কিছু মনের সত্যি কথা - অধ্যায় ৯৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-30209-post-3391348.html#pid3391348

🕰️ Posted on June 13, 2021 by ✍️ ddey333 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 536 words / 2 min read

Parent
আলোময় দেখতে দেখতে সাত সাতটা দিন কেটে গেল রিনির। এতবার স্যানিটাইজ করা আর বাকি সব কিছু মেনে চলা সত্ত্বেও যখন জ্বর এলো, মাথা ব্যথা, গা হাত পায়ে ব্যথা আর একটা বিরক্তিকর শুকনো কাশি নিয়ে, বড্ড অবাক হয়েছিল ও। প্রথম প্রথম তো ভেবেছিল এমনি ঠান্ডা লেগেছে বোধহয়। কিন্তু তারপর হুট করে স্বাদ আর গন্ধও চলে গেল! ঘরমোছার ফিনাইল থেকে গেলবছর সখ করে কেনা শ্যানেলের পারফিউম পর্যন্ত, গন্ধ যখন আর নাকে লাগে না...তখন বুঝতে পারল 'তিনি এসেছেন'! তা, এমনি কোনো অসুবিধা হয়নি ওর। ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলে ওষুধ শুরু করে দিয়েছিল। এমনিতেও একাই থাকে ও, তাই আইসোলেশানের প্রশ্ন ও নেই! আর সময় তো প্রায় কেটেই গেল! একটা সপ্তাহ কেটে গেছে, আরেকটা সপ্তাহ কাটলেই... সুস্থ হয়ে যাবে... বিছানায় শুয়ে শুয়ে এতাল বেতাল ভাবছিল রিনি। এই রোগটা বড্ড দুর্বল করে দিয়েছে ওর মতো ছটফটে মেয়েকেও! নইলে আগে তো সারা সপ্তাহ হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও রবিবার গুলোতে বেরিয়ে পড়ত এদিক সেদিক। মন ভাল করার জন্য। আর এই কদিন হল - রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভিড় করেছে শরীরে। মোবাইল ঘাঁটতে ইচ্ছে করে না... জোর করে একটা দুটো ছবি পোস্ট বা কমেন্ট করার পরেই বন্ধ করে দেয়। বইয়ের এক পাতা দুপাতা পড়ার পরেই চোখ বুজে আসে... ভাবতে ভাবতেই চোখ বুজে এসেছিল ওর। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে ঘুমের চটকাটা ভেঙে যায় ওর। এই সময়ে কে রে বাবা! এখন তো খাবার আসার ও সময় নয়। ক্লান্ত শরীরটাকে কোনোমতে টেনে দরজাটার কাছে নিয়ে আসে রিনি। আইহোল দিয়ে দেখে দরজার সামনে কিছু একটা রেখে চলে যাচ্ছেন কেউ একজন। দেখে মনে হলো কুরিয়ার সার্ভিসের মতো কেউ! আসলে ও দরজার বাইরে পোস্টারের মতো টাঙিয়ে দিয়েছে " আমি কোভিড ১৯ পজিটিভ। দয়া করে বাইরে খাবার রেখে যান।" যাতে কোনো সমস্যা না হয়। মাস্কটা পরে নিয়ে দরজাটা খোলে রিনি। একটা ছোট্ট কাডবোর্ডের বাক্স। তুলে নিয়ে ভেতরে আসে ও। আর প্রেরকের নাম দেখে অবাক হয় ও। ওর খুড়তুতো ভাই রুন্টু! কতদিন কথা হয়না রুন্টুর সাথে! সেই জমি বাড়ির ভাগ নিয়ে কাকুদের সাথে ঝামেলার পর থেকেই। সেইসময় ও রুন্টুকে, আর রুন্টু ওকে কিছু অপ্রীতিকর কথা বলে দিয়েছিল...ব্যাস, সেই থেকেই... আজ হঠাৎ রুন্টু কি পাঠাল? স্যানিটাইজার স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করে বাক্সটা খুলল রিনি। দেখে একটা গোলাপী জামা পরা পুতুল! ওর ছোটবেলার পুতুল! আর তার বুকের কাছে একটা কাগজ। চিঠি! "ডিয়ার ছুটকিদি, কাল তোর পোস্ট দেখলাম ফেসবুকে। তুই লিখেছিস স্বাদ গন্ধ ছাড়া পৃথিবীটা যে এত একা লাগে, জানতিস না। দেখে বুকে একটা মোচড় লাগল, জানিস? তুই অসুস্থ, একা। মন খারাপ করছিস নিশ্চয়ই? তাই তো এই গুলো পাঠালাম, তোর ছোটবেলা আর বেড়ে ওঠার সময়টার সঙ্গী। আশা করি এদের পেয়ে তোর আর একা লাগবে না। আর তারপরেও যদি লাগে? এই বোকা ভাইটাকে ফোন করিস। টাটা!" চিঠিটা পড়ে ফিক করে হেসে ফেলে রিনি। তারপর দেখে গোলাপী পুতুলের নিচে ক'টা বই। ঠাকুরমার ঝুলি। আবোল তাবোল। সেরা সন্দেশ। আহা! এখন মোবাইলেই সব বই পাওয়া যায় বটে, কিন্তু পিডিএফ কি পারে এমনভাবে স্মৃতি, সেইসব সোনালী দিনের কথা মনে করাতে? কিন্তু এটা কি! ভুরু কুঁচকে যায় রিনির। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে তোলে সেটিকে। কে সি নাগের অঙ্ক বই! নবম - দশম শ্রেণীর জন্য! সেই বই যা দেখে এই তিরিশ পেরিয়েও ভয় লাগছে রীতিমতো। এমনকি ও তো কখনও কে সি দাসের রসগোল্লা খায়নি, কে সি পালের ছাতা মাথায় দেয় নি এই 'কে সি' নামের ভয়েই! আর পাজি হনুমান রুন্টু কিনা...!! ছুট্টে গিয়ে মোবাইলটা নিয়ে এল রিনি। হতভাগাটার একদিন কি ওর একদিন আজ! মোবাইলে কলার টিউনে গান বাজছে "ফির লে আয়া দিল..." বরফ গলছে... আলো আসছে...ভালো আসছে...
Parent