কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-2547753.html#pid2547753

🕰️ Posted on October 22, 2020 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 464 words / 2 min read

Parent
#অন্য_রূপকথা গত শনিবারের কথা। একটু বেরিয়েছিলাম...হাজরা মোড়ের কাছে যাবার ছিল। প্রতিপদ তিথি ছিল সেদিন...যেতে যেতে কেবল ই ভাবছিলাম গতবছরের কথা। পুজো মানে 'পুজো পুজো ভাবের' কথা। আর এবছর তো...! নিজের খেয়ালে এসব ভাবছি, হঠাৎ দেখি, ট্যাক্সি দাদা হরিশ মুখার্জী রোড ধরেছেন হাজরার দিকে যাবার জন্য! কি মনে হলো...নেমে গেলাম কালিঘাট পটুয়াপাড়া তে। রাস্তার ওপরেই সারিবদ্ধ প্রতিমা...চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি চলছে...। মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেদিন থেকেই অনেক ক্লাবে প্রতিমা নিয়ে যাবার জন্য, পুরো এলাকাতেই অনেক পুলিশ কর্মীরা ছিলেন, আর বেশ কিছু লরিও এসে গেছিল সেই ভর দুপুরবেলাতেই। যাই হোক, আমি একটু কোল্ড ড্রিংক খাবার অছিলায় একটি স্টুডিওর পাশের একচিলতে গলিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর একমনে দেখছিলাম কিভাবে রং করার পালা চলছে...। মনে পড়ে যাচ্ছিল ফেলুদা শশীবাবুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন "পরশু তো ষষ্ঠী...কাজ শেষ হবে তো?" এসব এতালবেতাল ভাবছি, হঠাৎ দেখি "আরেএএএ তুই এখানে ঘাপটি মেরে আচিস? কখন থেকে খুঁজচি তোকে?" বলে আমার সামনের ফুটপাথে একটি পরিত্যক্ত ব্যাটারির ওপর বসে থাকা বাচ্চা মেয়েকে বকে উঠলেন একজন ভদ্রমহিলা। তখনও হাঁফাচ্ছিলেন উনি। স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম রোদে অনেকটা ঘুরে আসতে হয়েছে। ভদ্রমহিলা! না বোধহয়! অন্তত, আমাদের সমাজের চলতি অর্থে তো নয়। একঝলক ওঁর দিকে তাকিয়েই বুঝেছিলাম...ওই ভর দুপুরেও আঁটোসাঁটো পোষাক দেখে বুঝেছিলাম...সমাজের কোন প্রান্তসীমায় বাস ওঁর। ছোট্ট মেয়েটি...এই বছর পাঁচেক হবে...রোগা টিংটিঙে, কৃষ্ণকলি...ভয় পেয়ে তাকিয়েছিল...। ভাবছিলাম আরও বকা খাবে বোধহয়। কিন্তু তার আগেই যে শিল্পী মন দিয়ে একটি বড় টিনের কৌটোতে রং গুলছিলেন, হেসে বললেন "তোর মেয়েকে তুই অন্য জায়গায় খুঁজিস কেন? এখানেই তো আগে আসবি!" কথার মধ্যে অদ্ভুত একটা প্রশ্রয় আর মায়া ছিল! যেমন বাড়ির বৃদ্ধ দাদুরা নাতি-নাতনিদের জন্য বলে থাকেন। শুনে মা টি বলে উঠেছিলেন "তা বলে সারাক্ষণ বসে থাকবে? খাবেদাবে না? তুমি আর লাই দিও নি বাপু!...এই, তুই আয়...!" বলে মেয়েটিকে কোলে নিয়ে, ওড়না দিয়ে ছোট্ট মাথাটা ঢেকে নিয়ে চলে গেলেন। বড্ড রোদ ছিল যে! কড়া রোদ...তবু মন যে কেন এত মেঘলা লাগে! শিল্পীর (ওঁর নাম তারক দাস) কাছ থেকে শুনলাম, কালিঘাট ব্রিজ লাগোয়া গণিকালয়ের বাসিন্দা ওঁরা। করোনা পরবর্তী সময়ে দিন কাটছে অত্যন্ত অনিশ্চয়তার সাথে, যে বিষয়ে অল্প বিস্তর আমরা সবাই অবগত আছি...পড়েছি আমরা বিভিন্ন মিডিয়াতে। তা, এই বাচ্চা মেয়েটি (যার নাম টুম্পা) প্রায়ই এখানে পালিয়ে আসে। ওর নাকি গণেশ দাদাকে খুউউউউব পছন্দ। একটু খোঁচানোর জন্যই ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম "খারাপ পাড়ার মেয়ে...আপনি অ্যালাও করেন কেন?" কাজ থামিয়ে একনজর আমার দিকে তাকিয়েছিলেন তারকবাবু। তারপর বলেছিলেন "খারাপ ভালো বোঝা খুব মুশকিল দিদি...কত খারাপ দেখলাম, মুখ দেখে কিচ্ছুটি বোঝার উপায় নেই...আবার কত ভালো, দেখে মনে হবে বদ! ওরা ভান করে না অন্তত...।" শুনতে শুনতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল। শাস্ত্রে আছে, মায়ের মূর্তি তৈরিতে যে অষ্টকন্যার মাটি লাগে, গণিকারা তার মধ্যে অন্যতম। কারণ মা আছেন সবার মাঝেই। আর..স্বয়ং মৃন্ময়ী মায়ের সামনে আমি একজন চিন্ময়ী মা কে দেখলাম... একজন 'মা' কে দেখলাম। কাল দুর্গাষষ্ঠী। সন্তানের মঙ্গলকামনার দিন। আমার কোনো জঠর-জাত সন্তান নেই...জানি না, আমার প্রার্থনার মূল্য কতটুকু...। কিন্তু মনেপ্রানে চাইব এই মা আর এই সন্তান,সব মা আর মায়ের সব ছায়েরা যেন ভালো থাকেন ... মা অন্নপূর্ণা যেন ভাতটুকুর ব্যবস্থা করে দেন বচ্ছরভর।
Parent