পারলে চা টা একটু গরম ও করে আনো, জুড়িয়ে গেছে।" এবার হাসিমুখে বলেন কাবেরী। হুঁ হুঁ বাবা, ইন্সপেক্টর শুভদীপ মিত্রের মা উনি, একটু আধটু 'গুগলি' তো উনিও দিতে পারেন! "মা… তুমি…" কিছু বলতে যায় বাবু। "তুমিও সংযুক্তার সঙ্গে যেতে পারো… জীবনে তো মা কে সাহা্য্য করলে না বাড়িতে, নতুন জীবন শুরু করতে চাইলে বাড়িতে একটু কাজে হেল্প করতে হবে।" মুচকি হেসে বলেন কাবেরী। আহা, যাক, ওরা দুজনে একটু কথা বলে নিক। দুজনেই যে হারে 'স্যার' আর 'ম্যাডাম' শুরু করেছিল… উফ! সোফায় হেলান দিয়ে হাসেন কাবেরী। মনে হচ্ছে বাড়িতে সানাইয়ের সুর বাজবে শিগগিরিই…
Parent