সীমন্তিনী BY SS_SEXY - অধ্যায় ১৭০

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-22390-post-1744794.html#pid1744794

🕰️ Posted on March 21, 2020 by ✍️ riank55 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2513 words / 11 min read

Parent
(Update No. 196) মিঃ অধিকারী তখন বললেন, “কিন্তু ম্যাম, আপনার বান্ধবীর কাছে আমাদের ফার্মের অন্য কাউকে পাঠালে উদ্দেশ্য সফল না-ও হতে পারে। আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি যে ওই জমির মালিক ব্যক্তিগত ভাবেই আমার খুব ঘনিষ্ঠ। আমাদের ফার্মের অন্য কারো সাথে তার অমন পরিচয় বা হৃদ্যতা নেই। তাই সেখানে তার সাথে ডিলটা করতে হলে আমাকেই উপস্থিত থাকতে হবে”।  সীমন্তিনী কিছুটা হতাশ গলায় বলল, “তাহলে আমি আর কালচিনিতে বাড়ি বানাবার কাজ কিকরে শুরু করব মিঃ অধিকারী? আমি তো আপনার ওপরেই ভরসা করে নিশ্চিন্ত ছিলুম”। মিঃ অধিকারী বললেন, “ম্যাম, আপনি এমন হতাশ হয়ে পড়ছেন কেন। আপনার কালচিনির বাড়ির কাজ একেবারেই থেমে থাকবে না। কালচিনিতে আমি নিজে না গেলেও আমাদের ফার্মের অন্য লোকেরাও সেটা করতে পারবে। আর এখানে আমাদের ফার্মের লোকেরাই শুধু নয়, সারা শহরের লোকই তো আপনাকে শ্রদ্ধা করে ভালবাসে। শহরের প্রত্যেকটা লোক এককথায় স্বীকার করে যে এ থানায় আপনার মত সৎ এবং কর্মঠ পুলিশ অফিসার আজ অব্দি আর কেউ আসেনি। তাই শান্তিপ্রিয় সকলেই আপনাকে বিশেষ শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে। আমি আমার বড়দার হাতে কালচিনির দায়িত্বটা দিয়ে যেতে পারি। আর বড়দাও বিশেষ যত্ন নিয়েই আপনাদের বাড়ির কাজ দেখাশোনা করবে। আর এ’ প্রতিশ্রুতিও আমি আপনাকে দিতে পারি যে কাজে কোনরকম গাফিলতি বা ফাঁকি দেওয়া হবে না। এখন, আপনি যদি আমার কথার ওপর ভরসা করে আমার দাদার হাতে দায়িত্বটা দিতে রাজি থাকেন, তাহলে আমি হয়ত আজ রাতের ট্রেনেই কলকাতা রওনা হব। ওদিকে আপনার বান্ধবীকে সাহায্য করতে পারলে আমারও ভাল লাগবে”। সীমন্তিনী একটু ভেবে বলল, “মিঃ অধিকারী, কালচিনির কাজটা আমার জন্যর যতটা ইম্পর্ট্যান্ট ঠিক ততটাই ইম্পর্ট্যান্ট আমার ওই বান্ধবীর কাজটাও। কোনও একটা করতে গিয়ে আমি আরেকটাকে কিছুতেই ইগনোর করতে চাইনে। তবে আপনি যদি আমাকে এ নিশ্চয়তা দেন যে আপনার দাদাও ঠিক আপনার মতই গুরুত্ব দিয়ে কাজটা করবেন, তাহলে আমি সেটা মেনে নিচ্ছি। আপনি তাহলে আপনার দাদাকে সবকিছু ভাল করে বুঝিয়ে দিন। আর তাকে বলবেন প্রথমবার কালচিনি যাবার আগে তিনি যেন আমার সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করে যান। আর আপনিও কলকাতা গিয়ে আমার বান্ধবীর সাথে কি কথা হয়, তা কিন্তু অবশ্যই জানাবেন আপনাকে”। মিঃ অধিকারী বেশ খুশী হয়ে বললেন, “আপনি সবদিক দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন ম্যাম। আমি আপনার সাথে যথাসময়ে যোগাযোগ করব। আর আপনি আমার বড়দার কন্টাক্ট নাম্বারটা রেখে দিন। আর এ’ দুটো ব্যাপার নিয়েই একদম ভাববেন না। আমি তাহলে আজ রাতেই কলকাতা রওনা হচ্ছি” বলে তার দাদার ফোন নাম্বার জানিয়ে দিয়ে কথা শেষ করলেন। ******************* সীমন্তিনীও নিজের ব্যাগটা তুলে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ল। গাড়ি বাড়ির পথে রওনা হতেই সীমন্তিনী কিংশুককে ফোন করল। কিংশুকের সাড়া পেতেই বলল, “ভাই, তুমি কি বাইরে আছো এখন”? কিংশুক জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, আমি তো টিউশন নিতে এসেছি। বাড়ি ফিরব সাতটার দিকে”। সীমন্তিনী সাথে সাথে বলল, “ঠিক আছে ভাই, তাহলে এখন আর কথা বলছি না। আমি সাতটার পর ফোন করব। ওকে”? কিংশুকও ‘ওকে দিদিভাই’ বলতেই সীমন্তিনী ফোন কেটে দিল।  সেদিন সন্ধ্যে সাতটার সময় সীমন্তিনী বিধুবাবুর সাথে ফোনে কথা বলল। অনেকক্ষণ ধরে তার সাথে কথা বলে সীমন্তিনী জানতে পারল, আগস্টের তিন তারিখ থেকে অক্টোবরের ১৭ তারিখ অব্দি কোন গৃহারম্ভের শুভদিন নেই। আগস্ট তো পেরিয়েই গেছে। তাহলে সামনে রইল কেবল ১৮ অক্টোবর। গৃহারম্ভের কাজ তো এর আগে সম্ভবই না। তারমানে ওই দিনই গৃহারম্ভের কাজ করতে হবে। সে মনে মনে ভেবেছিল যে বিমল আগরওয়ালার অপারেশনটা শেষ হলেই তো টাকা হাতে এসে যাবে। অপারেশনটা হচ্ছে সতের তারিখে। তার মানে আশা করা যায় যে সীমন্তিনীর হাতে ফান্ড সেপ্টেমবরের কুড়ি একুশ তারিখ নাগাদ এসে যাবে। আর সাথেই সাথেই কাজ শুরু দেবে বলে ভেবেছিল। কিন্তু সেটা তো তাহলে আর হচ্ছে না।  আবার ওদিকে ১৪ই ডিসেম্বর মানে বাংলার ২৮ অঘ্রানের পর এ ইংরেজী বছরে আর কোন গৃহপ্রবেশের শুভদিন নেই। পরের বছরেও এপ্রিলের ১৪ তারিখ পর্যন্ত গৃহপ্রবেশের কোনও দিন নেই। তারমানে তো দাঁড়াচ্ছে ১৪ ডিসেম্বরেই গৃহপ্রবেশ করতে না পারলে, পরের তিন চার মাসের মধ্যে আর গৃহপ্রবেশ করা যাবে না। কিন্তু গৃহারম্ভের দু’মাসের মধ্যেই কি বাড়ির কাজ সেরে ফেলা সম্ভব? মনে হয় না। আর বিয়ের শুভদিন কবে কবে আছে তাও বিধুবাবুর কাছ থেকে শুনে একটা কাগজে নোট করে নিল। সেগুলো বিচার করে দেখল ১৩ অঘ্রান মানে নভেম্বরের ২৯ তারিখ দিনটা খুব ভাল। বৃহস্পতি বার। আর লগ্নটাও খুব ভাল। সন্ধ্যে ৫টা বেজে ১১ মিনিট থেকে রাত ১১টা২৫ পর্যন্ত, আবার রাত ১টা ৪ মিনিট থেকে রাত ৪টে ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।  নবনীতা কাজ থেকে ফিরে আসবার পর সীমন্তিনী তাকে আর অর্চনাকে নিয়ে আলোচনায় বসল। তবে তার আগে নবনীতাকে একা পেয়ে বুঝিয়ে দিল যে তারা যে অর্চনার বিয়ের ব্যাপারেই আলোচনা করতে যাচ্ছে, এটা যেন অর্চনা বুঝতে না পারে, সেদিকে নীতা যেন সতর্ক থাকে।  অর্চনা আর নবনীতাকে সীমন্তিনী সব কিছু বুঝিয়ে বলবার পর নবনীতা বলল, “দিদি, তোমার কথা তো সবই বুঝলাম। কিন্তু গৃহারম্ভের ঠিক দু’মাসের মাথাতেই তো গৃহপ্রবেশ করতে হচ্ছে। দু’মাসেই কি বাড়ির কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে ভাবছ তুমি? ধর সেটা যদি সম্ভবও হয়। তাহলে বিয়ের দিনটাও তো এই সময়ের ভেতরেই পড়ছে। গৃহপ্রবেশের আগেই বিয়েটা দিতে হচ্ছে। তাহলে কিকরে সম্ভব হবে? আর আরেকটা কথা ভেবে দেখেছ? কিংশুকের পরীক্ষাও কিন্তু এর ভেতরেই পড়বে। এতোসব কাজ কি একসাথে হাতে নিয়ে ঠিকমত সমাধা করা সত্যিই সম্ভব হবে”?  সীমন্তিনীও চিন্তিত মুখে বলল, “হ্যাঁরে, আমিও সে’কথাই ভাবছি। তবে ভাইয়ের পরীক্ষা নিয়ে আমি অত চিন্তিত নই অবশ্য। কারন বাড়ির কাজে ওকে আমি একেবারেই ইনভল্ভ করব না। সে ব্যবস্থা আমি করে ফেলেছি একভাবে। কিন্তু তবু, একটা সমস্যা থেকেই যায়। শুধু পেছনের বাথরুম, টয়লেট আর দোকানটা বাদে গোটা বাড়িটাই তো ভাঙা পড়ছে। কিন্তু মাসি, মেসো আর ভাইয়ের জন্য টেম্পরারি একটা থাকবার জায়গা আর রান্নাঘরের ব্যবস্থা তো করতেই হবে। নইলে যতদিন পর্যন্ত বাড়ি কমপ্লিট না হচ্ছে ততদিন তারা থাকবে কোথায়। তবে ওই টেম্পোরারী শেল্টারের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে, সেটাও আমি ভেবে রেখেছি। কিন্তু যতই হোক। ওগুলো সত্যি টেম্পরারি হিসেবেই বানানো হবে। খুব ভাল ব্যবস্থা তো থাকবে না। তাই সেখানে তাদের সবাইকে একটু কষ্ট করেই থাকতে হবে। তাতে তাদের অসুবিধে হবেই কিছুটা। হয়ত একটা রুমেই তাদের তিনজনকে থাকতে হবে। তাতে ভাইয়ের পড়াশোনায় কিছুটা ব্যাঘাত হলেও হতে পারে। কিন্তু সে’টুকু অসুবিধে মেনে তো নিতেই হবে। এ ছাড়া তো আর উপায়ও নেই। তবে আমি জানি, ভাই ঠিক অ্যাডজাস্ট করে নেবে। যদিও তারা কালচিনির পুরনো মানুষ, সকলেই তাদের চেনে জানে বা সম্মান করে। কিন্তু তাই বলে দু’তিন মাসের জন্য তো অনাত্মীয় কারো বাড়িতে আশ্রয় চাওয়া যায় না। আর দু’ তিন মাসেই যে বাড়ির কাজ শেষ হয়ে যাবে সেটাও তো জোর দিয়ে বলা যায় না। একবার তো এ’কথাও মনে এসেছিল যে তাদের তিনজনকে আমার এখানেই এনে রাখব ওই সময়টায়। কিন্তু মেসোর দোকান ছেড়ে তার পক্ষে আসা সম্ভব হবে না। আর তাছাড়া ভাইয়ের টিউশন পড়ার অসুবিধে হবে। তাই ও ভাবনা মন থেকে সরিয়ে দিয়েছি। ওখানে ওই টেম্পোরারি শেল্টারে একটু কষ্ট হলেও ভাই কিন্তু তার পড়াশোনাটা ঠিকই চালিয়ে নেবে। ওর ওপর আমার সে বিশ্বাস আছে। ওর ভেতরে এই বয়সেই যতটা ম্যাচিউরিটি এসে গেছে, সেটা তুই ওর সাথে কয়েকদিন না মিশলে বুঝতে পারবি না নীতা। তাই ভাইকে নিয়ে আমার চিন্তার কিছু নেই”। একটু থেমে আবার বলল, “আর বিয়ের তারিখটাও গৃহারম্ভ আর গৃহপ্রবেশের মাঝেই এসে যাচ্ছে, এটা তো ঠিকই। কিন্তু দেখ, বাড়ি তৈরীর ব্যাপারে আমাদের কাউকে তো কোন কাজ করতে হচ্ছে না। কাজটা তো অধিকারীবাবুকে আমি কন্ট্রাক্ট হিসেবে দিচ্ছি। তাই আমাদের কাউকেই কোনভাবে ও ব্যাপারে ব্যস্ত থাকতে হবে না। সামান্য দেখাশোনা করলেই হয়ে যাবে। সেটা মেসোমশাই তো করতেই পারবেন। তিনি তো ওখানেই থাকছেন। তাকে তো আর ছুটোছুটি করতে হচ্ছে না কোথাও। আর মাঝে মধ্যে সময় সুযোগ পেলে আমরাও যাব নাহয়। আর একই সময়ের মধ্যে হলেও বিয়েটা তো আর ও’বাড়িতে হচ্ছে না। সেটা তো খুব সম্ভব রাজগঞ্জে হবে। অবশ্য, এখনও এ ব্যাপারে পুরো কনফার্ম নই আমি। আশা করছি তেমনটাই হবে। না-ও যদি হয় সেটা অন্যকোথাও কোনও বিবাহভবন বা ব্যাঙ্কোয়েট হল ভাড়া করেই করব। আর যদি তাই করতে হয় তাহলে আমরা কোনও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানীকে দায়িত্ব দিয়ে দেব। সব কিছু তারাই করবে। তাতে আমাদের খাটুনি কমবে। আর যদি রাজগঞ্জেই বিয়েটা হয় তাহলে তো আরও সুবিধে হবে। কাকু জেঠুরাই সব সামলে নেবেন। আমাদের শুধু টাকা যোগান আর বিয়ের কেনাকাটাটুকুই করতে হবে। সেটা তুই অর্চু আর আমি মিলে এখানে যা যা করা সম্ভব হয় করব। কলকাতা থেকে যদি কিছু কেনাকাটা করতে হয় তাহলে সে দায়িত্ব রচুই নেবে হাসিমুখে এ আমি জানি। তাই বিয়ের ঝামেলা থেকে বাড়ির লোকেরা একেবারে মুক্তই থাকবে। সমস্যা হল ওই গৃহারম্ভ আর গৃহ প্রবেশের মধ্যে যে মাত্র দু’মাস সময় থেকে যাচ্ছে, সেটাই। দু’মাসের মধ্যে বাড়ি তৈরীর কাজটা যে কমপ্লিট হয়ে যাবে, এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। একবার অধিকারীদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে”। ******************** অর্চনা এ’সব আলোচনার মধ্যে গৃহারম্ভ আর গৃহপ্রবেশের ব্যাপারটা বুঝতে পারলেও বিয়ের ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। তাই সে এবার প্রশ্ন করল, “আচ্ছা দিদিভাই, তোমরা কার বিয়ের কথা বলছ গো”?  সীমন্তিনী নবনীতাকে লুকিয়ে ঈশারা করে জবাব দিল, “ওঃ, তোকে তো আসল ব্যাপারটা বলাই হয়নি। ভেবেছিলুম আগে তোকে বিয়ের খবরটাই বলব। কিন্তু মাথার মধ্যে এতগুলো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে যে একেবারে গুলিয়ে ফেলেছি” বলে অর্চনার একটা হাত জড়িয়ে ধরে বলল, “আসলে আমি আর নীতা পরির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি”। অর্চনা শুনে খুব খুশী হয়ে বলল, “সত্যি দিদিভাই? তোমরা পরিতোষদার বিয়ে ঠিক করেছ? কে গো মেয়েটা? কোথাকার মেয়ে? পরিতোষদা তাহলে রাজি হয়েছেন এ বিয়েতে”? সীমন্তিনী হেসে বলল, “পরিতোষ যে আমাদের দু’জনের পছন্দের পাত্রীকেই বিয়ে করবে, এটা তো তোকে আগেই বলেছি আমরা। পরিতোষকে আমি এ মেয়েটার ব্যাপারে বলেছি। ওকে একবার এসে মেয়েটাকে দেখতেও বলেছিলুম। কিন্তু পরিতোষ মেয়ে দেখতে আসতেই চাইল না। আগের মতই একই কথা বলল যে আমরা যাকে পছন্দ করব ও তাকেই বিয়ে করবে। এদিকে মেয়েটাকে আমার আর নীতার দু’জনেরই খুব পছন্দ হয়েছে। তবে খুবই গরীব ঘরের মেয়ে। তাই বিয়ের সমস্ত ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হচ্ছে। কারন মেয়েটার বাপের বাড়ি এই ডুয়ার্সেই। ওদের পক্ষে কলকাতায় গিয়ে বিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আর এখানেও ওদের বাড়ি ঘরের যা অবস্থা তাতে করে ওদের বাড়িতেও বিয়ের আয়োজন করা একেবারেই করা সম্ভব নয়। আর আমার এ কোয়ার্টারেও তো অতটা জায়গা নেই যে একটা বিয়ের প্যান্ডেল করা যাবে। তাই আমাদের ছোটকাকুকে বলেছি বাড়ির সকলের সাথে কথা বলতে। যদি বিয়েটা ওখান থেকে দেওয়া যায়। আমাকে তো বাড়ির বেশীর ভাগ লোকই অপছন্দ করে। তাই তারা যে রাজি হবেই এ ব্যাপারেও আমি পুরোপুরি শিওর নই। তবে হতেও পারে। কারন পরিতোষের সাথে যে দাদাভাই আর রচুর আলাপ পরিচয় আছে সেটা তো তারা নিশ্চয়ই জানেন। তাই রাজি হলেও হতে পারে। বিয়ের খরচ তো সব পরিই দিচ্ছে। তাই কোন আর্থিক বোঝা তো তাদের ওপর পড়বে না। শুধু দৈহিক পরিশ্রমই তাদের একটু দিতে হবে। তবে তাদের মতামতটা এখনও জানতে বাকি আছে। যদি তারা কোন কারনে রাজি না-ই হন, তাহলে আলিপুরদুয়ার বা জলপাইগুড়িতে কোন একটা বিবাহ-ভবন বা ব্যাংকোয়েট হলই ভাড়া নিতে হবে, আর পুরো দায়িত্ব কোন এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকেই দিতে হবে”। অর্চনা সীমন্তিনীর হাতটা জড়িয়ে ধরে বলল, “তোমার মত লোক আমি আর দেখিনি গো দিদিভাই। সকলের সব প্রয়োজনের দিকেই তোমার প্রখর দৃষ্টি। আমার প্রায়ই মায়ের বলা একটা মথা মনে পড়ে, জানো দিদিভাই? মা মাঝে মাঝেই বলেন, তুমি বোধহয় আগের জন্মে তার মা-ই ছিলে। তোমার সাথে যত সময় কাটাচ্ছি, ততই মনে হচ্ছে মা বোধহয় ভুল বলেন না। নইলে আমাদের সকলের জন্যে এত কিছু করার পাশাপাশি পরিতোষদার বিয়ে নিয়েও তুমি এ’ভাবে এতসব করতে ....” তার কথা শেষ না হতেই সীমন্তিনী আলতো করে অর্চনার কাঁধে একটা চাপড় মেরে বলল, “এই দুষ্টু, এ’সব কথা এক্কেবারে বলবি না। পরি কি আমাদের জন্যে কম কিছু করছে রে? আর আমি তো আগেই তোদের সবাইকে বলেছি যে আমিও তোদের মায়ের আরেকটা মেয়ে। মেয়ে হয়ে মা-র জন্যে কিছু করার অধিকার কি আমার নেই”? অর্চনাও মিষ্টি করে হেসে বলল, “সে অধিকারই তো তুমি বছরের পর বছর থেকে খাঁটিয়ে যাচ্ছ দিদিভাই। নইলে আমরা কে যে কোথায় ভেসে যেতুম। তবে পরিতোষদা যে সব মান অভিমান দুঃখ ভুলে গিয়ে তোমাদের কথায় সত্যি বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন, এটা শুনেই আমার খুব আনন্দ হচ্ছে গো। আমি মনে মনে ভাবতুম, এতোটা নিঃসঙ্গ এতোটা একা হয়ে কেউ কি বেঁচে থাকতে পারে? তোমাদের মুখে, রচুর কাছে তার এত প্রশংসা শুনি যে ভদ্রলোকের জন্য আমার সত্যি খুব কষ্ট হত। উনি রচু আর রতুদার জন্য কত কী করছেন, তাই আমি তাকে না দেখলেও না চিনলেও, শ্রদ্ধা করি। তাই আমিও মনে মনে ঠাকুরকে বলতাম, ঠাকুর যেন তার প্রতি একটু দয়া করেন। ওই নিঃসঙ্গ লোকটাকে কেউ কাছে টেনে নিয়ে তাকে নিজের করে নিক। তার অগোছালো জীবনটাকে কেউ স্নেহ মমতা ভালবাসা দিয়ে ভরে তুলুক”। অর্চনার কথা শুনে সীমন্তিনী আর নবনীতা চোখাচুখি করল। নবনীতা তারপর অর্চনাকে বলল, “তুমিও পরির জন্যে এত ভাবো অর্চু”? অর্চনা সরল মনেই জবাব দিল, “কেন ভাবব না নীতাদি। এ যুগে ছোট বড় সবাই তো স্বার্থপর। কিন্তু তোমাদের মুখেই তো পরিতোষদার কত গল্প শুনেছি। তিনি কখনও নিজের স্বার্থ দেখেন না। সব সময় তিনি সাধ্যমত অন্যকে সাহায্য করেন। আর রচু ওরা কলকাতা যাবার পর থেকেই তিনি কিভাবে রচু আর রতুদার দেখাশোনা করছেন। এ’সব তো তোমাদের মুখেই শুনেছি। আর ক’দিন আগে রচুর ওপর যে ওই মারোয়ারী বদমাশটা আবার নতুন করে পিছু লেগেছে, এ ব্যাপারেও তো পরিতোষদা নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। দিনে দিনে তোমার, দিদিভাইয়ের আর রচুর কাছে তার কথা শুনতে শুনতে তার ওপর আমার শ্রদ্ধা বেড়েই যাচ্ছে। যে লোকটা আমার বোনকে ভাল রাখতে চায়, নিরাপদে রাখতে চায়, এমন একটা লোকের ভাল হোক, সেটা আমি চাইব না”? সীমন্তিনীর ঈশারা পেয়েই নবনীতা এক লাফ দিয়ে অর্চনার পাশে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল, “সত্যি বলছ অর্চু? তুমিও পরিকে নিয়ে এতোটা ভাবো”? অর্চনা এবারেও আগের মতই সরলতার সাথে জবাব দিল, “বারে, না ভাবার কি আছে? রোজ দিনে রাতে তো তার কথাই তোমরা আলোচনা করো। সেদিন তো দিদিভাই বললেন যে ওই দিন রাতে নাকি পরিতোষদা প্রায় সাড়া রাতই মারোয়ারী লোকটাকে উচিৎ শিক্ষা দেবার জন্যে ছোটাছুটি করেছেন। যে লোকটা আমার বোনের জন্য নিজের কোনরকম স্বার্থ ছাড়াই এত কষ্ট করছেন, তাকে যদি শ্রদ্ধা না করি তাহলে তো সকলেই আমাকে অকৃতজ্ঞ বলবে। আর আমি সত্যিই তেমন অকৃতজ্ঞ নই”। নবনীতা এবার খানিকটা দুষ্টুমির সুরে বলল, “ও, কৃতজ্ঞতা? তা ওই কৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয় তো”? অর্চনা এবার লজ্জা পেয়ে বলল, “ওমা দেখেছ? ধ্যাত নীতাদি, তুমি না সত্যি”। নবনীতা এবার অর্চনাকে কিছু না বলে হঠাৎ সীমন্তিনীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলল, “আচ্ছা দিদি, তোমার কি মনে হয় পরির জন্য আমরা যে মেয়েটাকে পছন্দ করেছি, সে আমাদের অর্চুর থেকেও ভাল”? সীমন্তিনী নবনীতার কথার জবাব দেবার আগেই অর্চনা আবার বলে উঠল, “ইশ, নীতাদি প্লীজ। বন্ধ করো এ আলোচনা”। তখন সীমন্তিনী নবনীতাকে বলল, “তুই যে প্রশ্নটা আমায় করলি নীতা, তার জবাব তো সত্যিই আমার জানা নেই রে। আসলে দ্যাখ, প্রায় মাসখানেক হতে চলল অর্চুকে আমরা আমাদের সাথে পেয়েছি। অর্চুর মন, ওর আচার, ব্যবহার, স্বভাব সবকিছুই আমরা খুব ভালভাবে বুঝতে পেরেছি। আমরা এখন চোখ বুজে অর্চুর ব্যাপারে সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে পারি। কিন্তু ওই মেয়েটাকে আমরা তো অত ভালভাবে জানবার বা বোঝবার সুযোগ পাইনি। যতটুকু দেখেছি তাতে মনে হয় মেয়েটা ভালই হবে। তবে সেটা মনে হওয়ার লেভেলেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু অর্চুর ব্যাপারে তো আর আমাদের মনে হবার কিছু নেই। ওর ভেতরের বাইরের সবকিছুই আমাদের জানা চেনা। অর্চুকে নিয়ে তো নেতিবাচক কিছুই আমাদের চোখে ধরে পড়েনি। ওর মত মেয়ে সত্যিই হাজারে একটা। শুধু ওই বয়সে বিয়ে না দিয়ে মাসি মেসোরা যদি ওকে আরেকটু পড়াশোনা করাতে পারতেন, তাহলে ওর মত মেয়ে লাখে একটাও যে পাওয়া যেত না, এ কথা বলতে আমার কোনরকম দ্বিধা থাকত না। কিন্তু ওই মেয়েটাও যে আমাদের অর্চুর মতই হাজারে একটা হবে, এ’ কথাটা তো জোর দিয়ে বলতে পাচ্ছিনা রে। কারন ও’ মেয়েটাকে তো আমরা সত্যি ও’ভাবে বোঝবার মত সুযোগ পাইনি”।  নবনীতা সীমন্তিনীর কথা শুনে ছদ্ম চিন্তার ভাণ করে বলল, “হ্যাঁ দিদি, এটা তুমি ঠিকই বলেছ। আমরা তো সত্যি মেয়েটার সাথে ও’ভাবে মেলামেশা করতে পারিনি। তবে তুমি আমি আমরা দু’জনেই ভাবছি যে পরির সাথে মেয়েটা অ্যাডজাস্ট করতে পারবে। তাই তো আমরা এ বিয়েটা দিতে চেষ্টা করছি। কিন্তু দিদি, একটা প্রবাদ আজ আবার সত্যি বলে প্রমাণিত হল”।  সীমন্তিনী মনে মনে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল, “কোন প্রবাদের কথা বলছিস”? নবনীতা বেশ সিরিয়াস ভাবে জবাব দিল, “ওই যে ছোট বেলায় আমরা বইয়ে পড়েছি না? প্রদীপের নিচেই অন্ধকার থাকে, সেটার কথাই বলছি গো। আর স্বামী বিবেকানন্দও যে বলেছিলেন, “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর”। এ’কথা গুলো দ্যাখো আবার আজ সত্যি হল। আমাদের চোখের সামনের অর্চুর দিকে আমাদের নজরই যায়নি। আমাদের ঘরে আমাদের চোখের সামনে ওর মত সর্বগূণসম্পন্না একটা মেয়েকে ছেড়ে আমরা কিনা বাইরে ইতিউতি মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি পরির জন্যে”।  অর্চনা এবার নবনীতাকে প্রায় চেপে ধরে বলল, “নীতাদি, ভাল হচ্ছে না কিন্তু। তোমরা প্লীজ এ প্রসঙ্গে কথা বলা বন্ধ করো”। (To be cont'd ......) ______________________________
Parent