নাম না জানা এক সম্পর্কের গল্প (দেয়ালের ওপারে) - অধ্যায় ৭

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-51218-post-5049135.html#pid5049135

🕰️ Posted on December 4, 2022 by ✍️ Bangla Golpo (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 1938 words / 9 min read

Parent
 পর্ব-০৭        নদী বেলকনিতে বসে একটা থ্রিলার বই পড়ছিল। এই মুহুর্তে একটা গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টারে আছে সে। ইমন নামে একটা লোক, তার সামনে বসে থাকা সাদা শার্ট পরা লোকটিকে অনুরোধ করছে তাকে যেনো সে এই মুহুর্তে মেরে ফেলে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গত দুইদিন এই লোকটাই তাকে না মারার জন্য কম হলেও কয়েকশো বার অনুরোধ করেছে। তখন লোকটা তাকে বলেছিল, "আপনার ভয় নেই। আমি কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হত্যা করি না। যতক্ষণ না কেউ তাকে হত্যা করার জন্য আমাকে বলবে, ততক্ষণ আমি তার কোনো ক্ষতিই করবো না।"        "প্লিজ, আমাকে মেরে ফেলুন। প্লিজ।" ইমন নামে লোকটা সাদা শার্ট পরা লোকটাকে আবার অনুরোধ করল। সাদা শার্ট পরা লোকটা অনেকক্ষণ কিছু একটা ভেবে টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা সাদা কাগজ এবং একটা কলম বের করে লোকটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, "আমি আপনাকে আগেও বলেছি, আমি আপনাকে হত্যা করবো না যতক্ষণ না আপনি নিজে আপনাকে হত্যা করার জন্য আমাকে অনুরোধ করছেন ততক্ষণ।"        ইমন বলল, "আমাকে কি করতে হবে?"        সাদা শার্ট পরা লোকটা বলল, "এই কাগজে আপনি আপনার নাম এবং ঠিকান লিখে লিখুন, আপনি আত্মহত্যা করতে চান কিন্তু সাহস না থাকার কারণে করতে পারছেন না। তাই আপনি আমাকে অনুমতি দিচ্ছেন যাতে আমি আপনার ইচ্ছে পূরণ করি। এবং আপনার মৃত্যু জন্য কেউ দ্বায়ী নয়।"        ইমন আর কোনো কিছু ভাবতে চায় না। সে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চায়। তাই সে আর কিছু না ভেবে কাগজটা তার কাছে টেনে নিয়ে সাদা শার্ট পড়া লোকটার কথামতো সেখানে লিখল, "আমি ইমন। উত্তরা ১৬/এ নাম্বার বাসায় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে থাকি। আমি সজ্ঞানে আমাকে হত্যা করার অনুমতি দিচ্ছি। আমার মৃত্যু জন্য কেউ দ্বায়ী নয়।"        ইমন লেখাটা শেষ করে কাগজটা তার সামনে বসে থাকা সাদা শার্ট পরা লোকটা দিকে এগিয়ে দিলো। লোকটা কাগজের টুকরোটা নিয়ে ভাজ করে তার পকেটে রাখতে রাখতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। পাঁচ মিনিট পরে সে আবার ঘরে ঢুকল। তার ডান হাতে একটা দঁড়ি, বাম হতে একটা ধারালো কুড়াল। সে এগিয়ে এসে দঁড়িটা দিয়ে ইমনের হাত পা চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাঁধলো। তারপর ধারালো কুড়াল দিয়ে প্রথমে ইমনের ডান হাতের রগটা কেটে দিতেই লাল রক্তে ভেসে যেতে লাগল চেয়ার, টেবিল, ঘরের মেজেতে থাকা সাদা কার্পেট।        লাল রক্ত দেখে সাদা শার্ট পরা লোকটার মুখে বিচ্ছিরি একটা হাসি ফুটে উঠলো। সে পরক্ষণে উন্মাদ হয়ে গেল। কুড়ালে লেগে থাকা লাল রক্তটুকু লোকটা তার জিহবা দিয়ে চেটে রক্তের স্বাদ নিলো। এবং সেই সাথে খিলখিল করে পাগলের মত হাসতে থাকল।        নদী এই পর্যন্ত পড়ে বইটা বন্ধ করল। বইতে দেওয়া বর্ণনা পড়ে তার গাঁয়ের লোম সব দাঁড়িয়ে গেছে। ঠিক সেই সময় সে রাস্তার দিকে তাকাতেই আলিফকে হেঁটে আসতে দেখল। আলিফের পরনে একটা সাদা শার্ট। হাতে একটা ব্যাগ। আলিফ গেটের কাছে আসতেই চতুর্থ তালার বেলকনি থেকে নদী স্পর্শ দেখতে পেলো আলিফের সাদা শার্টে রক্ত লেগে আছে। এই দৃশ্যটা দেখতেই বইতে বর্ণনা করা সাদা শার্ট পরা সিরিয়াল কিলারের কাল্পনিক মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। আলিফ!        তাৎক্ষণিক নদীর মনে হলো আলিফই বইয়ের সেই সিরিয়াল কিলার। সে মাত্রই একটা লোককে নির্মম ভাবে হত্যা করে এসেছে। পরক্ষণেই সে নিজেকে বোকা ভেবে আনমনে হেসে দিলো। সে কি সব ভাবছে। এই সব উদ্ভব সিরিয়াল কিলার সম্পর্কিত বই পড়ে দিনদিন সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। এবং আজকাল সে সবাইকে সিরিয়াল কিলার ভাবতে শুরু করেছে। সে বেলকনি থেকে উঠে রুমে চলে গেলো। তারপর বইটা টেবিলে রেখে দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু তার মাথা থেকে সাদা শার্ট পড়া সেই লোকটা গেলো না। সেই সাথে আলিফকে ওমন করে দেখার দৃশ্যটাও গেলো না।        বিকালে নদী আলিফকে মেসেজ দিলো, "ফ্রি আছেন?"        আলিফ মেসেজ পাওয়ার সাথে সাথে রিপ্লাই করল, "হ্যাঁ!"        "আমাকে একটু সময় দিতে পারবেন? এই  ঘন্টাখানেকত মত।"        "হ্যাঁ পারবো। কোনো সমস্যা নেই।"        "জিজ্ঞেস করবেন না, কেনো সময় চাচ্ছি?"        "জিজ্ঞেস করার কি আছে। হয়তো আপনার কোনো একটা কাজে আপনাকে সাহায্য করতে হবে। আপনাকে সাহায্য করতে পারলে বরং আমি খুশিই হবো।"        "আপনি কি করে আমাকে এভাবে বুঝে ফেলেন?"        নদীর এই মেসের উত্তর আলিফ তাৎক্ষণিক দিতে পারলো না। প্রশ্নটা কঠিন না কিন্তু উত্তরটা অতোটা সহজ নয়।        আলিফের রিপ্লাই না পেয়ে নদী আবার মেসেজ দিলো, "কি হলো? প্রশ্নটা কি একটু কঠিন হয়ে গেলো?"        "না, আসলে আমিও ঠিক জানিনা। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় আপনি এখন এটা বলতে চাচ্ছেন কিংবা এটা করতে চাচ্ছেন। বলতে পারেন অনুমান করে বলি এবং সেটা প্রায়ই আপনার ক্ষেত্রে সঠিক হয়ে যায়।"        "বাহ! আপনার সিক্স সেন-তো অনেক ভালো।"        "কখন সময় দিতে হবে। মানে কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?"        "আমি বিশ মিনিটের মধ্যে নিচে নামছি। আমি আসুন। দেখা হলে বলব।"        "আচ্ছা, আমি রেডি হয়ে এখনই নামছি।" মেসেজটা সেন্ড করে আলিফ কিছুক্ষণ বসে রইল। নদীর শেষ মেসেজটা সে আবার পড়ল, "দেখা হলে বলব।" সে জানে নদীর সাথে দেখা হলে তার সাথে মেসেজেই কথা বলতে হবে। এই কথাটা ভাবতেই সামান্য একটু মনটা খারাপ হলো কিন্তু সে সেই সব চিন্তা বাদ দিয়ে দ্রুত রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।        নদী এবং আলিফ রিকসায় বসে আছে। তাদের গন্তব্য বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স। কাল নদীর মায়ের জন্মদিন। সে চাচ্ছে তার মায়ের জন্মদিনে তাকে একটা মোবাইল ফোন উপহার দিতে। সেজন্য দীর্ঘ দিন ধরে সে টাকা জমিয়েছে। নদী ঘরে বসে আউটসোর্সিং করে নিজের খরচ নিজেই চালায়৷ নিজের খরচের থেকে প্রতি মাসে সে কিছু টাকা জমিয়ে রাখতো তার মাকে একটা মোবাইল উপহার দিবে বলে। রিকসায় উঠেই আলিফের সাথে নদী এই কথাগুলো ছাড়াও তার অনেক কিছু আজ সে শেয়ার করেছে। আলিফের প্রতি নদীর বিশ্বাসটা দিনদিন বাড়ছে। নদী ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কেনো এই মানুষটাকে এতোটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সে।        শহরের জ্যামে তারা রিকসায় বসে আছে। দশ মিনিটের মত রিকসা এক বিন্দুও সামনে এগোইনি। নদী কিংবা আলিফের আজকে এই জ্যামের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তারা দুইজনেই চাচ্ছে আরো কিছুটা সময় তারা এভাবেই জ্যামের কারণে রিকসায় বন্দী হয়ে থাকুক।        "আপনি কখনো কাউকে হত্যা করার কথা ভেবেছেন?" নদীর এই মেসেজটা পড়ে আলিফ মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নদীর দিকে তাকাতেই তাদের চোখাচোখি হলো। সে নদীর চোখ দেখেই বুঝলো, নদী কৌতুহলী এবং সে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছে।        "হ্যাঁ অনেকবার ইচ্ছে করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো কাউকে হত্যা করতে পারিনি, তবে ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে। এখন পর্যন্ত আমার অতো সাহস হয়ে ওঠেনি।" আলিফ মেসেজটা সেন্ড করলো কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছে না হঠাৎ নদী তাকে এই রকম একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার কারণ কি। সে আবার নদীর দিকে তাকালো। নদী তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো। সে কেনো এই কাজটা করলো সে নিজেই বুঝতে পারলো না।        "ভবিষ্যতে কাউকে হত্যা করার ইচ্ছে আছে আপনার?"        নদীর এরকম অদ্ভুত প্রশ্নে আলিফ কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ল। সে তো কথাটা মজা করে বলেছে মাত্র। কিন্তু নদী কি সেটা সিরিয়াস ভাবে নিলো? তাছাড়া কি এমন হয়েছে যে কারণে আজ নদী তাকে এরকম প্রশ্ন করছে।        "কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?"        "এখনো জানিনা। কিন্তু ভবিষ্যতে কাউকে হত্যা করবো না এটার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। মানুষ কোনো কিছুর নিশ্চয়তা দিতে পারে না। এমনও হতে পারে যে আপনাকে দিয়েই আমার খুনের হাতেখড়ি হলো।"        আলিফ মজা করে মেসেজটা দিয়ে নদীর দিকে তাকালো তার মুখের অভিব্যক্তি দেখার জন্য। কিন্তু সে চরম আশ্চর্য হলো। নদীর মুখ মলিন হয়ে আছে। চোখ দু'টো ভীতু। সে বুঝে উঠতে পারছে না কি এমন হয়েছে। সে আবার মেসেজ দিলো, "আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? আপনি কি সত্যিই ভেবে বসেছেন আপনাকে আমি মেরে ফেলবো? আমি শুধু মাত্র মজা করে মেসেজটা দিয়েছি। ভয় পাচ্ছেন নাকি আমাকে?"        সামান্য কিছুটা সময় লাগল নদীর ঠিক হতে। সে বলল, "আপনাকে কেনো ভয় পাবো? হয়েছে কি জানেন...!" দুপুরের সেই ঘটনার কথা খুলে বলল নদী।        নদীর মেসেজ পড়ে আলিফ হাসি থামাতে পারছে না। সে হেসেই যাচ্ছে। নদীর রাগ হচ্ছে আলিফ তাকে নিয়ে এভাবে হাসছে বলে। সে বলল, "আপনি এভাবে হাসছেন কেনো? আসলে, আপনাকে ওভাবে দেখে আর তার আগ মুহুর্তে বইতে ওভাবে খুনির বর্ণনা পড়ে এক মুহুর্তে জন্য মনে হয়েছিল আপনি বইয়ের সেই সিরিয়াল কিলার।"        "আমি সিরিয়াল কিলার!" আলিফ হাসছে। নদী মন খারাপ করে অন্য দিকে ঘুরে তাকালো। নদী মন খারাপ করেছে দেখে সে মেসেজ দিলো, "আচ্ছা, সরি। আর হাসবো না। কিন্তু আমি সিরিয়াল কিলার আপনি এটা কি করে ভাবলেন? আমার মত একটা ভীতু কি-না সিরিয়াল কিলার হবে!"        "আচ্ছ, বললাম তো ভুল হয়েছে। কিন্তু আপনার শার্টে রক্ত লেগে ছিল কেনো?"        "আমি ক্লাস করে সবেমাত্র বের হয়েছি। সেই সময় মা আমাকে ফোন করে বলে বাসায় আত্মীয় এসেছে। ফেরার পথে আমি যেনো অবশ্যই বাজার থেকে মাংশ কিনে আনি। আমি মাংশ কিনতে গেলাম, কসাই মাংশ কাটছে। আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি। মোটামুটি ভীড়। হঠাৎ এক লোক এসে আমার শরীরে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। তারপর আর কি, তার হাতে পলিথিন ব্যাগ ছিল। ব্যাগটা এসে আমার জামার উপরে পড়তেই সাদা জামাটা লাল রক্তে রক্তাক্ত হয়ে গেলো।" মেসেজটা পাঠিয়ে সে আরেকটা মেসেজ লিখল, "ওটা মানুষের রক্ত ছিলো না। আপনি যেরকমটা ভেবেছেন।"        তারা বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স পৌঁছে গেছে। শো-রুম ঘুরে ঘুরে নদীর সাথে আলিফ নানা ফোন দেখছিল। একটা শো-রুমে গিয়ে সেখানে ফাহিমকে দেখে আলিফ খানিকটা অবাক হলো। ফাহিম এখানে? সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। গত পাঁচ দিন ফাহিমের খোঁজে রুদ্রের সাথে সে কয়েকবার তার মেসে গিয়েছে। ফাহিম সেখানে ছিলো না। তার ফোন বন্ধ। কোনো ভাবেই যার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না সে কি-না এখন তার চোখে সামনে।        ফাহিমের সামনে গিয়ে আলিফ বলল, "ফাহিম, তুই এখানে?"        আলিফকে এতোটা হকচকিয়ে যেতে দেখে ফাহিমও খানিকটা অবাক হলো। সে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। সে বলল, "হ্যাঁ, কেনো? এখানে আসা কি বারণ?"        "আরে ধুর আমি কি সেটা বলছি? আসলে এই কয়দিন তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমরা সবাই হয়রান। কোথাও তোর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। তারপর তোর ফোন বন্ধ। তাই এই মুহুর্তে তোকে এখানে দেখে খানিকটা অবাক হয়েছি। সেকারণেই জিজ্ঞেস করলাম।"        ফাহিম কিছুটা সময় নিয়ে আলিফকে সব কথা খুলে বলল, কেনো তাকে কেউ খুঁজে পাচ্ছিল না।         আলিফ সবটা শুনে বলল, "তুই এখনো কিছু শুনিস নি?"        "আমি কি শুনবো?" ফাহিম এবার খানিকটা বিস্ময় প্রকাশ করল।        "ইরিনার ব্যাপারে!"        "ইরিনা ব্যাপারে! কি হয়েছে ইরিনার।"        ইরিনার কথা শুনে ফাহিম বুঝে উঠতে পারছে আসলে কি হয়েছে। তার চোখে মুখে জিজ্ঞাস্য ভাব ফুটে উঠেছে।        "ইরিনা এক্সিডেন্ট করেছে। ও এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। সেই কারণেই তো তোকে খবরটা দেওয়ার জন্য তোর এতো খোঁজাখুজি। এছাড়া ইরিনা তোকে বারবার কল দিয়ে পাচ্ছিল না। তাই ও খুব ভয় পেয়ে গেছিল, তোর আবার কিছু হলো কি-না। তোর সাথে বারবার দেখা করার কথা বলছিল। তাই রুদ্র, সাত্যকি, আমিসহ তোদের ক্লাসের কয়েকজন এই কয়দিন তোকে নানা জায়গায় খোঁজার চেষ্টা করেছি।"        "কি বলিস? কীভাবে কি হয়েছে?" ফাহিমের মুখের অভিব্যক্তি এক মুহুর্তে পরিবর্তন হয়ে গেলো। চোখদুটো হঠাৎ কেমন গভীর হয়ে উঠল। সেখানে ঢেউ শুরু হয়েছে। ফাহিম নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল।        আলিফ বলল, "চিন্তা করিস না অতো গুরুতর না।" ফাহিমকে আশ্বস্ত করল আলিফ।        "কিন্তু, কীভাবে কি হয়েছে? গুরুতর না হলে ও হাসপাতালে ভর্তি কেনো?" ফাহিম সবটা শোনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল।        "আমি যতটুকু জানি সেটা হলো, ক্যাম্পাসের ভেতরকার একটা রাস্তার পাশ দিয়ে ইরিনা একা-একা হাঁটছিল। হঠাৎ ও রাস্তা পার হতে গেলে পিছন থেকে একটা বাইক চলে আসে। অবশ্য এখানে ইরিনারও ভুল ছিল। কারণ ও নিজে বলেছে, ও কিছুটা অন্যমনস্ক ছিল। খেয়াল করেনি। আশেপাশে না দেখে হঠাৎ রাস্তা পার হতে গিয়ে ভুলটা হয়েছে।"        "ইরিনার কি অবস্থা এখন?" ফাহিমের কন্ঠটা ক্রমশ ভাড়ি হয়ে উঠছে।        "ইরিনা এখন মোটামুটি সুস্থ। কিন্তু ওর পা মচকে গেছে, সে কারণে ডাক্তার সপ্তাহ খানেক হাসপাতালে থাকতে বলেছে। যদি পায়ের অবস্থার উন্নতি হয় তাহলে পরের শনিবারে ডিসচার্জ করে দিবে।"        "এছাড়া অন্য কোনো সমস্যা হয়নি?"        "কিছু জায়গায় আঘাত পেয়েছে। চামড়া ছিলে গেছে। এছাড়া ডান হাতের কবজিতে কিছুটা আঘাত পেয়েছে। তবে সেটা তেমন গুরুতর না।" "গুরুতর না, গুরুতর না বলছিস কেনো বারবার। ঠিক কি হয়েছে আমাকে বল? আর বাইকে যে ছিল, তার অবস্থা কি?"        "দুইজনই কম বেশি আঘাত পেয়েছে। ইরিনা হঠাৎ রাস্তায় চলে আসাতে বাইক চালক ইরিনাকে দেখে তাৎক্ষণিক ব্রেক করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সে বাইক নিয়ে পড়ে যায়। পিচের রাস্তা, সেই কারণে তার কনুই, হাঁটুসহ নানা জায়গার মাংশ উঠে গেছে। এছাড়া তার কি হয়েছে আমি ঠিক জানিনা।"        আলিফের কাছ থেকে হাসপাতালে ঠিকানা নিয়ে ফাহিম সেই মুহুর্তেই হাসপাতালে দিকে যাত্রা শুরু করল। সে যে এখানে একটা ফোন কিনতে এসেছিল সে তা ভুলেই গেলো আলিফের কাছ থেকে ইরিনার খবর শুনে। যে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছাতে চাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব।        "কে ছিল?" ফাহিমের চলে যাওয়া দিকে আলিফ তাকিয়ে ছিল। সে নানা কথা ভাবছিল। সেই মুহুর্তে নদীর স্পর্শ পেয়ে সে ঘুরে তাকাতেই দেখল, নদী তার ফোনটা তার দিকে ধরে রেখেছে। ফোনের নোট প্যাডে একটা প্রশ্ন।        আলিফ পকেট থেকে ফোন বের করে তার নিজের ফোনে নোট প্যাডে লিখল, "ইউনিভার্সিটির একটা ফ্রেন্ড।" তারপর ফোনটা নদীর দিকে বাড়িয়ে দিতেই নদী লেখাটা পড়ল।        নদী আবার নিজের ফোনে টাইপ করল, "কোনো সমস্যা?" নদীকে এবার ফোনটা আলিফের দিকে ধরতে হলো না। সে ইতোমধ্যে পড়ে নিয়েছে।        সে লিখল, "না কোনো সমস্যা নেই।" চলবে.....!
Parent