কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৯

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-2547799.html#pid2547799

🕰️ Posted on October 22, 2020 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 423 words / 2 min read

Parent
#অন্য_রূপকথা আমি হাওড়া জেলার বাসিন্দা। যে রাস্তা দিয়ে আমার রোজকার চলাফেরা, তার নাম 'আন্দুল রোড'... মানে, এই অঞ্চলের এক্কেবারে 'দুষ্টু রাস্তা'! দু' চারমাস পরপর সারানো হলেও, উঠে যাওয়া খোয়া আর গর্ত হলো এই রাস্তার অলঙ্কার। আর সাথে প্রানঘাতী ট্রাফিক তো আছেই! সে যাই হোক, আজ একটু দরকারে বেরিয়েছি সন্ধ্যেবেলা। টোটো তে উঠেছি, একটু পরেই দেখি আরও দুই ছেলে উঠল টোটোতে, এবং বসল আমার উল্টোদিকের সিটে। কেন জানি না ছেলে দুটিকে দেখে একটু অস্বস্তি হচ্ছিল আমার। দুজনেই টিংটিঙে রোগা। কালো রঙের ওপর মড়ার খুলি আঁকা টি শার্ট পরা। একজনের আবার ন্যাড়া মাথায় অদ্ভুতভাবে কাটা চুল! ওঠার পরই একজন ছেলে বলল "কুন্ডু কত দেবে বলল? একুশ টাকা? ওতে কি হয় ভাই? দুর্গাপুজোর চাঁদা, না ভিক্ষে দিচ্ছে ?" তো, আরেকজন বলে উঠল "আর সাহা বাড়িতে দেখলি? মুখের ওপর বলে দিল চাঁদা দিতে পারবে না! আরে, পুজো তো বন্ধ করা যায় না...কি যে হবে বাঁ.." বলতে বলতেই আমার দিকে, আমার কোঁচকানো ভুরুর দিকে তাকিয়ে একটু সমঝে গেল যেন! কিন্তু আরেকজন বলেই যাচ্ছে "ভাব, এদিকে অন্তত হাজার পাঁচেক টাকা না উঠলে কিভাবে ওদেরকে দেব!" শুনতে শুনতে বেশ বিরক্ত হচ্ছিলাম আমি। ক'দিন আগেই হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুরা পাঠিয়েছে একটি খবর...কিভাবে ওনামের সময় কেরালায় ছড়িয়েছে করোনা এবং সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ আমাদের। আর সেখানে এই ছেলেগুলো, চাপ দিয়ে চাঁদা আদায়ের প্ল্যান করছে! একেই বিরক্ত ছিলাম...আরো বিরক্ত হয়ে বললাম "কোন ক্লাব তোমাদের? পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা চাইছ এই বাজারে?" ন্যাড়া ছেলেটিও প্রায় আমার মতোই ভুরু কুঁচকে তাকাল আমার দিকে। তারপর বলল "পাঁচ হাজারের নীচে ঢাকী দাদা দের কি দেব শুনি? লবডঙ্কা?" ঢাকী দাদা! শুনে চুপ করে গেলাম আমি। কিন্তু ছেলেটা বলেই যাচ্ছিল... "আমাদের এমনিতেই ছোট পুজো, এই হাঁসখালি পোল নস্করপাড়ায়। ঠাকুর, প্যান্ডেল সব ছোট। ঠাকুর মশাই ও পাড়াতেই থাকেন। সেসব নিয়ে চাপ নেই। চাপ হচ্ছে এবার ঢাকী লাগবে না, কিন্তু আমাদের যে দাদা ঢাক বাজান, উনি গত পাঁচ ছ' বছর ধরে বাজাচ্ছেন। উনি তো আশা করে থাকবেন, নাকি? তাই পাঁচ হাজার টাকা খুব দরকার আমাদের। ওনার বাড়ি বর্ধমানে...ঠিকানা জানি...গিয়ে টাকা ক'টা দিয়ে আসব তবে...বেঁচে থাকলে পরের বছর পুজোয় দেখা যাবে..." খুব, খুব নীচ মনে হচ্ছিল নিজেকে। বাহ্যিক রূপ দেখে ওদের ভুল ভেবে নিয়েছিলাম বলে...। তাই মাথা নীচু করে বলে উঠলাম "মা তোমাদের আশীর্বাদ করবেন...টাকা ঠিক উঠে যাবে, দেখো..."। আর, বলার সময় গলাটা কেঁপে গেছিল বড্ড... মুখে মাস্ক...কাঁপা গলা...ছেলে দুটি শুনতে পেল কিনা কে জানে...কিন্তু সেই সন্ধ্যে থেকেই প্রানপনে চাইছি - পাঁচটি হাজার টাকা উদ্বৃত্ত হোক ওদের...পৌঁছে যাক সেই নাম না জানা, আর হয়ত আশা করে থাকা ঢাকী দাদা দের বাড়ি... আহা, কত খুশি হবেন উনি...ভাববেন, মা, স্বয়ং মা ই পাঠালেন ওঁর জন্য... মনটা ভরে গেল আজ, আবার। মা আসছেন, সবাইকে ভরিয়ে দিতে। মা আসছেন, সত্যিকারের কিছু 'মানুষের' কাছে। "আনন্দধারা বহিছে ভুবনে..."
Parent