নতুন জীবন - Written By sagnik - অধ্যায় ১

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-29594-post-2283847.html#pid2283847

🕰️ Posted on August 9, 2020 by ✍️ ChodonBuZ MoniruL (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 586 words / 3 min read

Parent
নতুন জীবন – ০১ লোকজনের হইহট্টগোল আর হকারদের চিৎকারে ঘুম ভাঙলো সাগ্নিকের। চোখ কচলে তাকালো। নিউ জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন। ঘড়িতে সময় দেখলো ৭ টা বাজে। কামরূপ এক্সপ্রেস। ট্রেন লেট চলছে। এখানে দাঁড়াবে কিছুক্ষণ। আশেপাশের প্যাসেঞ্জার বদল হয়েছে কিছু। কিছু একই আছে। গতকাল একটা বাচ্চা মেয়ে উঠেছিল। এখন নেই। হয়তো মাঝরাতে কোথাও নেমে গিয়েছে। বাচ্চা বলতে একদম বাচ্চা নয়। ওই ১৫-১৬ হবে। মুখের গড়ন সুন্দর। চেহারাও ভালো ছিলো। কিন্তু সাগ্নিকের মুড ছিলো না দেখার। রাতে ঘুমিয়ে একটু ফ্রেশ লাগছে। টিকিট আছে গৌহাটির। আসলে যাবার কোথাও নেই সাগ্নিকের। বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে। বাবা-মা ত্যাজ্যপুত্র করেছেন। তাই ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়েছে নিরুদ্দেশের দেশে। মোবাইল রিসেট করে নিয়েছে। ফোন নম্বর পাল্টে ফেলেছে। ই-মেইল আইডি বন্ধ করেছে। সমস্ত সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট থেকে সরিয়ে নিজেকে গতকাল সারাদিনে। কোলকাতার ছেলে সে। বাঁগুইহাটি। অপরাধ কি? কিছুই না। আবার অনেক। কাকাতো বোনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক। ঘরের মেয়েকে আর কে কোথায় পাঠাবে? অগত্যা সাগ্নিকের উপর সব দোষ চাপলো। আর যেহেতু মিলি ছোটো। তাই সব দোষ সাগ্নিকের। ওতটাও ছোটো নয়। মিলির ২৩ বছরের ভরা যৌবন। আর সাগ্নিকের বয়স ৩০ ছুয়েছে। বাড়ি থেকে বের করে দেবার পর দুদিন কোলকাতাতেই পড়ে ছিলো। কিন্তু সবার পরিবার আছে। কেউ আর তাকে বিশ্বাস করছে না। বন্ধু বান্ধবরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অগত্যা কোলকাতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় সাগ্নিক। প্রথমে ভেবেছিলো দিল্লী-মুম্বাই চলে যাবে। কিন্তু ওখানে সবাই যায় কাজ করতে। অনেক ভেবেচিন্তে নর্থ-ইস্ট সিলেক্ট করেছে। সাগ্নিক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছেলে। পড়াশুনায় ভালোই। কিন্তু আজকাল চাকরির যা বাজার। কপালে যা আছে। তাই হবে ভেবে বেরিয়েছে। তবু ওই নেগলিজেন্সির জীবন থেকে বেরোতে চাইছিলো সে। দু’দিনের মধ্যে সবার পর হয়ে গেলো সে। হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙলো সে। হকারকে ডেকে একটা চা নিলো। সাগ্নিক- কতক্ষণ দাঁড়াবে দাদা? হকার- টাইম তো ১৫ মিনিট, কিন্তু ইঞ্জিনে সমস্যা আছে। তাই দাঁড়াবে কিছুক্ষণ। ভালোই। ৩০ মিনিট হতে পারে বা এক ঘন্টা! সাগ্নিক- যাহ শালা। ক্ষিদে পেয়েছে। হকার- প্ল্যাটফর্মে খাবার পাবেন। বাইরেও হোটেল আছে অনেক। সাগ্নিক- বেশ। সাগ্নিক চা পান করতে লাগলো। হাজার দশেক টাকা নিয়ে বেরিয়েছে। কি ভেবে উঠে পড়লো। নামলো ব্যাগ নিয়ে। নাহ গৌহাটি যাবে না। এখানেই নামবে। এটা শিলিগুড়ি শহর। বেশ বড়। অনিশ্চয়তার জীবন যখন। অনিশ্চয়তা দিয়েই শুরু হোক। সাগ্নিক বাইরে এলো। অটোওয়ালা, রিক্সাওয়ালারা ছেঁকে ধরলো। সবাইকে পাশ কাটিয়ে এগোলো। সামনে হোটেলের লাইন। হাঁটতে লাগলো। তারপর একটা বড়সড় হোটেল দেখে ঢুকলো। সাগ্নিক- দাদা, কি হবে? হোটেলের লোক- যা খাবেন। পুরী হবে, রুটি হবে, চাউমিন, মোমো, ভাত-ডাল মাছ ভাজা হবে। সাগ্নিক রুটি অর্ডার করে বসলো। রুটি এলো। খেলো। খেয়ে কিছুক্ষণ বসলো। তারপর চারদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলো। দুপুরে আবার ওই একই হোটেলে খেতে এলো। খেয়ে কিছুক্ষণ বসে আবার এদিক সেদিক ঘুরে রাত ৮ টা নাগাদ একই হোটেলে খেতে গেলো। এবার গল্পটা পাড়লো হোটেল মালিকের সামনে। খাওয়া-দাওয়ার পর- সাগ্নিক- দাদা, কিছু মনে করবেন না। একটা কথা বলবো। মালিক- বলুন না। সাগ্নিক- রাতে থাকার জায়গা দিতে পারবেন একটু? মালিক- কি ব্যাপার বলুন তো? আপনি সারাদিন ধরে এখানে খেলেন। মনে হচ্ছে সাউথের লোক। আবার যাচ্ছেনও না। সাগ্নিক- আমার নাম সাগ্নিক সাহা। আমি বড্ড আতান্তরে পড়েছি। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাবা-মা এর সাথে ঝামেলা। রাগের চোটে বেড়িয়ে এসেছি। সারাদিন আশপাশ ঘুরে দেখলাম। দু-এক জায়গায় কাজের জন্যও গেলাম। কিন্তু অচেনা মানুষকে কেউ কাজ দিচ্ছে না। আমি কোলকাতার ছেলে। এই আমার ডকুমেন্টস। এই আমার আইডি কার্ড। দেখুন। তাই বলছিলাম রাতে একটু থাকার ব্যবস্থা করে দিলে সুবিধা হয়। কাল আবার কাজ খুঁজতে বেরোবো। মালিক- কি কাজ করবেন। রেজাল্ট তো ভালোই দেখা যাচ্ছে। তাই হোটেলে কাজ করার অভিজ্ঞতা তো নেই মনে হচ্ছে। আর আপনাকে দেখে ভদ্র ঘরের ছেলেই মনে হচ্ছে। সাগ্নিক- আমি কেমন সেটা মিশে দেখতে পারেন। মালিক- দেখুন এটা স্টেশন চত্ত্বর। এখানে আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করি না। আমি যেমন আপনাকে বিশ্বাস করছি না। আপনারও আমার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত নয়। সাগ্নিক- জানি দাদা। এখনকার দিনে কে কাকে বিশ্বাস করে।
Parent