কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৮৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3263302.html#pid3263302

🕰️ Posted on May 7, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 556 words / 3 min read

Parent
আজও মেয়েটা দুপুরবেলা কোথায় যেন বেরোচ্ছে! গত দিন পাঁচেক ধরেই একটা মোটরবাইক আসে, আর তাতে চড়ে মেয়েটা কোথায় যেন যায়! রোজ রোজ! ভাবতে ভাবতেই ভুরুটা কুঁচকে গেল মিঠুর। এইজন্যই উনি কাউকে ভাড়া দিতে চান নি। কিন্তু উনিশ সালে কর্তা চলে গেলেন, মেয়ে পইপই করে বোঝাল এত বড় বাড়ি, একতলায় একটা ভাড়া দিলে ভালো হয়, বিপদে আপদে এলাহাবাদ থেকে ও আসতে আসতে দেরি হয়ে যাবে, কিন্তু কেউ একজন পাশে থাকলে অনেক সুবিধা...। প্রথমে তো রাজি হন নি উনি, তারপর কুড়ি সাল যা খেলা দেখাল! ঘরে বন্দী! কেউ কথা বলার নেই! মেয়ে অনলাইনে বাজারহাট, ওষুধপত্র পাঠিয়ে দিত! সবিতাও কাজে আসতে পারেনি দু'মাস। কাঁহাতক আর টিভি দেখা যায়! তাই পুজোর পরে ভাড়া দিয়েছেন একতলাটা। তবে একটা মেয়েই নিয়েছে। মেয়েটি ডিভোর্সি, একটা বছর সাতেকের ছেলে আছে। এখন বাড়ি থেকেই কাজ করে। সবমিলিয়ে ঝঞ্ঝাট নেই কোনো, সেইভেবেই ভাড়া দেওয়া। ভাড়া দেবার সময়ই বলে দিয়েছিলেন একগাদা ছেলে ছোকরা নিয়ে পার্টিটার্টি চলবে না। মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলেছিল "চিন্তা করবেন না মাসিমা, আমার সময় কই! সারাদিন কাজ আর ছেলে নিয়েই কাটে।" আর এই সময়ে কোথায় যে যাচ্ছে মেয়েটা! খাওয়া দাওয়া করে আবার ব্যালকনিতে এলেন মিঠু। জামাকাপড় গুলো শুকিয়ে গেছে, এবার ভাঁজ করবেন। আর তখনই দেখেন মেয়েটা ফিরে এলো। হেলমেট খুলে, 'টাটা' করে ঘরে চলে এলো। শুনশান রাস্তা। কেউ কোত্থাও নেই। আর এত করোনা ছড়াচ্ছে! বাড়িতে একটা বাচ্চা আছে! কোনো আক্কেল নেই মেয়েটার! নাহ! রেগে যাচ্ছেন মিঠু। আর রাগলে উনি এক্কেবারে অগ্নিশর্মা হয়ে যান। তাই চটি ফটফটিয়ে নিচে চলে আসেন উনি। কলিংবেলটা বাজান। "দিদা, এসো, মা স্নানে গেছে" ফোকলা মুখে একগাল হেসে বলে বুম্বা। উনি ঘরে ঢোকেন। সরাসরি তো বলতে পারবেন না, কায়দা করেই বলতে হবে মেয়েটিকে। ভাবতে ভাবতেই বাথরুম থেকে বের হয় মেয়েটি। সদ্য স্নান করা, মাথায় তোয়ালে পেঁচানো আছে তখনও। ওঁকে দেখে হাসিমুখে বলে "বসুন না মাসিমা!" "এই অবেলায় স্নান করলে কেন?" জিজ্ঞেস করেন উনি। "আসলে একটু বেরিয়েছিলাম মাসিমা। তাই এসেই স্নান করলাম।" "বেরিয়েছিলে? সেকি! কেন! এখন চারিদিকের যা অবস্থা!" চেষ্টা করেও রাগটা সরাতে পারলেন না গলা থেকে মিঠু। মেয়েটি একমুহূর্ত চুপ করে রইল। তারপর বলল "কি করি, মাসিমা। আমার এক বন্ধু, বিদেশে থাকে, ওর মা বাবা এখানে একা, কোভিড হয়েছে। আরেকজন কলিগ, এখানে কেউ নেই, তারও...আর আমার শ্বশুর -শাশুড়ি দুজনের ই...মানে, আমার এক্স হাজব্যান্ডের বাবা মায়ের...ওঁদের একটু খাবার পৌঁছে দিচ্ছি কদিন ধরে মাসিমা। এইসময় পাশে না দাঁড়ালে...আর কবে দাঁড়াব বলুন? তবে এসেই আমি স্যানিটাইজ করছি সব জায়গা। গেটেও করেছি মাসিমা। " স্তব্ধ হয়ে গেলেন মিঠু। নিজেকে এত ছোট মনে হচ্ছে! তাই জিজ্ঞেস করলেন "তোমার রান্নার লোক আসছে? এতজনের রান্নাবান্না কিভাবে...মানে তুমি তো বলেছিলে তুমি সেরকম রান্না পারো না!" "পারি তো না ই মাসিমা। তাও, ডাল ভাত, মাছ টুকু দিচ্ছি। আজ থেকে তো আমাকেই রান্না করতে হচ্ছে, দিদি আসতে পারবেন না, ট্রেন বন্ধ। জানেন মাসিমা, আগে আমার শাশুড়ি মা আমি রান্না পারিনা বলে কত রাগ করতেন, আর এখন...একটু আগে ফোন করে কাঁদলেন...ওই সামান্য খাবার ই নাকি অমৃতের মতো লেগেছে ওঁর কাছে!" ম্লান হেসে বলল মেয়েটি। একটু ভাবলেন মিঠু। তারপর বললেন, "এক কাজ করা যাক, আমি এবার থেকে রান্নাটা করে দেব, তুমি পৌঁছবার ব্যবস্থা করো। আর চাইলে আমার গাড়িটাও ব্যবহার করতে পারো। ড্রাইভিং করতে পারো তো?" "পারি মাসিমা, ওয়াও! খুব ভাল হয় তবে! এই কদিন এক একদিন এক একটা বন্ধুকে বলে কয়ে আনতে হয়েছে খাবার পৌঁছনোর জন্য। ওদের ও তো অফিস আছে। " বলে মেয়েটি আর তারপর আচমকাই ওঁকে জড়িয়ে ধরে চকাম করে হামি খায় একটা। কতদিন পরে কেউ এখানে জড়িয়ে ধরল! মেয়েটা তো বিয়ের পর থেকে আসেই না... বাইরে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি আসবে এক্ষুণি। কিন্তু তার আগেই মিঠুর চোখে বন্যা নামে কেন? অ্যাঁ?
Parent