স্বর্গের নীচে সুখ by nirjonsakhor - অধ্যায় ৪
সিগারেট ধরিয়ে রঞ্জন বলল এ পাহাড়ে কোন বন্যপ্রাণী মেলে না?
----গেলাস থেকে মুখ সরিয়ে লোকটি বলল খরগোশ আছে।কদাচিৎ দু-একটা মেলে।বনমোরগও আছে।তবে হিংস্র জন্তুটন্তু আর নেই।হাতির পাল আর এদিকে আসে না।শেষবার নদীর ওপারে বছর দুই আগে দেখা গেছিল।
----আপনার কাছে রাইফেল আছে দেখলাম?
----ওটা রেখেছি লোকজনদের ভয় দেখাবার জন্য।
----সে রকম কোনো ঘটনা ঘটেছে?
----না।স্থানীয়দের ধারণা আমি মন্ত্র পড়ে সাপেদের বশ করি।তাই তারা অতিরিক্ত শ্রদ্ধা করে।চোরটোর আসে না,কারণ তারা আমার কাছে কিছু পাবে না জানে।
ভাস্বতী বলল জায়গাটা ভীষন নির্জন।ওখানেতো রাস্তা রয়েছে তবুও লোকজন আসে না?
----স্থানীয় লোকজন এ পাহাড়টাতে আসতে চায় না পারতপক্ষে।
----কেন আসতে চায়না?
----তার প্রধান কারন সাপের ভয়।মন্দিরটা যখন প্রথম হয়েছিল তখন পরপর দুজন পুরুত সাপের কামড়ে মারা যায়।সেই থেকে আর কোনো পুরুত থাকে না।তাছাড়া আর একটা সুসংস্কার রয়েছে।লোকের ধারণা এই পাহাড়টার ওপরে গেলে কেউ আর ফিরে আসতে পারবে না।কারন ওই মন্দিরটার কাছেই স্বর্গ।
----স্বর্গ?
----কেন আপনারা শোনেননি এ কথা?
----না তো।
----শুনেছেন ঠিকই,বুঝতে পারেননি।লোকে বলেছে ওই পাহাড়টার ওপরেই হারাবুরু।বলে নি?
----হ্যাঁ,ঐরকম কথা শুনেছি।
----হারাবুরু মানেই স্বর্গ।এবং এটা খুবই নতুন কথা নয়।* দের যেমন হিমালয়ের উপরে উঠলে স্বর্গ,কেউ বলে কৈলাশ পাহাড়,কেউ বলে মহেন্দ্র,তেমন যারা হিমালয় চোখে দ্যাখেনি,দূরত্ব কখনো কল্পনা করতে পারে না তারা কাছাকাছি কোনো পাহাড় দেখলেই স্বর্গ কল্পনা করে।
এই পাহাড়টা আদিবাসীদের নিজস্ব স্বর্গ।একবার স্বর্গে গেলে যেমন কেউ ফিরে আসতে পারে না।তেমন তাদেরও বিশ্বাস এখান থেকে কেউ ফিরতে পারবে না।
----আপনি এর উপরে যাননি?
----অন্তত দশ-বারো বার গেছি।তাই সেই হিসেবে দশ-বারো বার স্বর্গফেরত বলতে পারেন।ওখান থেকেই একটা পাইথন ধরেছি।
রঞ্জন চকিতে পেছন ফিরে তাকালো।হঠাৎ মনে হল চতুর্থ পাইথনটা কাছাকাছি কোথাও আছে।থাকা অসম্ভব তো নয়।গা শিরশির করে ওঠে।
এখন আর পোশাকের অস্বস্তি নেই ভাস্বতীর।নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে একে অপরের মুখ দেখা যায়না।শুধু সিগারেটের আগুন।একবার সে তোয়ালেটা সরিয়ে ফেলেছিল বুক থেকে।আবার অভ্যেসবশত আঁচলের মত জড়িয়ে নেয়।
লোকটি আবার বলতে শুরু করলো শীতকালে কিছু তীর্থযাত্রী আসে।
----শুধু শীতকালে আসে কেন?
----কুসংস্কারের সাথে বাস্তবজ্ঞান মেশানো।শীতকালে নদীটা শুকিয়ে যায়।সাপেরা গর্তে ঢুকে যায়।ওদের শাস্ত্রমতে ওটাই ওদের তীর্থের সময়।
----তখন মন্দিরে ওঠে।
----না।সে সাহস কে দেখাবে? স্বর্গে যেতে কে বা চায়।তাহলে যে আর ফিরবে না।মন্দিরের অনেক নীচ থেকে পুজো দেয়।মুরগীর গলা কেটে ছুঁড়ে দেয়।বিশেষ করে বাঁজা মেয়েরা বেশি আসে।এখানে পুজো দিলে নাকি ওদের সন্তান হয়,--এই ওদের বিশ্বাস।
একটুক্ষণ চুপ থেকে লোকটি ভাস্বতীকে জিজ্ঞেস করলো আপনিও তো সেইজন্যই এসেছেন?আসেন নি?আপনারও নিশ্চই সন্তান হয়নি?
লোকটির কণ্ঠস্বর একটু রুক্ষ মনে হল।পুরুষমানুষের এরকম কণ্ঠস্বর শোনার অভ্যেস নেই ভাস্বতীর।সে কড়ে আঙুলের নখের ডগা ঠেকিয়ে এরকম পুরুষকে অবহেলা করতে পারে।
শান্ত গাম্ভীর্যের সঙ্গে ভাস্বতী বলল আমি সেরকম কোনো বিশ্বাস নিয়ে আসিনি।এমনি কৌতূহলে এসেছি।
----সন্তান না হলে অনেক মেয়েরই মাথা খারাপ হয়ে যায়।আমি জানি।
----আপনি ভুল জানেন।
সঙ্গে সঙ্গে লোকটি গলা নরম করে বলল আপনাকে আর একটু ব্র্যান্ডি দেব?
ভাস্বতী স্বামীর অনুমতি না নিয়েই বলল দিন।
অন্ধকারে গেলাসে ঠোকাঠুকি হল।ভাস্বতী দেখলো তখন তার গেলাস ধরে আছে লোকটির আঙ্গুল।ছোঁয়া লাগলেও লোকটি হাত সরিয়ে নিল না।
ভাস্বতী সামান্য হেসে গেলাসটা তুলে নিল।বড় চুমুক দিল একটা।গলায় অপ্রিয় তরল আগুনের স্বাদ।
তোয়ালেটা বুক থেকে খুলে সে পাশে রেখে দিল এবার।যার ঠান্ডা লেগেছে সে কেন অন্ধকারে আব্রু রক্ষার হাস্যকর চেষ্টায় বুকে ভিজে তোয়ালে জড়িয়ে আছে এতক্ষন?নিছক সমতল জীবনের অভ্যেস।
----রঞ্জন বলল তাহলে বোঝা যাচ্ছে আদিবাসীদের কাছে এটা পবিত্র জায়গা।আপনি যে এখানে থাকেন কেউ আপত্তি করে না?
----আমার ওড়িশা সরকারের লাইসেন্স আছে।ওড়িয়াদের মত ওড়িয়া ট্রাইবরাও ধর্মভীরু।এ পাহাড়ে একা একা থাকায় ও সাপ ধরে ওদের উপকার করায় ওদের কাছে সমীহ আদায় করে নিয়েছি।এই বনাঞ্চলের এদিকটায় কাঠ কাটতেও তেমন ওরা আসে না।
----কিন্তু এ কাজে আপনার জীবনের আশঙ্কা আছে।
----কোথায় নেই?জীবন দেওয়া-নেওয়া বন্যপ্রাণীদের নিজস্ব ব্যাপার।এ জঙ্গলে এক সময় বাঘ থাকত---এসব স্থানীয়দের কাছে শোনা।এখন আমি একা আছি।স্বর্গের দায়িত্বশীল প্রহরীর মত।
---তিনজনেই হঠাৎ চুপ করে যায়।যেন তিনজনেই উৎকর্ণ হয়ে কোন শব্দ শুনছে।নদীর শব্দ ছাড়া আর কোথাও কিছু শোনবার মত নেই।কথা বলতে বলতে এমন হয় যখন সকলে একসঙ্গে চুপকরে যায়।স্তব্ধতা তখন গর্ভবতী।
একটু পরে ছোট্ট হেসে লোকটি বলল এখন আমাকে একবার ওই নদীর কাছে যেতে হবে।
ভাস্বতী সেই মুহূর্তে তার কোমরের কাছে একটা হাতের স্পর্শ পেল।হাতখানা তার কোমরে উপর স্থির হয়ে রইলো।অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না---কিন্তু পুরুষের স্পর্শ চিনতে দেরি হয়না মেয়েদের।এ স্পর্শ তার স্বামীর নয়।রুক্ষ,শক্ত হাতের স্পর্শ।অথচ এখন শান্ত।
ভাস্বতী সহজে বিচলিত হয় না।যেকোন অবস্থায় তার মনে হয় দেখাই যাক না এরপর কি হয়।তাই সে শরীর কোঁকড়ালো না।
কিন্তু একটু বিচলিত হয়ে সে ভাবলো এই লোকটি কি নিছকই অসভ্য,বদ।না অন্য কিছু।লোকটি নদীতে যাবার নাম করে হঠাৎ তাকে স্পর্শ করলো কেন?
রঞ্জন বলল কেন?
----লোকটি বলল জল আনতে ভুলে গেছি।
----তা বলে এই অন্ধকারে জল আনতে যেতে হবে?
ভাস্বতী কোমরে আগুন্তুকের হাতের উপর নিজের হাতখানি রাখলো।যেন সে অবাধ্য শিশুকে শাস্তি দিচ্ছে।এই ভাবে আঙ্গুল তুলে মুচড়ে দিল।হাতখানা সরে গেল।
লোকটি বলল সারারাত কি তৃষ্ণা নিয়ে থাকা যায়?ব্র্যান্ডি খেয়েছিতো এখন আমার ভীষণ জলতেষ্টা পাবে। আপনাদেরও পাবে নিশ্চই?
ভাস্বতী জিজ্ঞেস করলো আপনি ঐ নদীর জল খান?
----আর কোথায় জল পাবো বলুন?নদীর জলই তো সম্বল।কখনো কখনো বৃষ্টির সময় পাত্র পেতে রাখি।আজ বালতি পাততে ভুলে গেছি।
---তখন আমরা নদীর ধারে গেলাম।
----তখন তো আপনারা চলে যাবেন ঠিক করে ছিলেন।দাঁড়ান দেখে আসি ভাত সেদ্ধ হয়েছে কিনা?
লোকটি হ্যাজাকটা জালালো।হ্যাজাক বললে ভুল হবে হ্যাজাকের মত উজ্জ্বল আলো নয়।বরং মিনমিনে হ্যারিকেন বলা ভালো।
খাঁচার সাপ তিনটেই এখন জেগে আছে।অসহিষ্ণু ভাবে নাড়াচাড়া করছে।মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসছে লকলকে জিভ।সেদিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না রঞ্জন ও ভাস্বতীর,তবু সেদিকেই চোখ চলে যায়।
লোকটি ভ্রূক্ষেপ করে না।ডেকচি নামিয়ে ভাত টিপে দ্যাখে।এখনো সেদ্ধ হয়নি।
----আপনারা দেখুন আমি জল নিয়ে আসছি।
একটা বড় প্লাস্টিকের বালতি তুলে নিয়ে সে বেরিয়ে যাচ্ছিল।রঞ্জন বলল দাঁড়ান।
লোকটি বলল কি হল?
----আমি যাচ্ছি আপনার সঙ্গে।
----তার কোনো দরকার নেই।
ভাস্বতী বলল একটা রাত জল ছাড়া চলবে না?এখন আনতেই হবে?
----তাতে কি হয়েছে মরুভূমিতে তো মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে কাটাতে পারে।
----কিন্তু কাছাকাছি জল আছে জানলে মানুষ জীবন তুচ্ছ করেও আনতে যায়।এ পাহাড় আমার চেনা এলাকা আপনারা বসুন না,আমার বেশিক্ষণ লাগবে না।
রঞ্জন উদ্বেল হয়ে উঠে,তার শোভনতার কারনে একটা কাঁটা ফুটছে।
এই লোকটির কাছে আচমকা আতিথেয়তা স্বীকার করিয়ে খানিকটা জুলুম করে নেওয়া হচ্ছে।তার ওপর আবার এতটা পথ ভেঙে নদীতে রাতে জল আনতে পাঠালে---সে নিজের কাছে ছোট হয়ে যাবে।ভাস্বতীও তার দিকে তাকাবে নিচু চোখে।
সে দৃঢ়ভাবে বলল আপনি একা যাবেন কেন?আমিও যাচ্ছি আপনার সঙ্গে।
----তার দরকার নেই।শুধু শুধু ব্যস্ত হচ্ছেন।
----না তা হয় না।
রঞ্জন টর্চটা নিয়ে লোকটির কাছে গিয়ে বলল চলুন।
লোকটি ভুরু কুঁচকে ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল উনি একা থাকবেন?
রঞ্জন সমানভাবে ভ্রু কুঁচকে বলল তাতে কোনো ভয় আছে?
----এমনিতে কোনো ভয় নেই।আবার জোর করে সেসব বলা যায় না তো।অনেকে বিনা কারনে ভয় পায়।
ভাস্বতী বলল আমি ঠিক থাকতে পারবো।
লোকটি বলল সেটা কিন্তু রিস্ক হয়ে যাবে।যার নির্জন জায়গায় একা থাকার অভ্যেস নেই তার পক্ষে একা থাকা ঠিক নয়।বিশেষত যে জায়গা কুসংস্কার দিয়ে ঘেরা সে জায়গা মেয়েদের পক্ষে বিপজ্জনক।
ভাস্বতী বলল আপনি মেয়েদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন মনে হচ্ছে?
লোকটি লজ্জা পেয়ে বলল না, তা জানি না।আমি মেয়েদের কখনো কাছ থেকে দেখিইনি।আপনি সত্যিই ভয় পাবেন না?
ভাস্বতী লঘুভাবে হেসে বলল এখানে ভূত টূত নেই তো?
----তা কি করে জানবো তবে এখানে কয়েকজন লোক মরেছে।
----ঠিক আছে।কিচ্ছু হবে না।
----তা হয় না।লোকটি নির্দেশ দেওয়ার মত করে রঞ্জনকে বলল আপনি ওর কাছে থাকুন।আমি চট করে জল নিয়ে আসছি।
রঞ্জনের কাছে কথাটা চ্যালেঞ্জের মত মনে হল।দুজন পুরুষের মধ্যে পারঙ্গতার প্রশ্নে এইভাব এসে পড়ে।সে পাহাড় পছন্দ করে না।কিন্তু সে কাপুরুষ নয়।সে গম্ভীর ভাবে বলল আপনি থাকুন এখানে আমি জল নিয়ে আসছি।
----আপনি পারবেন না।
----কেন পারবো না।রাস্তাতো একটাই।পথ হারানোর ভয় নেই।
----ভাস্বতী বলল এখনো একটা পাইথন কিন্তু আছে।
রঞ্জন বলল পাইথন কখনো তেড়ে আসে বলে শুনিনি।দেখা গেলে পাশ কাটিয়ে চলে আসবো।
বালতিটার দিকে হাত বাড়িয়ে সে বলল দিন।
লোকটি রঞ্জনের পৌরুষে আঘাত করতে চায় না।বিনা বাক্যব্যয়ে বালতিটা রঞ্জনের হাতে তুলে দিল।
ভাস্বতী প্রগাঢ় চোখে তাকালো রঞ্জনের দিকে।এক নির্জন পাহাড়ী রাত্রে একজন অজ্ঞাতকুলশীল ব্যক্তির কাছে নিজের স্ত্রী'কে রেখে যাওয়ার মধ্যে একটা মনোবেদনা থাকে।
আবার,স্বার্থপরের মতন সে তার স্ত্রী'কে পাহারা দেবে।তাদের এক উপকারী লোকটি ভৃত্যের মতন খাটবে---এতেও সে ছোট হয়ে যাবে।
আর কোনো কথা না বলে রঞ্জন রাস্তা ধরে নামতে থাকলো।তার সামনে সামনে একটা আলোর বৃত্ত।
লোকটি তাকালো ভাস্বতীর দিকে।তার অবিন্যস্ত চুলগুলো উড়ে পড়ছে কপালে।হ্যাজাকের আলোয় ভাস্বতী যেন শিল্পীর তুলিতে অরণ্যবাসনা।গেঞ্জির আধারে উদ্ধত স্তন উঁচিয়ে আছে।অতিরিক্তমাংসহীন ৩২ বর্ষিয় এই মানবীর শরীরে কোথাও মেদ নেই।
রঞ্জনের আসতে অন্তত দেড় ঘন্টা লাগবে।
লোকটি একদৃষ্টে চেয়ে আছে ভাস্বতীর দিকে।তার শুধু চোখের আরাম নয়।তার দৃষ্টি শুয়ে আছে ভাস্বতীর শরীরে।
ভাস্বতী লোকটির দিকে তর্জনী তুলে রানীর মত অহংকারী গলায় হুকুম করলো আপনি যান ওর সাথে। আমি একা থাকতে পারবো।
লোকটি বলল আমিতো অনেকবার বলেছিলাম।
ভাস্বতী বলল আপনি জেনেশুনে আমার স্বামীকে বিপদের মুখে পাঠাচ্ছেন
লোকটি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল।ভাস্বতী ক্রীতদাসের মুখ্ থেকে কোনো কৈফিয়ত শুনতে চায় না।ফের হুকুম করলো, যান!
দাস বিদ্রোহের নেতার মতন লোকটি উদ্ধত ভাবে হাসলো।
ভাস্বতীর পায়ের পাতা থেকে কপাল পর্যন্ত চোখ বোলালো।হাসলো আপনমনে।তারপরে দ্রুত বেরিয়ে গিয়ে রঞ্জনের হাত থেকে বালতি কেড়ে নিয়ে বলল আপনি আপনার স্ত্রী'র কাছে থাকুন।উনি ভয় পেয়েছেন !
রঞ্জনকে সে কথা বলারও সুযোগ দিল না।তরতরিয়ে নীচে নেমে গেল।টর্চও সে নেয়নি।মিলিয়ে গেল অবিলম্বে অন্ধকারে।
রঞ্জন অপ্রসন্ন মুখে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলো তুমি ভয় পেয়েছ?
কিসে?তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ভাস্বতী বলল ভয় পাইনি তো?এই সাপগুলোর কাছে থাকতে বেশ বিচ্ছিরি লাগছিল।
রঞ্জন দেখলো ভাস্বতীর পীনোন্নত স্তনদ্বয় ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসে উঠছে নামছে।ভাস্বতী উত্তেজিত।
উত্তেজিত তো সে হবেই কোনো নারী যখন কোনো পুরুষকে হুকুম করে তখন সে একটা গভীর ঝুঁকি নেয়।হুকুম মানলে সেই পুরুষ তার অহংকারকে সন্তুষ্ট করে।আর যদি হুকুম অগ্রাহ্য করে,তবে আত্মসম্মানটুকু ধূলিসাৎ হয়ে যায়---তখন সে নারী থাকে না।একটা অসহায় প্রাণী,নিছক শারীরিক শক্তিতে দুর্বল।
লোকটি তার কথায় বাধ্য হয়েছে।এখন ভাস্বতীর করুণার ছিটেফোঁটা সে পেলেও পেতে পারে।
রঞ্জনের কিন্তু ব্যক্তিত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে।সে উদারতা দেখাবার একটুও সুযোগ পায়নি।
সে অপ্ৰসন্ন ভাবটা বজায় রেখে ভাস্বতীকে বলল তুমি পাশের ঘরে শুয়ে থাকলে পারতে।লোকটাকে একা একা পাঠানো ঠিক হল না।
ভাস্বতী অবহেলার সঙ্গে বলল ও নিশ্চই প্রতিদিন যায়।ওর অসুবিধা হবে না।
----তা হোক আমাদের ওকে এত খাটানো উচিত নয়।
----মানুষ মানুষের জন্য এরকম একটু করবেই।এতে নতুন কি?
----আমার অনর্থক কারোর কাছে উপকার নিতে ভালো লাগে না।কারুর কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকা ভালো লাগে না।
এই কথা বলে রঞ্জন অপ্রসন্নতা কাটিয়ে হাসলো।
তারপর বললো অবশ্য মেয়েদের কথা আলাদা।মেয়েরা এমনি এমনিই অনেক কিছু পেতে অভ্যস্ত।সেবার তরফদার ইউ.কে থেকে ফেরার পর তোমার জন্য পারফিউম আনলো।তুমি এমন ভাবে নিলে যেন সেটা তোমার প্রাপ্য ছিল।
----আমি অনেকবার আপত্তি করেছিলাম।
----সেটা এমন ভাবে বলেছিলে বোঝাই যাচ্ছিল তোমার নেবার ইচ্ছে ছিল।ওনার বোনের চেয়ে তোমাকে নিয়ে উনি বেশি আগ্রহী।
----কিন্তু সত্যি সত্যিই আমি নিতে চাইনি।আমি কি নিয়ে কিছু ভুল করেছি বলো?
---রঞ্জন বুঝতে পারছিল ভাস্বতী রঞ্জনের এমন অকারণ রসিকতায় বিরক্ত।হেসে বলল না না,আমি এমনিই মজা করছিলাম।তরফদার আমার বন্ধু।বন্ধুপত্নীর জন্য উপহার দিতেই পারে।
তরফদারদের মত লোকেদের ভাস্বতীর ভালো লাগে না।রঞ্জনের অফিসের পার্টিতে ভাস্বতী বেশ কয়েকবার গেছে রঞ্জনের ইচ্ছায়।অবশ্য রঞ্জন জোরাজুরি করেনি।ভাস্বতীর ভালো লাগেনি রঞ্জনের কলিগদের,তাদের স্ত্রীদের।হয়তো এজন্য অনেকেই ভাবে ভাস্বতী একজন নাকউচু মহিলা।ভাস্বতীর মত বুদ্ধিমতী সুন্দরী নারীকে অহংকারী মানায়---যদিও সে অহংকারী নয়।
রঞ্জন বলল ভাতটা হয়ে গেছে বোধ হয়,নামিয়ে ফেলো।
ভাস্বতীর নিজের সংসার রাঁধুনি ও চাকরের হাতে।কদাচিৎ সে রান্না ঘরে ঢোকে।রান্নার পরীক্ষা নিয়ে সময় কাটাবার বদলে সে রবীন্দ্র সংগীতে মেডেল পায়, আবৃত্তিতেও সে ভালো।আগে ক্লাবে গিয়ে ব্যাটমিন্টনও খেলতো এখন আর হয়না।
তথাপি সে এখন ভাতটা নামিয়ে ফ্যান গেলে এলো।ডেকচি টা কয়েকবার নেড়ে সে ঢাকনাটা খুলে দেখলো ভাত ঝরঝরে হয়েছে।
রঞ্জন বলল লোকটা কতক্ষনে ফিরবে কে জানে?
স্টোভ নিভিয়ে দিয়ে ভাস্বতী উঠে দাঁড়িয়ে বলল লোকটা বোধ হয় পাগল--এই রকম জায়গায় কেউ একা একা থাকে।মনেতো হয় কিছু লেখাপড়া জানে।একটা কোথাও চাকরি পেতে পারতো না? তা না করে এই বিদঘুটে কাজ!
রঞ্জন উদারভাবে বলল আমার অফিসেই একটা চাকরি দেওয়া যায়।ওকে বলে দেখবো একবার।কথাটা বলেই রঞ্জন ভীষন তৃপ্তি পায়।বাধ্য হয়ে যার কাছে আশ্রয় নিয়েছে---যে এখন উপকারীর ভূমিকায়--তাকে অধঃস্তন কর্মচারী করে ফেলতে পারলে ভালো হয়।প্রতিনিয়ত প্রতিদানের কথাটা বোঝানো যায় অদৃশ্য ভাবে।
----না তোমাকে বলতে হবে না।লোককে ডেকে ডেকে চাকরি দিতে হবে না।দেশে কি বেকারের অভাব পড়েছে?