সীমন্তিনী BY SS_SEXY - অধ্যায় ২১৩

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-22390-post-1774333.html#pid1774333

🕰️ Posted on March 29, 2020 by ✍️ riank55 (Profile)

🏷️ Tags: None
📖 2210 words / 10 min read

Parent
(Update No. 239) সীমন্তিনী কিছু বলতে যাবার আগেই আবার তার অফিসিয়াল মোবাইলে পরিতোষের কল এল। সীমন্তিনী এবারেও কলটা রিজেক্ট করতে করতে হৈমবতীদেবীকে বললেন, “আচ্ছা বেশ পিসি। তা, আপনারা কি ট্রেনে আসছেন? তাহলে ট্রেনটা আলিপুরদুয়ার থেকে ছাড়বার পরেই আমাকে একটা ফোন করে জানিয়ে দেবেন। আমি সময় মত ষ্টেশনে একটা গাড়ি পাঠিয়ে দেব”।  হৈমবতীদেবী এবার বললেন, “তোমায় কষ্ট করতে হবে না মা। আমরা আমাদের নিজস্ব গাড়িতে যাচ্ছি। আর তোমার কোয়ার্টারের ঠিকানাও আমাদের ড্রাইভারের জানা আছে। তোমার ওখানে পৌঁছোতে আমাদের কোন অসুবিধে হবে না। তবে শুনেছি তোমার কোয়ার্টারের সামনে নাকি পুলিশ পাহারা থাকে। তুমি মা তাদের একটু বলে রেখো, যেন আমাদের হেনস্থা না করে”। সীমন্তিনী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “সে ব্যবস্থা আমি করছি পিসি। কেউ আপনাদের কোনভাবে বিরক্ত করবে না। তবে পিসি, আরেকটা ব্যাপার আছে, যেটা আমি চাইলেও আটকাতে পারব না। আমার কোয়ার্টারে কম্পাউণ্ডের ভেতর বাইরের কোনও গাড়ি ঢুকতে চাইলে সেগুলোকে কিন্তু গেটে প্রহরারত পুলিশেরা চেক করে। আর এটা আমাদের ওপর তলার অফিসারদের হুকুম। আমি নিজেও কিন্তু তাতে বাধা দিতে পারব না। আপনারা কিন্তু ওতে কিছু মনে করবেন না প্লীজ। তবে যদি গাড়ির নাম্বারটা আপনারা আগে থেকে জানিয়ে দিতে পারেন, তাহলে ভাল হয়”। হৈমবতীদেবী বললেন, “হ্যাঁ মা, তোমার পাহারাদাররা যে গাড়ি সার্চ করবে এটা আমাদের ড্রাইভারের মুখেই শুনেছি। তবে আমরা তোমার কোয়ার্টারে পৌঁছোবার আগেই এক সময় আমাদের গাড়ির নাম্বারটা জানিয়ে দেব তোমাকে। আর শোনো মা, তুমি তো এখন থানাতেই আছ। আমাদের আপ্যায়নের জন্য কিন্তু কোন দৌড় ঝাঁপ শুরু করে দিও না। আর রাতের খাবারের আয়োজনও কিছু কোরো না। আমাদের তিন বৌমা মিলে তোমাদের সকলের জন্য রাতের খাবার বানাচ্ছে। আমরা সে’সব সাথে করেই নিয়ে যাব। তুমি কিন্তু এতে আপত্তিও কোরো না, আর বিব্রতও হয়ো না। আমার বাপ-মা মরা ভাইপোটাকে তোমরা যে এতদিন ধরে নিজের বন্ধু বলে ভাবছ, এতটা ভালবেসেছ, তার প্রতিদানে কি আর কিছু দেওয়া যায় মা? তবু আমাদের মনের এ ইচ্ছেটুকু পূরণ করতে বাধা দিও না তুমি, লক্ষ্মী মা আমার”। সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে পিসি। আপনারা আসুন। আমি আর আমরা সবাই আপনাদের জন্য অপেক্ষায় রইলুম”। হৈমবতীদেবী বললেন, “আচ্ছা মা, তুমি সত্যিই খুব লক্ষ্মী মেয়ে। আশীর্বাদ করি মা, তুমি জীবনে খুব বড় হও, দীর্ঘজীবি হও। খুব সুখে থাক। রাখছি মা”। সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে পিসি। আপনিও আমার প্রণাম নেবেন”। ফোনটা ব্যাগে রেখেই টেবিলের ওপর রাখা কলিং বেলে চাপ দিতেই আগের কনস্টেবলটা তার কেবিনে এসে ঢুকল। তার সাথে কথা বলতে বলতেই তার অফিসিয়াল ফোনে আবার পরিতোষের কল এল। এবারে কনস্টেবলটাকে একটু অপেক্ষা করতে বলে সে কলটা রিসিভ করে বলল, “সরি স্যার। আপনার আগের দুটো কল বাধ্য হয়েই আমাকে রিজেক্ট করতে হয়েছিল। আসলে আমি তখন আমার প্রাইভেট ফোনে আপনার পিসির সাথে কথায় ব্যস্ত ছিলুম। তাই কলগুলো অ্যাকসেপ্ট করা সম্ভব হয়নি আমার পক্ষে”।  ও’পাশ থেকে পরিতোষ অবাক হয়ে বলল, “ও মাই গড, পিসি এরই মধ্যে তোমার সাথে কথা বলে ফেলেছেন? আমি তো একটু আগেই তাকে তোমার কন্টাক্ট নাম্বারটা দিলাম। এরই মধ্যে .......” সীমন্তিনী এবার আরও সংযত ভাবে বলল, “ঠিক আছে স্যার, আমি এখন একটা ডিসকাশনে ব্যস্ত আছি। মিনিট দশেক বাদেই আপনাকে কল ব্যাক করছি, প্লীজ স্যার”। পরিতোষ বুঝে গেল যে সীমন্তিনীর আশেপাশে এখন নিশ্চয়ই আরও কেউ আছে। তাই সে বলল, “ওকে ওকে, ঠিক আছে, বুঝতে পেরেছি। তুমি সময় মত ফোন কোরো” বলে ফোন কেটে দিল। সীমন্তিনীও তারপর কনস্টেবলটার সাথে আলোচনা করে তাকে বিদেয় দেবার সময় বলল, “তুমি এখনই সিকদারবাবুকে আমার কেবিনে আসতে বলে দিও”। কনস্টেবলটা স্যালুট ঠুকে “ইয়েস ম্যাম” বলে বেরিয়ে যেতেই সীমন্তিনী নিজের ড্রয়ার থেকে একটা ডাইরী বের করে তাতে চোখ বোলাতে লাগল। মিনিট খানেক বাদেই থানার ওসি সিকদারবাবু তার কেবিনের দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করল, “ম্যাম, আমায় ডেকেছিলেন”? সীমন্তিনী তাকে ভেতরে ডেকে প্রথমে আজকের বাকি কাজগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করল। তারপর অন্যান্য সম্ভাব্য কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনার পর তাকে বুঝিয়ে দিল যে তার কয়েকজন গেস্ট আসছে বলে সে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়ে যাবে। সিকদারবাবুকে বিকেলের পর থেকে ওএসডি ইনচার্যের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সিকদারবাবু রাজী হতেই তাকে বিদেয় দিয়ে সীমন্তিনী ঘড়িতে সময় দেখল, প্রায় চারটে বাজতে চলেছে।  সীমন্তিনী মনে মনে একটু ভেবে পরিতোষকে ফোন করবার আগে নিজের কোয়ার্টারের নাম্বার ডায়াল করল। ও’পাশ থেকে লক্ষ্মীদির সাড়া পেতেই বলল, “লক্ষ্মীদি, তোমাদের খাওয়া হয়ে গেছে”? লক্ষ্মী ‘হ্যাঁ’ বলতেই সে আবার বলল, “তাহলে শোনো লক্ষ্মীদি, তোমাকে একটা কাজ করতে হবে। একটু কষ্ট হবে হয়ত। তোমার আজ দিনের বেলার ঘুমটা হয়তো নষ্ট হবে। কিন্তু উপায় নেই”। লক্ষ্মী বলল, “আচ্ছা কী হয়েছে সেটা তো বলো দিদিমণি”। সীমন্তিনী একবার কিছু একটা বলতে গিয়েও সেটা না বলে বলল, “আচ্ছা অর্চু কি করছে গো? ও কি ঘুমিয়েছে নাকি? একবার গিয়ে দেখে এস তো। জেগে থাকলে ওকে ডেকে আনো, আমি ওকে সবকিছু বুঝিয়ে বলছি। আমি লাইনে আছি”। “আচ্ছা দিদিমণি” বলবার প্রায় মিনিট খানেক বাদে অর্চনার উদ্বেগ ভরা গলা শোনা গেল, “দিদিভাই! কী হয়েছে গো? এই তো দুপুরেই তোমার সাথে কথা হল। আবার এখনই তুমি ফোন করলে? তুমি ঠিক আছ তো দিদিভাই”? সীমন্তিনী শান্ত স্বরে বলল, “আমি ঠিক আছি সোনা। তবে তোকে আগে যখন ফোন করলুম তার পরেই এমন একটা খবর পেলুম যে তোকে সেটা এখনই জানাতে চাইছিলুম। কিন্তু আমার সন্দেহ ছিল তুই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছিস। তাই ল্যান্ডলাইনে ফোনটা করেছি। আচ্ছা শোন অর্চু। আমাদের ঘরে তিনজন অতিথি আসছেন আজ। হয়তো বিকেল বা সন্ধ্যে নাগাদ তারা এসে পড়বেন। তাই বলছি বোন, আমাদের গেস্টরুমটাকে একটু গুছিয়ে রাখিস ভাল করে”। অর্চনা একটু অবাক হয়ে বলল, “এই অবেলায় আবার কোন অতিথি আসছে দিদিভাই? তারা কি রাতে থাকবেন নাকি এখানে”? সীমন্তিনী জবাবে বলল, “আরে ওনারা বাইরে থেকে আসছেন। আন্দাজ করছি যে ও’রকম সময়েই হয়ত এসে পড়বেন। আমিও তার আগেই বাড়ি যাবার চেষ্টা করছি। তবে তারা রাতে থাকবেন আমাদের এখানে। তাই তো তোকে বলছি লক্ষ্মীদির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে চটপট গেস্টরুমটা গুছিয়ে ফ্যাল। আর শোন, তারা স্বামী স্ত্রী তাদের ছেলের বৌকে সাথে নিয়ে আসছেন। গেস্টরুমে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের থাকবার ব্যবস্থা করবি। আর তাদের ছেলের বৌ নাহয় আমার ঘরেই আমার বিছানায় থাকবেন। বুঝেছিস”? অর্চনা বলল, “হ্যাঁ বুঝেছি দিদিভাই। কিন্তু তাদের খাবার দাবারের আয়োজনও তো করতে হবে। লক্ষ্মীদি তো খাবার সময়েই বলছিল যে আনাজ তরকারী বাড়ন্ত। লক্ষ্মীদিকে বাজারে পাঠাতে হবে তো তাহলে”। সীমন্তিনী বলল, “তার দরকার নেই। আমি তো চলে আসছি বাড়িতে। তেমন দরকার হলে সে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আর যারা আসছেন তারা আমাদের সকলের জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসছেন। তুই আপাততঃ গেস্টরুমটাই গুছিয়ে রাখ শুধু। আর ঘরে মিষ্টি, দই, শরবৎ এ’সব কিছু আছে কিনা, আর রাতের খাবারের আগে তাদের জন্য হাল্কা কিছু বানাবার জন্য যা প্রয়োজন, তা ঘরে আছে কিনা এটা লক্ষ্মীদিকে জিজ্ঞেস কর তো”? অর্চনা লক্ষ্মীর কাছ থেকে জেনে নিয়ে বলল, “দিদিভাই ফ্রিজে মিষ্টি আছে। কোল্ড ড্রিঙ্কসের দুটো বোতল আছে। কিন্তু দই ফুরিয়ে গেছে। আর লুচি পায়েস বানাতে হলে দুধ কম পড়বে”। সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে, লক্ষ্মীদিকে বাজারে পাঠাতে হবে না। সে’সব আমি যোগাড় করছি। তোরা আপাততঃ ঘরগুলো গুছিয়ে রাখ। আমি আসছি আর একটু পরেই” বলে ফোন কেটে দিল। কিন্তু সাথে সাথেই আবার পরিতোষের নাম্বার ডায়াল করল। পরিতোষ প্রায় সাথে সাথেই সাড়া দিয়ে বলল, “হ্যাঁ মন্তি, তোমার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলাম আমি। আচ্ছা পিসি তোমায় কি বললেন, আগে সেটা বলো তো প্লীজ”। পরিতোষের চিরাচরিত সম্মোধনগুলো শুনতে না পেয়ে সীমন্তিনী বুঝল পরিতোষ বেশ টেনশনে আছে। সে জবাব দিল, “তোমার পিসি, পিসেমশাই আর বড়বৌদি আজ আমার এখানে আসছেন। আমার কোয়ার্টারে তাদের থাকবার জায়গা দিতে পারব কিনা, আশেপাশে থাকবার মত কোন ভাল হোটেল আছে কিনা, এ’সব জানতে চাইছিলেন। আর বলছিলেন যে আমাদের তিনকন্যাকে দেখতেই তারা আসছেন। আর আমাদের সাথে নাকি তাদের অনেক কথা বলবার আছে। তুমি তো দেখছি আমার ব্যাপারে সব রকম ফিডব্যাকই দিয়ে রেখেছ পিসিকে। তাই তিনি বুঝে গিয়েছেন যে আমাকে ডেকে পাঠালেও আমি কবে তাদের ওখানে গিয়ে দেখা করতে পারব তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এটা বুঝতে পেরে, আর আমার সাথে সাথে নীতা আর অর্চুকেও দেখবেন বলে তারা আজ আসবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তুমি নিশ্চয়ই এ’সব খবর জানো”। পরিতোষ বলল, “জানি না বললে ভুল বলা হবে। আবার জানি বললেও সেটা সঠিক বলা হবে না। তারা, মানে আমার পিসি আর তিন বৌদি, তোমাকে আর নীতাকে প্রথম দিনটি থেকেই দেখতে চাইছিলেন। কিন্তু আমার মুখে তোমার ব্যস্ততার কথা শুনে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তারাই নাগরাকাটা গিয়ে তোমার সাথে দেখা করবেন। কিন্তু সেটা যে আজকেই ঘটতে চলেছে, এটা আমার জানা ছিল না। তবে পিসির সাথে আমার বেলা দুটো নাগাদ কথা হয়েছে। তখনই আমি তোমার প্রাইভেট নাম্বারটা তাকে দিয়েছিলাম। আমি তোমাকে সে’ কথাটা জানাবার জন্যেই তখন ফোন করেছিলাম। হাজার হোক তোমার অনুমতির অপেক্ষা না করেই তো পিসিকে তোমার নাম্বারটা দিয়ে ফেলেছি। তাই তোমার কাছ থেকে পোস্ট ফ্যাক্টো অ্যাপ্রুভাল নেওয়াটা জরুরী ছিল। কিন্তু পিসি যে এত তাড়াতাড়ি তোমাকে ফোন করবেন, বা তারা যে আজই তোমার ওখানে যাবেন, এটা আমি সত্যি ভাবতে পারিনি। আর পিসি নিজেও সে’কথাটা আমাকে বলেননি। আচ্ছা মন্তি, পিসির সাথে আর কী কী কথা হয়েছে তোমার? অনেকক্ষণ তো তোমার ফোন বিজি ছিল তখন”। সীমন্তিনী জবাব দিল, “নতুন পরিচয় হলে এদিক সেদিকের কথা তো কিছু হয়েই থাকে। প্রায় সাত আট মিনিট কথা হয়েছে আমাদের। তবে সার কথা যেটুকু তা তো তোমাকে আগেই বললুম”। পরিতোষ এবার একটু চিন্তিত সুরে বলল, “পিসিরা সবাই তোমার সাথে দেখা করবার জন্যে কেন যে এত তাড়াহুড়ো করছেন, সেটা আমার মাথায় আসছে না। মনে মনে একটু ভয়ও হচ্ছে”। সীমন্তিনীর মনেও যে একই আশঙ্কা দানা বাঁধছিল, সেটা প্রকাশ না করেই সে বলল, “এতে চিন্তার কী আছে পরি? সত্যি কথা বলতে, তুমি যেদিন আলিপুরদুয়ারে গিয়েছিলে সেদিন থেকেই তোমার পিসিকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। তাই তারা নিজেরা এসে আমার সাথে দেখা করছেন বলে আমি তো বেশ খুশীই হয়েছি। নিজেকে খুব অনার্ড মনে হচ্ছে”। পরিতোষ আগের মতই চিন্তান্বিত স্বরে বলল, “না না মন্তি, আমার মনে হচ্ছে এর ভেতরে নিশ্চয়ই অন্য কোনও ব্যাপার আছে, যা পিসি তোমাকে ফোনে বলেন নি”। সীমন্তিনী এবার বেশ সিরিয়াস গলায় জিজ্ঞেস করল, “তোমার কী মনে হচ্ছে তাহলে”? পরিতোষ বলল, “মন্তি, আমার মনে হয় আমার বিয়ের ব্যাপারে পিসি পিসেমশাই তোমার সাথে কোনও শলা পরামর্শ করবার জন্যই যাচ্ছেন”। সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “তোমার এমন মনে হবার কারন কি”? পরিতোষ বলল, “তোমাকে আগে বলেছি কিনা মনে পড়ছে না। আসলে ওই ক’টা দিন নিজের রক্তের সম্পর্কের একজনকে খুঁজে পেয়ে আমি যেন নিজেকে সাময়িকভাবে হারিয়েই ফেলেছিলাম। কিন্তু সেই প্রথম দিনটি থেকেই ও বাড়ির লোকেরা, বিশেষ করে আমার তিন বৌদি বারবার আমার বিয়ে দেবার কথা ওঠাচ্ছিলেন। তাই আমার মনে এমন একটা চিন্তা আসছে”। সীমন্তিনী এবার একটু হাল্কা গলায় বলল, “বারে! এ তো সুখের খবর। আমরাও তো সেটাই চাইছি যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুমি একটা বিয়ে করে ফেলো”। পরিতোষ অসহায়ের মত স্বরে বলল, “কিন্তু তুমি বুঝতে পাচ্ছ না মন্তি আমি কত বড় একটা ধর্ম সঙ্কটের মুখে পড়েছি”। সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “ধর্ম সঙ্কট? সে আবার কী? পিসি পিসেমশাই দু’জনেই তো এখন তোমার অভিভাবক। তারা তোমার বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। আর তোমার জন্য পাত্রীও তারা পছন্দ করতেই পারেন। হ্যাঁ, তাদের পছন্দের পাত্রীকে তোমার অপছন্দ হলে অবশ্য আলাদা কথা। তবে তুমি তোমার অপছন্দের কথা তাদের বলবার সুযোগ মনে হয় পাবেই। তারা নিশ্চয়ই তোমার মতের বিরূদ্ধে কোন মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দেবেন না”। পরিতোষ এবার তার স্বভাব বিরুদ্ধ ভাবে অধৈর্যের সুরে বলল, “তুমি কেন বুঝতে চাইছ না মন্তি। পিসি পিসেমশাই আমার অভিভাবক, আমার জন্যে পাত্রী পছন্দ করবার অধিকার তাদের অবশ্যই আছে, এ ব্যাপারে তোমার সাথে আমিও একমত। কিন্তু আমি যে আগে থেকেই তোমাকে আর নীতাকে সে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছি। আর তুমিই তো বলেছ যে তোমরা আমার জন্যে এক পাত্রী পছন্দ করে রেখেছ। এখন পিসি পিসেমশাই যদি অন্য কোনও মেয়েকে পছন্দ করে বসেন, তাহলে আমি কি করব বলো তো? এটা ধর্ম সঙ্কট নয়, তো কি”? সীমন্তিনী নিজের টেবিলের ড্রয়ারগুলো লক করতে করতে শান্ত কন্ঠে বলল, “পরি, এত উতলা হচ্ছ কেন তুমি। তোমাকে কিন্তু এতো উদ্বেলিত হতে আমি আর আগে কখনো দেখিনি। আচ্ছা শোনো, আমার হাতে এখন সময় আর খুব বেশী নেই। আমাকে এক্ষুনি বেরোতে হচ্ছে। আমার মনে হয় তোমার পিসিরা বিকেল ছ’টার মধ্যেই হয়ত চলে আসবেন। তারা আসবার আগেই আমার কোয়ার্টারে পৌঁছে যাওয়া উচিৎ। নইলে সিকিউরিটির হাতে তাদের হেনস্থা হতে পারে। তাই আমি ফোনটা এখন রাখছি প্লীজ। তবে অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে আমি তোমাকে আবার ফোন করছি” বলে স্টীল কেবিনেটগুলো লক করে চাবি গুলো নিজের ব্যাগে রেখে ব্যাগ আর মোবাইল হাতে নিয়ে নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে প্রথমে পাশের আরেকটা কেবিনের দড়জা দিয়ে উঁকি মেরে ভেতরে বসে থাকা সিকদারবাবুর সাথে চোখের ঈশারায় বুঝিয়ে দিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে পড়ল।  ড্রাইভার রামসিং ভাবতেও পারেনি যে তার ম্যাডাম আজ এত তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে আসবেন। থানার উল্টোদিকের একটা চায়ের দোকানে বসে সে আড্ডা দিচ্ছিল। সীমন্তিনীকে দেখেই সে ছুটে এসে একটা স্যালিউট ঠুকে গাড়ির দড়জা খুলে দিল। সীমন্তিনী তাকে বুঝিয়ে দিল যে এখন সে কোয়ার্টারেই যাবে। কিন্তু তাকে কোয়ার্টারে নামিয়ে দিয়ে রামসিংকে আবার বাজারে গিয়ে কয়েকটা কোল্ড ড্রিঙ্কস আর ভালো দই আর কয়েকটা দুধের প্যাকেট কিনে আনতে হবে। রামসিং গাড়িতে স্টার্ট দিতেই সীমন্তিনীর ব্যাগের ভেতরের মোবাইলটা বেজে উঠল। বের করে দেখে একটা আননোন মোবাইল থেকে কল এসেছে। মনে মনে ভাবল এটা বোধহয় পরিতোষের পিসি বা তাদের কারো ফোনই হবে। কলটা রিসিভ করে কানে ফোন লাগিয়ে ‘হ্যালো’ বলতেই ও’পাশ থেকে ভারিক্কি গলায় এক বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, “আমি পরির পিসেমশাই, নিরঞ্জন মন্ডল বলছি মা”। সীমন্তিনী সাথে সাথে জবাব দিল, “ওহ, পিসেমশাই, আমার প্রণাম নেবেন”। নিরঞ্জনবাবু বললেন, “বেঁচে থাকো মা। হ্যাঁ, বলছিলাম আমরা চারটের সময় আলিপুরদুয়ার থেকে রওনা হয়েছি। মনে হয় সন্ধ্যে ছ’টা সওয়া ছ’টা নাগাদ তোমার ওখানে পৌঁছে যাব”। সীমন্তিনী মিষ্টি স্বরে বলল, “ঠিক আছে পিসেমশাই। আমি তখন কোয়ার্টারেই থাকব। কিন্তু পিসেমশাই আপনাদের গাড়ির নাম্বারটা একটু বলুন না। তাহলে আমি আগে থেকেই আমার গেটের গার্ডদের সেটা জানিয়ে দিতে পারতুম”।  নিরঞ্জনবাবু গাড়ির নাম্বারটা বলতেই সীমন্তিনী অন্য মোবাইলে নাম্বারটা নোট করে নিল। নিরঞ্জনবাবুর সাথে কথা শেষ করে সীমন্তিনী আবার পরিতোষকে ফোন করল। এবারেও সঙ্গে সঙ্গে পরিতোষের সাড়া পেয়ে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা পরি, আমার কয়েকটা কথার জবাব দাও তো। আমার সম্বন্ধে তোমার পিসিকে বা বৌদিদের কতটুকু কী বলেছ”? পরিতোষ জবাব দিল, “প্রায় সবকিছুই বলেছি মন্তি। শুরু থেকে শেষ অব্দি সবটুকুই বলেছি। আর নীতার ব্যাপারেও সবকিছুই বলেছি”। সীমন্তিনী বিস্মিত গলায় বেশ জোরেই বলে ফেলল, “কী বলছ তুমি?” পর মূহুর্তেই নিজেকে সংযত করে বলল, “আমার দাদাভাইয়ের সাথে যে আমার .......” পরিতোষ তার কথার মাঝেই বলে উঠল, “না না, সে ব্যাপারে কিচ্ছুটি বলিনি আমি। যদিও বৌদিরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন তোমার প্রেমিকের নামটা জানতে। কিন্তু তাদের আমি সত্যি কথাই বলেছি যে আমি শুরু থেকেই এ ব্যাপারে তোমার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আছি বলেই তার নামটা প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ’কথা শুনবার পর তারাও আর বেশী জোড়াজুড়ি করেন নি”। ______________________________
Parent