সীমন্তিনী BY SS_SEXY - অধ্যায় ১৩২

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-22390-post-1723007.html#pid1723007

🕰️ Posted on March 15, 2020 by ✍️ riank55 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2498 words / 11 min read

Parent
(Update No. 158) তিনজন মিলে কিছুক্ষণ রতীশ, রচনা, মহিমা, বিমল আগরওয়ালা আর পরিতোষের ব্যাপারে কথা বলার পর সীমন্তিনী নিজের মোবাইল থেকে কিংশুককে ফোন করল। কিংশুকের সাথে কথা বলার পর বিভাদেবীর সাথে কথা বলতে বলতে সীমন্তিনী বলল, “মাসি, অর্চুকে কিন্তু আমি পূজো অব্দি আমার এখানে রাখব। তুমি কিন্তু আপত্তি করবে না একদম”। বিভাদেবী হেসে বললেন, “তোর কথায় আপত্তি কেউ করতে পারে রে মা? আমাদেরকে তো তুই তোর নিজের করেই নিয়েছিস সেই কবে থেকে। কিন্তু নিজের জন্মভিটের, নিজের পরিবারের লোকজনদের সাথে তো তুই দেখা সাক্ষাতই বন্ধ করে দিয়েছিস। কিন্তু তারাও তো তোর কোনও কথার অন্যথা করেন না রে মা। সকলেই তোর কথা মেনে চলেন। তবু কেন যে তুই .......। আচ্ছা থাক সে’সব কথা। তুই তো সেসব শুনতে ভালবাসিস না। তোর যদ্দিন খুশী অর্চুকে তোর কাছে রাখ। আমরা কেউ তাতে আপত্তি করব না। আমি তো শুধু ওকে পেটেই ধরেছি। বাঁচিয়ে তো রাখতে পারিনি। আমার মরে যাওয়া মেয়েটাকে তুইই তো বাঁচিয়েছিস মা। তাই অর্চুর ওপর তোর সব অধিকার আছে। তুই যা চাইবি তাইই হবে”। সীমন্তিনী খুশী হয়ে বলল, “কথাটা মনে রেখ মাসি। অর্চুর ওপর আমার সবরকম অধিকার আছে, এমনই কিন্তু বললে তুমি। পরে যেন আবার অন্য কথা বোল না”। ও’পাশ থেকে বিভাদেবী আবার বললেন, “শুধু মুখের কথা নয় রে মা। আর শুধু রচু বা অর্চুর কথাই নয় আমাদের এ বাড়ির সকলেই, এমন কি রচু আর ছোটজামাইও এ’কথাটা মন থেকে মানে। আর ওই যে বললি, অধিকার। সে অধিকার তো অনেক আগে তুই নিজেই অর্জন করে নিয়েছিস রে মা”। সীমন্তিনী এবার একটু চটুল ভঙ্গীতে বলে উঠল, “আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে। আর বেশী নিন্দেমন্দ কোর না আমার। কিন্তু শোনো মাসি, আমি সত্যি বলছি, অর্চু পূজোর আগ পর্যন্ত এখানেই থাকবে। তবে দুর্গাষষ্ঠীর আগেই ওকে কালচিনি পৌঁছে দেব। কিন্তু মেসো কোথায় গো? এখনও কি দোকানেই আছেন নাকি”? বিভাদেবী জবাব দিলেন, “নারে মা। উনি একটু আগেই দোকান বন্ধ করে বাড়িতে এসেছেন। এই তো আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন তোর সাথে কথা বলবেন বলে। এই নে কথা বল”। বিধুবাবুর সাড়া পেতেই সীমন্তিনী বলল, “মেসো, আমার প্রণাম নিও। তোমার শরীর কেমন আছে বল তো”? বিধুবাবু জবাব দিলেন, “ভালই আছি গো মা। এখন আর আগের মত দৌড়ঝাঁপ করে যজমানদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হচ্ছে না বলে বেশ ভালই আছি”। সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “দোকান কেমন চলছে মেসো”? বিধুবাবু বললেন, “দোকানও বেশ ভালই চলছে। এই তো গত পরশুদিন আলিপুরদুয়ার থেকে এক থোকে বেশ কিছু মাল কিনে এনেছি। পর্তাও বেশ ভাল পড়েছে। ওখানকার মহাজনেরাও বেশ সহযোগিতা করেছেন। কালচিনির মহাজনেরা যে দাম নিত তার চাইতে কম দামে পেয়েছি। এখন আমি কালচিনির বাজার দরেই জিনিস বেচতে পারব। খদ্দেররাও বেশ খুশী। তাই আমদানী আরও বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। আর আরেকটা ভাল খবর আছে। এখন আলিপুরদুয়ার থেকে জিনিস আনতে আমাকে নিজেও সেখানে যেতে হবে না। মহাজনদের ফোনে মালের অর্ডার দিলেই তারা নিজেরাই দু’দিনের মধ্যে সেসব একেবারে আমার দোকানে পৌঁছে দেবে। এতে করে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে সেখানে যেতেও হবে না, আর আমার যাতায়াত খরচাও বেঁচে যাবে”। সীমন্তিনী শুনে বেশ খুশী হয়ে বলল, “এ তো খুব ভাল খবর মেসো। তোমার শারীরিক কষ্ট এতে আরও কম হবে। তবে, সব কিছু বুঝে শুনে ভালমন্দ বিচার করে কাজ কোর। কোন ব্যাপারে আটকে গেলে বা কিছু বুঝতে না পারলে আমাকে জানিও। আচ্ছা মেসো, তোমাকে যে আরেকটা কথা বলে এসেছিলুম, সে ব্যাপারে খোঁজ খবর করেছিলে কিছু”?  বিধুবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “ওই রান্নাঘরটা নতুন করে বানাবার ব্যাপারে বলছ মা”? সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ মেসো, সে’কথাই বলছি। কোন মিস্ত্রীর সাথে আলাপ করেছিলে”? বিধুবাবু একটু আমতা আমতা করে জবাব দিলেন, “হ্যাঁ মন্তিমা। এক রাজমিস্ত্রীর সাথে সেদিন এ ব্যাপারে কথা বললুম। সে বাড়ি এসে আমাদের রান্না ঘরটা দেখে পাকা পোক্ত করে বানাতে কত খরচ পড়তে পারে তার একটা আনুমানিক হিসেব দিয়ে গেছে। কিন্তু তার হিসেব দেখে তো আমার মাথা ঘুরে গেছে মা। ভিটে পাকা করে, হাফ ওয়াল দিয়ে, ওপরে সিলিং আর টিনের চাল দিয়ে বানাতে গেলেও প্রায় সাড়ে তিন লাখের মত খরচ পড়ে যাবে বলছে। আর কাজ শুরু করলে প্রায়শই আনুমানিক হিসাবের চেয়ে অনেক বেশী টাকা খরচ হয়ে যায়। সবে দোকানটা চালু করলুম। এখনই রান্নাঘরের পেছনে এতগুলো টাকা কি করে আর কোত্থেকে খরচ করব মা বলো? তাই আমি ভাবছি, এবার আর কিছু না করে সামনের বর্ষার আগে মেরামতি করেই না হয় কোনরকমে চালিয়ে নেব। তারপর না হয় সুযোগ সামর্থ্য অনুযায়ী ভেবে দেখা যাবে”। সীমন্তিনী এবার বলল, “মেসো শোনো। টাকার জন্যে তুমি ভেবো না। আর ওই হাফ ওয়াল দিয়ে ওপরে সিলিং আর টিন দেবার কথাও ভেবো না। পুরোপুরি ভাবে আরসিসি ঘর বানাবার চিন্তা করো। আরও ভাল একজন রাজমিস্ত্রির সাথে আলোচনা করো। আর শুধু রান্নাঘরই নয়। তোমাদের থাকবার ঘর গুলোও ভেঙে ফেলে আরসিসি কনস্ট্রাকশন করবার ব্যাপারে ভাবো। আর ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যাপারগুলোও করে ফেলতে হবে। সেভাবেই একটা হিসেব করে দিন পনেরোর মধ্যে আমাকে জানিয়ে দিও। যতই খরচ পড়ুক না কেন, সেসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। তুমি শুধু ঘরগুলো তৈরী করবার সময় নিজে ভালমত দেখা শুনো কোর। বাকি ভাবনা আমাকে ভাবতে দাও। বুঝলে”?  বিধুবাবু সীমন্তিনীর কথা শুনে প্রায় চিৎকার করে উঠে বললেন, “এ কী বলছ মন্তিমা তুমি? থাকবার দুটো ঘর আর রান্নাঘর একসাথে করতে গেলে তো পনেরো কুড়ি লাখের মত খরচা পড়ে যাবে? না না এ তো আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারব না মা”। সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “মেসো, আমার কথাটা তুমি বুঝতে পারছ না নাকি? আমি তোমাকে আগেই তো বললুম, সব ভাবনা চিন্তা আমার। তুমি শুধু দেখে শুনে কাজগুলো করাবে। আর তুমি সেটাই করবে, বুঝেছ? আর শুধু থাকবার দুটো ঘর আর রান্নাঘরই নয়। সেই সাথে পাকা বাথরুম আর টয়লেট বানাবার হিসেবও করবে। আর থাকবার ঘরগুলোকে দু’তলা ফাউন্ডেশন করতে হবে। যাতে প্রয়োজনে ভবিষ্যতে দু’তলায় রুম বানানো যায়। তবে তুমি যদি সে’সব না করো বা না করতে পারো, তাহলে আমি নিজেই সে ব্যবস্থা করব। তোমাকে শুধু কাজগুলোর তত্তাবধান করে যেতে হবে। আর তোমাদের সুবিধে অসুবিধের দিকে নজর রেখে ঘরগুলো তৈরীর ব্যাপারগুলোই শুধু দেখে যাবে”। বিধুবাবু সীমন্তিনীর কথা শুনে যেন হতভম্ব হয়ে গেছেন। সীমন্তিনী ও’পাশ থেকে সাড়া না পেয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি হল মেসো? শুনতে পাচ্ছ তো? কথা বলছ না কেন তুমি”? এবার বিধুবাবু প্রায় ঘড়ঘড়ে গলায় জবাব দিলেন, “হ্যাঁ মা শুনতে তো পাচ্ছি। আর তুমি যা বললে তা বুঝতেও পারছি। কিন্তু আমার যে আর মুখ থেকে কোনও কথা সরছে না গো মন্তিমা। কী বলি তোমাকে বলো তো”? সীমন্তিনী এবার বলল, “আচ্ছা মেসো শোনো। তোমাকে আপাততঃ আর কিচ্ছুটি বলতে হবে না। তবে এবার যা বলছি সেটা ভাল ভাবে বুঝে নাও। আমি সামনের এক সপ্তাহের মধ্যেই তোমার ওখানে লোক পাঠাচ্ছি। ওরা গিয়ে যা করতে চায় তাতে তোমরা বাঁধা দিও না। তবে তোমার কাছে গিয়ে কেউ যদি বলে যে আমি ওদের পাঠিয়েছি, তাহলে তুমি সাথে সাথে আমাকে ফোন করে জানাবে। তারপর আমি তোমায় বুঝিয়ে দেব, তোমায় কি করতে হবে। ঠিক আছে”? বিধুবাবু প্রায় ভাঙা গলায় জবাব দিলেন, “আচ্ছা মা তাই হবে”। এবার সীমন্তিনী ফোন রেখে দিতেই অর্চনা আর নবনীতাকে তার সামনে অবাক হয়ে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “ওমা, তোরা এভাবে আমার দিকে চেয়ে আছিস কেন? কি হল তোদের”? অর্চনা কোন কথা না বলে সীমন্তিনীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। কিন্তু নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “দিদি, তুমি মেসোকে যা বললে, সত্যিই কি তাই করবে? মানে, পরির মুখেই শুনেছি, তুমি খুব অনেস্ট পুলিশ অফিসার। ঘুষ নেওয়া তো দুরের কথা, কোনদিন কারুর কাছ থেকে একটা পয়সাও তুমি অন্যায় ভাবে উপার্জন করো না। এত টাকা তুমি কোত্থেকে যোগাড় করবে গো দিদি”? সীমন্তিনী দুষ্টুমি ভরা হাসি হেসে বলল, “সব টাকা দেবে ওই বিমল আগরওয়ালা। আমার রচু সোনার ওপর যে ও কূ-নজর ফেলেছে, তার একটা ক্ষতিপূরণ তো ওকে দিতেই হবে। আর সেই ক্ষতিপূরণের টাকা থেকেই আমি এ’সব করব” বলেই দু’হাতে নবনীতা আর অর্চনার হাত ধরে বলল, “কিন্তু সাবধান। এ’কথা যেন এখন রচু বা অন্য কারুর কানে না যায়। কাউকে এখন কিচ্ছুটি জানানো চলবে না। কথাটা তোমরা দু’জন মনে গাঁট বেঁধে রেখো”। অর্চনা এবারেও কোন কথা না বলে সীমন্তিনীর কোলে মুখ চেপে রইল। কিন্তু নবনীতা বলল, “বৌদি তো কালচিনির বাড়ি থেকেই জেনে যাবে যে তুমি মেসোকে কি কি বলেছ? তখন যদি আমাদের কাউকে বা তোমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, তখন আমরা কি বলব দিদি”? সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “তখন মিথ্যে বলবি। বা বলবি যে আমরা কেউ কিছু জানি না। দিদি আমাদের কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি”।  নবনীতা বলল, “বৌদিকে আমরা মিথ্যে বলব? আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার নির্দেশে আমরা না হয় তাই করব। কিন্তু সে যদি তোমার কাছ থেকেই জানতে চায়? তখন কি তুমিও তাকে মিথ্যেই বলবে? কিন্তু বৌদি তো বিশ্বাস করে যে তার দিদিভাই কক্ষনো তাকে মিথ্যে কথা বলবে না”। সীমন্তিনী জবাব দিল, “আমার রচু সোনাকে আমিও মিথ্যে বলব না। তবে আসল সত্যিটা কিছু দিনের জন্য গোপন করে যেতেই হবে ওর কাছে। আর আমি ওকে সেভাবেই সামলে নেব। আর জানিস, পুলিশের লোকেরাই বোধহয় সবচেয়ে বেশী মিথ্যেবাদী হয়ে থাকে। কিন্তু তোদের সকলের কাছে তো আমি পুলিশ নই। আমি যে তোদের দিদি। তাই তোদের কাছে মিথ্যে আমি কখনও বলব না। তবে কাজের স্বার্থেই কখনো কখনো কিছু কিছু কথা আমাকে চেপে যেতেই হয়। সেগুলো জানতে তোরা কখনও জোরাজুরি করিসনে ভাই। সময় হলে আমি নিজেই তোদের সে’সব বলে দেব”। ********************* এবার নবনীতা আর কিছু বলার আগেই সীমন্তিনী তাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা নীতা, তুই আমাকে একটা কথা বল তো। তুই নিজে ওই বদমাশ বিমল আগরওয়ালাকে কখনও দেখেছিস? বা তার সম্বন্ধে কিছু জানিস”? নবনীতা জবাব দিল, “না দিদি। আমি তাকে কখনও দেখিনি। তবে বীথিকার মুখেই শুনেছি যে বিমল আগরওয়ালার স্ত্রীও নাকি সপ্তাহে দু’দিন ম্যাডামের ইনস্টিটিউটে যোগা থেরাপি করতে আসে। আর বিমল আগরওয়ালা নিজেও মাঝে মধ্যে ম্যাডামের কাছে আসে। এর চেয়ে বেশী আর কিছু আমি জানিনা”। সীমন্তিনী এবার জিজ্ঞেস করল, “তোর কাছে বীথিকার নাম্বার আছে? তার সাথে কথা বলে তুই কি বিমল আগরওয়ালার ব্যাপারে আর কিছু খবরাখবর যোগার করতে পারবি”? নবনীতা বলল, “বীথির নাম্বার তো আমার আগের মোবাইলে সেভ করা ছিল দিদি। কিন্তু সেটা তো তুমিই সেদিন নিয়ে নিয়েছিলে আমার কাছ থেকে। নাম্বারটা তো আমার ঠিক মনে নেই গো”। সীমন্তিনী মনে মনে ভাবল, নবনীতার পুরনো মোবাইলটা সে পরিতোষের হাতেই দিয়ে এসেছিল, কিন্তু তার সিমটা নিজের কাছেই রেখেছিল। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে বলেই তেমনটা করেছিল সে। সেটা হয়তো এখনও তার ব্যাগেই আছে। মনে মনে এ’কথা ভেবে সে নবনীতাকে আবার জিজ্ঞেস করল, “তোর ফোনটা তো পরিতোষের হাতেই দিয়ে এসেছিলুম। কিন্তু বীথিকার নাম্বারটা কি তুই ফোনে সেভ করেছিলি? না সিমে”? নবনীতা মুখটা কাঁচুমাচু করে জবাব দিল, “সেটা তো ঠিক মনে পড়ছে নাগো দিদি”। সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা যাক, ছেড়ে দে ও’কথা। ফোনটা যখন সঙ্গে আনিনি, তখন আর মিছে ও নিয়ে ভেবে কোন লাভ নেই। অন্য কোনভাবে বিমলের সম্বন্ধে খোঁজখবর করতে হবে”। **************** দক্ষিণেশ্বরের কাছাকাছি একটা জায়গায় একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে অভি তার বাইক থামাল। একবার আশে পাশে চোখ বুলিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে সে বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ করে বাইকটাকে রেখে রেস্টুরেন্টের ভেতর এসে ঢুকল। মাথা থেকে হেলমেট না খুলেই সে এক পাশের একটা খালি টেবিলে গিয়ে বসল। হাতে ঘড়ি নেই। তাই পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সময় দেখল। দুপুর দুটো বেজে কুড়ি মিনিট। তার মানে হাতে এখনও মিনিট দশেক সময় আছে। একটা লস্যির অর্ডার দিয়ে সে রেস্টুরেন্টের সামনের দিকে চেয়ে রইল। একটু বাদে লস্যি দিয়ে যেতে সে আস্তে আস্তে খেতে খেতে ভাবতে লাগল পরিতোষের প্ল্যানের কথা। স্যার জানিয়েছেন বিমল যেদিন এখানে আসে সেদিন পুরো রাতের জন্যই আসে। তার সঙ্গে থাকে কোন না কোন রূপসী, তা সে যে কোন বয়সেরই হোক না কেন।  অভি মনে মনে ভাবল, এই কোটিপতি পয়সাওয়ালা লোকগুলো পয়সার জোরে গোটা পৃথিবীটাকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বলে ভাবতে শুরু করে। আরে বাবা, তোদের পয়সা আছে, প্রতিপত্তি আছে, বেশ কথা। পয়সার জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করছিস, তাও নাহয় মেনেই নিলুম। সে পয়সার জোরেই তো শহরের নামী দামী বেশ্যা বা এস্কর্ট ভাড়া করে নিজেদের ক্ষুধা মেটাতে পারিস বাবা। তোদের ঘরের লোকেরা যদি তাতে বাঁধা না দেয় তাহলে বাইরের লোকেরা আর তোদের কী করতে পারে। কিন্তু ভদ্রঘরের মেয়ে বৌদের প্রতি নজর না দিলেই কি চলছিল না তোর। এবার বুঝবি ঠেলা। এবার বুঝতে পারবি কত ধানে কত চাল। জানিনা স্যার কিভাবে কী প্ল্যান করছেন। কিন্তু তোর মাথার ওপর সুতো দিয়ে কিন্তু খাঁড়া ঝোলাবার কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে সুতোটা কবে কেটে দেওয়া হবে, আর তার কোপটা তোর শরীরের ঠিক কোথায় এসে পড়বে সেটা তো শুধু স্যারই জানেন, আর জানেন ভগবান। তবে যেহেতু এবারের প্ল্যানের ফাইনাল স্টেজে একজন ডাক্তারও সামিল আছেন, আর সেও একজন সার্জেন, তাহলে মনে হয় কোপটা ঠিক তোর গলায় পড়বে না। তবে তোর শরীরের কোন একটা প্রত্যঙ্গ যে অকেজো হতে চলেছে সেটা নিয়ে আমার মনে একটুও সন্দেহ নেই। আর সেই প্রত্যঙ্গহানির সাথে সাথে তো তুই আরেক বিপদেও পড়তে যাচ্ছিস। অবশ্য তোর যা ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি তাতে তুই হয়ত পরের বিপদটা কাটিয়েও উঠতে পারিস। কিন্তু স্যারের প্ল্যানও কিন্তু একেবারেই নড়বড়ে হবে না। জলের কুমীর আর ডাঙার বাঘের মুখ থেকেও বেঁচে ফেরা যায়। কিন্তু স্যারের থাবা থেকে বেঁচে যাওয়া... সেটা যে আজ অব্দি কেউ করতে পারেনি। অবশ্য এ’কথাটা তোর জানার কথা নয়। এ’কথা জানি আমরা, স্যারের নেটওয়ার্কের মেম্বাররা। ঠিক আড়াইটের সময় জীন্স আর টিশার্ট পরা একটা লোক এসে ঢুকল। আর সে এসে সরাসরি অভির টেবিলে এসে একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “নমস্কার বাবু। দেখলেন তো? আমি বলেছিলাম না ঠিক কাটায় কাটায় আড়াইটেয় আপনার সামনে হাজির হব। দেখুন, এক মিনিটও এদিক ওদিক হয়নি”। অভি শান্তভাবে বলল, “লস্যি খাবি”? লোকটা একটু হেসে বলল, “তা একটু লস্যি খেলে বেশ ভালই লাগবে। যা গরম পড়েছে আজ”। অভি হাত তুলে একটা বেয়ারাকে ডেকে আরেক গ্লাস লস্যি দিতে বলল। তারপর বেয়ারা চলে যেতে লোকটাকে বলল, “এবার বল, কাজগুলো ঠিকঠাক ভাবে কমপ্লিট করেছিস তো”? লোকটা বলল, “বাবু, লাখু কোনও কাজের কন্ট্রাক্ট নিয়েছে, আর সে কাজ কমপ্লিট হয়নি, এমন রেকর্ড আজ অব্দি হয়নি। আপনি যেমন যেমন বলেছেন। ঠিক তেমন তেমন ভাবেই কাজ সেরে এসেছি। আপনি একেবারে নিশ্চিন্ত থাকুন”। বেয়ারা এসে লস্যির গ্লাস দিয়ে চলে যাবার পর অভি জিজ্ঞেস করল, “গার্ডেরা কিছু টের পায়নি তো? আর জিনিসগুলো কারো চোখে পড়বে না তো”? লাখু বলল, “গার্ড দুটোকেই মদ খাইয়ে আগেই ফ্ল্যাট করে দিয়েছিলাম বাবু। তারপর এসি সারাবার নাম করে মাস্টার বেডরুমের ছয়টা এঙ্গেল থেকে ছয়টা ক্যামেরা এমনভাবে সেট করে দিয়েছি যে আমি ছাড়া সেগুলো আর কারো চোখে পড়বে না। কাজ শেষ হয়ে গেলে আপনি নিজেও যদি সেখানে গিয়ে ওগুলো খুলে আনতে চান, তাহলে আপনার পক্ষেও কাজটা খুব সহজ হবে না, এ’কথা জোর দিয়ে বলতে পারি বাবু। আর ও’ঘরে যারা ঢোকে তারা কি আর দেয়ালের কোথায় কি আছে তা খুঁটিয়ে দেখবার সময় পায়? তারা তো তাদের কাজ কত তাড়াতাড়ি শুরু করবে, সে চিন্তাতেই মশগুল থাকে বাবু। হে হে হে”। অভি নিজের গ্লাস খালি করে জিজ্ঞেস করল, “মালিক আবার কবে এখানে আসবে এখানে সে ব্যাপারে কিছু শুনেছিস”? লাখু এক চুমুক লস্যি খেয়ে বলল, “গার্ড দুটো মালের নেশায় যা বলল তাতে তো মনে হল আজ রাতেই আসবে এক পরিকে নিয়ে। তবে বাবু, ওদের নেশাটা কিন্তু একটু বেশীই হয়েছিল। তাই সঠিক বলেছে কিনা, সেটা বাবু জোর দিয়েও বলতে পাচ্ছি না। কিন্তু আজই যখন এসিটা সারাই করে দিতে হবে বলে অর্ডার করেছে, তাতে মনে হয় আজ রাতেই আসতে পারে”। অভি নিজের পকেট থেকে একটা মোটা খাম বের করে টেবিলের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “এটা রাখ। বিশ আছে। এরপর যেদিন আবার জিনিসগুলো ওখান থেকে এনে আমাকে দিবি, সেদিন আরও বিশ পাবি। আর জিনিসগুলো পরীক্ষা করে যদি দেখি খুব ভাল রেকর্ডিং হয়েছে, তাহলে আরো দশ তোকে বখশিস হিসেবে দেব”।  লাখু খুশী হয়ে খামটা পকেটে পুরে বলল, “কিন্তু বাবু, জিনিসগুলো কবে খুলে আনতে হবে, সেটা তো বলেননি এখনও”? অভি বলল, “সেটা তো আমিও ঠিক বলতে পাচ্ছি না এখন। তবে মনে হয় চার পাঁচ দিন লাগবে। সেটা আমি তোকে পরে জানিয়ে দেব। কিন্তু সেদিন তুই কী বলে আবার এই ফার্ম হাউসে এসে ঢুকবি”? লাখু হেসে বলল, “সেটা আপনি আমার ওপরেই ছেড়ে দিন বাবু। আমি আজই সাহেবকে ফোন করে জানিয়ে দেব যে এসির এমন একটা পার্টস খারাপ হয়েছে যেটা আজ আমি সাথে আনিনি। তাই আমি টেম্পোরারি ভাবে চার পাঁচদিন চলবার মত একটা উপায় করে গেলাম আজ। আর চার পাঁচ দিনের মধ্যেই আমি আসল পার্টসটা এনে লাগিয়ে দেব। তাই আমার আসবার রাস্তা পরিষ্কার করে রাখব আজই। আপনি শুধু আমাকে জানিয়ে দেবেন, কবে আমাকে আসতে হবে”। অভি মনে মনে একটু খুশী হলেও মুখে সেটা প্রকাশ না করে বলল, “ঠিক আছে। তুই তাহলে এবার এখান থেকে উঠে পড়। আমি আরও দশ মিনিট এখানে বসব”। গ্লাসের বাকি লস্যিটুকু একচুমুকে শেষ করে “আসছি বাবু, নমস্কার” বলে লাখু চলে গেল। ______________________________
Parent